বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ লালচে বাদামি রং। রোদে এলে সে রং ঝিলিক দেয়। ঝালরের মতো গলার ঝুল, লেজ মাটি ছুঁই ছুঁই। দুটি কান নেমে গেছে ঘাড়ের কাছে। নাকের ভেতর দিয়ে দড়ি পরানো হয়েছে। গলাও প্যাঁচানো। এভাবে চারটি লম্বা দড়ি দিয়ে সে বাঁধা। তার সবল দেহখানি সামলাতে চারজন শক্ত-সমর্থ লোক খাড়া। বুক কেঁপে ওঠার মতো কালো দুটি চোখ। হাঁটলে মাটি কাঁপে। গম্ভীর মুখে বাদশাহি চালচলন। নাম ওর ‘সুলতান’।
তবে কোনো সাম্রাজ্যের অধিপতি নয় সে, গায়েগতরে বিশাল এক গরু। মার্কিন মুল্লুকের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যে ২০১৪ সালে গরুটির জন্ম। মাত্র ১১ মাস বয়সে আকাশপথ পাড়ি দিয়ে ওকে আনা হয় বাংলাদেশে। গরুটি কিনে আনে আমেরিকান ডেইরি নামের গাজীপুরের একটি খামার। এই খামারে আসার পর বাছুরটি নাম হয় ‘সুলতান’।
সময় গড়াতে থাকে, সুলতানও বড় হতে থাকে। ওর লালনপালন চলে দুই বছর। এত বড় যে সুলতানের ওজন এখন প্রায় ১ হাজার ১০০ কেজি। উচ্চতা ছয় ফুট, দৈর্ঘ্য ১০ ফুট।
তিন মাস আগে সুলতানকে কিনে নেয় মোহাম্মদপুরের সাজিদ অ্যাগ্রো ফার্ম। এক মাস আগে ১৬ লাখ টাকায় ‘সুলতান’ বিক্রি হয়ে গেছে। কোরবানির ঈদের জন্য বিশাল এই গরুকে কিনেছেন এক ব্যবসায়ী। তবে কোরবানির ঈদের আগ পর্যন্ত সাজিদ অ্যাগ্রো ফার্মেই থাকবে সুলতান।
সাজিদ অ্যাগ্রোর মালিক ইমরান হোসেনের দাবি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে সরাসরি কিনে আনা গরু এই প্রথম এ দেশে কোরবানির ঈদ উপলক্ষে বিক্রি হলো, এর আগে যা হয়নি।
সুলতানের জীবনযাপনও বেশ আরাম-আয়েশে চলে। ইমরান হোসেন বলেন, প্রতিদিন ওর তিনবেলা গোসল করাতে হবে। প্রতিবারই গোসলের পর চলে সুলতানের গা মুছে দেওয়া পর্ব।
মার্কিনি গরু হলেও এখন এ দেশের আবহাওয়ার সঙ্গে নিজেকে বেশ মানিয়ে ফেলেছে সুলতান। ইমরান হোসেন বলেন, সুলতান ব্রাহমা জাতের গরু। এ দেশে গাভির সঙ্গে সংকর করা নয়। সংকর করা ব্রাহমা জাতের গরুর ওজন ৮০০ কেজির বেশি সাধারণত হয় না। তবে সুলতান বাংলাদেশের আবহাওয়ার সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে ফেলেছে। প্রতিদিন ২৫ কেজি গম, ভুট্টা, খেসারির ভুসি খেতে দেওয়া হয়। এর বাইরে সুলতান খেয়ে থাকে ২০ কেজি ঘাস ও ১০ কেজি খড়। এসব খাবার দিনে তিনবেলা দেওয়া হয় সুলতানকে।
ইমরান হোসেন বলেন, কোরবানি দেওয়া হলে সুলতানের কাছ থেকে প্রায় ২২ মণ মাংস পাওয়া যাবে।
সাড়ে তিন বছর বয়সী সুলতানের দ্রুত বেড়ে ওঠার কারণ সম্পর্কে ইমরান হোসেন বলেন, ব্রাহমা জাতের গরু ঠিকমতো লালনপালন করা হলে এই আকৃতির হয়ে থাকে। তা ছাড়া সুলতানের মাথায় কোনো শিং নেই। শিং বাড়তে না দেওয়ার ব্যবস্থা আমেরিকায় করে দেওয়া হয়েছিল। শিং ছোট থাকলে গরুর শারীরিক বৃদ্ধি দ্রুত ঘটে।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে সরাসরি নিয়ে আসা গরু এভাবে বিক্রির তথ্য প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কাছেও নেই। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আইনুল হক বলেন, ‘ভারত, মিয়ানমার ও নেপালের গরু বাংলাদেশে আসে। অস্ট্রেলিয়ান, পাকিস্তানের শাহিয়াল গরু সংকর করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া গরু সরাসরি দেশের বাজারে বিক্রির তথ্য এখন পর্যন্ত আমার কাছে নেই।