ঢাকা , শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৫, ১০ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সরকার নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে পারছে না: মির্জা ফখরুল

অন্তর্বর্তী সরকার কিছু বিষয়ে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে পারছে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শহিদ আসাদের ৫৬তম শাহাদাৎবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এ মন্তব্য করেন তিনি।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমি এক সাংবাদিকের (বিবিসি বাংলাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে) প্রশ্নের জবাবে বলেছি, অন্তর্বর্তী সরকার যদি নিরপেক্ষ না থাকে, তাহলে নির্বাচনের সময়ে একটি নিরপেক্ষ সরকার দরকার আছে। আমি এই কথাটা বলেছি কারণ, আমরা দেখছি কিছু বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে পারছে না। আমরা আশা করি, অন্তর্বর্তী সরকার নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করবে। দেশে যে সংকট আছে, তা থেকে মুক্ত করার জন্য দায়িত্ব পালন করবে। ’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা এখনো দেখছি, আমলাতন্ত্র আগে যে অবস্থায় ছিল এখনো সচিবালয় থেকে শুরু করে সব প্রশাসনে একইভাবে তাদের ভূমিকা পালন করছে। কোনো ধরনের রদবদল হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে লেখাপড়া একদম বন্ধ হয়ে গেছে, স্কুল-কলেজগুলোতে সেভাবে লেখাপড়া হচ্ছে না। স্বাস্থ্যব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়েছে। ’

তিনি বলেন, ‘এগুলো অতীত থেকেই এসেছে। সেগুলো পরিবর্তন এত অল্প সময়ে সম্ভবও নয়। সেজন্যই আমরা বলছি, নির্বাচন দ্রুত হওয়া দরকার। নির্বাচন দ্রুত হলে যে সরকার আসবে, রাজনৈতিক কমিটমেন্ট যেগুলো থাকবে সে কমিটমেন্টগুলো পালন করার জন্য অবশ্যই দায়বদ্ধ থাকবে।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সাধারণ মানুষ একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র চায়। সেই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে তারা তাদের অধিকার ফেরত চান। তারা যেন তাদের ভোটের অধিকারটা পান, কথা বলার অধিকার পান এবং তাদের সন্তানরা যাতে লেখাপড়া শিখতে পারে। তারা এমন একটি সমাজ চান, যেই সমাজে দুর্নীতি, অনিয়ম, অন্যায় থাকবে না। সেই সমাজে মানবিক মূল্যবোধ, ন্যায়বিচার থাকবে, সেই ধরনের একটি সমাজ তারা চান, কিন্তু সব সময় আমরা সেটি পাই না।’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘নির্বাচনটা দ্রুত হওয়া দরকার। কারণ, আমি বিশ্বাস করি, যে নির্বাচন থেকে আমরা প্রায় ১৫ বছর বঞ্চিত, সেই নির্বাচনের মাধ্যমে আমাদের জনগণ তাদের প্রতিনিধিকে নির্বাচিত করার একটি সুযোগ পাবেন। এখন এখানে জোর করে যদি সেই বিষয়টাকে বিতর্কিত করে ফেলা হয়, তাহলে জনগণ আবার তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন।আমাদের যে অভিজ্ঞতা, সেই অভিজ্ঞতায় আমরা দেখেছি, এই ধরনের নির্বাচন যদি দ্রুত না হয়, সময়ক্ষেপণ করা হয়, তাহলে সেখানে অন্যান্য শক্তিগুলো মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে থাকবে। তখন জনগণ তাদের চাহিদা থেকে পুরোপুরি বঞ্চিত হবে।’

বিএনপির অন্যতম এ শীর্ষ নেতা বলেন, ‘নির্বাচনে কে আসবে সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, গুরুত্বপূর্ণ জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা। সেটার জন্যই আমরা লড়াই করেছি দীর্ঘ ১৫ বছর। সেই কারণেই বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা অনেক। স্বাভাবিকভাবে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পরে জনগণের প্রত্যাশা অনেক বেড়েছে, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, এখন সমাজের যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে, সেই ধরনের ব্যবস্থায় থেকে আমরা এখনো নিশ্চিত হতে পারছি না, আমাদের প্রত্যাশাগুলো পূরণ হবে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘প্রতিটি রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন প্রোগ্রাম, কর্মসূচি আছে। সেই কর্মসূচিগুলো তারা চালি যেতে চায়, কিন্তু একটি বিষয়ে সবাই একমত, একটি নির্বাচন হওয়া দরকার। নির্বাচন শুধু একটি দলকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য নয়, একটি গণতান্ত্রিক পথ সৃষ্টি করার জন্য নির্বাচন প্রয়োজন।’

শহিদ আসাদ ও ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতিচারণ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ঊনসত্তরের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আমরা যারা জড়িত ছিলাম, তাদের কাছে শহিদ আসাদ অত্যন্ত ভালোবাসার নাম। আমরা যে সংগ্রাম-আন্দোলন করেছি, সেই সংগ্রাম-আন্দোলনে আসাদ একটি অনুপ্রেরণার নাম। শহিদ আসাদ আমাদের ইতিহাসের একটি অবিসম্ভাবী একটি নাম। যতই পাঠ্যপুস্তকে নাম না থাকুক বা কেউ স্মরণ না করুক, শহিদ আসাদকে ইতিহাস থেকে কেউ বিচ্ছিন্ন করতে পারবে না। এদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে আসাদ অমর হয়ে থাকবেন।’

তিনি বলেন, ‘চব্বিশের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের ফলে আমরা একজন ফ্যাসিস্ট শাসককে দেশ থেকে চলে যেতে বাধ্য করেছি। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে তৎকালীন সামরিক শাসক আইয়ুব খানকে চলে যেতে বাধ্য করা হয়েছিল, কিন্তু আমরা আমাদের লক্ষ্য পূরণ করতে পারিনি ‘

‘শহীদ আসাদ পরিষদ’ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি ড. মাহবুব উল্লাহ। এতে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি প্রমুখ।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

সরকার নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে পারছে না: মির্জা ফখরুল

আপডেট টাইম : ৭ ঘন্টা আগে

অন্তর্বর্তী সরকার কিছু বিষয়ে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে পারছে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শহিদ আসাদের ৫৬তম শাহাদাৎবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এ মন্তব্য করেন তিনি।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমি এক সাংবাদিকের (বিবিসি বাংলাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে) প্রশ্নের জবাবে বলেছি, অন্তর্বর্তী সরকার যদি নিরপেক্ষ না থাকে, তাহলে নির্বাচনের সময়ে একটি নিরপেক্ষ সরকার দরকার আছে। আমি এই কথাটা বলেছি কারণ, আমরা দেখছি কিছু বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে পারছে না। আমরা আশা করি, অন্তর্বর্তী সরকার নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করবে। দেশে যে সংকট আছে, তা থেকে মুক্ত করার জন্য দায়িত্ব পালন করবে। ’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা এখনো দেখছি, আমলাতন্ত্র আগে যে অবস্থায় ছিল এখনো সচিবালয় থেকে শুরু করে সব প্রশাসনে একইভাবে তাদের ভূমিকা পালন করছে। কোনো ধরনের রদবদল হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে লেখাপড়া একদম বন্ধ হয়ে গেছে, স্কুল-কলেজগুলোতে সেভাবে লেখাপড়া হচ্ছে না। স্বাস্থ্যব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়েছে। ’

তিনি বলেন, ‘এগুলো অতীত থেকেই এসেছে। সেগুলো পরিবর্তন এত অল্প সময়ে সম্ভবও নয়। সেজন্যই আমরা বলছি, নির্বাচন দ্রুত হওয়া দরকার। নির্বাচন দ্রুত হলে যে সরকার আসবে, রাজনৈতিক কমিটমেন্ট যেগুলো থাকবে সে কমিটমেন্টগুলো পালন করার জন্য অবশ্যই দায়বদ্ধ থাকবে।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সাধারণ মানুষ একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র চায়। সেই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে তারা তাদের অধিকার ফেরত চান। তারা যেন তাদের ভোটের অধিকারটা পান, কথা বলার অধিকার পান এবং তাদের সন্তানরা যাতে লেখাপড়া শিখতে পারে। তারা এমন একটি সমাজ চান, যেই সমাজে দুর্নীতি, অনিয়ম, অন্যায় থাকবে না। সেই সমাজে মানবিক মূল্যবোধ, ন্যায়বিচার থাকবে, সেই ধরনের একটি সমাজ তারা চান, কিন্তু সব সময় আমরা সেটি পাই না।’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘নির্বাচনটা দ্রুত হওয়া দরকার। কারণ, আমি বিশ্বাস করি, যে নির্বাচন থেকে আমরা প্রায় ১৫ বছর বঞ্চিত, সেই নির্বাচনের মাধ্যমে আমাদের জনগণ তাদের প্রতিনিধিকে নির্বাচিত করার একটি সুযোগ পাবেন। এখন এখানে জোর করে যদি সেই বিষয়টাকে বিতর্কিত করে ফেলা হয়, তাহলে জনগণ আবার তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন।আমাদের যে অভিজ্ঞতা, সেই অভিজ্ঞতায় আমরা দেখেছি, এই ধরনের নির্বাচন যদি দ্রুত না হয়, সময়ক্ষেপণ করা হয়, তাহলে সেখানে অন্যান্য শক্তিগুলো মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে থাকবে। তখন জনগণ তাদের চাহিদা থেকে পুরোপুরি বঞ্চিত হবে।’

বিএনপির অন্যতম এ শীর্ষ নেতা বলেন, ‘নির্বাচনে কে আসবে সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, গুরুত্বপূর্ণ জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা। সেটার জন্যই আমরা লড়াই করেছি দীর্ঘ ১৫ বছর। সেই কারণেই বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা অনেক। স্বাভাবিকভাবে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পরে জনগণের প্রত্যাশা অনেক বেড়েছে, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, এখন সমাজের যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে, সেই ধরনের ব্যবস্থায় থেকে আমরা এখনো নিশ্চিত হতে পারছি না, আমাদের প্রত্যাশাগুলো পূরণ হবে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘প্রতিটি রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন প্রোগ্রাম, কর্মসূচি আছে। সেই কর্মসূচিগুলো তারা চালি যেতে চায়, কিন্তু একটি বিষয়ে সবাই একমত, একটি নির্বাচন হওয়া দরকার। নির্বাচন শুধু একটি দলকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য নয়, একটি গণতান্ত্রিক পথ সৃষ্টি করার জন্য নির্বাচন প্রয়োজন।’

শহিদ আসাদ ও ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতিচারণ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ঊনসত্তরের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আমরা যারা জড়িত ছিলাম, তাদের কাছে শহিদ আসাদ অত্যন্ত ভালোবাসার নাম। আমরা যে সংগ্রাম-আন্দোলন করেছি, সেই সংগ্রাম-আন্দোলনে আসাদ একটি অনুপ্রেরণার নাম। শহিদ আসাদ আমাদের ইতিহাসের একটি অবিসম্ভাবী একটি নাম। যতই পাঠ্যপুস্তকে নাম না থাকুক বা কেউ স্মরণ না করুক, শহিদ আসাদকে ইতিহাস থেকে কেউ বিচ্ছিন্ন করতে পারবে না। এদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে আসাদ অমর হয়ে থাকবেন।’

তিনি বলেন, ‘চব্বিশের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের ফলে আমরা একজন ফ্যাসিস্ট শাসককে দেশ থেকে চলে যেতে বাধ্য করেছি। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে তৎকালীন সামরিক শাসক আইয়ুব খানকে চলে যেতে বাধ্য করা হয়েছিল, কিন্তু আমরা আমাদের লক্ষ্য পূরণ করতে পারিনি ‘

‘শহীদ আসাদ পরিষদ’ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি ড. মাহবুব উল্লাহ। এতে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি প্রমুখ।