মামলার তদন্ত কর্মকর্তাসহ যারা বাবুলকে জড়িয়ে নানা কথাবার্তা বলছেন তাদের বাড়িতে গিয়ে তদন্ত করা হোক। তাদের জীবন যাপন ও সম্পদের খোঁজখবর নেয়া হোক। একই সঙ্গে বাবুলের বাড়িতে গিয়ে তার সম্পদ ও আসবাবপত্র খতিয়ে দেখা হোক। এসব দেখলেই সব পরিষ্কার হয়ে যাবে। কারণ বাবুল একজন সৎ ও নির্লোভ পুলিশ অফিসার। তাকে নিয়ে আমরা গর্ব করি। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সে এখন নির্মম ষড়যন্ত্রের শিকার।’ খবর যুগান্তর’র।
চাঞ্চল্যকর মিতু হত্যাকাণ্ডের নানামুখী তথ্যে শুধু গণমাধ্যম কর্মীরা নয়, পুরো দেশবাসীই এখন বিভ্রান্ত। দিন যত যাচ্ছে ততই পাওয়া যাচ্ছে অবিশ্বাস্য রকম নানা তথ্য। তদন্তের শুরুটা জঙ্গি সন্ত্রাসীসহ বিএনপি-জামায়াতের ক্যাডারদের মধ্যে ঘুরপাক খেলেও এখন তা ঢুকে পড়েছে খোদ মিতুর স্বামী এসপি বাবুল আক্তারের ঘরের মধ্যে। অনেকটা নিষ্ঠুর, নির্মম ও ঘৃণিত তথ্য হলেও খোদ পুলিশের নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে দিন কয়েক আগে দাবি করা হয়, মিতুর পরকীয়া ঠেকাতে বাবুল আক্তার নিজেই এ খুনের পরিকল্পনাকারী ও নির্দেশদাতা। একজন মৃত মানুষের চরিত্র হনন ছাড়াও অনেকের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হবে না বলে কোনো কোনো গণমাধ্যম বিষয়টিকে ভিন্নভাবে প্রকাশ করে। এর একদিন পর মঙ্গলবার আরও একটি দায়িত্বশীল সূত্রে বলা হয়, মিতু নয়, পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েছিলেন এসপি বাবুল আক্তার নিজেই। সেই মেয়ের সঙ্গে নির্বিঘ্নে সংসার পাততে বাবুল তার স্ত্রী মিতুকে এভাবে সরিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করেন। এজন্য তিনি তার রানার (ব্যক্তিগত বার্তাবাহক-পুলিশ কনস্টেবল) সাদ্দামের মাধ্যমে সোর্স মুসাকে দুই লাখ টাকা দিয়ে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন ইত্যাদি।
প্রসঙ্গত, যেসব সূত্র থেকে এসব ভয়াবহ ও অবিশ্বাস্য রকম তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যাচ্ছে তা কোনো সাধারণ সূত্রও নয়। সঙ্গত কারণে পরিচয় গোপন রাখার স্বার্থেই তারা এসব তথ্য উপাত্ত দিচ্ছেন। এমনকি এও বলা হচ্ছে, এর সপক্ষে তাদের কাছে অনেক তথ্য প্রমাণও রয়েছে। এসপি বাবুল যার সঙ্গে পরকীয়া করেছেন সেই মেয়ের গ্রামের বাড়ি ফেনী। তাকেও নাকি জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
এদিকে এই যখন অবস্থা তখন মঙ্গলবার একান্ত সাক্ষাৎকারে বাবুল আক্তারের শ্বশুর মোশাররফ হোসেন পুরো বিষয়টিকে বানোয়াট ও মহল বিশেষের গভীর ষড়যন্ত্র বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, তার জামাতা শতভাগ নির্দোষ। একটি চক্র বাবুলকে চাকরি ছাড়া করতে এসব রটাচ্ছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘আমরা যদি মুখ খুলি তবে সব ষড়যন্ত্র উড়ে যাবে।’ হয়তো শেষ পর্যন্ত আমাদের মুখ খুলতেই হবে।
ওদিকে বাবুল আক্তারের বরাত দিয়ে সূত্রটি জানায়, বাবুল আক্তার তাকে জানিয়েছেন, তিনি যদি পরকীয়া করে থাকেন তাহলে সেই মেয়ের নাম পরিচয় প্রকাশ করা হোক। পরকীয়া করে থাকলে নিশ্চয় তিনি ওই মেয়ের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেছেন। কোথাও না কোথাও দেখা করেছেন। কেউ না কেউ তা দেখেও থাকতে পারেন। তাহলে সেসব প্রমাণ হাজির করা হোক। এছাড়া তিনি জানিয়েছেন, একসঙ্গে বহু চাঞ্চল্যকর মামলা তদন্তের অভিজ্ঞতা আছে তার। একটি ডাকাতি ও অস্ত্র মামলার তদন্তে অন্যতম সোর্স ছিলেন মুসা। তাই তিনি যদি তার স্ত্রী মিতুকে হত্যার পরিকল্পনা করেই থাকেন তাহলে তার মতো একজন পুলিশ অফিসার কেন সোর্স মুসাকেই ব্যবহার করবেন? এছাড়া পরকীয়ার কারণে যদি স্ত্রীর সঙ্গে মনোমালিন্য হয় তাহলে তাকে হত্যা করতে হবে কেন? সংসার না করলেই তো পারতেন। সর্বোপরি এ দাম্পত্য কলহের বিষয় গোপন থাকার কোনো সুযোগ নেই। কেউ না জানলেও তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন অবশ্যই জানতেন। কিন্তু তারা কি এসব কখনও শুনেছেন?
এসপি বাবুল আরও বলেন, আসলে তার বিরুদ্ধে সেই ২০০৭ সাল থেকেই ষড়যন্ত্র চলে আসছে। তখনই তাকে একটি মহল শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আল্লাহর রহমতে তারা তা পারেনি। ওই চক্রের সঙ্গে এখন নতুন করে যুক্ত হয়েছে আরও কিছু প্রতিহিংসাপরায়ণ প্রভাবশালী ব্যক্তি। যারা এসব নোংরা ও বানোয়োট কথা ছড়াচ্ছে। এসপি বাবুল আক্তারের প্রশ্ন- যারা প্রথমে বলেছিল মিতুর পরকীয়ার কারণে তিনি এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন তারা ওই ছেলের নাম বলুক, তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তো অনেক তথ্য জানার কথা। কিন্তু তারা তা করছে না কেন?
সূত্রটি জানায়, এরাই বাবুল আক্তারকে ওপর মহলের কথা বলে চাকরি ছাড়ার প্রস্তাব দেন। কিন্তু বাবুল আক্তার মনে করেন, তিনি শতভাগ পরিষ্কার আছেন। বরং তার দুই সন্তানসহ তাদের গোটা পরিবারের শোকাবহ অবস্থার মধ্যে যারা এসব ঘৃণিত ষড়যন্ত্র করছেন তাদের মুখোশ একদিন উন্মোচন হবেই। তিনি বলেন, তার বড় ছেলে এখন মানসিকভাবে ট্রমাটাইজড। কেননা তার সামনেই খুনিরা তার মাকে হত্যা করেছে। এছাড়া সাড়ে ৩ বছরের ছোট্ট মেয়ে সারা দিন মা মা বলে আহাজারি করছে। ওদের মুখের দিকে তিনি তাকাতে পারছেন না। তিনি নিজেও বিপর্যস্ত। এ অবস্থায় যারা এসব করছে নিশ্চয় সরকারের নীতিনির্ধারক মহল বিষয়টি গভীরে গিয়ে খতিয়ে দেখবে।