ঢাকা , শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মুসলমানের পোশাক কেমন হবে

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ পোশাক মানবজীবনের অপরিহার্য অনুষঙ্গ। পানাহারের মতো অতি প্রয়োজনীয় বস্তু। জীবনের মৌলিক অধিকার ও মনুষ্যত্বের প্রতীক। মানুষ এবং জন্তু জানোয়ারের মাঝে বিশেষ পার্থক্য হয় পোশাক দ্বারা। পোশাক যেমন মানবদেহের সৌন্দর্য, তেমনি মানবতার বৈশিষ্ট্য। আল্লাহ তায়ালা শুধু মানবজাতিকেই পোশাকের নেয়ামত দান করেছেন। এ মর্মে তিনি এরশাদ করেন, ‘হে আদম সন্তান! আমি তোমাদের জন্য পোশাক অবতীর্ণ করেছি, যা তোমাদের লজ্জাস্থান আবৃত করবে।

আর অবতীর্ণ করেছি সাজসজ্জার বস্ত্র ও তাকওয়ার পোশাক, এটি সর্বোত্তম। এতে রয়েছে আল্লাহর কুদরতের নিদর্শন, যাতে তারা চিন্তা-ভাবনা করে।’ (সূরা আরাফ : ২৬)।
আয়াতে তাকওয়ার পোশাককে শ্রেষ্ঠ বলা হয়েছে। কিন্তু তাকওয়ার পোশাক কোনটি? এ ব্যাপারে ওলামায়ে কেরাম বলেন, যে পোশাকের মধ্যে তাকওয়া বা খোদাভীতি প্রকাশ পায়, তাই তাকওয়ার পোশাক। অর্থাৎ যে পোশাকে অহঙ্কার বা গর্বের ভঙ্গি প্রকাশ পায় না বরং নম্রতার চিহ্ন পরিদৃষ্ট হয়।

শয়তান মানুষের চির দুশমন। সে জান্নাতে সর্বপ্রথম আদম ও হাওয়া (আ.) এর পোশাকের ওপর আক্রমণ করেছিল। ফলে তাদের দেহ থেকে জান্নাতি পোশাক খসে পড়ে। এ ঘটনা কোরআনে এভাবে বিবৃত হয়েছেÑ ‘হে আদম সন্তান! শয়তান যেন তোমাদের বিভ্রান্ত না করে, যেমন সে তোমাদের পিতামাতাকে জান্নাত থেকে বের করে দিয়েছে। সে তাদের পোশাক খুলে দিয়েছে, যাতে তাদেরকে লজ্জাস্থান দেখিয়ে দেয়। সে এবং তার দলবল তোমাদের এমনভাবে দেখে, যেখান থেকে তোমরা তাদের দেখতে পাও না। আমি শয়তানদের তাদের বন্ধু করে দিয়েছি, যারা ঈমান আনে না।’ (সূরা আরাফ : ২৭)।

বিশ্বনবী মুহাম্মদ (সা.) এর আনীত ধর্ম ইসলামের প্রতিটি বিধান সর্বকালের সব মানুষের জন্য কল্যাণকর ও সমভাবে প্রযোজ্য। কেয়ামত পর্যন্ত আগত বিশ্বমানবতার জন্য এ মহান ধর্মে রয়েছে চির সুন্দর ও কল্যাণজনক সংস্কৃতি। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা আল্লাহর রং গ্রহণ করো। আল্লাহর রঙের চেয়ে উত্তম রং আর কার হতে পারে? (সূরা বাকারা : ১৩৮)।

আল্লাহর রং কী? তা রাসলুল্লাহ (সা.) চলনে-বলনে আমাদের বাতলে দিয়েছেন। তিনি ইসলামের রীতি-নীতি পরিহার করে অন্য ধর্মের সংস্কৃতির গ্রহণ করতে কঠোরভাবে বারণ করেছেন। এ মর্মে  ঘোষণা করেন, ‘যে ব্যক্তি বিজাতীয়দের রীতি-নীতি গ্রহণ করবে, সে তাদের মধ্যেই গণ্য হবে।’ (আবু দাউদ : ৪০৩১)। এই হাদিসটি পোশাক-পরিচ্ছদের অধ্যায়ে বর্ণিত হয়েছে। সুতরাং বুঝতে হবে যে, পোশাকের ক্ষেত্রেই রাসুল (সা.) এই সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন। কাজেই পোশাকের ক্ষেত্রে বিজাতীর অনুকরণ নয়।

পোশাকের ক্ষেত্রে প্রত্যেকের ব্যক্তিগত রুচি বা পছন্দ রয়েছে। তাই পোশাকে রুচি-পছন্দের ব্যাপারে ইসলাম কোনোরূপ বাধ্যবাধকতা না করলেও কিছু মূলনীতি দিয়েছে, যা প্রত্যেক মুসলমানের মেনে চলা আবশ্যক। তা হলোÑ

এক. পোশাকের মূল উদ্দেশ্য সতর আবৃতকরণ এবং সৌন্দর্য অবলম্বন। তাই এমন আঁটসাঁট ও পাতলা পোশাক পরা যাবে না, যাতে শরীরের গোপন অঙ্গ ফুটে ওঠে। হাদিসে রাসুল (সা.) এ ব্যাপারে কঠোর সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন। তিনি বলেন, ‘দুই শ্রেণির মানুষ জাহান্নামে যাবে। এক শ্রেণি হলো, যাদের হাতে গাভীর লেজের মতো বেত থাকবে। আর তারা মানুষকে অন্যায়ভাবে প্রহার করবে। আরেক শ্রেণি হলো, ওইসব নারী যারা পোশাক পরেও উলঙ্গ। এরা জান্নাতে যাবে তো দূরের থাক, জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না। অন্য হাদিসে এসেছে, ‘দুনিয়ায় অনেক পোশাক পরিহিত আখেরাতে হবে উলঙ্গ।’ (শুয়াবুল ঈমান সূত্রে মেশকাত : ৩০৮৫)।

দুই. পুরুষের পোশাক টাকনুর নিচে পরিধান করা হারাম। কারণ, তাতে গর্ব ও অহঙ্কার প্রকাশ পায়। আর অহঙ্কারীর শেষ ঠিকানা জাহান্নাম। রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘পায়ের নিচের যে অংশ টাকনুর নিচে লুঙ্গি বা পায়জামায় ঢাকা থাকবে তা জাহান্নামে যাবে।’ (মুসনাদে আহমদ : ৯৯৩৬)।

তিন. পুরুষের জন্য নারীর এবং নারীর জন্য পুরুষের পোশাক পরা হারাম। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যেসব পুরুষ নারীর বেশভূষা অবলম্বন করে, আল্লাহ তায়ালা তাদের প্রতি অভিসম্পাত করেছেন। তেমনিভাবে যেসব নারী বেশভূষায় পুরুষের অনুকরণ করে তাদের প্রতিও আল্লাহ অভিসম্পাত করেছেন।’ (তিরমিজি)।

চার. পুরুষের জন্য রেশমের পোশাক পরা জায়েজ নেই।

পাঁচ. পুরুষের জন্য লাল রঙিন পোশাক পরা মাকরুহ। তবে নারীদের জন্য সব ধরনের রঙিন পোশাক পরা বৈধ। পোশাকের ক্ষেত্রে মুসলমানদের উপরোক্ত পাঁচটি বিষয় সর্বদা লক্ষ্য রাখতে হবে।

লেখক : মুহাদ্দিস, জামিয়া উসমানিয়া দারুল
উলুম সাতাইশ, টঙ্গী

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

মুসলমানের পোশাক কেমন হবে

আপডেট টাইম : ১০:১১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৪ মে ২০১৮

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ পোশাক মানবজীবনের অপরিহার্য অনুষঙ্গ। পানাহারের মতো অতি প্রয়োজনীয় বস্তু। জীবনের মৌলিক অধিকার ও মনুষ্যত্বের প্রতীক। মানুষ এবং জন্তু জানোয়ারের মাঝে বিশেষ পার্থক্য হয় পোশাক দ্বারা। পোশাক যেমন মানবদেহের সৌন্দর্য, তেমনি মানবতার বৈশিষ্ট্য। আল্লাহ তায়ালা শুধু মানবজাতিকেই পোশাকের নেয়ামত দান করেছেন। এ মর্মে তিনি এরশাদ করেন, ‘হে আদম সন্তান! আমি তোমাদের জন্য পোশাক অবতীর্ণ করেছি, যা তোমাদের লজ্জাস্থান আবৃত করবে।

আর অবতীর্ণ করেছি সাজসজ্জার বস্ত্র ও তাকওয়ার পোশাক, এটি সর্বোত্তম। এতে রয়েছে আল্লাহর কুদরতের নিদর্শন, যাতে তারা চিন্তা-ভাবনা করে।’ (সূরা আরাফ : ২৬)।
আয়াতে তাকওয়ার পোশাককে শ্রেষ্ঠ বলা হয়েছে। কিন্তু তাকওয়ার পোশাক কোনটি? এ ব্যাপারে ওলামায়ে কেরাম বলেন, যে পোশাকের মধ্যে তাকওয়া বা খোদাভীতি প্রকাশ পায়, তাই তাকওয়ার পোশাক। অর্থাৎ যে পোশাকে অহঙ্কার বা গর্বের ভঙ্গি প্রকাশ পায় না বরং নম্রতার চিহ্ন পরিদৃষ্ট হয়।

শয়তান মানুষের চির দুশমন। সে জান্নাতে সর্বপ্রথম আদম ও হাওয়া (আ.) এর পোশাকের ওপর আক্রমণ করেছিল। ফলে তাদের দেহ থেকে জান্নাতি পোশাক খসে পড়ে। এ ঘটনা কোরআনে এভাবে বিবৃত হয়েছেÑ ‘হে আদম সন্তান! শয়তান যেন তোমাদের বিভ্রান্ত না করে, যেমন সে তোমাদের পিতামাতাকে জান্নাত থেকে বের করে দিয়েছে। সে তাদের পোশাক খুলে দিয়েছে, যাতে তাদেরকে লজ্জাস্থান দেখিয়ে দেয়। সে এবং তার দলবল তোমাদের এমনভাবে দেখে, যেখান থেকে তোমরা তাদের দেখতে পাও না। আমি শয়তানদের তাদের বন্ধু করে দিয়েছি, যারা ঈমান আনে না।’ (সূরা আরাফ : ২৭)।

বিশ্বনবী মুহাম্মদ (সা.) এর আনীত ধর্ম ইসলামের প্রতিটি বিধান সর্বকালের সব মানুষের জন্য কল্যাণকর ও সমভাবে প্রযোজ্য। কেয়ামত পর্যন্ত আগত বিশ্বমানবতার জন্য এ মহান ধর্মে রয়েছে চির সুন্দর ও কল্যাণজনক সংস্কৃতি। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা আল্লাহর রং গ্রহণ করো। আল্লাহর রঙের চেয়ে উত্তম রং আর কার হতে পারে? (সূরা বাকারা : ১৩৮)।

আল্লাহর রং কী? তা রাসলুল্লাহ (সা.) চলনে-বলনে আমাদের বাতলে দিয়েছেন। তিনি ইসলামের রীতি-নীতি পরিহার করে অন্য ধর্মের সংস্কৃতির গ্রহণ করতে কঠোরভাবে বারণ করেছেন। এ মর্মে  ঘোষণা করেন, ‘যে ব্যক্তি বিজাতীয়দের রীতি-নীতি গ্রহণ করবে, সে তাদের মধ্যেই গণ্য হবে।’ (আবু দাউদ : ৪০৩১)। এই হাদিসটি পোশাক-পরিচ্ছদের অধ্যায়ে বর্ণিত হয়েছে। সুতরাং বুঝতে হবে যে, পোশাকের ক্ষেত্রেই রাসুল (সা.) এই সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন। কাজেই পোশাকের ক্ষেত্রে বিজাতীর অনুকরণ নয়।

পোশাকের ক্ষেত্রে প্রত্যেকের ব্যক্তিগত রুচি বা পছন্দ রয়েছে। তাই পোশাকে রুচি-পছন্দের ব্যাপারে ইসলাম কোনোরূপ বাধ্যবাধকতা না করলেও কিছু মূলনীতি দিয়েছে, যা প্রত্যেক মুসলমানের মেনে চলা আবশ্যক। তা হলোÑ

এক. পোশাকের মূল উদ্দেশ্য সতর আবৃতকরণ এবং সৌন্দর্য অবলম্বন। তাই এমন আঁটসাঁট ও পাতলা পোশাক পরা যাবে না, যাতে শরীরের গোপন অঙ্গ ফুটে ওঠে। হাদিসে রাসুল (সা.) এ ব্যাপারে কঠোর সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন। তিনি বলেন, ‘দুই শ্রেণির মানুষ জাহান্নামে যাবে। এক শ্রেণি হলো, যাদের হাতে গাভীর লেজের মতো বেত থাকবে। আর তারা মানুষকে অন্যায়ভাবে প্রহার করবে। আরেক শ্রেণি হলো, ওইসব নারী যারা পোশাক পরেও উলঙ্গ। এরা জান্নাতে যাবে তো দূরের থাক, জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না। অন্য হাদিসে এসেছে, ‘দুনিয়ায় অনেক পোশাক পরিহিত আখেরাতে হবে উলঙ্গ।’ (শুয়াবুল ঈমান সূত্রে মেশকাত : ৩০৮৫)।

দুই. পুরুষের পোশাক টাকনুর নিচে পরিধান করা হারাম। কারণ, তাতে গর্ব ও অহঙ্কার প্রকাশ পায়। আর অহঙ্কারীর শেষ ঠিকানা জাহান্নাম। রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘পায়ের নিচের যে অংশ টাকনুর নিচে লুঙ্গি বা পায়জামায় ঢাকা থাকবে তা জাহান্নামে যাবে।’ (মুসনাদে আহমদ : ৯৯৩৬)।

তিন. পুরুষের জন্য নারীর এবং নারীর জন্য পুরুষের পোশাক পরা হারাম। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যেসব পুরুষ নারীর বেশভূষা অবলম্বন করে, আল্লাহ তায়ালা তাদের প্রতি অভিসম্পাত করেছেন। তেমনিভাবে যেসব নারী বেশভূষায় পুরুষের অনুকরণ করে তাদের প্রতিও আল্লাহ অভিসম্পাত করেছেন।’ (তিরমিজি)।

চার. পুরুষের জন্য রেশমের পোশাক পরা জায়েজ নেই।

পাঁচ. পুরুষের জন্য লাল রঙিন পোশাক পরা মাকরুহ। তবে নারীদের জন্য সব ধরনের রঙিন পোশাক পরা বৈধ। পোশাকের ক্ষেত্রে মুসলমানদের উপরোক্ত পাঁচটি বিষয় সর্বদা লক্ষ্য রাখতে হবে।

লেখক : মুহাদ্দিস, জামিয়া উসমানিয়া দারুল
উলুম সাতাইশ, টঙ্গী