বাংলাদেশে ধারাবাহিক হত্যার ঘটনায় সাধারণ মানুষের অনেকেই আতঙ্কের মধ্যে আছেন বলে জানাচ্ছেন। এসব ঘটনা তাদের স্বাভাবিক জীবন যাত্রায় প্রভাব ফেলছে। যে কারণে এ পরিস্থিতিতে কেউ কেউ বাড়তি সতর্কতাও অবলম্বন করছেন।
ঢাকার মীরপুরের বাসিন্দা মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বাড়ীতে পাঁচটি সিসিটিভি ক্যামেরা লাগিয়েছেন। আব্দুল্লাহ বলেন, “প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা তাদের পরিবার যদি এতটা নিরাপদ না হয় আমরা কোথায় থাকবো? আমাদের উদ্বেগতো হবেই। ডে বাই ডে জিনিসটা বাড়ছে এর জন্য আমাদেরকে নিজেদের সতর্ক হতে হচ্ছে বাধ্য হয়ে।”
ধানমণ্ডীর বাসিন্দা মারিয়া রহমানও পরিবারের সবার নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত। ব্যক্তিগত গাড়ির ড্রাইভার আছে তারপরও সন্তানের নিরাপত্তার জন্য সবসময় স্কুলে আনা নেয়া করেন নিজে গাড়ি চালিয়ে।
মিসেস রহমান বলেন, “নিশ্চিন্ততো না একটা মুহূর্তের জন্যেও। আমিতো ইদানিং খুব বেশি বেশি বলছি যে, আমার মনে হয় দেশের বাইরে চলে যাওয়াই বেটার কারণ এখানে লাইফ সিকিউরড না একদমই।”
বর্তমান প্রেক্ষাপটে ফেইসবুকে মন্তব্য করার ক্ষেত্রেও সাবধান থাকেন মিসেস রহমান। বলছিলেন, “কোনো প্রতিবাদ এমনকি ফেইসবুকে একটা মন্তব্য করতেও একশ বার চিন্তা করি যে কে কি ভাবলো, কোন দৃষ্টিকোন থেকে দেখলো।”
জনমনে এমন শঙ্কার পেছনে কারণ হলো বাংলাদেশে বেছে বেছে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের
তালিকা ক্রমাগত দীর্ঘ হচ্ছে।
গত সপ্তাহে পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রীকে প্রকাশ্যে হত্যা করা হয়েছে। একই দিনে খুন হয়েছেন একজন খ্রিস্টান মুদি দোকানদার। দুদিন বাদে আরো এক হিন্দু পুরোহিতকে কুপিয়ে মারা হয়েছে।
বাংলাদেশে পুলিশের হিসেবে ২০১৬ সালের প্রথম চার মাসে খুনের ঘটনা ১১৫৬টি। আর গত ছয় মাসে জঙ্গী হামলায় খুন হয়েছেন অন্তত ১৫ জন।
ঢাকার ব্যস্ত রাস্তায় সন্তানকে নিয়ে স্কুল থেকে ফেরার পথে ফিরছিলেন রুমা আক্তার। তিনি বলেন, সারাক্ষণ একটা অস্থিরতা কাজ করে। আমাদের দেশের উপরের মহলে যারা আছে তারা কতটা অনুভব করে জানিনা আমি চাইব তারা যেন এটা বোঝার চেষ্টা করেন।
ফুটপাতে ব্যবসায়ী মোহাম্মদ নুরুন্নবী বলছিলেন, সব নিরীহ মানুষ মারা যাইতাছে। হেরাতো রাজনীতিও করেনা, কিচ্ছু করেনা। এইডাই আতঙ্ক। ব্যবসা বাণিজ্যেও অনেক ক্ষতি হইতাছে। দেহা গেছে সন্ধ্যার পরে মানুষই থাকে না।
বাংলাদেশে প্রত্যন্ত গ্রামের লোকজনও দেশের খবরাখবর রাখেন।
সাভারে একটি গ্রামের দোকানে কয়েকজন আলাপ করছিলেন। যেখানে কাগজে ঝিনাইদহে হিন্দু পুরোহিত হত্যার খবরটি পড়ছিলেন রিপন হোসেন।
পড়া শেষে বলে ওঠেন, “সরকারেরতো কিছু হইতাছে না, সরকারতো বইসা আছে উপর মহলে। চিন্তা করতাছে পাবলিকের যা হওয়ার হইবো”।
পাশ থেকে বয়স্ক একজন বলে ওঠেন, “পুলিশইতো সবকিছু এদেশের। পুলিশ যদি ঠিক থাকে এদেশে এত হতাহত হবে না।”
আলোচনায় নবাব আলী বলছিলেন, আমরাতো কিছু বুইঝা উঠতে পারতাছি না কিন্তু আমরা খুবই অসস্তিকর অবস্থায় আছি।
দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেকে আতঙ্কের কথা জানালেও পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে সবকিছু স্বাভাবিক এবং নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই আছে।
পুলিশের অতিরিক্ত আইজি মো. মোখলেসুর রহমান বলেন, “বাংলাদেশ পুলিশের যে সক্ষমতা রয়েছে আমরা অতীতে এ ধরনের তাণ্ডব তৈরি হওয়ার পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছি। আজকে যে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা হচ্ছে সেটাকেও আমরা যথাযথভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি”।
বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, “একের পর এক ঘটনা ঘটছে কিন্তু কোনো শাস্তি হচ্ছে না কারো। এজন্য এদেরও তৎপরতা বাড়ছে আর মানুষের মনেও একটা আস্থাহীনতা তৈরি হচ্ছে।” চৌধুরী মনে করেন এসব ঘটনা পুলিশের একার পক্ষে প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়।
তাঁর মতে, “প্রতিরোধটা গড়তে হবে রাজনৈতিকভাবে। অর্থাৎ এখানে সকল মানুষকে দাঁড় করাতে হবে এর বিরুদ্ধে এবং দাঁড় করানোর জন্য সেরকম স্বাধীনতা দিতে হবে। এর মধ্যে আছে বাক স্বাধীনতা এবং গণতান্ত্রিক অধিকারগুলোর স্বীকৃতি। স্বীকৃতির মধ্যে আছে ভোটাধিকার। ভোটাধিকারতো এখানে মানুষ সুষ্ঠুভাবে প্রয়োগ করতে পারছে না।”