ঢাকা , বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আড়াইহাজারে ফিরেছে আখের গুড়ের ঐতিহ্য

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ বেশ কয়েক বছর গুড় তৈরি বন্ধ করে দিয়েছিলেন চাষিরা। উন্নত বীজ, আধুনিক প্রযুক্তি ও দক্ষ কারিগরের অভাবে লোকসান গুনতে হয়েছিল কৃষকদের। তা ছাড়া কৃষিজমি ভরাট করে শিল্প-কারখানা তৈরি আর ভেজাল গুড় দখলে নিয়েছে দেশীয় বাজার। একসময় বিভিন্ন জেলার পাইকারদের পদচারণায় মুখরিত ছিল যে গ্রামটি আজ তা প্রচীন ঐতিহ্যের স্মৃতি হারাতে বসেছে। এর পরও তারা থেমে নেই। পূর্বপুরুষদের আদিপেশা অনেকেই ছাড়তে নারাজ।

হারানো ঐতিহ্যকে ফেরাতে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন উদ্যোগ নিলেও তা কাজে আসেনি। অবশেষে স্থানীয় শিল্পপতি মাসুদ খানের একান্ত উদ্যোগে আখচাষিরা আশার আলো দেখছেন। তিনি এলাকার কৃষকদের ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বীজ সংগ্রহ করে চাষিদের আখ চাষে উত্সাহিত করেন। এর পর থেকেই শুরু হয় ব্যাপক চাষাবাদ।

নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার উপজেলার বড় বিনাইরচর ও ছোট বিনাইরচর এলাকায় শত শত বছর ধরে গুড় তৈরির জন্য আখ চাষ করা হয়। ৫২৭, ৫৭০, ৮, রোহিঙ্গা, লোহাটাং গেণ্ডারী, খাকরী, মিরছিমালা, কাজলমালা, বাইশটেঙ্গি ও টেনাই নামের কয়েক প্রকার আখের চাষ হয় এই এলাকায়। তবে ৫৭০, রোহিঙ্গা ও লোহাটাং নামের এই আখের ফলন ভালো হয় বলে এখানে ব্যাপকভাবে চাষা হচ্ছে। আর এই আখ দিয়ে রসালো গুড় তৈরি করেন কৃষকরাই। সরেজমিনে দেখা গেছে, বড়বিনাইরচর ও ছোট বিনানাইরচর এলাকায় প্রায় ২০০ বিঘা জমিতে আখ চাষ হয়েছে। কেউ জমি থেকে আখ কেটে আনছেন। আবার দুই/তিন জন মিলে সেই আখ মেশিনে মাড়াই করছেন। এক জন মাড়াই করা আখের ছোবড়া বা খোসা রৌদ্রে শুকাচ্ছেন জ্বালানি হিসেবে ব্যবহারের জন্য, আবার কেউ বিশাল পাত্রে রস ঢেলে তা আগুনে জ্বালিয়ে কাঁচা রস পাকা করছেন। এভাবে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা আগুনে রস পাকা করে তা পাত্রে ঢালছেন। ঠাণ্ডা হলেই তা গুড়ে পরিণত হয়। এর একেকটি কড়াইতে প্রায় ৫০ কেজি গুড় তৈরি হয়।

আখচাষি হাজি শহিদুল্লাহ জানান, কত বছর আগে এখানে আখ চাষ শুরু তা আমার জানা নেই। তবে পূর্বপুরুষরাও এ আখ চাষে জড়িত ছিলেন। আখের চাষাবাদ আমি আমার বাবার কাছে শিখেছি। আমার দুই বিঘা জমিতে এবার আখের চাষ করেছি। প্রতি বিঘায় ১৫ মণ গুড় আমরা উৎপাদন করতে পারি।

বিনাইরচর এলাকার ব্যবসায়ী মাসুদ খান বলেন, ইচ্ছা আর উদ্যোগ থাকলে সব কিছুই সম্ভব। শত বছরের ঐতিহ্য আখ চাষ বেশ কয়েক বছর বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ভালো আখের বীজ সংরক্ষণ করতে না পারায় ও গুড় তৈরিতে ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। এ জন্য এলাকার কৃষকরা বেকার হয়ে পড়েছিলেন। তারপর নিজ থেকেই উদ্যোগ নিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ভালো মানের বীজ সংগ্রহ করে কৃষকদের হাতে পৌঁছে দিলাম। তাদের উত্সাহ ও সাহস দিলাম। তাছাড়া আমি নিজেও ১৫ বিঘা জমিতে আখ চাষ করি। এখন আস্তে আস্তে সবাই আখ চাষে মনোযোগী হয়েছেন। সরকারিভাবে কৃষকরা সহায়তা পেলে বাণিজ্যিকভাবে এখানে আখ চাষ করা সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

আড়াইহাজারে ফিরেছে আখের গুড়ের ঐতিহ্য

আপডেট টাইম : ০৪:১৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২১

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ বেশ কয়েক বছর গুড় তৈরি বন্ধ করে দিয়েছিলেন চাষিরা। উন্নত বীজ, আধুনিক প্রযুক্তি ও দক্ষ কারিগরের অভাবে লোকসান গুনতে হয়েছিল কৃষকদের। তা ছাড়া কৃষিজমি ভরাট করে শিল্প-কারখানা তৈরি আর ভেজাল গুড় দখলে নিয়েছে দেশীয় বাজার। একসময় বিভিন্ন জেলার পাইকারদের পদচারণায় মুখরিত ছিল যে গ্রামটি আজ তা প্রচীন ঐতিহ্যের স্মৃতি হারাতে বসেছে। এর পরও তারা থেমে নেই। পূর্বপুরুষদের আদিপেশা অনেকেই ছাড়তে নারাজ।

হারানো ঐতিহ্যকে ফেরাতে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন উদ্যোগ নিলেও তা কাজে আসেনি। অবশেষে স্থানীয় শিল্পপতি মাসুদ খানের একান্ত উদ্যোগে আখচাষিরা আশার আলো দেখছেন। তিনি এলাকার কৃষকদের ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বীজ সংগ্রহ করে চাষিদের আখ চাষে উত্সাহিত করেন। এর পর থেকেই শুরু হয় ব্যাপক চাষাবাদ।

নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার উপজেলার বড় বিনাইরচর ও ছোট বিনাইরচর এলাকায় শত শত বছর ধরে গুড় তৈরির জন্য আখ চাষ করা হয়। ৫২৭, ৫৭০, ৮, রোহিঙ্গা, লোহাটাং গেণ্ডারী, খাকরী, মিরছিমালা, কাজলমালা, বাইশটেঙ্গি ও টেনাই নামের কয়েক প্রকার আখের চাষ হয় এই এলাকায়। তবে ৫৭০, রোহিঙ্গা ও লোহাটাং নামের এই আখের ফলন ভালো হয় বলে এখানে ব্যাপকভাবে চাষা হচ্ছে। আর এই আখ দিয়ে রসালো গুড় তৈরি করেন কৃষকরাই। সরেজমিনে দেখা গেছে, বড়বিনাইরচর ও ছোট বিনানাইরচর এলাকায় প্রায় ২০০ বিঘা জমিতে আখ চাষ হয়েছে। কেউ জমি থেকে আখ কেটে আনছেন। আবার দুই/তিন জন মিলে সেই আখ মেশিনে মাড়াই করছেন। এক জন মাড়াই করা আখের ছোবড়া বা খোসা রৌদ্রে শুকাচ্ছেন জ্বালানি হিসেবে ব্যবহারের জন্য, আবার কেউ বিশাল পাত্রে রস ঢেলে তা আগুনে জ্বালিয়ে কাঁচা রস পাকা করছেন। এভাবে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা আগুনে রস পাকা করে তা পাত্রে ঢালছেন। ঠাণ্ডা হলেই তা গুড়ে পরিণত হয়। এর একেকটি কড়াইতে প্রায় ৫০ কেজি গুড় তৈরি হয়।

আখচাষি হাজি শহিদুল্লাহ জানান, কত বছর আগে এখানে আখ চাষ শুরু তা আমার জানা নেই। তবে পূর্বপুরুষরাও এ আখ চাষে জড়িত ছিলেন। আখের চাষাবাদ আমি আমার বাবার কাছে শিখেছি। আমার দুই বিঘা জমিতে এবার আখের চাষ করেছি। প্রতি বিঘায় ১৫ মণ গুড় আমরা উৎপাদন করতে পারি।

বিনাইরচর এলাকার ব্যবসায়ী মাসুদ খান বলেন, ইচ্ছা আর উদ্যোগ থাকলে সব কিছুই সম্ভব। শত বছরের ঐতিহ্য আখ চাষ বেশ কয়েক বছর বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ভালো আখের বীজ সংরক্ষণ করতে না পারায় ও গুড় তৈরিতে ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। এ জন্য এলাকার কৃষকরা বেকার হয়ে পড়েছিলেন। তারপর নিজ থেকেই উদ্যোগ নিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ভালো মানের বীজ সংগ্রহ করে কৃষকদের হাতে পৌঁছে দিলাম। তাদের উত্সাহ ও সাহস দিলাম। তাছাড়া আমি নিজেও ১৫ বিঘা জমিতে আখ চাষ করি। এখন আস্তে আস্তে সবাই আখ চাষে মনোযোগী হয়েছেন। সরকারিভাবে কৃষকরা সহায়তা পেলে বাণিজ্যিকভাবে এখানে আখ চাষ করা সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।