বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ বর্ষা বাংলার প্রাণ। কবি, কথা সাহিত্যিকদের লেখায় এই বর্ষা ধরা দিয়েছে নানা মাত্রায়। গুরু গুরু মেঘের মাদল আর রিমঝিম বৃষ্টি বাঙালির মনে ছড়িয়ে দেয় নানা মাত্রার অভিব্যক্তি। এই বর্ষা কখনো বিরহ যাতনার উপলক্ষ, কখনো সর্বনাশী, সর্বগ্রাসী। মানুষের জীবনের মানচিত্র পাল্টে দিয়ে সব ওলট-পালট করে দিয়ে যায় বর্ষার প্রচণ্ড রূপ। এই ঋতুকে বরণ করে নিতে প্রতিবারের মতো এবারও নানা আয়োজনে মুখর হয়ে উঠেছিল রাজধানী ঢাকা। সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী গানে কবিতায় আয়োজন করেছিল বর্ষা উত্সবের। শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় এই উত্সবে সবাই প্রকৃতিকে রক্ষার অঙ্গীকার জানালেন।
বিজন চন্দ্র মিস্ত্রীর রাগ ‘কাদেরিয়া’ পরিবেশনায় শুরু হয় বর্ষা উত্সবের আনুষ্ঠানিকতা। এরপর ‘মোর ভাবনারে কি হাওয়ায় মাতালো’ গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করেন স্পন্দনের শিশুশিল্পীরা। আবৃত্তিশিল্পী মাসকুর-এ-সাত্তার কল্লোল আবৃত্তি করেন শামসুর রাহমানের ‘হঠাত্ বৃষ্টি এল’। সত্যেন শিল্পীগোষ্ঠীর দলীয় পরিবেশনা ‘এসো শ্যামল সুন্দর’ এরপর ‘মন মোর মেঘের সঙ্গী’ গানের সঙ্গে দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে নৃত্যজন। বহ্নিশিখার শিল্পীরা গেয়ে শোনালেন ‘মেঘেরও ডম্বুরো বাজে’। ‘পাতা ঝরা বৃষ্টি বলো কেন এনেছো’ গানটির সঙ্গে দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে নৃত্যমঞ্চ। ‘রিমঝিম ঘন দেয়া বরষে’ গানের সঙ্গে আরেকটি নৃত্য পরিবেশন করে নৃত্যাক্ষের নৃত্যশিল্পীরা।
দলীয় সঙ্গীত পর্বে পঞ্চভাস্কর পরিবেশন করে ‘রিমঝিম ঘন ঘনরে বরষে’, সমস্বর ‘এসো নীপবনে ছায়াবিথীতলে।
জয় গোস্বামীর ‘মেঘ বালিকার জন্য রূপকথা’ কবিতাটি আবৃত্তি করেন নায়লা তারান্নুম চৌধুরী কাকলী। আবু বকর সিদ্দিক শোনান উকিল মুন্সীর গান ‘আষাঢ় মাইস্যা ভাসা পানিরে’, মামুন জাহিদ খান শোনান ‘বরষা তুমি অমন ভাবে ঝরো না গো, সঞ্জয় কবিরাজ ‘পরদেশী মেঘ’, আঞ্জুমান ফেরদৌস কাকলীর কণ্ঠে শোনা গেল ডি এল রায়ের ‘আমরা মলয় বাতাসে’। একক গান পরিবেশন করেন মহিউজ্জামান চৌধুরী ময়না, শ্যামা রহমান, মাহজাবীন রহমান শাওলী, শমসের, নবনীতা জাইদ চৌধুরী অনন্যা, রত্না সরকার, শ্রাবণী গুহ রায়।
বর্ষা কথন পর্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক প্রকৃতি সুরক্ষার আহ্বান জানিয়ে বলেন, মানুষ প্রকৃতিকে ভালোবেসে প্রকৃতি সুরক্ষা, ঋতুবৈচিত্র্য রক্ষায় যা কিছু প্রয়োজনীয়, করণীয় সবকিছু করবে। প্রকৃতির ওপর অত্যাচার, নিপীড়ন বন্ধে তারা আরো সচেতন হবেন। অধ্যাপক নিগার চৌধুরী বলেন, বর্ষা উত্সবের মতো অসাম্প্রদায়িক উত্সবে যোগ দিয়ে উত্সবপ্রিয় বাঙালিরা সম্প্র্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হবেন, তারাই প্রতিহত করবেন সাম্প্রদায়িকতা। অনুষ্ঠান শেষে শিশু-কিশোরদের মধ্যে বনজ, ফলদ ও ঔষধি গাছ বিতরণ করা হয়।