ঢাকা , শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শীতের পিঠা খাওয়ার মজা অন্য রকম, ড.গোলসান আরা বেগম

ড.গোলসান আরা বেগমঃ বাঙালি সংস্কৃতি শীতের পিঠা,নবান্ন উৎসব,কে ঘিরে আবর্তিত হয়।একাল সেকালের চিন্তা, চেতনা, চাল চলন, জীবন যাপনে রয়েছে আকাশ পাতাল ব্যাবধান।শহর ও গ্রামের বৈষম্য চেষ্টা করেও ঘুছানো যাবে না। কুঁয়াশার চাদর মাথায় নিয়ে কনকনে শীত এলে, গ্রাম্য জীবন যাত্রার চেহারা যায় পাল্টে। শীতের তীব্রতার প্রভাব গেঁয়ো জনপদে বয়ে আনে নানা উৎসব পর্ব, সৌন্দর্যের নান্দনিকতা। একদিকে ঝরা পাতার মর্মর ধ্বনির বিচ্ছেদ হাহাকার। অন্য দিকে ঝিলে বিলে অতিথি পাখীর নয়ন কাড়া মিলন মেলা।কুয়াশার চাদরে মোড়ানো মাঠে বিছানো সবুজের

কারুকার্যতা। দূর্বা ঘাসের উপর শিশির কণা টুপটাপ গড়ায়। কাঁচা রোদ সকালে মুক্তা দানার মতো হাসে, শিশির বিন্দু বনবনানীর লতা পাতায়। সকালে বা সন্ধ্যায় আগুনের চার পাশে ঘিরে গা গরম করে শীতার্ত মানুষ। করে মজার মজার তর্ক তুলে হাসি ঠাট্টার বিনিময়। এ দৃশ্য শহরের কাঁচায় পোষা শিশুরা আদৌ কি দেখতে পারে বা জানে?  সন্ধ্যায় মা জননী কাঁপতে কাঁপতে মাটির চূলায় সেদ্ধ করে রাতের খাবার। তার আদরের সন্তানেরা আচল তলে

বসে শীতের পিঠা খায় আর হিম হিম ঠান্ডার মজা উপভোগ করে। যাদের ল্যাপ কম্বল নাই,থাকে কুঁড়ে ঘরে, তারা জানে শীতের তীব্রতা কত কষ্টের। তারপরও লবণ লংকার জীবন ভালোবেসে পথে প্রান্তরে ঘুরে বেড়ায় ও শির শিরে বাতাসে বসে পিঠে রোদ শুকায়। মাটির গতরে চাষাবাদ করে পেটের আহার, সোনালি ফসল ফলায়।

খেজুর গাছের গা থেকে নিসৃত তরল পদার্থ বিশেষ উপায়ে সংগ্রহ করা হয়,যাকে বলে খেজুরের রস,তা দিয়ে তৈরী করে খেজুরে গুড় ও ঘন রস, এই তথ্যটি শহরের বহু শিশুরা জানে না। এই উপাদান দিয়ে তৈরী পায়েশ, মিষ্টান্ন, ভাঁফা ও পিঠাপুলি কত না মজার, গাঁযে বসবাস কারী তারাই কেবল জানে।কৃত্তিম উপায়ে তৈবী কেক খায় যারা, তারা কি করে বুঝবে শীতের পিঠার স্বাদ ও মজা কতো। শহরের অলি গলিতে আজকাল পিঠাঘরে পাওয়া যায় নানা  ধরনের মজাদার হোম মেইড পিঠা।কেউ ইচ্ছে করলে জিহ্বায় তুলে নিতে পারে, ব্যবসায়িক উদ্দ্যেশে তৈরী পিঠার

স্বাদ। নবান্ন উৎসব মানেই বাহারি পিঠার মেলা। সরকারি বেসরকারি উদ্যোদে উদযাপন করা হয় রখমারী উপায়ে পিঠা উৎসব। শহরের পরিবারগুলো দুধকুলি, রসে ভিজা পিঠা,পাটিসপটা, চিটাপিঠা, নকশি পিঠা, কলাপিঠা সহ গ্রাম বাংলার উপভোগ্য পিঠা তৈরী করতে পারে না বা পেরেশানি হয়ে তৈরি করতে চায় না।

ফলে দোকানের তৈরী পিঠা তাদের কাছে অতি প্রিয় ও আকর্ষনীয়। কেউ যদি শীতের আচল ছুঁয়ে জোনাকের খেলা, শিউলি তলায় মৌ মৌ সুবাসের গন্ধ, নবান্নের ঘ্রান, কাশফুলের দোল, ঝলমলে চাঁদের আলোর নৃত্য, মাঠে ঘাটে বিছানো সরিষার হলুদ বর্ণালী ঢেউ,কারুকার্য আকা সবুজ লাবণ্য দেখতে চায়, ছুটে যেতে হবে গাঁয়ে। অাহারে সেই দিনগুলো আমি ফেলে এসেছি ঝাউতলায়, নদীর ধারে, পথের বাঁকে বাঁকে, বৃষ্টি ভেজা পিছল পথের কাদা জলে। স্মৃতির পাতা

উল্টাই,রুমন্থন করি মধুরতা, ইট পাথরের শহরের বদ্ধ ঘরে বসে, জীবনের শেষ বিকেলে। সন্ধ্যায় মানুষের ঢল নামে চায়ের আসরে, গ্রায়ের বাজারের খুপরি দোকান ঘরে।ধূয়া উড়ানো চায়ের কাপে উল্টায় রাজনীতির পাঠ,নানা কথার ফুল ঝুড়ি। গাল গপ্পের ফাঁকে রাতের গভীরতা নেমে আসে, বুঝতে পারে না কেউ।

সর্বক্ষণ বিদ্যুত সেবা পেয়ে আড্ডাগুলো জমে উঠে বেশ।এই তো গেয়োঁ জীবনে শীতের তীব্রতা মাথায় নিয়ে বেঁচে থাকার মধুরতা। কে কোথায় আছো,ক্ষণিকের তরে গাঁয়ে ফিরে যাও। মাথায় পড়ে শীতের টুপি,ঘণ কুয়াশায় পায়ে হেঁটে গাঁয়ের অালপথে ঘুরে বেড়াও। পাবে এক অনাবিল শান্তি,সহজ সরল গাঁয়ে বসবাসকারি মানুষের নরম আদুরে

সুখানুভূতি। এঘরে ওঘরে শীতের পিঠা খাওয়ার মজায় অন্য রখম মজার আমেজ খুঁজে পাবে।যে যেখানে যায় যাক সুখের খোঁজে।আমি এখানেই গাঁয়ের আলপখে হেঁটে বেঁচে থাকবো হাজারো বছর। যখন শীতের পিঠা খাওয়ার কথা বলছি,তখন পৃথিবীবাসি করোনা মহামারী ২০২০ দুর্যোগের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে।

কোবিড-১৯ জীবানুর ভয়ে মানুষ কাঁপছে। কখন কে আক্রান্ত হয় কেউ জানে না।করোনা জীবানু টেনে নেয় না ফেরার দেশে। শিক্ষিত সচেতন মানুষ মুখে মুখোশ ব্যবহার করছে করোনা প্রতিরোধে। ঘরবন্দি জীবন যাপন করছে। স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিধি বিধান মেনে চলছে। কিছু অবুঝ মানুষ করোনাকে পাত্তাই দিচ্ছে না।

তারা বলছে করোনা আবার কি? মানুষের জন্ম মৃত্যু আল্লাহর হাতে,যখন মরণ আসে মরে যাবো।করোনার ভয়ে আতংকে থাকার কোন কারণ নেই। তারা দেদারছে মজার পিঠা খাচ্ছে আর যেন তেন ভাবে জীবন যাপন করছে।তাদের মনে শুভ বোধের উদয় কবে হবে তাই ভাবছি।

পরিশেষ বলবো -মুখে পানি চলে আসে মায়ের হাতের পীঠা খাওয়ার কথা মনে হলে। আর চাইলেও ফিরে পাওয়া যাবে না, আমার সেই হারানো শৈশব, আলো আধারে ঠাসা গেঁয়ো জীবন। পল্লী কবি জসিম উদ্দিনের কবর কবিতা মনে করিয়ে দেয়, আমারও পরম আত্মীয়দের রেখে দিয়েছি নয়ন জলে ভিজিয়ে মাটির নিচে।নিচ্ছি প্রস্তুতি যাবো সেই পথ ধরে না ফেরার ঘরে। হায়,এই কি জীবন?

লেখকঃ উপদেষ্টা মন্ডলির সদস্য,বাংলাদেশ কৃষকলীগ।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

শীতের পিঠা খাওয়ার মজা অন্য রকম, ড.গোলসান আরা বেগম

আপডেট টাইম : ১০:৩০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২০

ড.গোলসান আরা বেগমঃ বাঙালি সংস্কৃতি শীতের পিঠা,নবান্ন উৎসব,কে ঘিরে আবর্তিত হয়।একাল সেকালের চিন্তা, চেতনা, চাল চলন, জীবন যাপনে রয়েছে আকাশ পাতাল ব্যাবধান।শহর ও গ্রামের বৈষম্য চেষ্টা করেও ঘুছানো যাবে না। কুঁয়াশার চাদর মাথায় নিয়ে কনকনে শীত এলে, গ্রাম্য জীবন যাত্রার চেহারা যায় পাল্টে। শীতের তীব্রতার প্রভাব গেঁয়ো জনপদে বয়ে আনে নানা উৎসব পর্ব, সৌন্দর্যের নান্দনিকতা। একদিকে ঝরা পাতার মর্মর ধ্বনির বিচ্ছেদ হাহাকার। অন্য দিকে ঝিলে বিলে অতিথি পাখীর নয়ন কাড়া মিলন মেলা।কুয়াশার চাদরে মোড়ানো মাঠে বিছানো সবুজের

কারুকার্যতা। দূর্বা ঘাসের উপর শিশির কণা টুপটাপ গড়ায়। কাঁচা রোদ সকালে মুক্তা দানার মতো হাসে, শিশির বিন্দু বনবনানীর লতা পাতায়। সকালে বা সন্ধ্যায় আগুনের চার পাশে ঘিরে গা গরম করে শীতার্ত মানুষ। করে মজার মজার তর্ক তুলে হাসি ঠাট্টার বিনিময়। এ দৃশ্য শহরের কাঁচায় পোষা শিশুরা আদৌ কি দেখতে পারে বা জানে?  সন্ধ্যায় মা জননী কাঁপতে কাঁপতে মাটির চূলায় সেদ্ধ করে রাতের খাবার। তার আদরের সন্তানেরা আচল তলে

বসে শীতের পিঠা খায় আর হিম হিম ঠান্ডার মজা উপভোগ করে। যাদের ল্যাপ কম্বল নাই,থাকে কুঁড়ে ঘরে, তারা জানে শীতের তীব্রতা কত কষ্টের। তারপরও লবণ লংকার জীবন ভালোবেসে পথে প্রান্তরে ঘুরে বেড়ায় ও শির শিরে বাতাসে বসে পিঠে রোদ শুকায়। মাটির গতরে চাষাবাদ করে পেটের আহার, সোনালি ফসল ফলায়।

খেজুর গাছের গা থেকে নিসৃত তরল পদার্থ বিশেষ উপায়ে সংগ্রহ করা হয়,যাকে বলে খেজুরের রস,তা দিয়ে তৈরী করে খেজুরে গুড় ও ঘন রস, এই তথ্যটি শহরের বহু শিশুরা জানে না। এই উপাদান দিয়ে তৈরী পায়েশ, মিষ্টান্ন, ভাঁফা ও পিঠাপুলি কত না মজার, গাঁযে বসবাস কারী তারাই কেবল জানে।কৃত্তিম উপায়ে তৈবী কেক খায় যারা, তারা কি করে বুঝবে শীতের পিঠার স্বাদ ও মজা কতো। শহরের অলি গলিতে আজকাল পিঠাঘরে পাওয়া যায় নানা  ধরনের মজাদার হোম মেইড পিঠা।কেউ ইচ্ছে করলে জিহ্বায় তুলে নিতে পারে, ব্যবসায়িক উদ্দ্যেশে তৈরী পিঠার

স্বাদ। নবান্ন উৎসব মানেই বাহারি পিঠার মেলা। সরকারি বেসরকারি উদ্যোদে উদযাপন করা হয় রখমারী উপায়ে পিঠা উৎসব। শহরের পরিবারগুলো দুধকুলি, রসে ভিজা পিঠা,পাটিসপটা, চিটাপিঠা, নকশি পিঠা, কলাপিঠা সহ গ্রাম বাংলার উপভোগ্য পিঠা তৈরী করতে পারে না বা পেরেশানি হয়ে তৈরি করতে চায় না।

ফলে দোকানের তৈরী পিঠা তাদের কাছে অতি প্রিয় ও আকর্ষনীয়। কেউ যদি শীতের আচল ছুঁয়ে জোনাকের খেলা, শিউলি তলায় মৌ মৌ সুবাসের গন্ধ, নবান্নের ঘ্রান, কাশফুলের দোল, ঝলমলে চাঁদের আলোর নৃত্য, মাঠে ঘাটে বিছানো সরিষার হলুদ বর্ণালী ঢেউ,কারুকার্য আকা সবুজ লাবণ্য দেখতে চায়, ছুটে যেতে হবে গাঁয়ে। অাহারে সেই দিনগুলো আমি ফেলে এসেছি ঝাউতলায়, নদীর ধারে, পথের বাঁকে বাঁকে, বৃষ্টি ভেজা পিছল পথের কাদা জলে। স্মৃতির পাতা

উল্টাই,রুমন্থন করি মধুরতা, ইট পাথরের শহরের বদ্ধ ঘরে বসে, জীবনের শেষ বিকেলে। সন্ধ্যায় মানুষের ঢল নামে চায়ের আসরে, গ্রায়ের বাজারের খুপরি দোকান ঘরে।ধূয়া উড়ানো চায়ের কাপে উল্টায় রাজনীতির পাঠ,নানা কথার ফুল ঝুড়ি। গাল গপ্পের ফাঁকে রাতের গভীরতা নেমে আসে, বুঝতে পারে না কেউ।

সর্বক্ষণ বিদ্যুত সেবা পেয়ে আড্ডাগুলো জমে উঠে বেশ।এই তো গেয়োঁ জীবনে শীতের তীব্রতা মাথায় নিয়ে বেঁচে থাকার মধুরতা। কে কোথায় আছো,ক্ষণিকের তরে গাঁয়ে ফিরে যাও। মাথায় পড়ে শীতের টুপি,ঘণ কুয়াশায় পায়ে হেঁটে গাঁয়ের অালপথে ঘুরে বেড়াও। পাবে এক অনাবিল শান্তি,সহজ সরল গাঁয়ে বসবাসকারি মানুষের নরম আদুরে

সুখানুভূতি। এঘরে ওঘরে শীতের পিঠা খাওয়ার মজায় অন্য রখম মজার আমেজ খুঁজে পাবে।যে যেখানে যায় যাক সুখের খোঁজে।আমি এখানেই গাঁয়ের আলপখে হেঁটে বেঁচে থাকবো হাজারো বছর। যখন শীতের পিঠা খাওয়ার কথা বলছি,তখন পৃথিবীবাসি করোনা মহামারী ২০২০ দুর্যোগের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে।

কোবিড-১৯ জীবানুর ভয়ে মানুষ কাঁপছে। কখন কে আক্রান্ত হয় কেউ জানে না।করোনা জীবানু টেনে নেয় না ফেরার দেশে। শিক্ষিত সচেতন মানুষ মুখে মুখোশ ব্যবহার করছে করোনা প্রতিরোধে। ঘরবন্দি জীবন যাপন করছে। স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিধি বিধান মেনে চলছে। কিছু অবুঝ মানুষ করোনাকে পাত্তাই দিচ্ছে না।

তারা বলছে করোনা আবার কি? মানুষের জন্ম মৃত্যু আল্লাহর হাতে,যখন মরণ আসে মরে যাবো।করোনার ভয়ে আতংকে থাকার কোন কারণ নেই। তারা দেদারছে মজার পিঠা খাচ্ছে আর যেন তেন ভাবে জীবন যাপন করছে।তাদের মনে শুভ বোধের উদয় কবে হবে তাই ভাবছি।

পরিশেষ বলবো -মুখে পানি চলে আসে মায়ের হাতের পীঠা খাওয়ার কথা মনে হলে। আর চাইলেও ফিরে পাওয়া যাবে না, আমার সেই হারানো শৈশব, আলো আধারে ঠাসা গেঁয়ো জীবন। পল্লী কবি জসিম উদ্দিনের কবর কবিতা মনে করিয়ে দেয়, আমারও পরম আত্মীয়দের রেখে দিয়েছি নয়ন জলে ভিজিয়ে মাটির নিচে।নিচ্ছি প্রস্তুতি যাবো সেই পথ ধরে না ফেরার ঘরে। হায়,এই কি জীবন?

লেখকঃ উপদেষ্টা মন্ডলির সদস্য,বাংলাদেশ কৃষকলীগ।