জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) অধ্যাদেশ ২০২২ সংশোধনে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে একটি খসড়া চূড়ান্ত করেছে। সেখানে তিনটি পরিবর্তনকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এগুলো হলো- বয়স, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা সংজ্ঞা। আগামী সপ্তাহেই সংশোনী প্রস্তাব উপদেষ্টা পরিষদে পাঠানো হবে বলে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে জামুকা অধ্যাদেশ সংশোধন নিয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন এই মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক-ই-আজম বীরপ্রতীক।
এ বিষয়ে তিনি যুগান্তরকে বলেন, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে বেশ কিছু অসঙ্গতি আছে। এটা নিয়ে রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদেরও আপত্তি রয়েছে। একজন মুক্তিযোদ্ধার বয়স নির্ধারণেও আপত্তি আছে। এসব বিষয়ে বৃহস্পতিবার আমরা বৈঠক করলাম। একটা খসড়া প্রস্তুত করা হচ্ছে। এরপর অধ্যাদেশের জন্য চূড়ান্ত করা হবে।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, আইন সংশোধনের মাধ্যমে বীর মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা ও মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে স্বীকৃতির সর্বনিম্ন বয়সসীমা নতুন করে নির্ধারণ করা হবে। রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ ও অন্যদের ক্ষেত্রে পরিচয় হবে ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’। সব শ্রেণির মুক্তিযোদ্ধার প্রকৃত বয়স নির্ধারিত ছিল সাড়ে ১২ বছর। নতুন অধ্যাদেশে তা বাড়িয়ে ১৩ বছর করা হচ্ছে। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) আইন ২০২২-এ রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা ও সহযোগীদের একই মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল। তবে নতুন অধ্যাদেশে তা সংশোধন করা হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধের সংজ্ঞা পরিবর্তনের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর আহ্বান ও পাকিস্তান বাহিনীর সহযোগী হিসাবে রাজনৈতিক দল এবং সংগঠনের ক্রমবিন্যাস করছে মন্ত্রণালয়টি।
গত ২ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা, বয়সসীমাসহ সংশ্লিষ্ট আইন ও মুক্তিযোদ্ধাদের গেজেটভুক্তিসংক্রান্ত নির্দেশিকা সংশোধনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর বৃহস্পতিবার সংশোধনী বিষয়গুলো নিয়ে পর্যালোচনা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
নতুন আইনে মুক্তিযুদ্ধের সংজ্ঞা পরিবর্তনের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিস্থাপিত ১৩ নম্বর উপধারায় সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধ অর্থ ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত একটি স্বাধীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশের জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষায় হানাদার ও পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনী এবং তাহাদের সহযোগী রাজাকার, আলবদর, আলশামস, মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলাম এবং দালাল ও শান্তি কমিটির বিরুদ্ধে যুদ্ধ।
বিদ্যমান আইনের সংজ্ঞায় বলা রয়েছে, ‘মুক্তিযুদ্ধ অর্থ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণায় সাড়া দিয়া দখলদার ও হানাদার পাকিস্তানি সেনাবাহিনী, জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলাম ও মুসলিম লীগ এবং তাহাদের সহযোগী রাজাকার, আলবদর, আলশামস, মুজাহিদ বাহিনী ও পিস কমিটির বিরুদ্ধে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ২৬ মার্চ হইতে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত যুদ্ধ।’
দুটি সংজ্ঞা পর্যালোচনায় দেখা যায়, খসড়ায় রাষ্ট্রের নাম ও মূলনীতি পরিবর্তনের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর অবদান বাতিল এবং পাকিস্তান বাহিনীর দোসর হিসাবে রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগী বাহিনীগুলোর নাম আগে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।
বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বনিম্ন বয়স ১২ বছর ৬ মাস। ২০১৮ সালের ১৭ জানুয়ারি এক পরিপত্রের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ৩০ নভেম্বর যেসব মুক্তিযোদ্ধার বয়স ন্যূনতম ১২ বছর ৬ মাস ছিল, তাদের মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে বিবেচনা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে নতুন সংজ্ঞায় মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বনিম্ন বয়স ১৩ বছর করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ১৯৭১ সালের ৩০ নভেম্বরের বদলে ২৬ মার্চ মুক্তিযোদ্ধার সর্বনিম্ন বয়সসীমা নির্ধারণ করা হয়। তবে মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তান বাহিনী ও তার দোসরদের নির্যাতিত নারী বা বীরাঙ্গনার ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন বয়সসীমা প্রযোজ্য হবে না বলে খসড়ায় বলা হয়েছে।