আসছে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জন্য ১৯ হাজার ৫৫৬ কোটি ৩৪ লাখ টাকা কৃষি ও পল্লীঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে। চলতি অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৭ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা। সে হিসাবে লক্ষ্যমাত্রা ১৩ দশমিক ১৪ শতাংশ বাড়ছে। অন্যদিকে গত এপ্রিল পর্যন্ত দশ মাসেই কৃষি ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রার প্রায় শতভাগ বিতরণ হয়ে গেছে। এ সময়ে লক্ষ্যমাত্রার ৯৮ দশমিক ২৬ শতাংশ বিতরণ হয়েছে। আর বাকি দুই মাসে আরো তিন হাজার কোটি টাকা বিতরণ হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
আজ বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জাতীয় বাজেট ঘোষণা করবেন। এ বাজেটেই তিনি আগামী অর্থবছরে কত টাকা কৃষি ঋণ বিতরণ হবে তাও বলবেন। অর্থমন্ত্রীর ঘোষণার জন্যই বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কৃষি ঋণের তথ্য সরবরাহ করে থাকে। পরে ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে লক্ষ্যমাত্রা নেওয়ার পরে লক্ষ্যমাত্রা চূড়ান্ত করে। ২০১৮-১৯ সালের জন্য ২১ হাজার ৪৪৫ কোটি এবং ২০১৯-২০ সালের জন্য ২৩ হাজার ১৬০ কোটি টাকা কৃষি ও পল্লী ঋণে বিতরণ করার প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের।
চলতি অর্থবছরের কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালায় বেশকিছু পরিবর্তন আনা হয়। এবার শস্য ও ফসল চাষের ক্ষেত্রে সিআইবি রিপোর্ট ছাড়াই একজন কৃষক সর্বোচ্চ আড়াই লাখ টাকা ঋণ নিতে পেরেছেন। আগে এ সীমা ছিল দেড় লাখ টাকা। এছাড়া সরকারি ও বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নিজস্ব নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে বাধ্যতামূলকভাবে নির্ধারিত কৃষি ও পল্লী ঋণ বিতরণ লক্ষ্যমাত্রার ন্যূনতম ৩০ শতাংশ বিতরণ করতে হবে। তবে নেটওয়ার্ক অপ্রতুলতার কারণে বিদেশি ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে এ নিয়ম কার্যকর হবে না বলে ঘোষণা করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
মোট দেশজ উত্পাদনে কৃষি ও পল্লী অর্থনীতি খাতের অবদান প্রায় এক পঞ্চমাংশ। আর শ্রমজীবী কর্মশক্তির প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থানে এ খাতের অবদান ৪৫ শতাংশের মতো। রপ্তানিতেও কৃষিখাতের ভূমিকা বাড়ছে। তবে গুরুত্বপূর্ণ এ খাতটিতে ব্যাংকিং ও আর্থিক বাজারের ঋণ যোগান রয়েছে সার্বিক ঋণ যোগানের তিন শতাংশেরও নিচে।
নীতিমালা অনুযায়ী, এবার এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রমের আওতায়ও ব্যাংকগুলো কৃষি ও পল্লী ঋণ বিতরণ করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে এজেন্টদের কমিশন বা সার্ভিস চার্জ হিসেবে গ্রাহকদের কাছ থেকে নির্ধারিত সুদের অতিরিক্ত দশমিক ৫০ শতাংশ আদায় করা সুযোগ রাখা হয়েছে। আম ও লিচুর পাশাপাশি পেয়ারা উত্পাদনেও সারা বছর ঋণ দেওয়া যাবে। এছাড়া গত জুলাই থেকে কৃষি ও পল্লী ঋণের নির্ধারিত সুদহারের সর্বোচ্চ সীমা ১০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়।
২০১৫-১৬ অর্থবছর ১৬ হাজার ৪০০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ব্যাংকগুলো ১৭ হাজার ৬৪৬ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এক হাজার ২৪৬ কোটি টাকা বেশি। ওই অর্থবছরে ৩৪ লাখ ২৬ হাজার ১৩০ জন কৃষক এ ঋণ পান। ২০১৪-১৫ অর্থবছর এ খাতে বিতরণ হয় ১৫ হাজার ৯৭৮ কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৫ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় প্রায় ৩ শতাংশ বেশি বিতরণ হয়। তার আগের অর্থবছরে বিতরণ হয়েছিল ১৬ হাজার ৩৭ কোটি টাকা। ওই বছরের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এক হাজার ৪৪২ কোটি টাকা বা প্রায় ১০ শতাংশ বেশি ঋণ বিতরণ হয়। গত কয়েক বছর ধরেই কৃষি ঋণ বিতরণে যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে তার চেয়ে বেশি বিতরণ হচ্ছে। তবে সার্বিকভাবে বেশি বিতরণ হলেও কয়েকটি ব্যাংক লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারছে না। এমনকি আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের দৈন্যদশার কারণে কৃষি ও পল্লী ঋণ থেকে দূরে রাখার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করে। বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের এ ঋণ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে। তবে বাকি ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে লক্ষ্যমাত্রা চেয়ে নেয়। আর সে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না করতে পারলে জরিমানারও ব্যবস্থা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।