পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু আক্তার খুনের মামলায় আবু নছর গুন্নুকে গ্রেফতারের জন্য পুলিশ ৩০ লাখ টাকা নিয়েছে বলে শুনেছেন হাটহাজারীর মুসাবিয়া দরবার শরীফের প্রতিষ্ঠাতা মূসা আহমদুল হক ছিদ্দিকীর নাতনি খায়রুন নুর সিদ্দিকা।
তিনি আরও শুনেছেন, মাজার নিয়ে বিরোধের জেরে তার ছোট খালার কাছ থেকে টাকা নিয়ে পুলিশ গুন্নুকে ক্রসফায়ারে হত্যা করারও পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু হাটহাজারী থানার ওসি ইসমাইল হোসেন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হওয়ায় ক্রসফায়ারে দেয়া যায়নি।
বৃহস্পতিবার বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে খায়রুন নূর সিদ্দিকা এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, টাকার বিনিময়ে পুলিশ আবু নছর গুন্নুকে বাবুল আক্তারের স্ত্রী হত্যার ঘটনায় ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। পুলিশ দিয়ে তাকে গ্রেফতার করানো হয়েছে। গুন্নুকে ক্রসফায়ারে দেয়ার জন্য পুলিশকে ৩০ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে বলে শুনেছি।
হাটহাজারী উপজেলার নাজিরহাট এলাকার কাছাকাছি ফরহাদাবাদ ইউনিয়নে আধ্যাত্মিক সাধক শেখ আহমদুল হক সিদ্দিকীর মাজার। আধ্যাত্মিকভাবে প্রাপ্ত নাম মূসাবিয়ার অনুসারে মাজারটি ‘মূসাবিয়ার মাজার’ হিসেবে পরিচিত। মাজারটির প্রকৃত নাম আস্তানা ই পাক দরবার ই মূসাবিয়া। মূসাবিয়ার দুই মেয়ে। বড় মেয়ে শামসুন্নুর মনিরা সিদ্দিকা এবং ছোট মেয়ে হামিদুন্নেছা সিদ্দিকা। বড় মেয়ের স্বামী শেখ তৈয়বউল্লাহ সিদ্দিকী মূসাবিয়ার আপন ছোট ভাইয়ের ছেলে। আর ছোট মেয়ের স্বামী বেঁচে নেই।
৩৪ বছর ধরে ছোট মেয়ের পরিবার মাজার রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেছে। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে বড় মেয়ের স্বামী তৈয়বউল্লাহ মাজারে প্রবেশ করেন। এ নিয়ে দুপক্ষে গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে দ্বন্দ্ব চলে আসছে। বড় মেয়ের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন এলাকার ব্যবসায়ী-সমাজসেবকদের একটি অংশ। ছোট মেয়ের পক্ষে আছেন রাজনীতিসংশ্লিষ্ট প্রভাবশালীরা। স্থানীয় ডেকোরেশন ব্যবসায়ী আবু নছর গুন্নু বড় মেয়ের অনুসারী। তিনি বড় মেয়ের পক্ষে মাজার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক। বড় মেয়ের স্বামী তৈয়বউল্লাহ একই কমিটির সভাপতি। ছোট মেয়ের পক্ষে আলাদা কমিটি আছে। এর সভাপতি পদটি শূন্য আছে। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আছেন রেদোয়ান চৌধুরী।
আবু নছর গুন্নুকে মঙ্গলবার (০৭ জুন) গভীর রাতে মাজার থেকে গ্রেফতার করে নগর গোয়েন্দা পুলিশ। গ্রেফতারের পর সংবাদ সম্মেলনে নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার দেবদাস ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, নছর আগে শিবির করত। এখন জঙ্গি কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত। নিজেকে আড়াল করার জন্য সে মাজার পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে মূসাবিয়ার বড় মেয়ে শামসুন্নুর মনিরা সিদ্দিকার মেয়ে খায়রুন বলেন, আবু নছরের হাত ধরে মূসাবিয়ার বড় মেয়ে গত বছরের সেপ্টেম্বরে দরবারে প্রবেশ করেন। এ নিয়ে এলাকাবাসীর সঙ্গে ছোট মেয়ে হামিদুন্নেছা সিদ্দিকার অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরে হাটহাজারী থানা পুলিশের একটি টিম সার্বক্ষণিকভাবে মূসাবিয়া এলাকায় ক্যাম্প করে। সেখানে পুলিশের একটি অস্থায়ী ক্যাম্প করা হয়। ঘটনার পর দরবারের উত্তর পাশে বড় মেয়ের অনুসারীরা এবং দক্ষিণ পাশে ছোট মেয়ের অনুসারিরা অবস্থান করে।
ছোট মেয়ের অনুসারীরা গুন্নুকে বিভিন্নসময় হুমকিধমকি দেয়ার পাশাপাশি পুলিশকে টাকা দিয়ে গুম করার হুমকি দিয়েছিল বলে অভিযোগ করেন খায়রুন।
‘শুধু হুমকিতে তারা থেকে থাকেননি। গুন্নুর বিরুদ্ধে তারা ১০টি মামলা দেয়। মামলাগুলো তদন্তের জন্য পিবিআইকে দেয়া হয়।’
মামলা দায়েরের পর থেকে পিবিআই (পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) থেকে সুলতান নামে একজন কর্মকর্তা বারবার গিয়ে গুন্নুকে হয়রানি করেন বলেও অভিযোগ করেছেন খায়রুন।
হত্যাকাণ্ডের সময় গুন্নু ঘটনাস্থলে থাকার বিষয়ে খায়রুন লিখিত বক্তব্যে বলেন, আমি শতভাগ নিশ্চিত হয়ে বলতে পারি, গত এক সপ্তাহেও আবু নাছের গুন্নু চট্টগ্রাম শহরে আসেননি। তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর (০১৮১২৫৪৮৫২৭) ট্র্যাকিং করলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে।
‘গুন্নু কখনো শিবির কিংবা জামায়াতের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলনা। তার বড় ভাই মুক্তিযোদ্ধা। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তিনি ফরহাদাবাদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ইদ্রিছ মিয়া তালুকদারের পক্ষে কাজ করেছেন। তিনি নাজিরহাট কলেজিয়েট উচ্চ বিদ্যালয়ের দুবারের নির্বাচিত সদস্য।’ বলেন খায়রুন।
পুলিশকে দোষারোপ করে তিনি বলেন, একজন পুলিশ অফিসারের স্ত্রীর মৃত্যু নিয়ে যদি পুলিশ গ্রেফতার বাণিজ্য করতে পারে, তবে আমি-আপনার কিছু হলে কি হবে ? আমরা কোন দেশে বসবাস করছি ? একশ্রেণীর লোভী পুলিশ অফিসারের কারণে পুলিশ প্রশাসনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়ে তিনি বলেন, নিরপরাধ লোকদের গ্রেফতার ঠেকান। কারণ সাধারণ মানুষের যাওয়ার আর কোন জায়গা নেই। তার না হলে সরকার ও পুলিশ প্রশাসনের প্রতি জনগণের আস্থা চলে যাবে।
সংবাদ সম্মেলনে গুন্নুর দুই ছেলে এবং মাজার পরিচালনা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল করিম উপস্থিত ছিলেন। সাস্পতিক দেশকাল