ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মশলার বাজারে অস্থিরতা

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ কোরবানির ঈদের আর বাকি প্রায় দুই সপ্তাহ। ইতিমধ্যেই রাজধানীর বাজারগুলোতে মশলার দামে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। মানভেদে মশলার কেজিতে ৩০ থেকে ৫০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে দারুচিনি, এলাচের দাম বেশি বেড়েছে। আর পেঁয়াজের দাম বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ। পাশাপশি রান্নার অন্যতম অনুষঙ্গ রসুনও কেজিতে ১০ টাকা থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। এছাড়া বাজারে সবজি, মাছ, চালসহ সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ার জন্য অব্যাহত বৃষ্টিপাতকে দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিভিন্ন অজুহাতে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানো হচ্ছে। চাল ও পেঁয়াজের পর এখন মসলার দামও বাড়ছে। এরপরও সরকারি কোনো মনিটরিং ব্যবস্থা দেখা যাচ্ছে না বাজারে।
বিক্রেতারা বলছেন, বাজেটে মসলা আমদানির শুল্ক বাড়ানোর ফলে জিরা, গোলমরিচ, এলাচিসহ বেশ কিছু মসলার দাম বেড়েছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে দর বৃদ্ধি ও ঈদে চাহিদা বেশি থাকায় দাম কিছুটা বাড়তি। ঈদে বাড়তি চাহিদা থাকায় পাইকাররা বিভিন্ন অযুহাতে কৌশলে দাম বাড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ খুচরা বিক্রেতা ও ক্রেতাদের।
মসলার পাইকারি বাজারে দেখা গেছে, মানভেদে প্রতিকেজি জিরা ৩০ থেকে ৫০ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে বিক্রি হচ্ছে ৩৫৫ থেকে ৩৯০ টাকায়, দারুচিনি ১০ থেকে ২০ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে বিক্রি হচ্ছে ২৩০ টাকা থেকে ২৭০ টাকা ও এলাচি কেজিতে ৫০ থেকে ১৫০ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে বিক্রি হচ্ছে ১৩৫০ টাকা থেকে ১৬৮০ টাকায়। এছাড়া তেজপাতা ৯০ টাকা থেকে ১৩০ টাকায়, সাদা গোল মরিচ ৯৮০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা, কালো গোল মরিচ ৬৮০ টাকা থেকে ৭০০ টাকায়, জয়ফল ৬৫০ টাকা থেকে ৯৫০ টাকায়, কিসমিস ২৬৫ টাকা থেকে ২৭৫ টাকা, আলু বোখারা ৪৬০ টাকা থেকে ৪৯০ টাকা, কাঠবাদাম ৬১০ টাকা থেকে ৭১০ টাকা, পোস্তাদানা ৭৮০ টাকা থেকে ৮৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
পাইকারি বাজারের মসলার দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারেও। কারওয়ান বাজার, হাতিরপুল বাজারে মানভেদে প্রতিকেজি জিরা বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, দারুচিনি ৩০০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকা ও এলাচি বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৪০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকায়, তেজপাতা ১৫০ টাকা থেকে ১৮০ টাকা, সাদা গোল মরিচ সাড়ে ৯৮০ থেকে ১ হাজার টাকা, কালো গোল মরিচ ৮০০ টাকা থেকে ৮৫০ টাকায়।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে দেখা গেছে, এক বছরে দারুচিনির দাম বেড়েছে ৭.৯৪ শতাংশ। গত বছর আগস্ট মাসে প্রতি কেজি দাম ছিল ২৮০ থেকে ৩৫০ টাকা। এখন ৩২০ থেকে ৩৬০ টাকা কেজি। এক বছরে এলাচের দাম বেড়েছে ৩.৭০ শতাংশ। গত বছর প্রতি কেজি দাম ছিল ১১০০ থেকে ১৬০০ টাকা। বর্তমানে প্রতি কেজি ১২০০ থেকে ১৬০০ টাকা। এছাড়া এক বছরে আদার দাম বেড়েছে ২৯.৪১ শতাংশ। পিয়াজ বেড়েছে ৬৪.২৯ শতাংশ। শুকনা মরিচ ১৬০-১৯০ টাকা; জিরা ৩৬০-৪৫০ টাকা; লবঙ্গ ১২০০-১৫০০ টাকা; এলাচ ১৩৫০-১৭০০ টাকা।
ক্রেতা আসিক বলেন, পিয়াজ, আদা, জিরা, এলাচ সব কিছুরই দাম বেড়েছে। ঈদের বাকি আরো ১৩ দিন। কিন্তু এখনই দাম বাড়িয়েছে।
বিক্রেতা মানিক বলেন, ঈদকে ঘিরে অতিরিক্ত চাহিদার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পাইকাররা দাম বাড়াচ্ছেন। গুটিকয়েক আমদানিকারকের নিয়ন্ত্রণে থাকায় তাদের ওপর নির্ভর করছে বাজারে মসলার দাম। আরেক বিক্রেতা বলেন, পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন বাজেটে বাড়তি সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। তাছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়েছে, এ কারণে মসলার দাম বাড়ছে। তিনি বলেন, গত কয়েক সপ্তাহে বেশকিছু মসলার দাম বেড়েছে। ঈদের আগে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এ দাম বেড়েছে। এর জন্য পাইকাররা দায়ী।
মসলা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজী এনায়েতুল্লাহ বলেন, মসলা আমদানিতে শুল্ক ১০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। আবার আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বেড়েছে। এ ছাড়া কোরবানির ঈদে মসলার চাহিদা একটু বেশি থাকায় দাম কিছুটা বাড়ে। তবে সংকট হওয়ার কথা নয়। বাজার স্বাভাবিক থাকবে।
এদিকে গত কয়েক সপ্তাহে বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে পিয়াজ ও রসুন। বাজারে প্রতি কেজি পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৬০ টাকা দরে। এছাড়া আমদানি করা ভারতীয় পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা দরে।
এ ছাড়া ব্যাপক বন্যা ও বৃষ্টিপাতের কারণে কাঁচামরিচের দাম বেড়েছে প্রায় ৪০-৫০ টাকা। বাজারে কাঁচামরিচ কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা দরে। এছাড়া কেজি প্রতি দেশি রসুন ১১০ টাকা, আমদানি করা ভারতীয় রসুন ১৩০ টাকা দরে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, উত্তরাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টি ও বন্যার কারণে আড়তে পিয়াজ, রসুন ও আলু সংরক্ষণে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উৎপাদন পর্যায়ের কৃষক মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে এর প্রভাব পড়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে পিয়াজ ও কাঁচামরিচে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

মশলার বাজারে অস্থিরতা

আপডেট টাইম : ০৯:৩২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ অগাস্ট ২০১৭

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ কোরবানির ঈদের আর বাকি প্রায় দুই সপ্তাহ। ইতিমধ্যেই রাজধানীর বাজারগুলোতে মশলার দামে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। মানভেদে মশলার কেজিতে ৩০ থেকে ৫০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে দারুচিনি, এলাচের দাম বেশি বেড়েছে। আর পেঁয়াজের দাম বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ। পাশাপশি রান্নার অন্যতম অনুষঙ্গ রসুনও কেজিতে ১০ টাকা থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। এছাড়া বাজারে সবজি, মাছ, চালসহ সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ার জন্য অব্যাহত বৃষ্টিপাতকে দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিভিন্ন অজুহাতে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানো হচ্ছে। চাল ও পেঁয়াজের পর এখন মসলার দামও বাড়ছে। এরপরও সরকারি কোনো মনিটরিং ব্যবস্থা দেখা যাচ্ছে না বাজারে।
বিক্রেতারা বলছেন, বাজেটে মসলা আমদানির শুল্ক বাড়ানোর ফলে জিরা, গোলমরিচ, এলাচিসহ বেশ কিছু মসলার দাম বেড়েছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে দর বৃদ্ধি ও ঈদে চাহিদা বেশি থাকায় দাম কিছুটা বাড়তি। ঈদে বাড়তি চাহিদা থাকায় পাইকাররা বিভিন্ন অযুহাতে কৌশলে দাম বাড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ খুচরা বিক্রেতা ও ক্রেতাদের।
মসলার পাইকারি বাজারে দেখা গেছে, মানভেদে প্রতিকেজি জিরা ৩০ থেকে ৫০ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে বিক্রি হচ্ছে ৩৫৫ থেকে ৩৯০ টাকায়, দারুচিনি ১০ থেকে ২০ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে বিক্রি হচ্ছে ২৩০ টাকা থেকে ২৭০ টাকা ও এলাচি কেজিতে ৫০ থেকে ১৫০ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে বিক্রি হচ্ছে ১৩৫০ টাকা থেকে ১৬৮০ টাকায়। এছাড়া তেজপাতা ৯০ টাকা থেকে ১৩০ টাকায়, সাদা গোল মরিচ ৯৮০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা, কালো গোল মরিচ ৬৮০ টাকা থেকে ৭০০ টাকায়, জয়ফল ৬৫০ টাকা থেকে ৯৫০ টাকায়, কিসমিস ২৬৫ টাকা থেকে ২৭৫ টাকা, আলু বোখারা ৪৬০ টাকা থেকে ৪৯০ টাকা, কাঠবাদাম ৬১০ টাকা থেকে ৭১০ টাকা, পোস্তাদানা ৭৮০ টাকা থেকে ৮৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
পাইকারি বাজারের মসলার দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারেও। কারওয়ান বাজার, হাতিরপুল বাজারে মানভেদে প্রতিকেজি জিরা বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, দারুচিনি ৩০০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকা ও এলাচি বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৪০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকায়, তেজপাতা ১৫০ টাকা থেকে ১৮০ টাকা, সাদা গোল মরিচ সাড়ে ৯৮০ থেকে ১ হাজার টাকা, কালো গোল মরিচ ৮০০ টাকা থেকে ৮৫০ টাকায়।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে দেখা গেছে, এক বছরে দারুচিনির দাম বেড়েছে ৭.৯৪ শতাংশ। গত বছর আগস্ট মাসে প্রতি কেজি দাম ছিল ২৮০ থেকে ৩৫০ টাকা। এখন ৩২০ থেকে ৩৬০ টাকা কেজি। এক বছরে এলাচের দাম বেড়েছে ৩.৭০ শতাংশ। গত বছর প্রতি কেজি দাম ছিল ১১০০ থেকে ১৬০০ টাকা। বর্তমানে প্রতি কেজি ১২০০ থেকে ১৬০০ টাকা। এছাড়া এক বছরে আদার দাম বেড়েছে ২৯.৪১ শতাংশ। পিয়াজ বেড়েছে ৬৪.২৯ শতাংশ। শুকনা মরিচ ১৬০-১৯০ টাকা; জিরা ৩৬০-৪৫০ টাকা; লবঙ্গ ১২০০-১৫০০ টাকা; এলাচ ১৩৫০-১৭০০ টাকা।
ক্রেতা আসিক বলেন, পিয়াজ, আদা, জিরা, এলাচ সব কিছুরই দাম বেড়েছে। ঈদের বাকি আরো ১৩ দিন। কিন্তু এখনই দাম বাড়িয়েছে।
বিক্রেতা মানিক বলেন, ঈদকে ঘিরে অতিরিক্ত চাহিদার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পাইকাররা দাম বাড়াচ্ছেন। গুটিকয়েক আমদানিকারকের নিয়ন্ত্রণে থাকায় তাদের ওপর নির্ভর করছে বাজারে মসলার দাম। আরেক বিক্রেতা বলেন, পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন বাজেটে বাড়তি সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। তাছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়েছে, এ কারণে মসলার দাম বাড়ছে। তিনি বলেন, গত কয়েক সপ্তাহে বেশকিছু মসলার দাম বেড়েছে। ঈদের আগে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এ দাম বেড়েছে। এর জন্য পাইকাররা দায়ী।
মসলা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজী এনায়েতুল্লাহ বলেন, মসলা আমদানিতে শুল্ক ১০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। আবার আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বেড়েছে। এ ছাড়া কোরবানির ঈদে মসলার চাহিদা একটু বেশি থাকায় দাম কিছুটা বাড়ে। তবে সংকট হওয়ার কথা নয়। বাজার স্বাভাবিক থাকবে।
এদিকে গত কয়েক সপ্তাহে বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে পিয়াজ ও রসুন। বাজারে প্রতি কেজি পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৬০ টাকা দরে। এছাড়া আমদানি করা ভারতীয় পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা দরে।
এ ছাড়া ব্যাপক বন্যা ও বৃষ্টিপাতের কারণে কাঁচামরিচের দাম বেড়েছে প্রায় ৪০-৫০ টাকা। বাজারে কাঁচামরিচ কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা দরে। এছাড়া কেজি প্রতি দেশি রসুন ১১০ টাকা, আমদানি করা ভারতীয় রসুন ১৩০ টাকা দরে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, উত্তরাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টি ও বন্যার কারণে আড়তে পিয়াজ, রসুন ও আলু সংরক্ষণে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উৎপাদন পর্যায়ের কৃষক মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে এর প্রভাব পড়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে পিয়াজ ও কাঁচামরিচে।