চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ২০২৫ সালের ৫ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হতে পারে।
নিবন্ধনের সময় জাতীয় পরিচয়পত্র বা পাসপোর্ট, সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের এক কপি ছবি ও হজযাত্রীর ব্যাংক হিসাবের তথ্য প্রয়োজন হবে। প্রাক-নিবন্ধনের জন্য ৩০ হাজার এবং প্রাথমিক নিবন্ধনের জন্য তিন লাখ টাকা সোনালী ব্যাংকের যেকোনো শাখায় জমা দিতে হবে।
ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক নির্ধারিত তারিখের মধ্যে প্যাকেজ মূল্য পরিশোধ করে চূড়ান্ত নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হবে। প্রাক-নিবন্ধনকালে জমাকৃত ৩০ হাজার টাকার মধ্যে প্রাক-নিবন্ধন প্রসেস ফি বাবদ এক হাজার টাকা কাটার পর অবশিষ্ট ২৯ হাজার টাকা এবং প্রাথমিক নিবন্ধনের তিন লাখ টাকা চূড়ান্ত নিবন্ধনের সময় প্যাকেজ মূল্যের সঙ্গে সমন্বয় করা হবে।
গত ৩০ অক্টোবর অন্তর্বর্তী সরকারের ধর্ম উপদেষ্টা হজ প্যাকেজ ২০২৫ ঘোষণা করেন। এবার সরকারি ব্যবস্থাপনায় সাধারণ হজ প্যাকেজ-১ ও সাধারণ হজ প্যাকেজ-২ নামে দুটি প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। সাধারণ হজ প্যাকেজ-১-এর মূল্য চার লাখ ৭৮ হাজার ২৪২ টাকা এবং অন্যটির মূল্য পাঁচ লাখ ৭৫ হাজার ৬৮০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সরকারের দৃঢ় মনোভাব ও যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের কারণেই এ বছর বিমানভাড়া ২৬ হাজার ৯৮০ টাকা কমেছে।
রাজস্ব বোর্ডও হাজিদের জন্য বিমান টিকিটের ওপর শুল্ক ও ভ্যাট প্রত্যাহার করেছে। সৌদি রিয়ালের দাম গতবারের তুলনায় ২.৭৬ টাকা বৃদ্ধি পাওয়ায় সংগত কারণে হজের খরচ বৃদ্ধি পাওয়ার কথা। কিন্তু এ দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা যাতে সুলভে হজ পালন করতে পারে সেই লক্ষ্যে সরকার হাজিদের আবাসন ও সেবায় কিছুটা পরিবর্তন এনে হজ প্যাকেজ ঘোষণা করেছে।
এ বছর বেসরকারি মাধ্যমের সাধারণ হজ প্যাকেজের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে চার লাখ ৮৩ হাজার ১৫৬ টাকা। এ ছাড়া সাধারণ হজ প্যাকেজ গ্রহণপূর্বক এজেন্সিকে একটি অতিরিক্ত বিশেষ প্যাকেজ ঘোষণা করার সুযোগ রাখা হয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে বেসরকারি হজ এজেন্সিগুলো দুটি অংশ আলাদাভাবে প্যাকেজ ঘোষণা করেছে।
হজযাত্রীকে বায়োমেট্রিক সম্পন্ন করে ঢাকার হজ অফিসে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বায়োমেট্রিক সনদ ও পাসপোর্ট জমা দিতে হবে।শিশুদের নিবন্ধন অভিভাবকের সঙ্গে একত্রে করতে হবে। হজ শেষে শিশু বা নবজাতকের বিমানভাড়ার ফেরতযোগ্য অংশ প্রাপ্তির জন্য সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইনসের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। মৃত্যু বা গুরুতর অসুস্থতার কারণে হজে যেতে সক্ষম না হলে জমাকৃত অর্থের অব্যয়িত অংশ হজযাত্রীকে ফেরত দেওয়া হয়ে থাকে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক বিধি অনুসরণপূর্বক প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রা হজের সময় সঙ্গে নেওয়া যাবে। হজযাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা সরকারি হাসপাতালে বা বেসরকারি স্বনামধন্য ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সম্পন্ন করে রিপোর্টসহ টিকাদান কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে মেনিনজাইটিস ও ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকা নিয়ে টিকা সংবলিত স্বাস্থ্য সনদ গ্রহণ করতে হবে। বিমানে ভ্রমণকালে একজন হজযাত্রী সর্বোচ্চ ৪৬ কেজি (২৩+২৩) ওজনের দুটি ট্রলিব্যাগ এবং সর্বোচ্চ সাত কেজি ওজনের একটি হ্যান্ডব্যাগ সঙ্গে নিতে পারবেন। ট্রলিব্যাগে হজযাত্রীর নাম, পাসপোর্ট নম্বর,
whatsapp যুক্ত মোবাইল নম্বর, গাইড, মোনাজ্জেম মোবাইল নম্বর ইত্যাদি ইংরেজিতে লিখতে হবে। সৌদি সরকারের আইন অনুযায়ী, হজযাত্রীর লাগেজে নেশাজাতীয় ওষুধ, তামাকপাতা, জর্দা, গুল, শুঁটকি, গুড়, রান্না করা খাবার, পচনশীল দ্রব্যাদি (ফলমূল, পান, সুপারি) ইত্যাদি পরিবহন করা নিষিদ্ধ। ডায়াবেটিস, হৃদরোগের মতো অসুস্থতার জন্য প্রেসক্রিপশনসহ নিয়মিত সেবন করতে হয় এমন ওষুধ, স্ট্রিপ ইত্যাদি অবশ্যই সঙ্গে নিতে হবে।
ঢাকার হজযাত্রীরা হজ ফ্লাইট সময়ের কমপক্ষে ছয় ঘণ্টা আগে এবং ঢাকার বাইরের হজযাত্রীদের কমপক্ষে এক দিন আগে ঢাকার আশকোনা হজ ক্যাম্পে উপস্থিত থাকতে হবে। হজ ক্যাম্প ডরমিটরিতে বিনা মূল্যে থাকা এবং নিজ খরচে ক্যান্টিনে খাওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়।
সৌদি আরবে হজযাত্রীকে নুসুক কার্ড, পরিচয়পত্র, মোয়াল্লেম কার্ড ও হোটেলের কার্ড সার্বক্ষণিক সঙ্গে রাখতে হবে। সৌদি অবস্থানকালে রাজনীতি, বিক্ষোভ প্রদর্শন, মানববন্ধন, ভিক্ষাবৃত্তি, চুরিসহ সব ধরনের অনৈতিক ও অপরাধমূলক কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। অন্যথায় সে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
হজ সফরে মৃত্যুবরণকারী হজযাত্রীকে সৌদি আরবে দাফন করা হয়ে থাকে। হজ শেষে মৃত্যু সনদ ঢাকার হজ অফিসের মাধ্যমে মৃতের ওয়ারিশ বা বৈধ প্রতিনিধির কাছে হস্তান্তর করা হয়। লাগেজ হারিয়ে গেলে বাংলাদেশ হজ অফিস, জেদ্দা, মক্কা বা মদিনায় সরাসরি বা এজেন্সির মোনাজ্জেম বা গাইডের মাধ্যমে অবহিত করতে হবে। দেশে ফেরার পথে লাগেজ হারানো গেলে এসংক্রান্ত তথ্যাদি বিমানবন্দরের লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড সেকশনে জানাতে হবে। জেদ্দা, মক্কা ও মদিনায় স্থাপিত মেডিক্যাল সেন্টার থেকে হজযাত্রীরা বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করতে পারবেন। তবে খাওয়ার পানি, হ্যান্ডওয়াশ বা সাবান ও টয়লেট পেপার নিজ ব্যবস্থাপনায় কিনে ব্যবহার করতে হবে।
২৫ জিলকদ ১৪৪৬ হিজরির পর কোনো হজযাত্রী মক্কা কিংবা জেদ্দা থেকে সড়কপথে মদিনায় যেতে পারবেন না। ৫ জিলহজের পর কোনো হজযাত্রী মদিনা-আল-মুনাওয়ারায় অবস্থান করতে পারবেন না। হজের পর ১৪ জিলহজের আগে কোনো হজযাত্রী মক্কা-আল-মুকাররমা থেকে মদিনা-আল-মুনাওয়ারায় যেতে পারবেন না।
হজব্রত পালনের জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকা আবশ্যক। পরিকল্পিত পদক্ষেপের মাধ্যমে অগ্রসর হলে হজের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতটি সহজ ও সাবলীলভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব। মহান আল্লাহ সবার হজ সহজ করে দিন। আমিন।
লেখক : জনসংযোগ কর্মকর্তা, ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়