বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ বন্যার পানিতে তলিয়ে আছে ঘরবাড়ি। গোয়ালঘরেও হাঁটুপানি। বাঁধে ও আশ্রয়কেন্দ্রে গাদাগাদি করে আছে মানুষ। দুবেলা খাবার, বিশুদ্ধ পানির সংকট তো আছেই। নতুন সংকট গবাদিপশু নিয়ে। মানুষেরই থাকা-খাওয়ার জো নেই; গরু-ছাগলগুলো রাখবে কোথায়, খাওয়াবে কী? বন্যাদুর্গত, অভাবী মানুষ তাই গৃহপালিত পশু বেচে দিচ্ছেন। ঈদুল আজহার আগে নিতান্ত কম দামে বিক্রি করে দিচ্ছেন গরু-ছাগল।
কৃষক বলছেন, বন্যায় খড়কুটো নষ্ট হয়ে গেছে। মাঠগুলো পানিতে তলিয়ে আছে। গোখাদ্যের তাই তীব্র সংকট। পশুগুলো বাঁচিয়ে রাখাই দায়। তাই তাঁরা বাধ্য হয়ে কম দামে গবাদিপশু বিক্রি করে দিচ্ছেন।
গত শনিবার সকালে গাইবান্ধার বন্যাকবলিত চারটি ইউনিয়ন, বাঁধ ও কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্র ঘুরে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে গরু-ছাগল নিয়ে তাঁদের দুর্ভোগের চিত্র পাওয়া গেল। কৃষকেরা জানালেন, ১৩ আগস্ট থেকে বন্যা শুরু হয় এই জেলায়। শনিবারও ঘরবাড়ি, গোয়ালঘরে হাঁটুপানি ছিল।
গাইবান্ধার সদর উপজেলার মোল্লারচর ইউনিয়নের চিথুলিয়াদিঘর গ্রামের কৃষক চান মিয়া (৫০) বললেন, ‘প্রতিবছর ঈদুল আজহার পরে ছোট আকারের গরু কিনে রাখি। সারা বছর লালন-পালন করে পরের বছর ঈদুল আজহার দু-তিন দিন আগে বিক্রি করি। যা আয় হয়, তা দিয়ে সংসারের দায়দেনা মেটাই। কিন্তু এবার ঈদের আগে বাড়িতে বন্যার পানি। গরু রাখার জায়গা নাই। তাই তিন দিন আগে ১ লাখ ১৯ হাজার টাকায় দুটি গরু বিক্রি করে দিয়েছি। অথচ গরু দুটি ঈদের দুই দিন আগে বেচলে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকায় বেচা যেত।’
মোল্লারচর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান বলেন, এই ইউনিয়নের চারদিকে ব্রহ্মপুত্র নদ। বর্ষায় পানি ও শুকনো মৌসুমে নদী ভাঙে। এখানকার চরে ভুট্টা, বাদাম ও গাঞ্জিয়া ধান ছাড়া অন্য ফসল তেমন হয় না। তাই এই ইউনিয়নের বেশির ভাগ মানুষ গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি লালন-পালন করে সংসার চালায়। কিন্তু এবার ঈদের আগে বন্যা এসেছে। তাই রাখার জায়গা ও গোখাদ্যের অভাবে গরু-ছাগল বিক্রির হিড়িক পড়েছে। সাদুল্যাপুর হাটের ইজারদার ফারুক হোসেন বলেন, সাধারণত ঈদুল আজহার তিন-চার দিন আগে থেকে বেচাকেনা জমে। কিন্তু এ বছর ঈদের ১৫ দিন আগে থেকেই হাটে গরু-ছাগল আসতে শুরু করেছে। বন্যার কারণে এটা হচ্ছে।
দিনাজপুরের বন্যাদুর্গত চিরিরবন্দর, বিরল, খানসামা, বীরগঞ্জ, কাহারোল ঘুরে গরু বিক্রির হিড়িক লক্ষ করা গেছে। ‘বানোত জমিজমা ডুবে তো সব শেষ। ঘাস নাই। খেড়ও পাওয়া যাছে না। হাতোত তো এখন টাকাপয়সা কিছু নাই। মাথা গোঁজার ঠাঁই তো বানবা লাগবে। শেষ সম্বল গরুটা তাই বেচে দেনো।’ শনিবার দিনাজপুরের চিরিরবন্দরের দ্বিতীয় বৃহত্তম গরুর হাট করেন্টের হাটে কথাগুলো বলছিলেন উপজেলার আউলিয়া পুকুর গ্রামের মমিনুল ইসলাম (৬০)।
চিরিরবন্দর উপজেলার আমতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুর ইসলাম বলেন, গত শুক্রবার ছিল দিনাজপুরের বৃহত্তম পার্বতীপুর উপজেলার আমবাড়ী গরুর হাট। দুপুরের পর তিনি লক্ষ করেন, বিভিন্ন গ্রাম থেকে লোকজন ভটভটিতে করে আমবাড়ী হাটে গরু নিয়ে যাচ্ছে, যা আগে কখনো দেখা যায়নি।
জামালপুরের সাতটি উপজেলা বন্যাকবলিত। জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গোটা জেলায় ১১ হাজার ৬১৯ জন কৃষক পারিবারিকভাবে ৬ লাখ ৬৫ হাজার ৮২০টি গরু-মহিষ লালন-পালন করছেন। এসব গরু কোরবানির ঈদে বিক্রি করা হবে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে ওই সব গরুর বেশির ভাগ ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বেশি দাম পাওয়ার আশায় নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছিল। বন্যায় গরু বাঁচিয়ে রাখা এখন খামারিদের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ। স্থানীয় কয়েকটি হাটে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, ঈদুল আজহা উপলক্ষে গত শুক্রবার থেকে বিভিন্ন হাটে বিক্রির জন্য প্রচুর গরু উঠেছিল। তবে ক্রেতা ছিলেন না খুব একটা। দু-একজন ক্রেতা থাকলেও গরুর দাম অনেক কম বলছেন। জামালপুর সদর উপজেলার কেন্দুয়া গরুর হাটের ইজারাদার ফজলুল হক বলেন, গত শুক্রবারের হাটে প্রচুর গরু উঠেছে। পুরো মাঠ গরুতে ভরে যায়। তবে কোনো ক্রেতা ছিল না। মাত্র তিনটি গরু বিক্রি হয়েছে।