বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ অস্থির চালের বাজারকে সহনীয় করতে অবৈধ মজুদদারদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের অভিযানের পর বিভিন্ন স্থানে চালের দাম কমতে শুরু করেছে। বেশ কিছু জেলা-উপজেলা-নগরীতে সরকারি চাল খোলাবাজারে বিক্রি শুরু হয়েছে। ফলে সাধারণ বাজারে চালের দাম কমেছে। গত সোমবার থেকে বিভিন্ন চালের হাট-বাজারে অভিযান পরিচালনা করছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
সাধারণ ভোক্তা ও ক্ষুদ্র বিক্রেতারা বলছেন, প্রশাসনের নিয়মিত নজরদারি ও কার্যকর পদক্ষেপ অব্যাহত থাকলে চালের দাম আরো কমে আসবে। ইতিমধ্যে কুমিল্লা, নওগাঁ ও নাটোরের বিভিন্ন বাজারে চালের দাম কমতে শুরু করেছে।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এখন থেকে বাজারে নিয়মিত নজরদারি থাকবে, কারসাজি করা হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ছয় জেলায় বেশ কিছু অসাধু ব্যবসায়ী, মিল মালিক ও মজুদদারকে জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এর মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার অবৈধ চাল মজুদ রাখার অপরাধে চান্দু মিয়া (৬৫) নামের এক ব্যবসায়ীকে এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। বিস্তারিত আমাদের আঞ্চলিক অফিস, নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে—
কমতে শুরু করেছে চালের দাম : কুমিল্লার বাজারে কমতে শুরু করেছে চালের দাম। গত দুই দিন অভিযানের পর চালের দাম কমেছে।
গত সোমবার ৫০ কেজি চালের বস্তা যেখানে ২৫০০-২৭০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, সেখানে এক দিনের ব্যবধানে তা কমে বিক্রি হচ্ছে ২৩০০ টাকায়। চালের দাম বাড়ানোর কারসাজির জন্য খুচরা ব্যবসায়ীদের দায়ী করছেন মিল মালিক ও আড়তদাররা।
রাজগঞ্জের পানপট্টির রনি এন্টারপ্রাইজের চালের আড়তের পাইকারি ব্যবসায়ী রনি পাল জানান, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা হওয়ায় তার প্রভাবে চালের দাম কমতে শুরু করেছে। গত ২০-২৫ দিন আগে এক বস্তা চালের দাম ছিল ২৩০০ টাকা। সেটা বিভিন্ন কারণে বেড়ে ২৪০০ থেকে ২৫০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে গিয়েছিল। সেটা আবারও ২৩০০ থেকে ২৩৫০ টাকার মধ্যে কিনতে পাওয়া যাচ্ছে।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কানিজ ফাতেমা বলেন, জেলা প্রশাসন থেকে চালের বাজার মনিটর করা হয়েছে। প্রতিদিনই বাজার মনিটর করা হবে। আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কুমিল্লা জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘চালের বাজার যারা অস্থিতিশীল করেছে তাদের ছাড় দেওয়া হবে না। ’
নওগাঁয় মজুদ ঠেকাতে প্রশাসন অভিযান চালিয়েছে। ফলে বাজারে চালের দাম কমতে শুরু করেছে। গত সোমবার বিকেল থেকে অতিরিক্ত মজুদ ঠেকাতে টাস্কফোর্স অভিযান পরিচালনা করেছে। রবিবার মজুদবিরোধী অভিযান পরিচালনার ঘোষণা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সোমবার সকাল থেকে জেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে প্রতিমণ ধানে গড়ে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা কমে যায়।
ভোক্তা ও ক্ষুদ্র চাল ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর কারণে ধান-চালের বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। ফলে খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ পড়েছে বিপাকে।
নওগাঁর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘অভিযানে দেখা যায় পাঁচটি চালকলে ধারণ ক্ষমতার তুলনায় মজুদ কম আছে। আগামী কয়েক দিন আমরা নিয়মিত পরিদর্শন করব। এর প্রভাব চালের বাজারে পড়ে কি না সেটা অবশ্যই মনিটর করে দেখব। ’
জেলা প্রশাসক ড. আমিনুর রহমান বলেন, ‘আমরা মোবাইল কোর্ট নিয়ে অভিযান শুরু করেছি। যতক্ষণ পর্যন্ত
চালের দাম সহনীয় পর্যায়ে না আসবে এটা চলমান থাকবে। ’
নাটোরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান ও ওএমএসের চাল বিক্রির কারণে কমতে শুরু করেছে চালের দাম। এক দিনেই কেজিপ্রতি ২-৩ টাকা করে কমেছে। গতকাল লালপুরে অবৈধ চালের মজুদ গড়ে তোলায় একজন চাল ব্যবসায়ীকে এক বছরের সাজা প্রদান করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
চালের বাজার ঘুরে জানা যায়, গত সোমবার প্রতিকেজি নাজিরশাইল আগে ছিল ৬২ টাকা। এখন ৬০ টাকা, বিআর-২৮ ৫০-৫২ টাকায় স্থিতিশীল রয়েছে। জিরাশাইল বর্তমানে ৫৫-৫৬ টাকা, গুটি স্বর্ণা ৪৮-৫০ টাকার স্থলে ৪৬-৪৭ টাকা, মিনিকেট ৫৫-৫৬ টাকার স্থলে ৫৩-৫৪ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। গত ১৩ দিনে ৫০ কেজি ওজনের বস্তা ১৫০-২০০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছিল।
ওএমএস চাল বিক্রি শুরু : দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা-নগরীতে সরকারি ওএমএস চাল বিক্রি শুরু হয়েছে। কুষ্টিয়ায় ছয়জন ডিলারের মাধ্যমে ৩০ টাকা কেজি দরে সরকারি ওএমএসের চাল বিক্রি শুরু হয়েছে। গতকাল সকাল ১০টায় কুষ্টিয়া শহরের আমলাপাড়ায় ওএমএসের চাল বিক্রি উদ্বোধন করেন কুষ্টিয়ার ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, সপ্তাহের শনিবার বাদে প্রতিদিন সকাল ৯টা বিকেল ৫টা পর্যন্ত ১২০০ জনকে মাসব্যাপী ৩০ টাকা কেজি দরে এই চাল দেওয়া হবে। এর জন্য জেলার বিভিন্ন স্থানে ছয়জন ডিলার নিয়োগ করা হয়েছে।
খুলনা মহানগরীতে গত সোমবার থেকে ২০টি পয়েন্টে ওএমএসের চাল বিক্রি শুরু হয়েছে। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. কামাল হোসেন বলেছেন, ওএমএসের চাল বিক্রি ভালো। আতপ চালটি মিনিকেট বাসমতী চালের মতো। চালের মান নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। হয়তো শতকরা দু-একজন ফিরে যাচ্ছে। এ অঞ্চলের মানুষ আতপ চাল পছন্দ করে। এতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তবে খোলাবাজার আতপ চাল নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্রেতা-ডিলার।
কুড়িগ্রামে চালের বাজার এখন ঊর্ধ্বমুখী। এক সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে চালের দাম। কেজিতে বেড়েছে পাঁচ থেকে আট টাকা। তবে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মহিবুল হক বলেন, জেলা শহরে প্রতিদিন পাঁচজন করে ডিলার পাঁচ টন চাল ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন। উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে ওএমএস চালুর কোনো নির্দেশনা আসেনি।
অভিযান, জরিমানা, কারাদণ্ড : রাজবাড়ীর বাজারে চালের মূল্য তালিকা না টানানোর অভিযোগে তিনজন চাল ব্যবসায়ীকে জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। গত সোমবার বিকেলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শাহ মো. সজিবের নেতৃত্বে রাজবাড়ীর চাল বাজারে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়।
ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার সাড়ে সাতরশি বাজারে চাল মজুদ রাখার অভিযোগে এক ব্যবসায়ীকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। গত সোমবার বিকেলে সদরপুরের ইউএনও রোকসানা রহমানের নেতৃত্বে অভিযান পরিচালনা করা হয়। লক্ষ্মীপুরে চালের আড়ত ও বাজার পরিদর্শন করেছে স্থানীয় প্রশাসন। অযথা চালের দাম বাড়ালে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে হুঁশিয়ারি করা হয়েছে। গাজীপুরে তিনটি চালের দোকানে অভিযান চালিয়ে তার মালিককে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। মূল্য তালিকা টানানো না থাকায় গতকাল দুপুরে সদর উপজেলার হোতাপাড়া বাজার এলাকায় এ অভিযান পরিচালনা করা হয়।
নাটোরে অবৈধভাবে মজুদ রাখায় নাটোরের লালপুরে ১০০ মেট্রিক টন চাল জব্দ করে সাতটি গোডাউন সিলগালা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় চাল মজুদ রাখার অপরাধে চান্দু মিয়া (৬৫) নামের এক ব্যবসায়ীকে এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তিনি উপজেলার গোপালপুর পৌর এলাকার আজিমুদ্দিনের ছেলে। মঙ্গলবার দিনভর এই অভিযান পরিচালনা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোর্তুজা খান।
জেলা প্রশাসনের অভিযান : চট্টগ্রাম মহানগরের চাক্তাই এলাকায় গতকাল চাল মজুদদারির বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসন, চট্টগ্রামের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মোরাদ আলী ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের সমন্বয়ে বাজার মনিটরিং টিমের অভিযান পরিচালনা করা হয়। ওই অভিযানে হাজি বদিউর রহমান অ্যান্ড সন্স কর্তৃক অতিরিক্ত মূল্যে চাল বিক্রি এবং অতিরিক্ত চাল মজুদের অভিযোগে প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার মো. দিদারুল আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়।