বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ মানুষ সাধারণত নিজেদের অধঃপতনের জন্য যুগকে গালি দেয়। যে যুগের প্রভাবে মানুষ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অথচ এমনটি করা উচিত নয়। এটি অবিশ্বাসীদের ধ্যান-ধারণা। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘আর তারা বলে, দুনিয়ার জীবনই আমাদের একমাত্র জীবন। আমরা মরি ও বাঁচি এখানেই। আর (দাহার) কালই কেবল আমাদেরকে ধ্বংস করে। বস্তুত এ বিষয়ে তাদের কোনো জ্ঞান নেই। তারা শুধু ধারণাই করে।’ (সুরা : জাসিয়া, আয়াত : ২৪)
মূলত কাফির ও মুশরিকরা মহাকালের চক্রকেই সৃষ্টিজগৎ ও তার সমস্ত অবস্থার কারণ সাব্যস্ত করত এবং সব কিছুকে তারই কর্ম বলে অভিহিত করত। অথচ এগুলো সব প্রকৃতপক্ষে সর্বশক্তিমান আল্লাহর কুদরত ও ইচ্ছায় সম্পন্ন হয়ে থাকে। পবিত্র কোরআনের উপরোক্ত আয়াতের ‘দাহার’ শব্দ দ্বারা মহাকালকে বোঝানো হয়েছে। তাই বিভিন্ন হাদিসে ‘দাহার’ তথা মহাকালকে মন্দ বলতে নিষেধ করা হয়েছে। কেননা কাফিররা যে শক্তিকে ‘দাহার’ শব্দ দ্বারা ব্যক্ত করে, প্রকৃতপক্ষে সেই কুদরত ও শক্তি আল্লাহ তাআলারই। তাই ‘দাহার’কে মন্দ বলার ফল প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, বনি আদম ‘দাহার’ তথা মহাকালকে গালি দেয়, অথচ আল্লাহ বলেন, আমিই প্রকৃতপক্ষে মহাকাল, আমিই রাত-দিনের পরিবর্তন ঘটাই। (বুখারি, হাদিস : ৫৭১৩)
আমরা সাধারণত পান থেকে চুন খসলেই সময়কে গালি দিয়ে বসি। এটি অত্যন্ত জঘন্য অপরাধ। যা হয়তো আমরা জানিই না। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে আমি বলতে শুনেছি, মহান আল্লাহ বলেন, আদমসন্তান সময় ও কালকে গালিগালাজ করে, অথচ আমিই সময়, আমার হাতেই রাত্রি ও দিবস (এর পরিবর্তন সাধিত হয়)। (মুসলিম, হাদিস : ৫৭৫৫)
তাই আমাদের উচিত, আমাদের সামাজিক স্খলনগুলোকে যুগের প্রভাব বলে চালিয়ে না দিয়ে নিজেদের পাপের জন্য মহান আল্লাহর দরবারে তওবা করা। মানুষের জীবনে সময়ের দুর্ভাগ্য বলতে কিছু নেই। তাই এ ধরনের উক্তি করে আল্লাহকে অসন্তুষ্ট করা থেকে বিরত থাকা প্রয়োজন।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, পবিত্র ও মহান আল্লাহ বলেন, আদমসন্তান আমাকে দুঃখ দেয়, সে বলে, ‘হায় সময়ের দুর্ভাগ্য! (আমার সময় মন্দ)! তোমাদের কেউ যেন ‘হায় সময়ের দুর্ভাগ্য’ না বলে। কারণ আমিই তো সময়, আর রাত্রি ও দিবস পরিবর্তিত করে থাকি; আমি যখন ইচ্ছা করি তখন তাদের দুটিকে সংকুচিত করে দিই। (মুসলিম, হাদিস : ৫৭৫৭)
মানুষের চারিত্রিক স্খলনেই সমাজে অশান্তি নেমে আসে। সময় কিংবা যুগের প্রভাবে নয়। তাই সমাজকে সুশৃঙ্খল ও শান্তিময় করতে আমাদের নিজেদের বদলাতে হবে, যুগ কিংবা সময়কে নয়। আল্লাহকে ভয় করতে হবে। কারণ মানুষের মাঝে যত দিন প্রকৃত আল্লাহভীতি আসবে না, তত দিন মানুষ অপরাধ থেকে ফিরে আসবে না। আর তা না হলে সমাজেও শান্তি ফিরবে না।