ঢাকা , শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মানসিক চাপ থেকে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা

Filename : istock_83069543.3c5a7104101.original.jpg - To go with "Intensively lowering blood pressure could reduce the risk of developing a heart flutter" (published on 2020-05-05 16:38:38)

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ অতিরিক্ত মানসিক চাপ শারীরিক ক্ষতি করে থাকে। মানসিক চাপই ক্রমান্বয়ে উচ্চ রক্তচাপে পরিণত হয়। আর হৃদরোগ, স্ট্রোকের একটি অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ দিক হলো উচ্চ রক্তচাপ।

উচ্চ রক্তচাপ 

আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যমতে, ১২০/৮০ এমএম/এইচজি হলো স্বাভাবিক রক্তচাপ।

‘সিস্টোলিক ব্লাডপ্রেশার’ ১৩০ থেকে ১৩৯ এমএম/এইচজি এবং ‘ডায়াস্টোলিক ব্লাডপ্রেশার’ ৮০ থেকে ৮৯ এমএম/এইচজি হলে তাকে বলা হয় উচ্চ রক্তচাপের ‘স্টেজ ওয়ান’।

রক্তচাপ যখন নিয়মিত ১৪০/৯০ এমএম/এইচজি মাত্রায় থাকে, তখন তাকে বলা হয় উচ্চ রক্তচাপের ‘স্টেজ টু’। এ ক্ষেত্রে জীবনযাত্রার মানের অনেক পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। এ ছাড়া চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধও সেবন করতে হবে।

স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে হিউস্টনের বেইলর কলেজ অফ মেডিসিনের ‘মেডিসিন’ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক বিজয় নামবি বলেন, সময়মতো চিকিৎসা না করালে উচ্চ রক্তচাপই হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং রক্তনালির ক্ষতিজনিত বিভিন্ন রোগের সূত্রপাত ঘটায়। আর মানসিক চাপ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবেই রক্তচাপকে প্রভাবিত করে।

ডা. নামবি বলেন, মানসিক চাপ ‘সিম্প্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেম’কে সক্রিয় করে ‘অ্যাড্রেনালিন’ ও ‘কর্টিসল’ নামক হরমোন নিঃসরণ করে যা হৃদস্পন্দনের গতি ও রক্তচাপ দুটিই বাড়িয়ে দেয়।

দীর্ঘমেয়াদি মানসিক চাপ

কর্মক্ষেত্র, আর্থিক অবস্থা, ব্যক্তিগত সমস্যা ইত্যাদি থেকে ক্রমাগত মানসিক চাপ তৈরি হয়। এই পরিস্থিতিগুলো রক্তচাপের ওপর সরাসরি কী প্রভাব ফেলে তা নিয়ে এখনও গবেষণা চলমান।

মানসিক চাপ একজন মানুষের স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তোলার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়, যা রক্তচাপকে পরোক্ষভাবে প্রভাবিত করে।

ইয়েল স্কুল অফ মেডিসিন/ ইয়েল নিউ হ্যাভেন হসপিটালয়ের ‘মেডিসিন(নিউরোপ্যাথি)’ বিভাগের অধ্যাপক, ‘অ্যাসোসিয়েট ডিন অ্যান্ড ডিরেক্টর অব গ্র্যাজুয়েট মেডিসিন এডুকেশন’ স্টিফেন জে. হুয়োট বলেন, মানসিক চাপে থাকেন আপনি ভালো কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না। অথচ আপনি জানেন সেগুলো আপনার জন্য ভালো। এদের মধ্যে অন্যতম হলো স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস মেনে চলা, নিয়মিত শরীরচর্চা করা।

দীর্ঘমেয়াদি মানসিক চাপের প্রভাব

ডা. হুয়োট বলেন, যতবার রক্তচাপ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয়ে যায়, ততবারই রক্তনালি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর মানসিক চাপের কারণে যদি আপনি অস্বাস্থ্যকর খাবার খান, ওজন বেড়ে যায়, শরীরচর্চা না করেন, রক্তচাপ কমানোর ওষুধ খান তবে এসব কিছুই রক্তচাপের সমস্যা বাড়াতে থাকে।

আবার এই চাপ সামলানো জন্য যখন মদ্যপান, ধূমপান, মাদক সেবন করেন, তখন তা রক্তচাপের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে, সার্বিক স্বাস্থ্যেরও ক্ষতি করে।

মানসিক চাপে থাকা মানুষগুলো ঘুমাতে পারেন না। আর যাদের ইতিমধ্যে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা আছে তাদের ঘুম না হলে আর তার সঙ্গে পরের দিনের চাপ ও পরিশ্রম যোগ হয়ে মারাত্মক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। এগুলোই প্রতিনিয়ত একজন মানুষের হৃদরোগের ও মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ায়।

চাপ কমাতে কী করবেন

প্রথমেই মানসিক চাপ কেন হয় তা জানতে হবে। কাজ যদি মানসিক চাপের কারণ হয়, তবে কর্মক্ষেত্র পরিবর্তনের কথা ভাবতে হবে। ব্যক্তিগত সমস্যা থাকলে তা সমাধানের উপায় খুঁজতে হবে।

পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো, ধ্যান, যোগব্যায়াম, ‘ডিপ ব্রিদিং’, শরীরচর্চা করলে চাপ কমে যাবে।

যাদের বংশে উচ্চ রক্তচাপের ঘটনা আছে তাদের পরীক্ষা করানো উচিত। পাশাপাশি ভালোমানের রক্তচাপ পরিমাপক যন্ত্রের সাহায্যে নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করানো উচিত।

এ ছাড়া নিজের যত্ন নেয়া, লবণ খাওয়া কমানো, নিয়মিত শরীরচর্চা, স্বাভাবিক ওজন বজায় রাখা, পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করা, প্রয়োজনমাফিক ওষুধ সেবন ইত্যাদি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

মানসিক চাপ থেকে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা

আপডেট টাইম : ০৮:৫২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২০

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ অতিরিক্ত মানসিক চাপ শারীরিক ক্ষতি করে থাকে। মানসিক চাপই ক্রমান্বয়ে উচ্চ রক্তচাপে পরিণত হয়। আর হৃদরোগ, স্ট্রোকের একটি অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ দিক হলো উচ্চ রক্তচাপ।

উচ্চ রক্তচাপ 

আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যমতে, ১২০/৮০ এমএম/এইচজি হলো স্বাভাবিক রক্তচাপ।

‘সিস্টোলিক ব্লাডপ্রেশার’ ১৩০ থেকে ১৩৯ এমএম/এইচজি এবং ‘ডায়াস্টোলিক ব্লাডপ্রেশার’ ৮০ থেকে ৮৯ এমএম/এইচজি হলে তাকে বলা হয় উচ্চ রক্তচাপের ‘স্টেজ ওয়ান’।

রক্তচাপ যখন নিয়মিত ১৪০/৯০ এমএম/এইচজি মাত্রায় থাকে, তখন তাকে বলা হয় উচ্চ রক্তচাপের ‘স্টেজ টু’। এ ক্ষেত্রে জীবনযাত্রার মানের অনেক পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। এ ছাড়া চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধও সেবন করতে হবে।

স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে হিউস্টনের বেইলর কলেজ অফ মেডিসিনের ‘মেডিসিন’ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক বিজয় নামবি বলেন, সময়মতো চিকিৎসা না করালে উচ্চ রক্তচাপই হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং রক্তনালির ক্ষতিজনিত বিভিন্ন রোগের সূত্রপাত ঘটায়। আর মানসিক চাপ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবেই রক্তচাপকে প্রভাবিত করে।

ডা. নামবি বলেন, মানসিক চাপ ‘সিম্প্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেম’কে সক্রিয় করে ‘অ্যাড্রেনালিন’ ও ‘কর্টিসল’ নামক হরমোন নিঃসরণ করে যা হৃদস্পন্দনের গতি ও রক্তচাপ দুটিই বাড়িয়ে দেয়।

দীর্ঘমেয়াদি মানসিক চাপ

কর্মক্ষেত্র, আর্থিক অবস্থা, ব্যক্তিগত সমস্যা ইত্যাদি থেকে ক্রমাগত মানসিক চাপ তৈরি হয়। এই পরিস্থিতিগুলো রক্তচাপের ওপর সরাসরি কী প্রভাব ফেলে তা নিয়ে এখনও গবেষণা চলমান।

মানসিক চাপ একজন মানুষের স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তোলার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়, যা রক্তচাপকে পরোক্ষভাবে প্রভাবিত করে।

ইয়েল স্কুল অফ মেডিসিন/ ইয়েল নিউ হ্যাভেন হসপিটালয়ের ‘মেডিসিন(নিউরোপ্যাথি)’ বিভাগের অধ্যাপক, ‘অ্যাসোসিয়েট ডিন অ্যান্ড ডিরেক্টর অব গ্র্যাজুয়েট মেডিসিন এডুকেশন’ স্টিফেন জে. হুয়োট বলেন, মানসিক চাপে থাকেন আপনি ভালো কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না। অথচ আপনি জানেন সেগুলো আপনার জন্য ভালো। এদের মধ্যে অন্যতম হলো স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস মেনে চলা, নিয়মিত শরীরচর্চা করা।

দীর্ঘমেয়াদি মানসিক চাপের প্রভাব

ডা. হুয়োট বলেন, যতবার রক্তচাপ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয়ে যায়, ততবারই রক্তনালি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর মানসিক চাপের কারণে যদি আপনি অস্বাস্থ্যকর খাবার খান, ওজন বেড়ে যায়, শরীরচর্চা না করেন, রক্তচাপ কমানোর ওষুধ খান তবে এসব কিছুই রক্তচাপের সমস্যা বাড়াতে থাকে।

আবার এই চাপ সামলানো জন্য যখন মদ্যপান, ধূমপান, মাদক সেবন করেন, তখন তা রক্তচাপের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে, সার্বিক স্বাস্থ্যেরও ক্ষতি করে।

মানসিক চাপে থাকা মানুষগুলো ঘুমাতে পারেন না। আর যাদের ইতিমধ্যে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা আছে তাদের ঘুম না হলে আর তার সঙ্গে পরের দিনের চাপ ও পরিশ্রম যোগ হয়ে মারাত্মক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। এগুলোই প্রতিনিয়ত একজন মানুষের হৃদরোগের ও মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ায়।

চাপ কমাতে কী করবেন

প্রথমেই মানসিক চাপ কেন হয় তা জানতে হবে। কাজ যদি মানসিক চাপের কারণ হয়, তবে কর্মক্ষেত্র পরিবর্তনের কথা ভাবতে হবে। ব্যক্তিগত সমস্যা থাকলে তা সমাধানের উপায় খুঁজতে হবে।

পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো, ধ্যান, যোগব্যায়াম, ‘ডিপ ব্রিদিং’, শরীরচর্চা করলে চাপ কমে যাবে।

যাদের বংশে উচ্চ রক্তচাপের ঘটনা আছে তাদের পরীক্ষা করানো উচিত। পাশাপাশি ভালোমানের রক্তচাপ পরিমাপক যন্ত্রের সাহায্যে নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করানো উচিত।

এ ছাড়া নিজের যত্ন নেয়া, লবণ খাওয়া কমানো, নিয়মিত শরীরচর্চা, স্বাভাবিক ওজন বজায় রাখা, পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করা, প্রয়োজনমাফিক ওষুধ সেবন ইত্যাদি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।