ঢাকা , শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হাওর অঞ্চলে ভারি বর্ষণের ভয় ধান কাটার শ্রমিকের অভাব

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ হাওর অঞ্চলে পর পর দুই মৌসুম ফসলের ব্যাপক বিপর্যয়ের পর এবার বাম্পার ফলন। কিন্তু কৃষকের মুখে হাসি ফুটতে না ফুটতে আবারও শঙ্কা। মাঠভরা ফসল কিন্তু তা ঘরে তুলতে শ্রমিকের অভাব। যদিও গতকাল শুক্রবার হাওরের পাকা ধান দ্রুত কাটার জন্য সতর্কবার্তা জারি করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হচ্ছে, ভারতের আসাম, মেঘালয়, শিলিগুড়িসহ সিলেট বিভাগের ভারত সীমান্ত এলাকাগুলোতে ২৯ এপ্রিল অর্থাৎ আগামীকাল থেকে টানা পাঁচ দিন বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে।

ফলে বাংলাদেশের সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, শেরপুর ও সিলেট জেলা দিয়ে প্রবল বেগে হাওরে পানি প্রবেশ করবে। আর এতে তলিয়ে যাবে হাওরের সোনার ফসল। ফিরে আসবে সেই ভয়াবহ পরিস্থিতি। এই নিয়ে কৃষকরা চরম বিপাকে রয়েছে।

এর মধ্যে গত শুক্রবার ভোররাতে সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরের নাউটানা ফসল রক্ষা বাঁধ কেটে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। ফলে ওই এলাকার এক হাজার হেক্টর জমির বোরো ধান হুমকির মুখে পড়েছে। এসব জমির

৫০ শতাংশ ধান তলিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছে কৃষকরা। ঘটনার পর টাঙ্গুয়ার হাওরের এরালিয়াকোনা, গনিয়াকুরি, লামারগুল, টানেরগুল, নান্দিয়া, মাজেরগুল, টুঙ্গামারা, সুনাডুবি, গলগলিয়া, শামসাগর হাওরের ধান হুমকির মুখে পড়েছে।

জানা যায়, ভারি বর্ষণের আশঙ্কায় সুনামগঞ্জের হাওরের বোরো কৃষকদের পাকা ধান দ্রুত কাটার জন্য সতর্কবার্তা জারি করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ৩০ এপ্রিল থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা সুনামগঞ্জ জেলায় ভারি থেকে মাঝারি বর্ষণের আশঙ্কা রয়েছে। বর্ষণ হলে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি ও আকস্মিক বন্যার সৃষ্টি হয়ে হাওরের সব পাকা ধান তলিয়ে যেতে পারে। এই আশঙ্কাবার্তা জারি করে মসজিদ-মন্দিরসহ বিভিন্ন স্থানে প্রচারণা চালানো হয়েছে।

তবে হাওরের বোরো ফসল পেকে গেলেও শ্রমিকের অভাবে কৃষকরা ধান কাটতে পারছে না। সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন গত ১৭ এপ্রিল সুনামগঞ্জ জেলার অন্যান্য পেশায় নিয়োজিত শ্রমিকদের হাওরে এসে ধান কাটার জন্য লিখিত আহ্বান জানিয়েছে। গত ২৪ এপ্রিল সুনামগঞ্জ পুলিশ বিভাগও একই দাবি জানিয়েছে জেলার ভিন্ন পেশার শ্রমিকদের।

সুনামগঞ্জের পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী রঞ্জন কুমার দাস বলেন, ‘আগামী ২৯ এপ্রিল থেকে ২ মে পর্যন্ত বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও তত্সংলগ্ন মেঘালয় ও আসামে ভারি ও মাঝারি বৃষ্টি হবে। এতে নদ-নদীর পানি বিপত্সীমার ওপরে উঠে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। এ কারণে আমরা কৃষকদের দ্রুত হাওরের ধান কেটে ফেলার আহ্বান জানিয়েছি। বিভিন্ন স্থানে আমরা মাইকিং করেছি।’

হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এল এম সৌকত জানান, ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর পূর্বাভাস দিয়েছে, আসাম, মেঘালয় ও শিলিগুড়ি এলাকায় ২৯ এপ্রিল থেকে ৩ মে পর্যন্ত ১৫০ থেকে ২০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হবে। যেহেতু ওই এলাকাগুলো বাংলাদেশ থেকে উঁচু স্থানে অবস্থিত তাই পানি বাংলাদেশের বিভিন্ন নদী দিয়ে হাওরে প্রবেশ করবে। এতে করে নিম্ন এলাকাগুলো জলমগ্ন হয়ে পড়বে। তাই কৃষকদের দ্রুত ৮০ শতাংশ পর্যন্ত পাকা ধান কেটে ফেলার পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে।

হবিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান জানান, জেলায় এবার বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক লাখ ১৫ হাজার ৭৪ হেক্টর জমি। কিন্তু এ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে এক লাখ ২১ হাজার ৪৩০ হেক্টর জমি চাষ করা হয়েছে। বোরো চাষে এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন অনেকটা সাফল্যের। এ পর্যন্ত হাওর পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ধানের ফলন ভালো হয়েছে। এরই মধ্যে হাওর এলাকার ৫০ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। কৃষকদের দ্রুত ধান কাটার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কারণ ভারতে বৃষ্টি হওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশেও বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে।

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

হাওর অঞ্চলে ভারি বর্ষণের ভয় ধান কাটার শ্রমিকের অভাব

আপডেট টাইম : ০৪:২৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ এপ্রিল ২০১৮

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ হাওর অঞ্চলে পর পর দুই মৌসুম ফসলের ব্যাপক বিপর্যয়ের পর এবার বাম্পার ফলন। কিন্তু কৃষকের মুখে হাসি ফুটতে না ফুটতে আবারও শঙ্কা। মাঠভরা ফসল কিন্তু তা ঘরে তুলতে শ্রমিকের অভাব। যদিও গতকাল শুক্রবার হাওরের পাকা ধান দ্রুত কাটার জন্য সতর্কবার্তা জারি করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হচ্ছে, ভারতের আসাম, মেঘালয়, শিলিগুড়িসহ সিলেট বিভাগের ভারত সীমান্ত এলাকাগুলোতে ২৯ এপ্রিল অর্থাৎ আগামীকাল থেকে টানা পাঁচ দিন বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে।

ফলে বাংলাদেশের সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, শেরপুর ও সিলেট জেলা দিয়ে প্রবল বেগে হাওরে পানি প্রবেশ করবে। আর এতে তলিয়ে যাবে হাওরের সোনার ফসল। ফিরে আসবে সেই ভয়াবহ পরিস্থিতি। এই নিয়ে কৃষকরা চরম বিপাকে রয়েছে।

এর মধ্যে গত শুক্রবার ভোররাতে সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরের নাউটানা ফসল রক্ষা বাঁধ কেটে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। ফলে ওই এলাকার এক হাজার হেক্টর জমির বোরো ধান হুমকির মুখে পড়েছে। এসব জমির

৫০ শতাংশ ধান তলিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছে কৃষকরা। ঘটনার পর টাঙ্গুয়ার হাওরের এরালিয়াকোনা, গনিয়াকুরি, লামারগুল, টানেরগুল, নান্দিয়া, মাজেরগুল, টুঙ্গামারা, সুনাডুবি, গলগলিয়া, শামসাগর হাওরের ধান হুমকির মুখে পড়েছে।

জানা যায়, ভারি বর্ষণের আশঙ্কায় সুনামগঞ্জের হাওরের বোরো কৃষকদের পাকা ধান দ্রুত কাটার জন্য সতর্কবার্তা জারি করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ৩০ এপ্রিল থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা সুনামগঞ্জ জেলায় ভারি থেকে মাঝারি বর্ষণের আশঙ্কা রয়েছে। বর্ষণ হলে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি ও আকস্মিক বন্যার সৃষ্টি হয়ে হাওরের সব পাকা ধান তলিয়ে যেতে পারে। এই আশঙ্কাবার্তা জারি করে মসজিদ-মন্দিরসহ বিভিন্ন স্থানে প্রচারণা চালানো হয়েছে।

তবে হাওরের বোরো ফসল পেকে গেলেও শ্রমিকের অভাবে কৃষকরা ধান কাটতে পারছে না। সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন গত ১৭ এপ্রিল সুনামগঞ্জ জেলার অন্যান্য পেশায় নিয়োজিত শ্রমিকদের হাওরে এসে ধান কাটার জন্য লিখিত আহ্বান জানিয়েছে। গত ২৪ এপ্রিল সুনামগঞ্জ পুলিশ বিভাগও একই দাবি জানিয়েছে জেলার ভিন্ন পেশার শ্রমিকদের।

সুনামগঞ্জের পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী রঞ্জন কুমার দাস বলেন, ‘আগামী ২৯ এপ্রিল থেকে ২ মে পর্যন্ত বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও তত্সংলগ্ন মেঘালয় ও আসামে ভারি ও মাঝারি বৃষ্টি হবে। এতে নদ-নদীর পানি বিপত্সীমার ওপরে উঠে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। এ কারণে আমরা কৃষকদের দ্রুত হাওরের ধান কেটে ফেলার আহ্বান জানিয়েছি। বিভিন্ন স্থানে আমরা মাইকিং করেছি।’

হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এল এম সৌকত জানান, ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর পূর্বাভাস দিয়েছে, আসাম, মেঘালয় ও শিলিগুড়ি এলাকায় ২৯ এপ্রিল থেকে ৩ মে পর্যন্ত ১৫০ থেকে ২০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হবে। যেহেতু ওই এলাকাগুলো বাংলাদেশ থেকে উঁচু স্থানে অবস্থিত তাই পানি বাংলাদেশের বিভিন্ন নদী দিয়ে হাওরে প্রবেশ করবে। এতে করে নিম্ন এলাকাগুলো জলমগ্ন হয়ে পড়বে। তাই কৃষকদের দ্রুত ৮০ শতাংশ পর্যন্ত পাকা ধান কেটে ফেলার পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে।

হবিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান জানান, জেলায় এবার বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক লাখ ১৫ হাজার ৭৪ হেক্টর জমি। কিন্তু এ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে এক লাখ ২১ হাজার ৪৩০ হেক্টর জমি চাষ করা হয়েছে। বোরো চাষে এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন অনেকটা সাফল্যের। এ পর্যন্ত হাওর পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ধানের ফলন ভালো হয়েছে। এরই মধ্যে হাওর এলাকার ৫০ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। কৃষকদের দ্রুত ধান কাটার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কারণ ভারতে বৃষ্টি হওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশেও বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে।

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ