সাবেক রাষ্ট্রপতি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ দ্রুত গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন। বলেছেন এ দাবিতে ঈদের পর তিনি তাঁর পার্টির কর্মসূচী নিয়ে মাঠে নামবেন। জেলায় জেলায় সভা সমাবেশ করবেন।
এরশাদ বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন গ্রহণযোগ্য না হলে জাতীয় পার্টি অংশগ্রহণ করবে না। কারণ যে নির্বাচনে সহিংসতা হয় মানুষ খুন হয় সে নির্বাচনে জাতীয় পার্টি যেতে পারে না।
তিনি সর্বশেষ ইউপি নির্বাচনের সহিংসতার চিত্র তুলে ধরে বলেন, সহিংসতার নির্বাচন জনগণ চায় না।দেশের চলমান পরিস্থিতির অবসান ঘটিয়ে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরয়ে আনতে হলে সকল দলের অংশগ্রহণে গ্রহণযোগ্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিকল্প নেই।
বুধবার রাতে দিল্লি সফর শেষে ঢাকা ফিরেছেন। সামনে সৌদি আরব সফরে যাবেন। দিনক্ষন ঠিক হয়নি। বারিধারার প্রেসিডেন্ট পার্কের ফ্লাটে বৃহস্পতিবার দুপুরে পূর্বপশ্চিমের সঙ্গে একান্ত আলাপনে তিনি এ কথা বলেন।
জা্তীয় পার্টিকে রাস্তায় দেখা যাচ্ছেনা এমন প্রশ্নে এরশাদ বলেন, সত্যি কথা। আমাদের দলের কিছু সমস্যা ছিল তা কাটিয়ে উঠছি। আমার স্ত্রী রওশন এরশাদ, জিএম কাদের আমাদের মহাসচিব সবাই আমরা এথন যথেষ্ট গোছানো ও সংগঠিত । আমরা সকল মনোমালিন্য ভুলে দলকে সক্রিয় করতে কাজ করছি। ইনশাআল্লাহ ঈদের পর থেকে জাতীয় পার্টিকে রাস্তায় দেখা যাবে।
দলকে গতিশীল করতে রমজান মাসে কোনো বিশেষ কাযক্রম রাখা হয়নি জানিয়ে তিনি আরো বলেন এই রমজানে পূর্ণাঙ্গ কার্যনির্বাহী কমিটি ঘোষণা করা হবে। এবং ঈদের পর জেলায় জেলায় সভা সমাবেশ করা হবে। তৃণমূল পর্যায়ে এ কমিটি যাবে এবং কাজ করবে।
নারীদের অংশগ্রহণ কম স্বীকার করে এরশাদ বলেন, নিয়ম অনুযায়ী ২০শতাশং নারী সদস্য থাকার কথা থাকলেও দলে নারী সদস্য নেই এ অবস্থা শুধু জাতীয় পার্টির নয় আওয়ামী লীগ হোক বা অন্য যে কোনো দল সব সংগঠনেরই একই অবস্থা জানিয়ে এরশাদ বলেন, ২০% নারী থাকার কথা। কিন্তু কোথাও নাই। এজন্য সময় লাগবে। অবশ্য আওয়ামী লীগে বিনা নির্বাচনে কিছু নারী সদস্য আছে সংরক্ষিত আসনেও কিছু আছে, দেখে মনে হয় আমাদের চেয়ে বেশি
চলতি অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেট প্রসঙ্গে এরশাদ বলেন, আমার দলের সাংসদরা প্রতিদিনই সংসদে বাজেট বিষয়ে কথা বলেছে। আমরা এর সমালোচনাও করেছি। এ বাজেট সাধারণ মানুষকে চিন্তা করে করা হয়নি ।
তিনি বলেন, সরকারের সকল নেতিবাচক দিক নিয়ে জাতীয় পার্টি সোচ্চার। আমাদের অবস্থান হয়তো চোখে পড়ার মতো করে আমরা প্রকাশ করতে পারছি না। এ জন্য আর একটু অপেক্ষা করতে হবে। আমরা সংগঠিত হচ্ছি। দলের গতিশীলতা বাড়ছে, সামনে আরো বাড়বে।
এরশাদ বলেন, খুন-গুম অনেক বেড়ে গেছে, সাথে যোগ হয়েছে, ক্রস ফায়ার না বন্ধুক যুদ্ধ। এর থেকে পরিত্রানের উপায় নির্বাচন। যেভাবে মানুষ খুন হচ্ছে, বন্দুক যুদ্ধে মারা যাচ্ছে। কত মায়ের বুক যে খালি হচ্ছে প্রতিদিনই। বিনাবিচারে। কি বলবো এদের মায়েদের স্বজনদের চোখের পানিতে বাংলাদেশ ভেসে যাবে। অভিশাপ বয়ে আনবে।
এ সরকারের আমলে অনুষ্ঠিত সকল নির্বাচনকে কটাক্ষ করে এরশাদ বলেন, এই মূহূর্তে বলতে চাই সদ্য হয়ে যাওয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের কথা। ১৪৪ জনের মধ্যে ২ জন আমার দলের কর্মী মারা গেছে। আওয়ামী লীগেরই কর্মী মারা গেছে বেশী। গ্রামে গঞ্জে নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট হয়ে গেছে। এর আগে কখনো এধরনের সহিংস নির্বাচন হয় নি। এ ধরনের নির্বাচন করলে ভবিষ্যত খুব খারাপ। সাধারণ মানুষ নির্বাচন বিমুখ হয়ে যাবে। সামনে জাতীয় নির্বাচনে কি হবে তা নিয়ে আমি আতঙ্কিত। জাতীয় কিংবা স্থানীয় নির্বাচন বলে কোনো কথা নাই। নির্বাচন হতে হবে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ। আর যদি ইউপি নির্বাচনের মতো জাতীয় নির্বাচন হয় তাহলে আমাদের অংশগ্রহণ করা কঠিন হয়ে যাবে। কারণ আমাদের আমাদের অস্ত্র নেই অর্থ নেই ।
দেশে আইএসের উপস্থিতির কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসব ভোগাস। বাংলাদেশে আইএস বলে কিছু নেই। এসবে একদম কান দেয়া যাবে না। যা হচ্ছে তা সরকারের দূর্বলতা।
শরীরটা ঠিক্ই আছে বয়সের কারণে মাঝে মাঝে একটু বিগড়ে যায় এই যা, তাতো হবেই বলে জানালেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ তবে এখনো প্রতি সপ্তাহে শুক্র শনিবার করে গলফ খেলেন। ছেলে এরিখকে নিয়ে বেশ ভালো আছেন তিনি। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত জাতীয় পার্টির মাধ্যমে জনসেবা করে যেতে চান বলে সবশেষে জানালেন এরশাদ।