বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ কোরআন-‘শয়তান তোমাদের অভাব-অনটনের ভীতি প্রদর্শন করে এবং অশ্লীলতার আদেশ দেয়। পক্ষান্তরে আল্লাহ তোমাদের নিজের পক্ষ থেকে ক্ষমা ও বেশি অনুগ্রহের ওয়াদা করেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সুবিজ্ঞ। তিনি যাকে ইচ্ছা বিশেষ জ্ঞান দান করেন এবং যাকে বিশেষ জ্ঞান দান করা হয়, সে প্রভূত কল্যাণকর বস্তু প্রাপ্ত হয়। উপদেশ তারাই গ্রহণ করে, যারা জ্ঞানবান।’ (সূরা-২ [৮৭] বাকারা (মাদানি), রুকু : ৩৬/৪, আয়াত : ২৬৮-৬৯, পারা : তিলকার রসুল-৩, পৃষ্ঠা : ৪৭/৫)।
হাদিস-আনাস ইবনে মালিক (রা.) বর্ণনা করেন, নবীজি (সা.) বলেন, ‘তোমরা সাহরি খাও, কেননা সাহরিতে বরকত রয়েছে।’ (বোখারি, সওম অধ্যায়, পরিচ্ছেদ : ১,২০৩, খ- : ৩, পৃষ্ঠা : ২৫০, হাদিস : ১,৮০১)।
রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের পয়গাম নিয়ে প্রতি বছর আমাদের দুয়ারে ফিরে আসে রমজান। মানবসৃষ্টির ঊষালগ্ন থেকেই এ মাসে সংঘটিত হয়েছে অসংখ্য ঘটনা। বিজয়ের মাসখ্যাত রমজানেই মুসলিমরা বদরের প্রান্তরে কাফেরদের পরাজিত করে ইসলামের বিজয় নিশান উড়িয়ে দিয়েছিল বিশ্বের দরবারে। রমজান মাসকে আল্লাহ তায়ালা আসমানি কিতাবগুলো নাজিলের মাস হিসেবে নির্বাচন করেছেন। এ মাসেই নাজিল হয় মানবতার মুক্তির দিশারি সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানি কিতাব ‘আল-কোরআন’।
রাসুলুল্লাহ (সা.) এর নবুয়ত লাভ
ইবন ইসহাকের মতে, রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজানে হেরা গুহায় জিবরাইল (আ.) এর আগমনে ওহিপ্রাপ্ত হন। (সিরাতে ইবন হিশাম, পৃ. ১/২৩৫)। তাঁকে বলা হলো, ‘পড় তোমার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। তিনি সৃষ্টি করেছেন মানুষকে আলাক থেকে। পড়, আর তোমার রব মহামহিম, যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি মানুষকে তা শিক্ষা দিয়েছেন, যা সে জানত না।’ (সূরা আলাক : ১-৫)।
ইবন ইসহাক প্রমাণ হিসেবে এ আয়াত পেশ করেন, ‘রমজান মাস, যাতে কোরআন নাজিল করা হয়েছে মানুষের জন্য হেদায়েতস্বরূপ এবং হেদায়েতের সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলি ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারীরূপে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে মাসটিতে উপস্থিত হবে, সে যেন তাতে সিয়াম পালন করে। আর যে অসুস্থ হবে অথবা সফরে থাকবে তবে অন্যান্য দিবসে সংখ্যা পূরণ করে নেবে। আল্লাহ তোমাদের সহজ চান এবং কঠিন চান না। আর যাতে তোমরা সংখ্যা পূরণ করো এবং তিনি তোমাদের যে হেদায়েত দিয়েছেন, তার জন্য আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা করো এবং যাতে তোমরা শোকর করো।’ (সূরা বাকারা : ১৮৫)।
নবীদের ওপর কিতাব নাজিল
ওয়াসেলাহ ইবনে আসকা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘রমজানের প্রথম রাতে ইবরাহিম (আ.) এর ওপর সহিফাগুলো নাজিল হয়, রমজানের ছয়দিন অতিবাহিত হলে (৭ রমজান) মুসা (আ.) এর ওপর তাওরাত নাজিল হয়, তেরই রমজান অতিবাহিত হলে (১৪ রমজান) ঈসা (আ.) এর ওপর ইঞ্জিল নাজিল হয়, আর ২৫ রমজান মুহাম্মদ (সা.) এর ওপর আল-কোরআন নাজিল হয়।’ (জামেউস সগির : ১৪৯৭)।
মহাগ্রন্থ আল-কোরআন নাজিল
রমজান মাসেই কদরের রাতে নাজিল হয় মানবতার মুক্তির দিশারি সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানি কিতাব ‘আল-কোরআন’। তাছাড়া তাওরাত, যবুর, ইঞ্জিল ও ইবরাহিম (আ.) প্রমুখের সহিফাসহ অনেক কিতাব এ মাসে নাজিল হয়। আল-কোরআনে এসেছে, ‘রমজান মাস, যাতে কোরআন নাজিল করা হয়েছে মানুষের জন্য হেদায়েতস্বরূপ এবং হেদায়েতের সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলি ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারীরূপে।’ (সূরা বাকারা : ১৮৫)। এদিকে আল্লাহ আরেক সূরায় বলেছেন, ‘আমি একে নাজিল করেছি শবেকদরে। শবেকদর সমন্ধে আপনি কি জানেন? শবেকদর হলো এক হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। এতে প্রত্যেক কাজের জন্য ফেরেশতারা ও রুহ অবতীর্ণ হয় তাদের পালনকর্তার নির্দেশক্রমে। এটা নিরাপত্তা, যা ফজরের উদয় পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।’ (সূরা কদর : ১-৫)।
রমজানে আসমানি কিতাব নাজিলের তাৎপর্য
বরকতময় মাস রমজানে আল্লাহ তায়ালা অধিকাংশ আসমানি কিতাব নাজিল করেন। এ মাসকে আল্লাহ অন্যান্য মাসের ওপর মর্যাদা দান করেছেন। আর সে মর্যাদার কারণেই মর্যাদাময় কিতাবগুলো এ মাসেই নাজিল করেছেন। আমলের মাসে এসব কিতাব নাজিল করে এর অনুসারীদের আমলের প্রতি উদ্বুদ্ধ করাই মূল লক্ষ্য।