বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ করোনাভাইরাস রূপান্তর প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এর সংক্রমণ ক্ষমতা বেড়েছে বলে দাবি করেছেন গবেষকরা।
যুক্তরাষ্ট্রের হিউস্টনে পাঁচ হাজারেরও বেশি করোনা রোগীর ওপর গবেষণা করার মাধ্যমে জানা যায়, করোনাভাইরাস এত মাস ধরে ‘জেনেটিক মিউটেশন’ বা রূপান্তরের পর আরও বেশি সংক্রমণক্ষম হয়ে উঠেছে।
গবেষণাটি প্রকাশিত হয় ‘এমবিআইও’ শীর্ষক সাময়িকীতে। ওই ‘জেনেটিক মিউটেশন’য়ের নাম দেয়া হয়েছে ‘ডিসিক্সওয়ানফোরজি’।
এর অবস্থান হলো– করোনাভাইরাসের বাহ্যিক প্রোটিন আবরণের অভিক্ষেপগুলোতে। এই অভিক্ষেপগুলো মানবদেহের কোষের মধ্যে ভাইরাসের জোর করে ঢুকে পড়ার সুযোগ করে দেয়।
গবেষণার সহগবেষক, দি ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস অ্যাট অস্টিনয়ের ‘মলিকিউলার বায়োসায়েন্স’ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ইলায়া ফিনকেলস্টাইন বলেন, ভাইরাস ‘মিউটেশন’য়ের কারণ হলো বিভিন্ন ‘নিউট্রালাল ড্রিফ্ট’য়ের মিশ্রণ, যার অর্থ হলো ভাইরাসের জিনগত বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন, যা ভাইরাসের উপকার কিংবা অপকার কোনোটাই করে না। সেই সঙ্গে আছে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার প্রভাব।
হিউস্টন মেথোডিস্ট হসপিটাল, ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস অস্টিন এবং আরও কয়েকটি সংস্থার গবেষকরা মিলে এই গবেষণা চালান।
হিউস্টনে করোনাভাইরাস মহামারীর প্রাথমিক অবস্থায় ৭১ শতাংশ ভাইরাস আক্রান্ত রোগীর মাঝে এই ‘মিউটেশন’ চোখে পড়ে। সংক্রমণের দ্বিতীয় ধাক্কায় তা বেড়ে হয়ে যায় ৯৯.৯ শতাংশ।
পুরো বিশ্বের সঙ্গে এই বৈশিষ্ট্য মিলে যায়। চলতি বছরের জুলাই মাসে ২৮ হাজার ‘জিনোম সিকোয়েন্স’ বিশ্লেষণের ভিত্তিতে হওয়া প্রকাশিত এক গবেষণা বলে,
করোনার ধরনগুলো ‘ডিসিক্সওয়ানফোরজি মিউটেশন’ বহন করছিল, বিশ্বব্যাপী সেই ভাইরাসগুলোই এক মাসের মধ্যেই সবচেয়ে বেশি ভয়ানক হয়ে ওঠে।
তবে এখন প্রশ্ন হলো– কোনো এই বিশেষ ‘মিউটেশন’ থাকা ভাইরাসগুলোই বেশি তাণ্ডব ছড়ালো?
বিশেষজ্ঞদের ধারণা এই ‘মিউটেশন’ সমৃদ্ধ ভাইরাসগুলোর সংক্রমণ ক্ষমতা সম্ভবত বেশি।
যুক্তরাজ্যে ২৫ হাজারেরও বেশি ‘জিনোম সিকোয়েন্স’ বিশ্লেষণে দেখা যায়, যে ভাইরাসে এই ‘মিউটেশন’, তারা দ্রুত সংক্রমিত করতে পারে।
তবে সব বিশেষজ্ঞ এ ধারণার সঙ্গে একমত নয়, তাদের আছে ভিন্ন ব্যাখ্যা।
এই বিশেষজ্ঞদের মতে, ডিসিক্সওয়ানফোরজি ‘মিউটেশন’ হয়তো ইউরোপ আর উত্তর আমেরিকায় মহামারীর প্রাথমিক সময়ে আসা ভাইরাসে বেশি দেখা যেত, যা ভাইরাসের পরবর্তী সংস্করণগুলোকে শক্তিশালী হওয়ায় বাড়তি সুবিধা দিয়েছে।
করোনাভাইরাসের প্রোটিনের অভিক্ষেপগুলো বর্তমান সময় পর্যন্ত আরও অনেক ‘মিউটেশন’ সংগ্রহ করেছে যার বৈশিষ্ট্য এখনও অজানা।
গবেষকদের পরীক্ষায় দেখা গেছে, এর মধ্যকার একটি ‘মিউটেশনের কারণে প্রোটিনের অভিক্ষেপগুলো একটি ‘নিউট্রালাইজিং অ্যান্টিবডি’কে এড়িয়ে যেতে পারে। ওই ‘নিউট্রালাইজিং অ্যান্টিবডি’ শরীরে জৈবিকভাবে তৈরি হয় করোনাভাইরাসকে দমন করার উদ্দেশ্যেই। ফলে ওই বিশেষ ‘মিউটেশন’ থাকা ভাইরাসগুলো শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দমিয়ে দিতে পারবে খুব সহজেই।
অন্য মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়ার ক্ষেত্রেও ওই ‘মিউটেশন’ কোনো সুবিধা তৈরি করে কিনা তা এখনই জানা যায়নি।
ফিনকেলস্টাইন বলেন, আশার আলো হল, বিশেষ ওই ‘মিউটেশন’ বেশ দুর্লভ এবং তা রোগের তীব্রতাকে বাড়িয়ে দেয় না।
হাজারও সংক্রমণ থেকে এ পর্যন্ত ২৮৫টি ‘মিউটেশন’ শনাক্ত করেছেন গবেষকরা, যার বেশিরভাগই রোগের তীব্রতা বাড়ায় না।