ঢাকা , শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হাওরের ধান নিয়ে এবারও চিন্তিত কৃষক

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ আকাশে মেঘ ডাকলেই আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চলের কৃষক। আর কয়েকদিন গেলেই ঘরে উঠবে নতুন ফসল। গেল বছরের সেই ভয়াল স্মৃতি মনে পড়লেই আঁতকে উঠছেন তারা। গত বছরের মত এ বছরও একই সময়ে ঝড় বৃষ্টি শুরু হওয়ায় চিন্তিত হয়ে পড়ছেন তারা। কৃষকরা বলছেন, হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের নির্মাণ কাজ এখনো শেষ হয়নি। আর বৃষ্টিতে নির্মাণাধীন বেশকিছু বাঁধ ইতোমধ্যে ধসে পড়েছে।

তাই ফসল ঘরে তোলা নিয়ে শঙ্কিত তারা। স্থানীয় কৃষকরা জানান, গতবার ওপারের পাহাড়ি ঢল ও বাঁধ ভেঙে চোখের সামনে তলিয়ে গিয়েছিল হাওড়ের সব ফসল। এতে নিঃস্ব হয়ে পড়েন প্রায় সব কৃষক। এরপর থেকে গত এক বছরে যেটুকু বাঁধ নির্মিত হয়েছে, ইতোমধ্যে সাধারণ বৃষ্টিতে অনেকাংশে কাঁচা বাঁধ ধসে গেছে। গত বছরের ২৯ মার্চ থেকেই শুরু হয়েছিল ঝড়, বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল। সঙ্গে ছিল শিলাবৃষ্টির তাণ্ডব। এবারও ৩১ মার্চ বিকালে শুরু হয় তুমুল বৃষ্টি ও ঝড়। টানা ৪-৫ দিন বৃষ্টি হলেই জমির সঙ্গে মিশে যাবে এ সব বাঁধ। আর পাহাড়ী ঢল এলে বাঁধ বলতে কিছুই থাকবে না।

মিঠাইন উপজেলার ঢাকি চারিগ্রাম এলাকার বেশ কয়েকজন কৃষক জানান, মিঠামইন দক্ষিণের হাওরে যে ৩৩ কিলোমিটার বাঁধ তৈরি হয়েছে। গত কয়েক দিনের  বৃষ্টিতে বেশিরভাগ বাঁধের অংশই ধসে পড়েছে। আর ৫-৬ দিন বৃষ্টি হলে কেনো বাঁধেরই খোঁজ পাওয়া যাবে না। তাদের অভিযোগ ভুক্তভোগী কৃষকের  সঙ্গে কোনো পরমর্শ না করেই উপজেলা প্রশাসন এলাকার দলীয় লোকজন ও ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যদের নিয়ে কমিটি করে করে বাঁধ নির্মাণ করে। কোটি  কোটি টাকা ব্যয় হলেও তা কেনো কাজে আসবে না। কারণ ব্যয়ের অর্ধেক টাকাই গেছে নেতাকর্মীদের পকেটে।

কিশোরগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে  জানা যায়, বিগত দিনে কৃষকরা নিজ নিজ উদ্যোগে ফসল রক্ষায় মাটি কেটে প্রতিবছর কিছু কিছু বাঁধ নির্মাণ করলেও সরকারিভাবে বাঁধ নির্মাণে তেমন কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। তবে এ বছর জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে হাওর এলাকার বন্যা ব্যবস্থাপনা ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে এ জেলার জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৬০০ কোটি টাকা। এতে জেলার হাওরবেষ্টিত ৮টি উপজেলায় ২০০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ কাজ হয়েছে। মোট ৯টি বড় বড় হাওরে দুইশত কিলোমিটার কাচা বাঁধ নির্মাণ কাজও শেষ হয়েছে।

যা চার ফুট উচ্চতা ও ২৫ থেকে ৩০ ফুট প্রস্ত বাঁধগুলো। এছাড়া ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে ২০টি স্লুইসগেট। জাইকার প্রকল্প ছাড়াও ১৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে কাবিটা প্রকল্পের মাধ্যেমে বাজিতপুর উপজেলার হুমাইপুর, অষ্টগ্রামের খয়েরপুর ও আব্দুল্লাপুর হাওর এবং ইটনার বেড়া মোহনায় গত ১৫ ডিসেম্বর থেকে কাজ শুরু করে ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কাজ শেষ করার কথা ছিল। ইতোমধ্যে কাজ প্রায় শেষ হওয়ার পথে। হাওরের পানি  বিলম্বে নামার কারণ দেখিয়ে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে কাজ শুরু হয়েছিল।এতে নির্ধারিত সময়ে কাজ সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন হয়নি। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের দাবি, বড় ধরণের কোন দূর্যোগ না হলে বোরো ধান তুলতে কোন সমস্যা হবে না কৃষকদের।

কিশোরগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মতে, কিশোরগঞ্জ জেলাজুড়ে ছোট বড় মিলিয়ে তিন শতাধিক হাওর রয়েছে। ছোট হাওরগুলো বড় হাওরের অংশভুক্ত হলেও আলাদা নামে পরিচিত।কিশোরগঞ্জ জেলায় এক লাখ ৬৫ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে। গতবার ১ লাখ ৬৭ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছিল। যার ৮০ ভাগই তলিয়ে গিয়েছিল।  তবে এবার সময় মতো বৃষ্টি হওয়ায় ফলনও ভালো হয়েছে। তবে গত বছরের ন্যায় এ বছরও প্রকৃতি বৈরি আচরণে কৃষকরা শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।

সরেজমিনে জানা যায়, হাওরাঞ্চলের কিছু এলাকায় পাহাড়ী ঢলের আতঙ্কে আগে-ভাগেই ধান কাটছেন কৃষকরা। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে দেশি ধান কাটা পুরোদমে শুরু হবে। আর আগামী ১৫ দিনের মধ্যে উফশী ধানও কাটা শুরু হবে।

ইটনা উপজেলার ধনপুর গ্রামের আব্দুল আলী, ইছব আলী বলেন, এবার ফসল নষ্ট হলে আমাদের আর কোনো উপায় থাকবে না। জাফরাবাজ গ্রামের কৃষক আছির উদ্দিন বলেন, এবার তুফান মেঘ দেখলে আমাদের ডর (ভয়) লাগে আল্লাহ মাবুদ  কি করবে কে জানে।

কিশোরগঞ্জ জেলা কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ শফিকুল ইসলাম বলেন, ঝড় বৃষ্টি কারণে কৃষকরা কিছুটা আতঙ্কিত। তবে এখন পর্যন্ত শিলায় হাওরাঞ্চলে ফসলের কোন ক্ষতি হয়নি। এবার তীব্র শীতের কারণে বোরো রোপণ কিছুটা পিছিয়ে গেছে। শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া ভাল থাকলে এবার লাভবান হবেন কৃষকেরা।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

হাওরের ধান নিয়ে এবারও চিন্তিত কৃষক

আপডেট টাইম : ১০:১৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ এপ্রিল ২০১৮

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ আকাশে মেঘ ডাকলেই আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চলের কৃষক। আর কয়েকদিন গেলেই ঘরে উঠবে নতুন ফসল। গেল বছরের সেই ভয়াল স্মৃতি মনে পড়লেই আঁতকে উঠছেন তারা। গত বছরের মত এ বছরও একই সময়ে ঝড় বৃষ্টি শুরু হওয়ায় চিন্তিত হয়ে পড়ছেন তারা। কৃষকরা বলছেন, হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের নির্মাণ কাজ এখনো শেষ হয়নি। আর বৃষ্টিতে নির্মাণাধীন বেশকিছু বাঁধ ইতোমধ্যে ধসে পড়েছে।

তাই ফসল ঘরে তোলা নিয়ে শঙ্কিত তারা। স্থানীয় কৃষকরা জানান, গতবার ওপারের পাহাড়ি ঢল ও বাঁধ ভেঙে চোখের সামনে তলিয়ে গিয়েছিল হাওড়ের সব ফসল। এতে নিঃস্ব হয়ে পড়েন প্রায় সব কৃষক। এরপর থেকে গত এক বছরে যেটুকু বাঁধ নির্মিত হয়েছে, ইতোমধ্যে সাধারণ বৃষ্টিতে অনেকাংশে কাঁচা বাঁধ ধসে গেছে। গত বছরের ২৯ মার্চ থেকেই শুরু হয়েছিল ঝড়, বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল। সঙ্গে ছিল শিলাবৃষ্টির তাণ্ডব। এবারও ৩১ মার্চ বিকালে শুরু হয় তুমুল বৃষ্টি ও ঝড়। টানা ৪-৫ দিন বৃষ্টি হলেই জমির সঙ্গে মিশে যাবে এ সব বাঁধ। আর পাহাড়ী ঢল এলে বাঁধ বলতে কিছুই থাকবে না।

মিঠাইন উপজেলার ঢাকি চারিগ্রাম এলাকার বেশ কয়েকজন কৃষক জানান, মিঠামইন দক্ষিণের হাওরে যে ৩৩ কিলোমিটার বাঁধ তৈরি হয়েছে। গত কয়েক দিনের  বৃষ্টিতে বেশিরভাগ বাঁধের অংশই ধসে পড়েছে। আর ৫-৬ দিন বৃষ্টি হলে কেনো বাঁধেরই খোঁজ পাওয়া যাবে না। তাদের অভিযোগ ভুক্তভোগী কৃষকের  সঙ্গে কোনো পরমর্শ না করেই উপজেলা প্রশাসন এলাকার দলীয় লোকজন ও ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যদের নিয়ে কমিটি করে করে বাঁধ নির্মাণ করে। কোটি  কোটি টাকা ব্যয় হলেও তা কেনো কাজে আসবে না। কারণ ব্যয়ের অর্ধেক টাকাই গেছে নেতাকর্মীদের পকেটে।

কিশোরগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে  জানা যায়, বিগত দিনে কৃষকরা নিজ নিজ উদ্যোগে ফসল রক্ষায় মাটি কেটে প্রতিবছর কিছু কিছু বাঁধ নির্মাণ করলেও সরকারিভাবে বাঁধ নির্মাণে তেমন কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। তবে এ বছর জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে হাওর এলাকার বন্যা ব্যবস্থাপনা ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে এ জেলার জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৬০০ কোটি টাকা। এতে জেলার হাওরবেষ্টিত ৮টি উপজেলায় ২০০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ কাজ হয়েছে। মোট ৯টি বড় বড় হাওরে দুইশত কিলোমিটার কাচা বাঁধ নির্মাণ কাজও শেষ হয়েছে।

যা চার ফুট উচ্চতা ও ২৫ থেকে ৩০ ফুট প্রস্ত বাঁধগুলো। এছাড়া ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে ২০টি স্লুইসগেট। জাইকার প্রকল্প ছাড়াও ১৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে কাবিটা প্রকল্পের মাধ্যেমে বাজিতপুর উপজেলার হুমাইপুর, অষ্টগ্রামের খয়েরপুর ও আব্দুল্লাপুর হাওর এবং ইটনার বেড়া মোহনায় গত ১৫ ডিসেম্বর থেকে কাজ শুরু করে ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কাজ শেষ করার কথা ছিল। ইতোমধ্যে কাজ প্রায় শেষ হওয়ার পথে। হাওরের পানি  বিলম্বে নামার কারণ দেখিয়ে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে কাজ শুরু হয়েছিল।এতে নির্ধারিত সময়ে কাজ সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন হয়নি। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের দাবি, বড় ধরণের কোন দূর্যোগ না হলে বোরো ধান তুলতে কোন সমস্যা হবে না কৃষকদের।

কিশোরগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মতে, কিশোরগঞ্জ জেলাজুড়ে ছোট বড় মিলিয়ে তিন শতাধিক হাওর রয়েছে। ছোট হাওরগুলো বড় হাওরের অংশভুক্ত হলেও আলাদা নামে পরিচিত।কিশোরগঞ্জ জেলায় এক লাখ ৬৫ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে। গতবার ১ লাখ ৬৭ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছিল। যার ৮০ ভাগই তলিয়ে গিয়েছিল।  তবে এবার সময় মতো বৃষ্টি হওয়ায় ফলনও ভালো হয়েছে। তবে গত বছরের ন্যায় এ বছরও প্রকৃতি বৈরি আচরণে কৃষকরা শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।

সরেজমিনে জানা যায়, হাওরাঞ্চলের কিছু এলাকায় পাহাড়ী ঢলের আতঙ্কে আগে-ভাগেই ধান কাটছেন কৃষকরা। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে দেশি ধান কাটা পুরোদমে শুরু হবে। আর আগামী ১৫ দিনের মধ্যে উফশী ধানও কাটা শুরু হবে।

ইটনা উপজেলার ধনপুর গ্রামের আব্দুল আলী, ইছব আলী বলেন, এবার ফসল নষ্ট হলে আমাদের আর কোনো উপায় থাকবে না। জাফরাবাজ গ্রামের কৃষক আছির উদ্দিন বলেন, এবার তুফান মেঘ দেখলে আমাদের ডর (ভয়) লাগে আল্লাহ মাবুদ  কি করবে কে জানে।

কিশোরগঞ্জ জেলা কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ শফিকুল ইসলাম বলেন, ঝড় বৃষ্টি কারণে কৃষকরা কিছুটা আতঙ্কিত। তবে এখন পর্যন্ত শিলায় হাওরাঞ্চলে ফসলের কোন ক্ষতি হয়নি। এবার তীব্র শীতের কারণে বোরো রোপণ কিছুটা পিছিয়ে গেছে। শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া ভাল থাকলে এবার লাভবান হবেন কৃষকেরা।