ঢাকা , শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কত বছর বয়সে দাঁত নড়ে যাওয়া স্বাভাবিক

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ বয়স হলেই দাঁত নড়ে যায়; এমন ধরণা অনেকের রয়েছে। তবে এটি মোটেও ঠিক নয়।

চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে, বয়স বেশি হলেই দাঁত পড়ে যাবে বিষয়টি এমন নয়।  হঠাৎ দাঁত নড়ে যাওয়ার বিষয়টি কখনই স্বাভাবিক নয়। অনেক সময় অস্বাভাবিক কারণে স্থায়ী দাঁত নড়ে যায় বা পড়ে যায়।

তবে কত বছর বয়স থেকে দাঁত নড়ে পড়তে শুরু করবে; তা সঠিকভাবে বলা সম্ভব নয়। কারণ তা ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে।

আমরা যদি মুখের সঠিক যত্ন নিই, তবে দাঁত মজবুত রাখতে পারি। দাঁত সুস্থ থাকলে মন ও শরীর সুস্থ থাকে।

দাঁত নড়ে যাওয়ার নানাবিধ কারণের মধ্যে উল্লেখযোগ্য-

আঘাত

দুর্ঘটনা বা সংঘর্ষ থেকে আঘাত পেলে দাঁত নড়ে যেতে পারে। বিশেষ করে সড়ক দুর্ঘটনা, বাসায় ছোট বাচ্চাদের কাছ থেকে আঘাত, প্রতিপক্ষের আঘাত, খেলার সময় পড়ে গিয়ে নতুবা ক্রিকেট খেলায় মাউথ গার্ড ব্যবহার না করার কারণে বল লেগে দাঁত নড়ে যেতে পারে। জোরে শক্ত কোনো কিছুতে কামড় পড়ে দাঁতের শেকড় ভেঙে গিয়ে দাঁত নড়তে পারে।

দাঁতের ধারক কলাতে প্রদাহ

প্রতিটি দাঁত মাড়ি ও চোয়ালের হাড়ের সাহায্যে নিজ অবস্থানে দৃঢ়ভাবে আটকে থাকে। সঠিক উপায়ে নিয়মিত দাঁত পরিষ্কার না করলে অথবা যাদের দাঁতের ফাঁকে খাবার আটকে থাকে তারা ফ্লস বা ইন্টার ডেন্টাল ব্রাশ ব্যবহার না করলে দাঁত ও মাড়ির মধ্যকার জীবাণুর মিশ্রণে তৈরি হওয়া প্ল্যাক ও পরবর্তীতে পাথরে রূপ নেয়া পদার্থ থেকে প্রতিনিয়ত ব্যাকটেরিয়া ও তাদের তৈরি ক্ষতিকারক পদার্থ ক্রমান্বয়ে মাড়ি ও হাড় থেকে দাঁতের বন্ধন নষ্ট করে দাঁত নড়িয়ে ফেলে।

দাঁত নড়ার সবচেয়ে বড় কারণ এ ধারক কলার প্রদাহ। দাঁতের ফাঁকে খাবার জমে থেকেও মাড়ি ও হাড়কে নষ্ট করে, টুথপিক বা যে কোনো ধাতব কাঠি বা অন্য কিছুর ব্যবহার একে ত্বরান্বিত করে।

ঘটনাটি উল্টোদিক দিয়েও ঘটতে পারে, যেমন- আক্রান্ত দাঁতের সংক্রমণ দাঁতের মধ্যকার মজ্জাকে নষ্ট করে চোয়ালের হাড়ের মধ্যে প্রবেশ করে নানা ধরনের প্রদাহ, সিস্ট বা টিউমার করতে পারে যেখান থেকে ধারক কলা নষ্ট হয়ে দাঁত নড়ে যেতে পারে।

হরমোনের প্রভাব

অনেক সময় সঠিক যত্নের অভাবে বা উদাসীনতায় প্রোজেস্টেরন ও ইস্ট্রোজেন হরমোনের আধিক্যের জন্য প্রেগনেন্সির সময় ও মেনোপোজে হাড় ক্ষয় হয়ে দাঁতের মবিলিটি আসতে পারে।

অসম কামড়

আমাদের মধ্যে অনেকের দাঁতে দাঁত ঘষা বা কামড়ানোর বদভ্যাস আছে, যাকে ব্রুকসিজম বলা হয়। আবার অনেকের দাঁত এলোমেলো, উঁচু-নিচু থাকলে এসব ক্ষেত্রে দাঁত পরিষ্কার রাখা কষ্টসাধ্য হয় ও কোনো কোনো দাঁতে অতিরিক্ত চাপ পড়ার আশঙ্কা থাকে, ফলে দাঁত নড়ে যেতে পারে।

হাড় ক্ষয় রোগ

অস্টিওপোরোসিস বা হাড়ের ঘনত্ব কমে হাড় ক্ষয় অনেকের মধ্যেই দেখা যায়। ক্যালসিয়াম বা ভিটামিন ডি স্বল্পতায়ও হাড় ক্ষয় হতে পারে। হাড় ক্ষয় শরীরের সব হাড়কেই দুর্বল করে, তখন চোয়ালের হাড়ও ক্ষয় হয়ে দাঁত নড়ে যেতে পারে। যাদের নিজস্ব রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় যেমন অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, কেমোথেরাপি থেকেও দাঁত নড়তে পারে।

চিকিৎসা প্রক্রিয়া

এখনও দেশে ১২ হাজারের মতো অনুমোদিত ডেন্টাল চিকিৎসকের পাশাপাশি অগণিত ভুয়া চিকিৎসক অবৈধভাবে চিকিৎসা দিচ্ছে, ফলে অপচিকিৎসার শিকার হয়ে অথবা অর্থোডন্টিক চিকিৎসা, ফিলিং বা ক্যাপের সঙ্গে স্বাভাবিক কামড় না মিললে বা পাশের দাঁতের সঙ্গে সংযোগ যথাযথ না হলেও দাঁত নড়ে যেতে পারে।

দাঁত নড়ে যাওয়া কারও কাম্য নয়। প্রকৃত পরিচর্যার মাধ্যমে দাঁতকে সুস্থ ও মজবুত রাখা সম্ভব। দাঁত যদি নড়েই যায় তবে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে, দেরি হলে দাঁতটিকে সংরক্ষণ অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

কত বছর বয়সে দাঁত নড়ে যাওয়া স্বাভাবিক

আপডেট টাইম : ০৮:১৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২০

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ বয়স হলেই দাঁত নড়ে যায়; এমন ধরণা অনেকের রয়েছে। তবে এটি মোটেও ঠিক নয়।

চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে, বয়স বেশি হলেই দাঁত পড়ে যাবে বিষয়টি এমন নয়।  হঠাৎ দাঁত নড়ে যাওয়ার বিষয়টি কখনই স্বাভাবিক নয়। অনেক সময় অস্বাভাবিক কারণে স্থায়ী দাঁত নড়ে যায় বা পড়ে যায়।

তবে কত বছর বয়স থেকে দাঁত নড়ে পড়তে শুরু করবে; তা সঠিকভাবে বলা সম্ভব নয়। কারণ তা ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে।

আমরা যদি মুখের সঠিক যত্ন নিই, তবে দাঁত মজবুত রাখতে পারি। দাঁত সুস্থ থাকলে মন ও শরীর সুস্থ থাকে।

দাঁত নড়ে যাওয়ার নানাবিধ কারণের মধ্যে উল্লেখযোগ্য-

আঘাত

দুর্ঘটনা বা সংঘর্ষ থেকে আঘাত পেলে দাঁত নড়ে যেতে পারে। বিশেষ করে সড়ক দুর্ঘটনা, বাসায় ছোট বাচ্চাদের কাছ থেকে আঘাত, প্রতিপক্ষের আঘাত, খেলার সময় পড়ে গিয়ে নতুবা ক্রিকেট খেলায় মাউথ গার্ড ব্যবহার না করার কারণে বল লেগে দাঁত নড়ে যেতে পারে। জোরে শক্ত কোনো কিছুতে কামড় পড়ে দাঁতের শেকড় ভেঙে গিয়ে দাঁত নড়তে পারে।

দাঁতের ধারক কলাতে প্রদাহ

প্রতিটি দাঁত মাড়ি ও চোয়ালের হাড়ের সাহায্যে নিজ অবস্থানে দৃঢ়ভাবে আটকে থাকে। সঠিক উপায়ে নিয়মিত দাঁত পরিষ্কার না করলে অথবা যাদের দাঁতের ফাঁকে খাবার আটকে থাকে তারা ফ্লস বা ইন্টার ডেন্টাল ব্রাশ ব্যবহার না করলে দাঁত ও মাড়ির মধ্যকার জীবাণুর মিশ্রণে তৈরি হওয়া প্ল্যাক ও পরবর্তীতে পাথরে রূপ নেয়া পদার্থ থেকে প্রতিনিয়ত ব্যাকটেরিয়া ও তাদের তৈরি ক্ষতিকারক পদার্থ ক্রমান্বয়ে মাড়ি ও হাড় থেকে দাঁতের বন্ধন নষ্ট করে দাঁত নড়িয়ে ফেলে।

দাঁত নড়ার সবচেয়ে বড় কারণ এ ধারক কলার প্রদাহ। দাঁতের ফাঁকে খাবার জমে থেকেও মাড়ি ও হাড়কে নষ্ট করে, টুথপিক বা যে কোনো ধাতব কাঠি বা অন্য কিছুর ব্যবহার একে ত্বরান্বিত করে।

ঘটনাটি উল্টোদিক দিয়েও ঘটতে পারে, যেমন- আক্রান্ত দাঁতের সংক্রমণ দাঁতের মধ্যকার মজ্জাকে নষ্ট করে চোয়ালের হাড়ের মধ্যে প্রবেশ করে নানা ধরনের প্রদাহ, সিস্ট বা টিউমার করতে পারে যেখান থেকে ধারক কলা নষ্ট হয়ে দাঁত নড়ে যেতে পারে।

হরমোনের প্রভাব

অনেক সময় সঠিক যত্নের অভাবে বা উদাসীনতায় প্রোজেস্টেরন ও ইস্ট্রোজেন হরমোনের আধিক্যের জন্য প্রেগনেন্সির সময় ও মেনোপোজে হাড় ক্ষয় হয়ে দাঁতের মবিলিটি আসতে পারে।

অসম কামড়

আমাদের মধ্যে অনেকের দাঁতে দাঁত ঘষা বা কামড়ানোর বদভ্যাস আছে, যাকে ব্রুকসিজম বলা হয়। আবার অনেকের দাঁত এলোমেলো, উঁচু-নিচু থাকলে এসব ক্ষেত্রে দাঁত পরিষ্কার রাখা কষ্টসাধ্য হয় ও কোনো কোনো দাঁতে অতিরিক্ত চাপ পড়ার আশঙ্কা থাকে, ফলে দাঁত নড়ে যেতে পারে।

হাড় ক্ষয় রোগ

অস্টিওপোরোসিস বা হাড়ের ঘনত্ব কমে হাড় ক্ষয় অনেকের মধ্যেই দেখা যায়। ক্যালসিয়াম বা ভিটামিন ডি স্বল্পতায়ও হাড় ক্ষয় হতে পারে। হাড় ক্ষয় শরীরের সব হাড়কেই দুর্বল করে, তখন চোয়ালের হাড়ও ক্ষয় হয়ে দাঁত নড়ে যেতে পারে। যাদের নিজস্ব রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় যেমন অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, কেমোথেরাপি থেকেও দাঁত নড়তে পারে।

চিকিৎসা প্রক্রিয়া

এখনও দেশে ১২ হাজারের মতো অনুমোদিত ডেন্টাল চিকিৎসকের পাশাপাশি অগণিত ভুয়া চিকিৎসক অবৈধভাবে চিকিৎসা দিচ্ছে, ফলে অপচিকিৎসার শিকার হয়ে অথবা অর্থোডন্টিক চিকিৎসা, ফিলিং বা ক্যাপের সঙ্গে স্বাভাবিক কামড় না মিললে বা পাশের দাঁতের সঙ্গে সংযোগ যথাযথ না হলেও দাঁত নড়ে যেতে পারে।

দাঁত নড়ে যাওয়া কারও কাম্য নয়। প্রকৃত পরিচর্যার মাধ্যমে দাঁতকে সুস্থ ও মজবুত রাখা সম্ভব। দাঁত যদি নড়েই যায় তবে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে, দেরি হলে দাঁতটিকে সংরক্ষণ অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।