বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ ইসলাম মানবতা নিষ্ঠা ও একতার ধর্ম, পৃথিবীর সব আদর্শের মডেল, সৌন্দর্যের প্রতীক। সৌহার্দ-সম্প্রীতির বর্ণিল উষা। নামাজ হলো সে উষালোকের রশ্মি বা দ্যোতি। ইসলামের মুল রোকনের দ্বিতীয়টিই হলো নামাজ। এ নামাজকে যারা দুনিয়া রক্ষার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে যুগে যুগে তারাই সফলতা লাভ করেছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, “হে নবী আপনার পরিবার পরিজনকে নামাজের হুকুম করুন ও আপনি নামাজের ব্যাপারে যত্মবান হোন। আপনার নিকট আমি কোনো রিযিক চাই না; কেননা রিযিক তো আমিই আপনাকে দান করবো।
পৃথিবীর সব কিছু আল্লাহকে সিজদাহ করে। প্রশংসায় থাকে নতশির। পবিত্র কালামুল্লাহর সুরা রাআদ-এর ১৫ নং আয়াতে বলা হয়েছে, আল্লাহর প্রতি সিজদারত হয় আকাশম-লী ও পৃথিবীতে যা আছে ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায় এবং তাদের ছায়াগুলোও সকাল-সন্ধ্যায় সিজদাবনত হয়। আর সূরা হজ্ব এর ১৮ নং আয়াতে বলা হয়েছে তুমি কি দেখনা আল্লাহকে সিজদা করে যা কিছু আছে আকাশম-লী ও পৃথিবীতে, সূর্য, চন্দ্র, নক্ষত্রম-লী, পর্বতমালা, বৃক্ষরাজি, জীবজন্তুও সিজদাহ করে, মানুষের মধ্যেও অনেকেই।
নামাজ একমাত্র আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য। সূরা কাউসারে বলা হয়েছে, তুমি তোমার প্রভূর জন্যই নামাজ পড় এবং কোরবানী কর। মানুষের আত্মার ভেতরে জমে থাকা খারাপ চিন্তার বিলুপ্তি সাধনে নামাজের ভূমিকা অপরিসিম। এ কারণে আল-কুরআনের অন্য জায়গায় ইরশাদ হয়েছে, নিশ্চয় নামাজ অশ্লীল কাজ থেকে বিরহ রাখে।
আজ তো আমরা নামাজে দাঁড়াই দুনিয়ার সব ব্যস্ততা মাথায় নিয়ে। নামাজে দাঁড়ালে আমাদের শুরু হয় নানা হিসাব নিকাশ। ফলে নামাজও প্রাকারান্তরে ব্যবসা, চাকুরী বা অন্যান্য কর্ম ক্ষেত্রে পরিণত হয়ে যায়। যদি আমরা প্রতিটি নামাজকে জীবনের শেষ নামাজ মনে করে আদায় করি তাহলে প্রতিটি নামাজ হবে যথার্থ ও পূর্ণাঙ্গ। যা ইহ ও পরকালে আমাদের কাজে আসবে। অন্যথায় আমাদের এই গতানুগতিক ও দায়সারা নামাজ হাশরের মহামসিবতের সময় ‘প্রজ্জলিত অগ্নিতে ঘৃতাহুতি’ হয়ে দাঁড়াবে। তাই সময় থাকতেই আমাদের সতর্ক হওয়া উচিত। উক্ত কথাগুলো বলেছেন (শাইখুল ইসলাম আল্লামা তাকী উসমানী)।
বোখারী ও মুসলিম শরীফে বর্ণিত, কেয়ামতের দিন যে সাত শ্রেণীর লোক আল্লাহর রহমতের ছায়া পাবে তন্মধ্যে ঐ ব্যক্তিও আছে যে একবার নামাজ আদায় করে বের হলে পুনরায় নামাজের সময়ের অপেক্ষায় মসজিদের প্রতি মন পড়ে থাকে। এমনকি সে পুনরায় মসজিদে গমন করে।
যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ ছেড়ে দেবে তার চেহারার উজ্জ্বলতা নষ্ট হয়ে যাবে। জোহরের নামাজ ছাড়লে রুজির বরকত কমে যাবে, আসরের নামাজ ছাড়লে শরীরের শক্তি কমে যাবে, মাগরিবের নামাজ ছাড়লে ছেলে সন্তান কাজে আসবে না, এশার নামাজ ছাড়লে নিদ্রার পরিতৃপ্তি নষ্ট হয়ে যাবে।
রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, যখন তোমরা নামাজে দাঁড়াবে তখন এই ধ্যান করো যে, এটাই আমার জীবনের শেষ নামাজ। হয়তো আর কোনো নামাজ পড়ার সুযোগ আমি পাব না। তাই যতটুকু খোদাভীতি ও ইখলাসের প্রয়োজন তা এই নামাজেই করে নাও। (ইবনে মাজাহ) আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম নামাজকে সর্বাগ্রে গুরুত্ব দিয়ে বলেছেন, নামাজ পড় রোজা রাখ কলমা পড় ভাই, রোজ আখেরের কাজ করে নাও সময় যে আর নাই।
ইবাদতের মানুষিকতা ও আগ্রহ একমাত্র নামাজের মাধ্যমে হয়ে থাকে আর এ জন্যই ইসলামের শত্রুরা মুসলমানদের ঈমান আমল নিঃশেষ করার জন্য নামাজ এবং নামাজের স্থান মসজিদকে অনেক আগ থেকেই টার্গেট করে নিয়েছে। এজন্য মসজিদ রক্ষার পূর্ব শর্ত হলো মসজিদ আবাদ। যতদিন নামাজের মাধ্যমে মুসলমান মসজিদ আবাদে এগিয়ে না আসবে ততদিন মসজিদ ধ্বংসের পায়তারা বন্ধ হবে না। আর্তনাদ আর হাহাকার করে যাবে সমজিদের মিম্বার। অথচ কেউ শুনবেনা মসজিদ এবং নামাজের নিরব আহাজারি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে নামাজের প্রতি বিশেষ যত্মবান হওয়ার তৌফিক দান করুন। আমীন