ঢাকা , শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ডিম পেড়ে বাচ্চা ফুটাতে তা দিচ্ছে কুমির

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ বাগেরহাটের বাগেরহাটে হযরত খানজাহান (রহ.) মাজার শরীফের দিঘির মিঠা পানির মা কুমির আবারও ডিম পেড়েছে। গত শনিবার ও রবিবার দিঘির মা কুমিরটি আবারও ৬৫থেকে ৭০টি ডিম পাড়ে। বৃহস্পতিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, রোদের মধ্যে দিঘির উত্তর পাড়ে মা কুমিরটি মাটি আঁকড়ে আছে। সেখানে গর্ত খুঁড়ে ডিম ঢেকে রেখেছে ওই মাদি কুমিরটি। ডিম পাড়ার পর এখন বাচ্চা ফুটানোর জন্য ‘তা’ দিচ্ছে।

আগ্রহী মানুষ কাছে গেলেই তেড়ে আসছে কুমিরটি। সেখানে বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘিরে রেখেছে মাজারের খাদেমরা। অনেকে কুমিরের ডিম দেখতে ভিড় করছেন সেখানে। মা কুমিরটি ডিম মাটির ধুলো দিয়ে ঢেকে রেখে বাচ্চা ফুটাবার জন্য ‘তা’ দিতে থাকায় ডিমের সঠিক সংখ্যার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। প্রতিবারের মত এবারও মাজারের খাদেমরা দীঘির কুমিরের ডিম থেকে বাচ্চা জম্ম নেবে এমন প্রত্যাশা করছেন।

খানজাহানের মাজারের প্রধান খাদেম শের আলী ফকির জানান, গত শনিবার রাতে ও রবিবার সকালে মা কুমিরটি দিঘির উত্তর পাড়ে গর্ত খুঁড়ে আনুমানিক ৬০ থেকে ৭০টি ডিম পেড়েছে। ওই ডিম ধুলামাটি দিয়ে ঢেকে বাচ্চা ফোটানোর জন্য এখন ‘তা’ দিচ্ছে কুমিরটি। মাঝে মধ্যে খুব অল্পসময়ের জন্য কুমিরটি দিঘিতে নেমে আবার ফিরে আসছে ডিমে তা দিতে। আগামী আগস্ট মাস পর্যন্ত কুমিরটি ডিমে তা দেবার পর বাচ্চা জন্মাবে এমন প্রত্যাশা মাজারের প্রধান খাদেমের।

মাজারের প্রধান খাদেম আরও জানান, হযরত খানজাহান (রহ.) এ দিঘিতে কালাপাড় ও ধলাপাড় নামে দুটি কুমির লালন-পালন করতেন। ওই জুটির কোনো বংশধর এখন আর বেঁচে নেই। এখন ভারত সরকারের দেওয়া মিঠা পানির কুমির এখন দিঘির শেষ সম্বল। কয়েক বছর ধরে এই দীঘির মাদি কুমিরটি ডিম পাড়লেও তাতে বাচ্চা ফুটছে না। কুমিরের বংশবৃদ্ধি না হলে দিঘিটি তার সাড়ে ৬শ বছরের ঐতিহ্য হারাবে। তাই দিঘিতে কুমিরের বংশবৃদ্ধি ও সংরণের জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানান তিনি।

বাগেরহাট জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সাইফুজ্জামান খান জানান, দিঘিতে বর্তমানে মিঠা পানি প্রজাতির একটি পুরুষ ও একটি মা কুমির রয়েছে। কয়েক বছর ধরে প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম ভাবেই চেষ্টা করেও ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানো যায়নি। মা কুমিরটিকে চিকিৎসাও দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শও নেওয়া হয়েছে। পুরুষ কুমিরটির শুক্রাণু মা কুমিরটির ডিম্বাণুতে যথাযথভাবে প্রতিস্থাপন না হবার ফলে ডিম থেকে বাচ্চা ফুটছেনা। তা ছাড়া শতভাগ সুষ্ঠু পরিবেশ না থাকায় পুরুষ কুমিরটির শুক্রাণুর সমতা কমে যেতে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে।

বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস বলেন, কুমির খানজাহানের দিঘির ঐতিহ্য। কুমিরের ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানোর জন্য কয়েক বছর ধরে নানাভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে প্রাণিসম্পদ বিভাগের চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে। কী কারণে বাচ্চা ফুটছে না তা জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে দিঘির ঐতিহ্য ধরে রাখতে কুমিরের বংশবৃদ্ধির জন্য সরকারের সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। তাই ইতিমধ্যে খানজাহানের দিঘি থেকে দুটি কুমির সুন্দরবনের করমজল কুমির প্রজনন কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সুন্দরবনের করমজল থেকে কুমির এনে দিঘিতে সংরণের জন্য বন বিভাগের সাথে আলোচনা করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, হযরত খানজাহান (রহ.) আমল থেকে প্রায় সাড়ে ৬শ বছর ধরে মাজারের দিঘিতে ‘কালাপাড়’ ও ‘ধলাপাড়’ নামের মিঠা পানির কুমির বংশ পরাম্পরা (মার্স কোকোডাইল) বসবাস করে আসছে। তবে, ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে হযরত খানজাহানের আমরের কুমিরের শেষ বংশধরটি মারা যায়। বর্তমানে দিঘিতে কালাপাড় ও ধলাপাড়ের কোনো বংশধর নেই। ২০০৫ সালে ভারতের মাদ্রাজ কোকোডাইল ফার্ম থেকে পাওয়া ৪০টি মিঠা পানির কুমিরছানার মধ্যে ছয়টি কুমির খানজাহানের দিঘিতে ছাড়া হয়েছে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

ডিম পেড়ে বাচ্চা ফুটাতে তা দিচ্ছে কুমির

আপডেট টাইম : ০৫:১৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ মে ২০১৮

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ বাগেরহাটের বাগেরহাটে হযরত খানজাহান (রহ.) মাজার শরীফের দিঘির মিঠা পানির মা কুমির আবারও ডিম পেড়েছে। গত শনিবার ও রবিবার দিঘির মা কুমিরটি আবারও ৬৫থেকে ৭০টি ডিম পাড়ে। বৃহস্পতিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, রোদের মধ্যে দিঘির উত্তর পাড়ে মা কুমিরটি মাটি আঁকড়ে আছে। সেখানে গর্ত খুঁড়ে ডিম ঢেকে রেখেছে ওই মাদি কুমিরটি। ডিম পাড়ার পর এখন বাচ্চা ফুটানোর জন্য ‘তা’ দিচ্ছে।

আগ্রহী মানুষ কাছে গেলেই তেড়ে আসছে কুমিরটি। সেখানে বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘিরে রেখেছে মাজারের খাদেমরা। অনেকে কুমিরের ডিম দেখতে ভিড় করছেন সেখানে। মা কুমিরটি ডিম মাটির ধুলো দিয়ে ঢেকে রেখে বাচ্চা ফুটাবার জন্য ‘তা’ দিতে থাকায় ডিমের সঠিক সংখ্যার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। প্রতিবারের মত এবারও মাজারের খাদেমরা দীঘির কুমিরের ডিম থেকে বাচ্চা জম্ম নেবে এমন প্রত্যাশা করছেন।

খানজাহানের মাজারের প্রধান খাদেম শের আলী ফকির জানান, গত শনিবার রাতে ও রবিবার সকালে মা কুমিরটি দিঘির উত্তর পাড়ে গর্ত খুঁড়ে আনুমানিক ৬০ থেকে ৭০টি ডিম পেড়েছে। ওই ডিম ধুলামাটি দিয়ে ঢেকে বাচ্চা ফোটানোর জন্য এখন ‘তা’ দিচ্ছে কুমিরটি। মাঝে মধ্যে খুব অল্পসময়ের জন্য কুমিরটি দিঘিতে নেমে আবার ফিরে আসছে ডিমে তা দিতে। আগামী আগস্ট মাস পর্যন্ত কুমিরটি ডিমে তা দেবার পর বাচ্চা জন্মাবে এমন প্রত্যাশা মাজারের প্রধান খাদেমের।

মাজারের প্রধান খাদেম আরও জানান, হযরত খানজাহান (রহ.) এ দিঘিতে কালাপাড় ও ধলাপাড় নামে দুটি কুমির লালন-পালন করতেন। ওই জুটির কোনো বংশধর এখন আর বেঁচে নেই। এখন ভারত সরকারের দেওয়া মিঠা পানির কুমির এখন দিঘির শেষ সম্বল। কয়েক বছর ধরে এই দীঘির মাদি কুমিরটি ডিম পাড়লেও তাতে বাচ্চা ফুটছে না। কুমিরের বংশবৃদ্ধি না হলে দিঘিটি তার সাড়ে ৬শ বছরের ঐতিহ্য হারাবে। তাই দিঘিতে কুমিরের বংশবৃদ্ধি ও সংরণের জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানান তিনি।

বাগেরহাট জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সাইফুজ্জামান খান জানান, দিঘিতে বর্তমানে মিঠা পানি প্রজাতির একটি পুরুষ ও একটি মা কুমির রয়েছে। কয়েক বছর ধরে প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম ভাবেই চেষ্টা করেও ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানো যায়নি। মা কুমিরটিকে চিকিৎসাও দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শও নেওয়া হয়েছে। পুরুষ কুমিরটির শুক্রাণু মা কুমিরটির ডিম্বাণুতে যথাযথভাবে প্রতিস্থাপন না হবার ফলে ডিম থেকে বাচ্চা ফুটছেনা। তা ছাড়া শতভাগ সুষ্ঠু পরিবেশ না থাকায় পুরুষ কুমিরটির শুক্রাণুর সমতা কমে যেতে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে।

বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস বলেন, কুমির খানজাহানের দিঘির ঐতিহ্য। কুমিরের ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানোর জন্য কয়েক বছর ধরে নানাভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে প্রাণিসম্পদ বিভাগের চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে। কী কারণে বাচ্চা ফুটছে না তা জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে দিঘির ঐতিহ্য ধরে রাখতে কুমিরের বংশবৃদ্ধির জন্য সরকারের সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। তাই ইতিমধ্যে খানজাহানের দিঘি থেকে দুটি কুমির সুন্দরবনের করমজল কুমির প্রজনন কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সুন্দরবনের করমজল থেকে কুমির এনে দিঘিতে সংরণের জন্য বন বিভাগের সাথে আলোচনা করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, হযরত খানজাহান (রহ.) আমল থেকে প্রায় সাড়ে ৬শ বছর ধরে মাজারের দিঘিতে ‘কালাপাড়’ ও ‘ধলাপাড়’ নামের মিঠা পানির কুমির বংশ পরাম্পরা (মার্স কোকোডাইল) বসবাস করে আসছে। তবে, ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে হযরত খানজাহানের আমরের কুমিরের শেষ বংশধরটি মারা যায়। বর্তমানে দিঘিতে কালাপাড় ও ধলাপাড়ের কোনো বংশধর নেই। ২০০৫ সালে ভারতের মাদ্রাজ কোকোডাইল ফার্ম থেকে পাওয়া ৪০টি মিঠা পানির কুমিরছানার মধ্যে ছয়টি কুমির খানজাহানের দিঘিতে ছাড়া হয়েছে।