ঢাকা , রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রমজানে বাইতুল্লাহর ঈমানস্নিগ্ধ পরিবেশ

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ কাবা বাইতুল্লাহ, আল্লাহর পবিত্র ঘর। এ ঘরের প্রতি প্রতিটি মোমিনের রয়েছে সহজাত টান। তাই সারা বছর বাইতুল্লাহর চারপাশে থাকে মোমিনের ভিড়। সারাক্ষণ চলে ঐতিহ্যের ঘূর্ণন। মোমিনের ঐক্যের প্রতীক এ পবিত্র ঘরকে ঘিরে অবিরত তাওয়াফ-চক্কর। বিভিন্ন মৌসুমে এ ভিড় হয়ে যায় জোয়ারভাঙা। হজ আর রমজান উপলক্ষে আগতদের সংখ্যা হয়ে যায় অগুনতি।

আকাশে উদিত রমজানের নতুন চাঁদটি একটি সুখ বার্তা নিয়ে আসে; নিজেকে পরিবর্তনের, তাকওয়ার চাদরে আবৃত করার ঘোষণার বাণী নিয়ে। আর মোমিনের অন্তরও ব্যাকুল হতে ব্যাকুল হয়। আত্মার পরিশোধন এবং একে ঈমানি ও আমলি শক্তিতে রূপান্তরিত করতে অনেকেই একটি ঈমানি পরিবেশের খোঁজে আল্লাহর ঘর বাইতুল্লায় আগমন করেন এবং এর আলো ছায়ায় পুরো কিংবা রোজার কিছু সময় কাটান। এ অভিপ্রায়ে নিজ ভূমি ছেড়ে আল্লাহর ঘর বাইতুল্লায় একাকী কিংবা পরিবারসহ আগমন বাইতুল্লাহর দৃশ্যকে পাল্টে দেয়। বাইতুল্লাহজুড়ে একটি আসমানি পরিবেশ বিরাজ করে, যেন এটি ফেরেশতাদের সমাগম। ধীরে ধীরে এর সংখ্যা বাড়তে থাকে। রমজানে অপার্থিব এক ঈমানি, রুহানি ও ভ্রাতৃত্বপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করে বাইতুল্লাহজুড়ে।

ভ্রাতৃত্বের এক অনুপম চিত্রায়ণ : রমজানে বাইতুল্লাহ যেন একটি ঈমানি আলো, আমলি সৌন্দর্য আর তওবার পূর্ণতা নিয়ে ধরা দেয়। সর্বত্র একটি আমলি পরিবেশের চিত্র বিদ্যমান। ভ্রাতৃত্বপূর্ণ এ পরিবেশ সবার মাঝে একটি পরিবর্তন নিয়ে আসে। পারস্পরিক প্রীতি, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতিতে এবং জাত-গোত্রের ভেদাভেদ ভুলে যেন সবাইকে একটি শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড় করিয়ে দেয়। সবাই যেন তওবার সাগরে ডুব দিয়ে ক্ষমা ও মার্জনার মতো মুক্তা কুড়াতে এসেছে। মনোপ্রবৃত্তিকে স্বহস্তে দমন এবং ‘তাকওয়া’র এক আলোঝলমল জীবনে নিজেকে আবির্ভূত করতেই এ রমজানে এত লোকসমাগম ও আয়োজন।

ইফতার : আসরের কিছু সময় পর থেকেই ইফতারের প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়। বাইতুল্লাহজুড়ে ইফতারের আয়োজন। এখানে আগত মুসল্লিরা অন্য সব আমলের মতো ইফতারও বাইতুল্লায় করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। মৌলিক উপকরণ খেজুর, জমজম আর আরবি গাহওয়া ছাড়াও বিভিন্ন সামগ্রীতে পূর্ণ থাকে ইফতার পর্ব। বাইতুল্লায় ‘উপবিষ্ট’ এবং তাওয়াফ ও সায়িকারীদের মাঝে খেজুর-জমজম বিলিয়ে দিতে সামান্যও কার্পণ্য করে না আরবরা। রাসুলের সুন্নত জমজম ও খেজুরের আতিথেয়তা আদিম আরবের স্বভাবজাত সংস্কৃতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই নিঃস্বার্থ বণ্টন ও বিতরণচিত্র হাজার বছরের ভ্রাতৃত্বের বন্ধন জাগিয়ে দেয়। বর্ণ-গোত্র, শিক্ষিত-অশিক্ষিত নির্বিশেষে আয়োজিত সম্মিলিত এ ইফতার আয়োজন আবার সে মুহাজির-আনসারি যুগকে চিত্তে ধারণ করতে সহায়তা করে। একে অপরকে খেজুর তুলে দেওয়া এবং জমজমের পানি এগিয়ে দেওয়ার শিহরণ তোলা ইতিহাসের চিত্রগুলোকে জাগিয়ে তোলে।

তারাবি : রমজানের গুরুত্বপূর্ণ আমলের একটি হলো কিয়ামুল লাইল তথা তারাবি। বাইতুল্লাহর তারাবি আদায়ের জন্য আগে থেকেই মুসল্লিরা তৈরি হতে থাকে। সেখানে রমজানে তা দ্বিগুণ থেকে কয়েকগুণ বৃদ্ধি পায়। নারী-পুরুষ ও শিশু-কিশোররা ব্যাপকভাবে হাজির হয়। দিনের রোজা যেরূপ পবিত্রতার নিমিত্তে; তদ্রƒপ রাতের নামাজ ব্যক্তির আমলে সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে মৌলিক ও কার্যকরী ভূমিকা রাখে। হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া ইমামের সুললিত ও মুগ্ধকর তেলাওয়াতে যে কেউই আগ্রহী না হয়ে পারে না। দীর্ঘ সময় নামাজে আল্লাহর সামনে দ-ায়মানের চর্চা বান্দাকে রমজান-পরবর্তী সময়ে সুন্দর ও সুচারুরূপে আল্লাহর হুকুম পালনে সহজসাধ্য করে তোলে।

কোরআন তেলাওয়াত ও অন্যান্য আমল : কোরআন নাজিলের মাসে কোরআনের সঙ্গে সুন্দর ও গভীর সম্পর্ক তৈরির সুযোগ এ রমজানে বাইতুল্লাহর তেলাওয়াত দৃশ্য সত্যিই চোখ জুড়ানোর মতো। নামাজের বাইরের মূল্যবান সময়গুলো তেলাওয়াত ও জিকিরে কাটান আগত মুসল্লিরা। সময়ের সঠিক ব্যবহারের চর্চায় কোরআন এক মহা উপকরণ।

ওমরাকারীদের ভিড় : রোজায় একটি ওমরা পালন রাসুল (সা.) এর সঙ্গে হজ পালনের মতো বলে হাদিসে বলা হয়েছে। তাই প্রচুর পরিমাণ ওমরাকারীর আগমন ঘটে। বাইতুল্লাহজুড়ে ছেয়ে যাওয়া এ চিত্র চোখে পড়ার মতো।

জুমার নামাজ : রোজায় তীব্র রোদ উপেক্ষা করে, বেশ লম্বা পথ মাড়িয়ে জুমার নামাজের জন্য সকাল ৯টা থেকে মুসল্লিরা আসতে শুরু করেন। পুরো মসজিদ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। আগে থেকে জুমার এ প্রস্তুতি এবং মনোযোগের সঙ্গে খুতবা শোনার দৃশ্য সত্যিই আত্মশুদ্ধির মাস রোজার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।

নারী-শিশুদের সংখ্যা বৃদ্ধি : এ মাসে প্রশংসনীয় হারে নারী ও শিশুদের সংখ্যা বেশ বৃদ্ধি পায়। নিষ্পাপ শিশুর মনে আল্লাহর হুকুম পালন ও পুরো করার মাধ্যমে একটি নিষ্পাপ জীবন তৈরি হবে এমনটিই প্রত্যাশা। অন্যদিকে সংসারের সব ঝুটঝামেলা পেছনে রেখে আল্লাহর ঘরে স্বামী-সন্তানসহ নারীদের আগমন একটি ‘আদর্শ পরিবারের’ বার্তা নিয়ে আসে। সুযোগ করে দেয় পরিবারে সম্মিলিত ‘পারিবারিক পরিবর্তনের’।

বিভিন্ন সেমিনার ও ক্লাস : রমজানকে কেন্দ্র করে বাইতুল্লায় রমজানবিষয়ক বিভিন্ন ইলমি সেমিনার ও দরস অনুষ্ঠিত হয়। পাশাপাশি বিভিন্ন মাসআলা, ফতোয়ার জিজ্ঞাসা ও সমাধান এবং বিভিন্ন বিষয়ে দিকনির্দেশনা প্রদানের জন্য বাইতুল্লাহ কর্তৃক নিয়োজিত একদল বিজ্ঞ মুফতিও রয়েছেন।

সাধারণ ও পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের তৎপরতা : রমজান উপলক্ষে অতিরিক্ত লোকবল নিয়োগ দেওয়া হয়। আগত মুসল্লিদের সব ধরনের সেবা প্রদানে এদের সেবামূলক ভূমিকা যে কাউকে মুগ্ধ করে।

নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর একনিষ্ঠ সেবা : আগত মুসল্লিদের শতভাগ সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রচুর সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনী নিয়োগ দেওয়া হয়।

রমজান উপলক্ষে বাইতুল্লাহর সুব্যবস্থাপনা ও বিন্যস্ততার দিকটি অধিক হারে বেড়ে যায়। পাশাপাশি আগত মুসল্লিদের নিরাপত্তা এবং নির্বিঘ আমলের পরিবেশ নিশ্চিত করার সার্বিক দিক তারা বিবেচনা করেন। রাস্তা দেখিয়ে দেওয়াসহ মুসল্লিদের প্রয়োজনীয় নানা দিকে তারা যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। কতই না সৌভাগ্যবান তিনি, কাবার সান্নিধ্য ও রমজান দুটোকে যিনি একসঙ্গে অতিবাহিত করছেন। অতএব কতই না সৌভাগ্যবান তিনি, বাইতুল্লাহর সান্নিধ্যে যিনি রমজান অতিবাহিত করছেন।

লেখক : উচ্চশিক্ষার্থী, উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়, মক্কা, সৌদি আরব

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

রমজানে বাইতুল্লাহর ঈমানস্নিগ্ধ পরিবেশ

আপডেট টাইম : ০৫:২৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩০ মে ২০১৮

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ কাবা বাইতুল্লাহ, আল্লাহর পবিত্র ঘর। এ ঘরের প্রতি প্রতিটি মোমিনের রয়েছে সহজাত টান। তাই সারা বছর বাইতুল্লাহর চারপাশে থাকে মোমিনের ভিড়। সারাক্ষণ চলে ঐতিহ্যের ঘূর্ণন। মোমিনের ঐক্যের প্রতীক এ পবিত্র ঘরকে ঘিরে অবিরত তাওয়াফ-চক্কর। বিভিন্ন মৌসুমে এ ভিড় হয়ে যায় জোয়ারভাঙা। হজ আর রমজান উপলক্ষে আগতদের সংখ্যা হয়ে যায় অগুনতি।

আকাশে উদিত রমজানের নতুন চাঁদটি একটি সুখ বার্তা নিয়ে আসে; নিজেকে পরিবর্তনের, তাকওয়ার চাদরে আবৃত করার ঘোষণার বাণী নিয়ে। আর মোমিনের অন্তরও ব্যাকুল হতে ব্যাকুল হয়। আত্মার পরিশোধন এবং একে ঈমানি ও আমলি শক্তিতে রূপান্তরিত করতে অনেকেই একটি ঈমানি পরিবেশের খোঁজে আল্লাহর ঘর বাইতুল্লায় আগমন করেন এবং এর আলো ছায়ায় পুরো কিংবা রোজার কিছু সময় কাটান। এ অভিপ্রায়ে নিজ ভূমি ছেড়ে আল্লাহর ঘর বাইতুল্লায় একাকী কিংবা পরিবারসহ আগমন বাইতুল্লাহর দৃশ্যকে পাল্টে দেয়। বাইতুল্লাহজুড়ে একটি আসমানি পরিবেশ বিরাজ করে, যেন এটি ফেরেশতাদের সমাগম। ধীরে ধীরে এর সংখ্যা বাড়তে থাকে। রমজানে অপার্থিব এক ঈমানি, রুহানি ও ভ্রাতৃত্বপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করে বাইতুল্লাহজুড়ে।

ভ্রাতৃত্বের এক অনুপম চিত্রায়ণ : রমজানে বাইতুল্লাহ যেন একটি ঈমানি আলো, আমলি সৌন্দর্য আর তওবার পূর্ণতা নিয়ে ধরা দেয়। সর্বত্র একটি আমলি পরিবেশের চিত্র বিদ্যমান। ভ্রাতৃত্বপূর্ণ এ পরিবেশ সবার মাঝে একটি পরিবর্তন নিয়ে আসে। পারস্পরিক প্রীতি, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতিতে এবং জাত-গোত্রের ভেদাভেদ ভুলে যেন সবাইকে একটি শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড় করিয়ে দেয়। সবাই যেন তওবার সাগরে ডুব দিয়ে ক্ষমা ও মার্জনার মতো মুক্তা কুড়াতে এসেছে। মনোপ্রবৃত্তিকে স্বহস্তে দমন এবং ‘তাকওয়া’র এক আলোঝলমল জীবনে নিজেকে আবির্ভূত করতেই এ রমজানে এত লোকসমাগম ও আয়োজন।

ইফতার : আসরের কিছু সময় পর থেকেই ইফতারের প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়। বাইতুল্লাহজুড়ে ইফতারের আয়োজন। এখানে আগত মুসল্লিরা অন্য সব আমলের মতো ইফতারও বাইতুল্লায় করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। মৌলিক উপকরণ খেজুর, জমজম আর আরবি গাহওয়া ছাড়াও বিভিন্ন সামগ্রীতে পূর্ণ থাকে ইফতার পর্ব। বাইতুল্লায় ‘উপবিষ্ট’ এবং তাওয়াফ ও সায়িকারীদের মাঝে খেজুর-জমজম বিলিয়ে দিতে সামান্যও কার্পণ্য করে না আরবরা। রাসুলের সুন্নত জমজম ও খেজুরের আতিথেয়তা আদিম আরবের স্বভাবজাত সংস্কৃতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই নিঃস্বার্থ বণ্টন ও বিতরণচিত্র হাজার বছরের ভ্রাতৃত্বের বন্ধন জাগিয়ে দেয়। বর্ণ-গোত্র, শিক্ষিত-অশিক্ষিত নির্বিশেষে আয়োজিত সম্মিলিত এ ইফতার আয়োজন আবার সে মুহাজির-আনসারি যুগকে চিত্তে ধারণ করতে সহায়তা করে। একে অপরকে খেজুর তুলে দেওয়া এবং জমজমের পানি এগিয়ে দেওয়ার শিহরণ তোলা ইতিহাসের চিত্রগুলোকে জাগিয়ে তোলে।

তারাবি : রমজানের গুরুত্বপূর্ণ আমলের একটি হলো কিয়ামুল লাইল তথা তারাবি। বাইতুল্লাহর তারাবি আদায়ের জন্য আগে থেকেই মুসল্লিরা তৈরি হতে থাকে। সেখানে রমজানে তা দ্বিগুণ থেকে কয়েকগুণ বৃদ্ধি পায়। নারী-পুরুষ ও শিশু-কিশোররা ব্যাপকভাবে হাজির হয়। দিনের রোজা যেরূপ পবিত্রতার নিমিত্তে; তদ্রƒপ রাতের নামাজ ব্যক্তির আমলে সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে মৌলিক ও কার্যকরী ভূমিকা রাখে। হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া ইমামের সুললিত ও মুগ্ধকর তেলাওয়াতে যে কেউই আগ্রহী না হয়ে পারে না। দীর্ঘ সময় নামাজে আল্লাহর সামনে দ-ায়মানের চর্চা বান্দাকে রমজান-পরবর্তী সময়ে সুন্দর ও সুচারুরূপে আল্লাহর হুকুম পালনে সহজসাধ্য করে তোলে।

কোরআন তেলাওয়াত ও অন্যান্য আমল : কোরআন নাজিলের মাসে কোরআনের সঙ্গে সুন্দর ও গভীর সম্পর্ক তৈরির সুযোগ এ রমজানে বাইতুল্লাহর তেলাওয়াত দৃশ্য সত্যিই চোখ জুড়ানোর মতো। নামাজের বাইরের মূল্যবান সময়গুলো তেলাওয়াত ও জিকিরে কাটান আগত মুসল্লিরা। সময়ের সঠিক ব্যবহারের চর্চায় কোরআন এক মহা উপকরণ।

ওমরাকারীদের ভিড় : রোজায় একটি ওমরা পালন রাসুল (সা.) এর সঙ্গে হজ পালনের মতো বলে হাদিসে বলা হয়েছে। তাই প্রচুর পরিমাণ ওমরাকারীর আগমন ঘটে। বাইতুল্লাহজুড়ে ছেয়ে যাওয়া এ চিত্র চোখে পড়ার মতো।

জুমার নামাজ : রোজায় তীব্র রোদ উপেক্ষা করে, বেশ লম্বা পথ মাড়িয়ে জুমার নামাজের জন্য সকাল ৯টা থেকে মুসল্লিরা আসতে শুরু করেন। পুরো মসজিদ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। আগে থেকে জুমার এ প্রস্তুতি এবং মনোযোগের সঙ্গে খুতবা শোনার দৃশ্য সত্যিই আত্মশুদ্ধির মাস রোজার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।

নারী-শিশুদের সংখ্যা বৃদ্ধি : এ মাসে প্রশংসনীয় হারে নারী ও শিশুদের সংখ্যা বেশ বৃদ্ধি পায়। নিষ্পাপ শিশুর মনে আল্লাহর হুকুম পালন ও পুরো করার মাধ্যমে একটি নিষ্পাপ জীবন তৈরি হবে এমনটিই প্রত্যাশা। অন্যদিকে সংসারের সব ঝুটঝামেলা পেছনে রেখে আল্লাহর ঘরে স্বামী-সন্তানসহ নারীদের আগমন একটি ‘আদর্শ পরিবারের’ বার্তা নিয়ে আসে। সুযোগ করে দেয় পরিবারে সম্মিলিত ‘পারিবারিক পরিবর্তনের’।

বিভিন্ন সেমিনার ও ক্লাস : রমজানকে কেন্দ্র করে বাইতুল্লায় রমজানবিষয়ক বিভিন্ন ইলমি সেমিনার ও দরস অনুষ্ঠিত হয়। পাশাপাশি বিভিন্ন মাসআলা, ফতোয়ার জিজ্ঞাসা ও সমাধান এবং বিভিন্ন বিষয়ে দিকনির্দেশনা প্রদানের জন্য বাইতুল্লাহ কর্তৃক নিয়োজিত একদল বিজ্ঞ মুফতিও রয়েছেন।

সাধারণ ও পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের তৎপরতা : রমজান উপলক্ষে অতিরিক্ত লোকবল নিয়োগ দেওয়া হয়। আগত মুসল্লিদের সব ধরনের সেবা প্রদানে এদের সেবামূলক ভূমিকা যে কাউকে মুগ্ধ করে।

নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর একনিষ্ঠ সেবা : আগত মুসল্লিদের শতভাগ সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রচুর সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনী নিয়োগ দেওয়া হয়।

রমজান উপলক্ষে বাইতুল্লাহর সুব্যবস্থাপনা ও বিন্যস্ততার দিকটি অধিক হারে বেড়ে যায়। পাশাপাশি আগত মুসল্লিদের নিরাপত্তা এবং নির্বিঘ আমলের পরিবেশ নিশ্চিত করার সার্বিক দিক তারা বিবেচনা করেন। রাস্তা দেখিয়ে দেওয়াসহ মুসল্লিদের প্রয়োজনীয় নানা দিকে তারা যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। কতই না সৌভাগ্যবান তিনি, কাবার সান্নিধ্য ও রমজান দুটোকে যিনি একসঙ্গে অতিবাহিত করছেন। অতএব কতই না সৌভাগ্যবান তিনি, বাইতুল্লাহর সান্নিধ্যে যিনি রমজান অতিবাহিত করছেন।

লেখক : উচ্চশিক্ষার্থী, উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়, মক্কা, সৌদি আরব