ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

করোনায় বেহাল শিক্ষা অবকাঠামো: খোলার আগেই পুনঃপ্রস্তুত করুন

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ করোনা পরিস্থিতির কারণে সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে ১ জুলাই থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হবে। প্রশ্ন হচ্ছে, ১ জুলাই হোক কিংবা তারও পর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হলে সেখানে লেখাপড়ার পরিবেশ কি আদৌ বিরাজ করবে?

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো পাঠদানের জন্য কতটা প্রস্তুত এবং সেখানে কী বাস্তবতা বিরাজ করছে, তা জানতে যুগান্তরের পক্ষ থেকে বিভাগওয়ারি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো ও অন্যান্য দিক পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। এই পর্যবেক্ষণ বলছে, গত ১৫ মাস ধরে বন্ধ থাকার কারণে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পাঠদানের অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে।

গতকাল চট্টগ্রাম বিভাগের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর হাল-হকিকত ছাপা হয়েছে। এ থেকে জানা যায়, চট্টগ্রাম ও কুমিল্লার কিন্ডারগার্টেনসহ অধিকাংশ বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকায় সেগুলোয় শিক্ষাদানের পরিবেশ নষ্ট হয়ে গেছে। শুধু তাই নয়, এ দুই জেলায় এক হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। চট্টগ্রাম বিভাগের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কোনো কোনোটি চলে গেছে ঠিকাদারের দখলে, কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের শ্রেণিকক্ষ ব্যবহৃত হচ্ছে গুদামঘর হিসাবে, কোথাও বিরাজ করছে ভূতুড়ে পরিবেশ, কোথাও বা বসছে বখাটেদের আড্ডাখানা।

এক কথায়, জরাজীর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো যেন ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। দেশের অন্যান্য বিভাগের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থাও একইরকম। কোথাও প্রতিষ্ঠানের ভবনের ভেতরেই চলছে পশুপালন। কোথাও গড়ে তোলা হয়েছে পণ্যের গুদাম, কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে বসবাস করছেন নির্মাণ শ্রমিকরা। এমনও দেখা গেছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠে চলছে সবজির চাষ। ধুলার আস্তর পড়েছে আসবাবপত্রে, ব্যবহার না করায় নষ্ট হয়ে পড়ে আছে বৈদ্যুতিক বাতি ও ফ্যান। দীর্ঘদিন পরিষ্কার কার্যক্রম না থাকায় শ্রেণিকক্ষের ভেতর সৃষ্টি হয়েছে নোংরা, পুঁতিগন্ধময় পরিবেশ।

অবশ্য ঢালাওভাবে সব প্রতিষ্ঠানেই যে বেহাল দশা বিরাজ করছে, তা নয়। মূলত যেসব স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসার অধ্যক্ষ বা প্রধান শিক্ষক নিয়মিত প্রতিষ্ঠানে যাননি এবং তাদের দায়িত্ব পালন করেননি, সেসব প্রতিষ্ঠানেই উপরোল্লিখিত অবস্থা দেখা গেছে। আমাদের প্রশ্ন হলো, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা তো নিয়মিত বেতন-ভাতা পেয়ে আসছেন। শিক্ষাদান কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো ও পরিবেশের প্রতি নজর দেননি কেন তারা?

জেলা বা উপজেলার শিক্ষা কর্মকর্তারাই বা কী করছেন? শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অফিস নিয়মিত খোলা রাখা হলে স্থাপনা ও আসবাবপত্রসহ সবকিছুর রক্ষণাবেক্ষণ করা যেত নিঃসন্দেহে। আমরা মনে করি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অবকাঠামোসহ পুরো পরিবেশের যে বেহাল দশার কথা বলা হলো, সংশ্লিষ্ট শিক্ষকসমাজ ও শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারা তার দায় এড়াতে পারেন না। যা হওয়ার হয়ে গেছে, এখন উচিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে পাঠদানের উপযোগী করে পুনঃপ্রস্তুত করা।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো কবে খুলবে, সেটা প্রশ্ন নয়; প্রশ্ন হচ্ছে, সেগুলো খোলার আগেই শিক্ষাদানের জন্য উপযুক্ত হচ্ছে কিনা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ বা প্রধান শিক্ষককে স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের এ সংক্রান্ত দায়িত্ব নিতে হবে অবশ্যই।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

করোনায় বেহাল শিক্ষা অবকাঠামো: খোলার আগেই পুনঃপ্রস্তুত করুন

আপডেট টাইম : ০৪:১৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ জুন ২০২১

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ করোনা পরিস্থিতির কারণে সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে ১ জুলাই থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হবে। প্রশ্ন হচ্ছে, ১ জুলাই হোক কিংবা তারও পর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হলে সেখানে লেখাপড়ার পরিবেশ কি আদৌ বিরাজ করবে?

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো পাঠদানের জন্য কতটা প্রস্তুত এবং সেখানে কী বাস্তবতা বিরাজ করছে, তা জানতে যুগান্তরের পক্ষ থেকে বিভাগওয়ারি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো ও অন্যান্য দিক পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। এই পর্যবেক্ষণ বলছে, গত ১৫ মাস ধরে বন্ধ থাকার কারণে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পাঠদানের অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে।

গতকাল চট্টগ্রাম বিভাগের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর হাল-হকিকত ছাপা হয়েছে। এ থেকে জানা যায়, চট্টগ্রাম ও কুমিল্লার কিন্ডারগার্টেনসহ অধিকাংশ বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকায় সেগুলোয় শিক্ষাদানের পরিবেশ নষ্ট হয়ে গেছে। শুধু তাই নয়, এ দুই জেলায় এক হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। চট্টগ্রাম বিভাগের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কোনো কোনোটি চলে গেছে ঠিকাদারের দখলে, কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের শ্রেণিকক্ষ ব্যবহৃত হচ্ছে গুদামঘর হিসাবে, কোথাও বিরাজ করছে ভূতুড়ে পরিবেশ, কোথাও বা বসছে বখাটেদের আড্ডাখানা।

এক কথায়, জরাজীর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো যেন ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। দেশের অন্যান্য বিভাগের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থাও একইরকম। কোথাও প্রতিষ্ঠানের ভবনের ভেতরেই চলছে পশুপালন। কোথাও গড়ে তোলা হয়েছে পণ্যের গুদাম, কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে বসবাস করছেন নির্মাণ শ্রমিকরা। এমনও দেখা গেছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠে চলছে সবজির চাষ। ধুলার আস্তর পড়েছে আসবাবপত্রে, ব্যবহার না করায় নষ্ট হয়ে পড়ে আছে বৈদ্যুতিক বাতি ও ফ্যান। দীর্ঘদিন পরিষ্কার কার্যক্রম না থাকায় শ্রেণিকক্ষের ভেতর সৃষ্টি হয়েছে নোংরা, পুঁতিগন্ধময় পরিবেশ।

অবশ্য ঢালাওভাবে সব প্রতিষ্ঠানেই যে বেহাল দশা বিরাজ করছে, তা নয়। মূলত যেসব স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসার অধ্যক্ষ বা প্রধান শিক্ষক নিয়মিত প্রতিষ্ঠানে যাননি এবং তাদের দায়িত্ব পালন করেননি, সেসব প্রতিষ্ঠানেই উপরোল্লিখিত অবস্থা দেখা গেছে। আমাদের প্রশ্ন হলো, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা তো নিয়মিত বেতন-ভাতা পেয়ে আসছেন। শিক্ষাদান কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো ও পরিবেশের প্রতি নজর দেননি কেন তারা?

জেলা বা উপজেলার শিক্ষা কর্মকর্তারাই বা কী করছেন? শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অফিস নিয়মিত খোলা রাখা হলে স্থাপনা ও আসবাবপত্রসহ সবকিছুর রক্ষণাবেক্ষণ করা যেত নিঃসন্দেহে। আমরা মনে করি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অবকাঠামোসহ পুরো পরিবেশের যে বেহাল দশার কথা বলা হলো, সংশ্লিষ্ট শিক্ষকসমাজ ও শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারা তার দায় এড়াতে পারেন না। যা হওয়ার হয়ে গেছে, এখন উচিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে পাঠদানের উপযোগী করে পুনঃপ্রস্তুত করা।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো কবে খুলবে, সেটা প্রশ্ন নয়; প্রশ্ন হচ্ছে, সেগুলো খোলার আগেই শিক্ষাদানের জন্য উপযুক্ত হচ্ছে কিনা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ বা প্রধান শিক্ষককে স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের এ সংক্রান্ত দায়িত্ব নিতে হবে অবশ্যই।