ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গণগ্রেফতারে সমাধান আসবে না

ধারবাহিকভাবে ব্লগার, পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী, সংখ্যালঘু ধর্মীয় নেতাসহ সাধারণ মানুষকে হত্যার পর সরকার জঙ্গীদের বিরুদ্ধে ঘোষণা দিয়ে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করেছে। তবে এ অভিযানে প্রথম দিনেই সহস্রাধিক ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে এই অভিযানে বিরোধী নেতাকর্মীদেরই আটক করা হচ্ছে বেশি। পাশাপাশি এরই মধ্যে পুলিশের বিরুদ্ধে গ্রেফতার বাণিজ্যের অভিযোগও আসতে শুরু করেছে।

এই পরিস্থিতিতে পূর্বপশ্চিম কথা বলেছে দেশের কয়েকজন চিন্তাবিদ ও বিশিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে।এই অভিযানে সমাধান আসবে না বলে মত দিয়েছেন। তাদের অভিমত, এতে মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি হবে। তারা বলছেন, পুলিশ এই অভিযানের মধ্য দিয়ে বিনা বিচারে অনেক অনৈতিক কর্মকান্ড করতেও সাহস পাবে।

মানবাধিকার হরণের ঘটনা ঘটবে
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন
(নিরাপত্তা বিশ্লেষক/ সাবেক নির্বাচন কমিশনার)

গণগ্রেফতার কোন সমাধান নয়। এই ব্যাপারটা খুবই হাস্যকর হতে পারে যে, সরকার আগের দিন ক্যামেরার সামনে সাঁড়াশি অভিযানের নামার ঘোষণা দিল। পরদিন ভোরে সন্ত্রাসীরা আরেকজনকে খুন করে দিল। সরকার আসলে কী চাইছে, সেটা খুব স্পষ্ট না। তারা নিরাপত্তা দিতে চাইছে, নাকি নিরাপত্তার নামে কৌতুক করতে চাইছে সেই জবাব পাওয়াটা জরুরী। কারণ, ঘোষণা দিয়ে কাউকে গ্রেফতার করতে যাওয়া মানে সন্ত্রাসীকে পালিয়ে যেতে সহায়তা করায় বোঝায়। এই গণগ্রেফতারে যেটা বেশি ঘটবে, সেটা গ্রেফতার বাণিজ্য। মানবাধিকার হরণের ঘটনাও ঘটবে। এটা কীভাবে রোধ করা যায়, সেটাই সরকারকে ভাবতে হবে।

হাল্লা রাজা দেশের মানুষের জিব কেটে দিয়েছিলেন
সুলতানা কামাল
(মানবাধিকার কর্মী/ নির্বাহী পরিচালক, আইন ও সালিশ কেন্দ্র)

এখন কথা বলতে অনেক চিন্তা ভাবনা করতে হচ্ছে। বাংলাদেশে এখন সবচেয়ে বেশি শঙ্কা কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়া হচ্ছে কি না। কই সঙ্গে দেশের নিরাপত্তা হেফাজতে মৃত্যু, অপহরণ, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, সংখ্যালঘু নির্যাতন এবং নারী নির্যাতনের কথা উল্লেখ করে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। সত্যজিৎ রায়ের ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’-এর হাল্লা রাজা দেশের মানুষের জিব কেটে দিয়েছিলেন যাতে তারা কথা বলতে না পারে। আমরা কি হাল্লা রাজার দেশে বাস করছি?’ অতীতেও এ ধরনের অভিযানে অনেক নিরপরাধ মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নির্যাতন করা হয়েছে। এটা অন্যায়। এসব যাতে না ঘটেয, সেটা সরকারকে মাথায় রাখতে হবে।

এই প্রতারণা জনগণের সঙ্গে রাষ্ট্রের করা উচিত নয়
ড. মিজানুর রহমান
(চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন )

সারাদেশে গণগ্রেফতার চালানো হচ্ছে। মা-বাবার কাছ থেকে ছেলেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় অথচ দিনে পর দিন তাদের কোনো খোঁজ থাকে না। ৭ দিন আগে কাউকে গ্রেফতার করার পর একদিন আগে কাগজে কলমে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে হাজির করার মতো তামাশা রাষ্ট্র করতে পারে না। এই প্রতারণা জনগণের সঙ্গে রাষ্ট্রের করা উচিত নয়। সাঁড়াশি অভিযানের নামে এটা বেড়েছে। নইলে একদিনে প্রায় এক হাজার ব্যক্তিকে কিসের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয়? একটি সভ্য ও সুশিক্ষিত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র এটা করতে পারে না। একজন নাগরিকের স্বাধীনতা হরণ করা হলে তার জবাব রাষ্ট্রকে দিতে হবে।

সাধারণ মানুষ  ভোগান্তির শিকার হতে পারে
অধ্যাপক ড. মোকাম্মেল এইচ ভূঁইয়া
(চেয়ারম্যান, প্রত্নতত্ব বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়)

বিশেষ কোনো পরিস্থিতির উদ্ভব হলে পুলিশ সাড়াশি অভিযান পরিচালনা করে থাকে। দেশে জঙ্গী তৎপরতা বেড়ে যাওয়ায় এবার এ ধরনের অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। এধরনের অভিযানের সাফল্য নির্ভর করে কতোটা পরিকল্পনামাফিক অভিযানটি পরিচালনা হচ্ছে, পুলিশ কতোটা হোমওয়ার্ক করে মাঠে নামছে তার উপর। সামনে ঈদ, কাজেই সাড়াশি অভিযান কেন্দ্র করে সাধারণ মানুষ পুলিশের হাতে ভোগান্তির শিকার হতে পারে।এ বিষয়টি সরকারকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।গুপ্ত হত্যা বন্ধে এ ধরনের সাড়াশি অভিযান কতোটা কার্যকর হবে, তা পুরোপুরি নির্ভর করছে কৌশল ও পরিকল্পনার ওপর। সাড়াশি অভিযানের নামে যদি বিরোধী মতকে দমন করাকেই গুরুত্ব দেওয়া হয়, তা হবে দুর্ভ্যাগজনক।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

গণগ্রেফতারে সমাধান আসবে না

আপডেট টাইম : ০৭:০৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ জুন ২০১৬

ধারবাহিকভাবে ব্লগার, পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী, সংখ্যালঘু ধর্মীয় নেতাসহ সাধারণ মানুষকে হত্যার পর সরকার জঙ্গীদের বিরুদ্ধে ঘোষণা দিয়ে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করেছে। তবে এ অভিযানে প্রথম দিনেই সহস্রাধিক ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে এই অভিযানে বিরোধী নেতাকর্মীদেরই আটক করা হচ্ছে বেশি। পাশাপাশি এরই মধ্যে পুলিশের বিরুদ্ধে গ্রেফতার বাণিজ্যের অভিযোগও আসতে শুরু করেছে।

এই পরিস্থিতিতে পূর্বপশ্চিম কথা বলেছে দেশের কয়েকজন চিন্তাবিদ ও বিশিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে।এই অভিযানে সমাধান আসবে না বলে মত দিয়েছেন। তাদের অভিমত, এতে মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি হবে। তারা বলছেন, পুলিশ এই অভিযানের মধ্য দিয়ে বিনা বিচারে অনেক অনৈতিক কর্মকান্ড করতেও সাহস পাবে।

মানবাধিকার হরণের ঘটনা ঘটবে
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন
(নিরাপত্তা বিশ্লেষক/ সাবেক নির্বাচন কমিশনার)

গণগ্রেফতার কোন সমাধান নয়। এই ব্যাপারটা খুবই হাস্যকর হতে পারে যে, সরকার আগের দিন ক্যামেরার সামনে সাঁড়াশি অভিযানের নামার ঘোষণা দিল। পরদিন ভোরে সন্ত্রাসীরা আরেকজনকে খুন করে দিল। সরকার আসলে কী চাইছে, সেটা খুব স্পষ্ট না। তারা নিরাপত্তা দিতে চাইছে, নাকি নিরাপত্তার নামে কৌতুক করতে চাইছে সেই জবাব পাওয়াটা জরুরী। কারণ, ঘোষণা দিয়ে কাউকে গ্রেফতার করতে যাওয়া মানে সন্ত্রাসীকে পালিয়ে যেতে সহায়তা করায় বোঝায়। এই গণগ্রেফতারে যেটা বেশি ঘটবে, সেটা গ্রেফতার বাণিজ্য। মানবাধিকার হরণের ঘটনাও ঘটবে। এটা কীভাবে রোধ করা যায়, সেটাই সরকারকে ভাবতে হবে।

হাল্লা রাজা দেশের মানুষের জিব কেটে দিয়েছিলেন
সুলতানা কামাল
(মানবাধিকার কর্মী/ নির্বাহী পরিচালক, আইন ও সালিশ কেন্দ্র)

এখন কথা বলতে অনেক চিন্তা ভাবনা করতে হচ্ছে। বাংলাদেশে এখন সবচেয়ে বেশি শঙ্কা কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়া হচ্ছে কি না। কই সঙ্গে দেশের নিরাপত্তা হেফাজতে মৃত্যু, অপহরণ, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, সংখ্যালঘু নির্যাতন এবং নারী নির্যাতনের কথা উল্লেখ করে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। সত্যজিৎ রায়ের ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’-এর হাল্লা রাজা দেশের মানুষের জিব কেটে দিয়েছিলেন যাতে তারা কথা বলতে না পারে। আমরা কি হাল্লা রাজার দেশে বাস করছি?’ অতীতেও এ ধরনের অভিযানে অনেক নিরপরাধ মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নির্যাতন করা হয়েছে। এটা অন্যায়। এসব যাতে না ঘটেয, সেটা সরকারকে মাথায় রাখতে হবে।

এই প্রতারণা জনগণের সঙ্গে রাষ্ট্রের করা উচিত নয়
ড. মিজানুর রহমান
(চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন )

সারাদেশে গণগ্রেফতার চালানো হচ্ছে। মা-বাবার কাছ থেকে ছেলেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় অথচ দিনে পর দিন তাদের কোনো খোঁজ থাকে না। ৭ দিন আগে কাউকে গ্রেফতার করার পর একদিন আগে কাগজে কলমে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে হাজির করার মতো তামাশা রাষ্ট্র করতে পারে না। এই প্রতারণা জনগণের সঙ্গে রাষ্ট্রের করা উচিত নয়। সাঁড়াশি অভিযানের নামে এটা বেড়েছে। নইলে একদিনে প্রায় এক হাজার ব্যক্তিকে কিসের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয়? একটি সভ্য ও সুশিক্ষিত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র এটা করতে পারে না। একজন নাগরিকের স্বাধীনতা হরণ করা হলে তার জবাব রাষ্ট্রকে দিতে হবে।

সাধারণ মানুষ  ভোগান্তির শিকার হতে পারে
অধ্যাপক ড. মোকাম্মেল এইচ ভূঁইয়া
(চেয়ারম্যান, প্রত্নতত্ব বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়)

বিশেষ কোনো পরিস্থিতির উদ্ভব হলে পুলিশ সাড়াশি অভিযান পরিচালনা করে থাকে। দেশে জঙ্গী তৎপরতা বেড়ে যাওয়ায় এবার এ ধরনের অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। এধরনের অভিযানের সাফল্য নির্ভর করে কতোটা পরিকল্পনামাফিক অভিযানটি পরিচালনা হচ্ছে, পুলিশ কতোটা হোমওয়ার্ক করে মাঠে নামছে তার উপর। সামনে ঈদ, কাজেই সাড়াশি অভিযান কেন্দ্র করে সাধারণ মানুষ পুলিশের হাতে ভোগান্তির শিকার হতে পারে।এ বিষয়টি সরকারকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।গুপ্ত হত্যা বন্ধে এ ধরনের সাড়াশি অভিযান কতোটা কার্যকর হবে, তা পুরোপুরি নির্ভর করছে কৌশল ও পরিকল্পনার ওপর। সাড়াশি অভিযানের নামে যদি বিরোধী মতকে দমন করাকেই গুরুত্ব দেওয়া হয়, তা হবে দুর্ভ্যাগজনক।