বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ বরিশাল-২ (বানারীপাড়া-উজিরপুর) আসনে আওয়ামী লীগ থেকে প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে রয়েছেন বর্তমান এমপি থেকে শুরু করে সাবেক এমপি এবং বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও পৌর মেয়রসহ ৮ প্রার্থী। বিএনপি থেকে মনোনয়ন দৌড়ে রয়েছেন সাবেক হুইপ থেকে শুরু করে অবসরপ্রাপ্ত কর্নেলসহ চারজন। তবে এ আসনে চমক হতে পারে জাতীয় পার্টির গোলাম ফারুক অভি প্রার্থী হলে। সে ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির হিসাব-নিকাশ পাল্টে দিতে পারে অভি অনুসারীরা। এ আসনে ১৪ দল থেকে প্রার্থী চাইবে দু’ভাগে বিভক্ত হওয়া জাসদও।
আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস এমপি, বানারীপাড়ার উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি গোলাম ফারুক, জেলা আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক বানারীপাড়া পৌরসভার মেয়র সুভাষ চন্দ্র শীল, সাবেক এমপি মনিরুল ইসলাম মনি, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আনিসুর রহমান, আওয়ামী লীগ নেতা হাবিবুর রহমান খান, ফাইয়াজুল হক রাজু ও ইঞ্জিনিয়ার আব্দুর রাজ্জাক।
বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হচ্ছেন জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও বানারীপাড়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টু, সাবেক হুইপ শহিদুল হক জামাল, অব. কর্নেল সৈয়দ আনোয়ার হোসেন ও সাংবাদিক ইলিয়াস আলী খান।
১৯৯১ সালের নির্বাচনে এ আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী শহিদুল হক জামাল এমপি নির্বাচিত হন। তিনি বর্তমান শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমুকে পরাজিত করেন। ১৯৯৬ সালে শহিদুল হক জামালকে পরাজিত করে এমপি নির্বাচিত হন শেরেবাংলা একে ফজলুল হকের ছেলে একে ফায়জুল হক। তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী। ২০০১ সালে পুনরায় এমপি নির্বাচিত হন শহিদুল হক জামাল। ওই বছর সরকার গঠন করে বিএনপি। শহিদুল হক জামাল হুইপ নির্বাচিত হন। ওই নির্বাচনে জামালের কাছে হেরে যান শেরেবাংলার ছেলে ফায়জুল হক। বিএনপি শাসনামল শেষ হওয়ার পর দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। ওই সময় সংস্কারপন্থিদের সারিতে নাম লেখান শহিদুল হক জামাল। এ কারণে ২০১৭ সালের নির্বাচনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন দেয়া হয় শিল্পপতি সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টুকে। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মনিরুল ইসলাম মনির কাছে পরাজিত হন সান্টু। সর্বশেষ ২০১৩ সালের সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করেনি। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. নাসিমকে পরাজিত করে এমপি নির্বাচিত হন। এ ছাড়া উজিরপুর ও বানারীপাড়া নিয়ে বরিশাল-২ আসন থাকাকালীন জাতীয় পার্টি থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন গোলাম ফারুক অভি। ওই সময় বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী দলের যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালকে অভি বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন। এমপি নির্বাচিত হয়ে অভি উজিরপুরের উন্নয়নে ব্যাপক কাজ করায় তিনি ব্যাপক জনপ্রিয় হয়েছিলেন। তবে মডেল কন্যা তিন্নি হত্যাকাণ্ডের পর অভি দেশ ছাড়েন। তিন্নি হত্যা মামলা থেকে পরিত্রাণ পেলে তিনিও নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন বলে দলের নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে। মামলার পর থেকে অভি আমেরিকা ও কানাডায় অবস্থান করছেন।
আগামী নির্বাচনে ওই আসন থেকে আওয়ামী লীগের টিকিট প্রাপ্তির দৌড়ে আছেন বর্তমান এমপি ইউনুসসহ ৮ প্রার্থী। এদের মধ্যে শক্ত অবস্থানে রয়েছেন বানারীপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক। তিনি ওই উপজেলা থেকে দু’বার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তাছাড়া এলাকার উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখা এবং নেতাকর্মীদের সঙ্গে সখ্য থাকায় আগামী সংসদ নির্বাচনে এমপি প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন তিনি। তাকে সহযোগিতা করছেন স্থানীয় প্রভাবশালী নেতারাও। একই আসন থেকে বানারীপাড়ার পৌর মেয়র সুভাষ চন্দ্র শীলও সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে প্রার্থী হতে চান সাবেক এমপি মনিরুল ইসলাম মনিও। এ জন্য তিনি এলাকায় আসা শুরু করেছেন। নেতাকর্মীদের খোঁজ খবর নিচ্ছেন। এমনকি বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও অংশ নিচ্ছেন। বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড নিয়ে বানারীপাড়া ও উজিরপুরে দৌড়ঝাপ করছেন। ইতিমধ্যে এলাকায় পা রেখেছেন শেরেবাংলা একে ফজলুল হকের নাতী ফাইয়াজুল হক রাজুও। তাদের সঙ্গে মনোনয়ন যুদ্ধে রয়েছেন সাবেক ছাত্র নেতাসহ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। তারা এলাকায় না এলেও ঢাকায় কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছেন।
২০০৮ সালে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেয়ায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী শওকত হোসেন হিরন মেয়র নির্বাচিত হন। তার সঙ্গে অল্প ভোটের ব্যবধানে হেরে যান স্বতন্ত্র প্রার্থী শিল্পপতি সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টু। এরপর সান্টু বিএনপিতে যোগ দিয়ে ২০১৭ সালের সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে বরিশাল-২ আসন থেকে মনোনয়ন পান। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মনিরুল ইসলাম মনির কাছে সান্টু হেরে যান। এরপর থেকে সান্টু বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। উপজেলা নির্বাচন থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী দেয়া এবং তাদের জন্য প্রচার-প্রচারণায় সান্টু কাজ করেন। ওই নির্বাচনের পর থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের এলাকায় দেখা যায়নি। তবে সান্টু সবচেয়ে বেশি পরিচিতি পান উজিরপুরের গুঠিয়ায় ১১ কোটি টাকা ব্যয়ে অত্যাধুনিক মসজিদ নির্মাণ করে। যা তার বাড়ি সংলগ্ন এলাকায়। দেশ বিদেশ থেকে পর্যটক আসেন ওই মসজিদ দেখার জন্য।
এ আসন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক এমপি শহিদুল হক জামালও। সংস্কারপন্থি হওয়ায় জামাল কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছ থেকে অনেকটা দূরে সরে গেছেন। তারপরও তিনি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে মনোনয়ন নিশ্চিতের দৌড়ে আছেন। হঠাৎ করে এলাকায় এসে গণসংযোগ শুরু করেছেন কর্নেল (অব.) ইঞ্জিনিয়ার সৈয়দ আনোয়ার হোসেন। বানারীপাড়ার বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগ করছেন। তারও ইচ্ছা বিএনপি থেকে মনোনয়ন পাওয়ার। এদের সঙ্গে মনোনয়ন দৌড়ে রয়েছেন সাংবাদিক নেতা ইলিয়াস আলী খান এবং বেসরকারি সংস্থা ভোসডের পরিচালক ও জেলা বিএনপি নেতা মশিউর রহমান মনির।
১৪ দলীয় জোটের হয়ে মনোনয়ন চাইবেন জাসদ নেতা উজিরপুরের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও খণ্ডিত জাসদের যুগ্ম মহাসচিব আবুল কালাম আজাদ বাদল। উপজেলা চেয়ারম্যান থাকাকালীন তিনি এলাকার উন্নয়ন করায় তার রয়েছে জনপ্রিয়তা। গত সংসদ নির্বাচনে তার স্ত্রী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিলেও সকাল ১০টায় ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান।
এদিকে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস এমপি, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম শাহিন ও মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি কাউন্সিলর মর্তুজা আবেদীন জানান, নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার প্রত্যাশা অনেকেরই থাকে। তবে দল যাকে উপযুক্ত মনে করবে তার পেছনে দলীয় নেতাকর্মীরা কাজ করবে। এর ব্যত্যয় হলে দল থেকে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ তুলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে কেন্দ্রীয় নেতারা।