জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও দলের জ্যেষ্ঠ সংসদ সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেছেন, ২৬ বছর ধরে ডাকসু নির্বাচন হয় না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয় না। অথচ ছাত্ররাই এ দেশের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ছাত্ররাই আগামী দিনে দেশকে নেতৃত্ব দেবে। ছাত্র রাজনীতির প্রয়োজন আছে। ছাত্র সংসদ না থাকায় তারা এখন সঠিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে না, বিপথগামী হচ্ছে। তারা সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ছে। তাই দ্রুত ছাত্র রাজনীতি চালু করতে হবে।ডাকসুসহ দেশের সব সরকারি-বেসরকারি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন দিতে হবে।
সম্প্রতি গুলশানের নিজ বাসায় পূর্বপশ্চিমকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন তিনি। সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় পর্ব আজকে দেওয় হলো।
জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদল কিছুদিন আগে দিল্লি সফর করে। দলটির নেতৃত্ব দিয়েছেন জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু। প্রতিনিধি দলে আরও ছিলেন, ফখরুল ইসলাম এমপি, পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ এমপি, নুরুল ইসলাম মিলন এমপি, মোহাম্মদ নোমান এমপি, আমির হোসেন এমপি, অ্যাড. আলতাফ আলী এমপি। এই সফর সম্পর্কে জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির এই সাবেক মহাসচিব বলেন, সফরকালে আমরা ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি, লোকসভার ডেপুটি স্পিকার থাম্বী ডুরাই, পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ, রাজ্য সভার প্রতিনিধি, ক্ষমতাসীন বিজেপি, বিরোধী দল কংগ্রেসের সহসভাপতি রাহুল গান্ধী, ঢাকায় ভারতের সাবেক কূটনীতিকসহ বিভিন্ন মহলের সঙ্গে বৈঠক করেছি। তারা আমাদের সম্মান দিয়েছে। এই প্রথম জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের প্রতিনিধি দল ভারত সফর করেছে। তবে সফরকালে আমরা বার বার দেশের জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েছি। তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। জানতে চেয়েছে কারণ কী? আমরা ব্যাখ্যা দিয়েছি।
জিয়াউদ্দিন বাবলু জানান, ভারত বন্ধুপ্রতীম দেশ হিসেবে শুধু বাংলাদেশের জন্য বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত না। তারা চিন্তিত আরো একটি কারণে। সেটি হলো, বাংলাদেশের জঙ্গিবাদ কি তাদের দেশকে অনিরাপদ করতে পারে কিনা।
তিনি বলেন, ভারতে মনে করছে, প্রতিবেশি দেশ হওয়াতে বাংলাদেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি ভারতকে অনিরাপদ করতে পারে। আবার ভারতের কোন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বাংলাদেশকে অনিরাপদ ও অস্থিতিশীল করতে পারে। তাই ভারত সরকারের শীর্ষ পর্যায় এমনকি দেশটির রাষ্ট্রপতিও মনে করেন, এক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে ভালো বোঝাপড়া থাকতে হবে।
বাবলু বলেন, তবে ভারত এও বলেছে, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ শুধু বাংলাদেশের সমস্যা নয়। এটি একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা। গুলশান, শোলাকিয়ার ঘটনা বিছিন্ন ঘটনা বলে ভারতের সব পর্যায়ে আমরা বলেছি।
এসব সন্ত্রাসবাদে আন্তর্জাতিক কোন সম্পৃক্ততা রয়েছে কিনা এমন কোন প্রশ্ন দিল্লি থেকে তোলা হয়েছে কিনা, এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হ্যাঁ, তারা জানতে চেয়েছে। তবে আমরা স্পষ্ট করেই বলেছি, এর সঙ্গে কোন আন্তর্জাতিক সম্পৃক্ততা নেই। এগুলো আমাদের দেশীয় সন্ত্রাসবাদ।
বাবলু বলেন, সফরকালে ভারতের পক্ষে বাংলাদেশের মানুষের অবস্থা ও চিত্র জানতে চেয়েছে তারা। তারা দেশে গণতন্ত্র চর্চার কথা জানতে চেয়েছে। আমরা বলেছি, বাংলাদেশের গণতন্ত্র নতুন। ভারত বৃহৎ গণতন্ত্রের দেশ। বাংলাদেশে গণতন্ত্র বিভিন্ন সময় ব্যাহত হয়েছে, উত্থান-পতন হয়েছে। ১৯৯১ সালের পর থেকে কিছুটা ধারাবাহিকতা তৈরি হয়েছে।
দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ে কোনো কথা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে বাবলু বলেন, না। ভারতের কোনো পর্যায় থেকে দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ে জানতে চায়নি। আমরাও এগুলো নিয়ে কথা বলিনি।
জাতীয় পার্টি প্রকৃত অর্থে বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করতে পারছে না। তারা সরকারেও আছে। এ নিয়ে কোনো কথা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে বলেন, আমরা আমাদের বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করে যাচ্ছি।
বাণিজ্য নিয়ে কথা হয়েছে জানিয়ে এই সাংসদ বলেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য ঘাটতি বড় আকারে। আমরা বলেছি, এটি কিভাব আরো কমিয়ে আনা যায়। তারা বলেছে, বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে যা সুবিধা চাইবে তারা দিতে প্রস্তত। চাইলে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা ভারতে বিনিয়োগ করতে পারে। তা উৎসাহিত করা হবে।
সীমান্ত হত্যা নিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। জবাবে ভারত জানিয়েছে, এটি ধীরে ধীরে কমছে। আগামীতে আরও কমে আসবে।
পানি সমস্যা নিয়েও জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুরা কথা বলেছেন। কী বলেছেন প্রশ্নে এরশাদ সরকারের সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের ৫৪টি নদী রয়েছে। এগুলোর পানি যাতে ন্যায্যভাবে আমরা পাই সেটি বলেছি। ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি ও ছিটমহল সমস্যার সমাধান হওয়াতে আমরা ভারত সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছি।
সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, সমুদ্র সম্পদ ব্যবস্থাপনা নিয়ে কথা হয়েছে দুই দেশের মধ্যে। সমুদ্রের সীমানা যেহেতু নির্ধারিত হয়েছে, তাই এখন এই সমুদ্র সম্পদ কিভাবে ব্যবহার করা যায় সেটি নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারত এক সঙ্গে কাজ করতে পারে। ভারত এ ব্যাপারে এক সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত বলে দেশটির সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে জানানো হয়েছে।
ট্রানজিট নিয়ে আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে বলেন, আমরা ট্রানজিটের পক্ষে। তবে কোনোভাবেই যাতে এর মাশুল থেকে আমরা বঞ্চিত না হই সেটি আমরা বলেছি। এছাড়া, ভারত-বাংলাদেশের দুই দেশের জনগণের মধ্যে সর্ম্পক আরো কিভাবে জোরদার করা যায় সেটি নিয়েও কথা হয়েছে। এ জন্য সরকারের উদ্যোগ কার্যক্রম হাতে নেয়ার বিষয়টি সামনে এসেছে।
জিয়াউদ্দিন বাবুল পূর্বপশ্চিমকে বলেন, আমি মনে করি, আইনশৃংখলা বাহিনী দিয়ে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মোকাবেলা করা যাবে না। এর সঙ্গে সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে সম্পৃক্ত করতে হবে। ছাত্র রাজনীতি ও সাংস্কৃতিক চর্চা চালু করতে হবে। ২৬ বছর ধরে ছাত্র সংসদ নেই। ডাকসু নির্বাচন নেই। অথচ ছাত্ররাই দেশের প্রয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। কিন্তু এখন তারা সঠিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে না। তাই দ্রুত দেশের সব সরকারি-বেসরকারি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ছাত্র রাজনীতি চালু করতে হবে। চালু করতে গেলে বাধা আসতে পারে। সব কাজ শুরু করতে গেলে বাধা আসবে। কিন্তু তারপরও শুরু করতে হবে। যাতে করে ছাত্ররা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে উজ্জীবিত হতে পারে। তরুণদের বিপদ থেকে উদ্ধার করতে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া জরুরি।