শরীয়তপুরের ডামুড্যায় নিজ কার্যালয়ে আটকে রেখে ব্যবসায়ীকে পেটানো উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আবু বক্কর সিদ্দিককে কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে বদলি করা হয়েছে।
গতকাল সোমবার ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী কমিশনার মাশিয়া তুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক আদেশে তাকে বদলি করা হয়। এ আদেশে ১১ নভেম্বর থেকে তার নিজ কর্মস্থল থেকে তাকে অবমুক্ত করেন। তবে বদলিকৃত কর্মস্থলে যোগদানের তারিখ উল্লেখ করা হয়নি।
জানা গেছে, শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবু বকর সিদ্দিক ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার সময় মারধর ও লাঞ্ছিতের অভিযোগ তুলে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার বরাবর অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী দোকানি সোলাইমান ফরাজী। এর প্রেক্ষিতে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় থেকে শরীয়তপুর জেলা প্রশাসককে তদন্তের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে গত বুধবার, ৬ নভেম্বর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (উন্নয়ন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা) পিংকি সাহাকে তদন্তের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয় এবং পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্তের রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশ দেয় জেলা প্রশাসক।
তদন্তকারী কর্মকর্তা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পিংকি সাহা জানান, আমাকে ঘটনার তদন্তে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তবে দুইপক্ষ স্থানীয়ভাবে মীমাংসা করে নেয়। তবে বিভাগীয় কমিশনার মনে করেছেন তাকে এখন বদলি করা লাগবে, তাই তাকে বদলি করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন বলেন, ‘আমি এখনো তদন্তের রিপোর্ট হাতে পাইনি। তবে উভয়পক্ষ স্থানীয়ভাবে মীমাংসা করে নিয়েছে। অভিযোগ পত্র উঠিয়ে নিয়েছে। আমি এখন বাইরে আছি অফিসে গিয়ে প্রশাসনিকভাবে তাকে রিলিজ দেওয়া হবে।’
উল্লেখ্য, ডামুড্যা উপজেলার মডেরহাট বাজার এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে ছোট একটি কাপড়ের দোকান চালিয়ে আসছিলেন চর ধানকাটি এলাকার সোলাইমান ফরাজী। বাজারে অভিযান পরিচালনা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবু বকর সিদ্দিক। এ সময় তিনি সোলাইমান ফরাজীর কাছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স চাইলে তিনি প্রথমে ফটোকপি ও পরবর্তীতে মূল কপি দেখান। এরপর তার কাছে আয়কর সার্টিফিকেট চাইলে সেটি তিনি দেখাতে পারেননি। পরে তাকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ১ হাজার ১০০ টাকা জরিমানা করেন। জরিমানার টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ক্ষিপ্ত হয়ে আনসার সদস্যকে দিয়ে তাকে গাড়িতে উঠিয়ে নিজ কার্যালয়ে নিয়ে যান আবু বকর সিদ্দিক।
সেখান আটকে রেখে প্রথমে তাকে কানে ধরে উঠবস ও পরবর্তীতে আনসার ও তিনি নিজে লাঠি দিয়ে মারধর করেন বলে অভিযোগ করেন সোলাইমান। পরে খবর পেয়ে ডামুড্যা উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা সাইফুল ইসলাম ও পৌর জামায়াতের আমির আতিকুর রহমান কবির ঘটনাস্থলে গেলে তাদের অনুরোধে ২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। জামায়াতের আমির মাওলানা সাইফুল ইসলাম তার থেকে জরিমানার টাকা দিয়ে ছাড়িয়ে নেন। এ ঘটনায় সোমবার সকালে জেলা প্রশাসকের কাছেও একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী কাপড়ের দোকানি সোলাইমান ফরাজী।