ঢাকা , মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নাগালের বাইরে চিকিৎসাসেবা

 

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া মানুষের মৌলিক অধিকার। কিন্তু বাস্তবে সেই মৌলিক অধিকার খুবই দুর্দশাগ্রস্ত। এমন চিত্র উঠে এসেছে সরকারি সমীক্ষায়। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের সমীক্ষা প্রতিবেদনে দেখা যায়, সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে মাথাপিছু চিকিৎসা ব্যয় এখন সর্বোচ্চ। গত ২০ বছরে চিকিৎসা ব্যয় ৫৭ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ৬৭ শতাংশ, যেখানে মালদ্বীপে চিকিৎসা ব্যয় ১৮ শতাংশ। অন্যদিকে সাধারণ মানুষের চিকিৎসায় সরকারের অংশ না বেড়ে বরং কমেছে। আগে ছিল ৩৭ শতাংশ, এখন তা কমে হয়েছে ২৩ শতাংশ। জনস্বাস্থ্য রক্ষায় এমন উল্টোযাত্রা কেন?

স্বাস্থ্যই সম্পদ—উক্তিটির সত্যতা শুধু ব্যক্তির ক্ষেত্রে নয়, রাষ্ট্রের ক্ষেত্রেও সমানভাবে প্রযোজ্য। দুর্বল ও অসুস্থ জাতিকে নিয়ে রাষ্ট্র এগোতে পারে না। তার পরও রাষ্ট্র জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নে এত উদাসীন কেন—এ প্রশ্ন আজ অনেকেরই। বাঙালী কণ্ঠ প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দেশে চিকিৎসাসেবা এখন সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসাগুলোর একটি।

শুধু তাই নয়, যে চিকিৎসাসেবার সঙ্গে নৈতিকতা, মানবিকতা, সততা, নিষ্ঠা বা এ ধরনের শব্দগুলো ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল, সেই চিকিৎসাসেবা ক্রমেই এসব বিশেষণের উল্টো দিকে যাচ্ছে। অনৈতিক ও অমানবিক হয়ে উঠছে। রাষ্ট্রের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই বললেই চলে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১৯৯৭ সালে দেশে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সংখ্যা ছিল ৬১৩। ২০১০ সালে এ সংখ্যা বেড়ে হয় দুই হাজার ৫০১টি। বর্তমানে এই সংখ্যা ১৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এগুলোতে চিকিৎসার মান ও ব্যয় নিয়ন্ত্রণের প্রায় কোনো উদ্যোগ নেই। ফলে মানুষ একদিকে প্রতারিত হচ্ছে, প্রচুর অর্থ যাচ্ছে, অন্যদিকে সুচিকিৎসা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে। অভিযোগ আছে, বহু বেসরকারি ক্লিনিকে উপযুক্ত চিকিৎসক থাকেন না, সেবার মূল্য অতিরিক্ত এবং অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমেও অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হয়। সেই ব্যয় মেটানো অনেকেরই সাধ্যের বাইরে। আবার সরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের অব্যবস্থাপনা চরমে। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম নেই বা অকেজো হয়ে থাকে। এমন অবস্থায় মানুষের মধ্যে এক ধরনের চিকিৎসাভীতি তৈরি হয়েছে। তারা না যেতে পারে সরকারি হাসপাতালে, না যেতে পারে বেসরকারি ক্লিনিকে। এই পরিস্থিতি আমাদের কোথায় নিয়ে দাঁড় করাবে? রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকরা এর পরিণাম নিয়ে ভাবছেন কি? অনেকেই তা মনে করেন না। সে কারণেই ওষুধের দামের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। করারোপের ক্ষেত্রেও তার কোনো ছাপ নেই। যেখানে পোশাকশিল্পের যন্ত্র আমদানিতে কর দিতে হয় ১ শতাংশ, সেখানে চিকিৎসা সরঞ্জাম আনতে ১০ থেকে ৫৮ শতাংশ পর্যন্ত কর দিতে হয়। বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসক তৈরি প্রক্রিয়া নিয়েও রয়েছে অনেক প্রশ্ন।

সরকারকে দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের কথা ভাবতে হবে। আর সে ক্ষেত্রে জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশ যদি কম মূল্যে মানসম্মত চিকিৎসা দিতে পারে, বাংলাদেশ কেন পারবে না? আমরা মনে করি, সরকারের সদিচ্ছা থাকলে অবশ্যই তা সম্ভব হবে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

নাগালের বাইরে চিকিৎসাসেবা

আপডেট টাইম : ০৫:১৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ অক্টোবর ২০১৭

 

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া মানুষের মৌলিক অধিকার। কিন্তু বাস্তবে সেই মৌলিক অধিকার খুবই দুর্দশাগ্রস্ত। এমন চিত্র উঠে এসেছে সরকারি সমীক্ষায়। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের সমীক্ষা প্রতিবেদনে দেখা যায়, সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে মাথাপিছু চিকিৎসা ব্যয় এখন সর্বোচ্চ। গত ২০ বছরে চিকিৎসা ব্যয় ৫৭ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ৬৭ শতাংশ, যেখানে মালদ্বীপে চিকিৎসা ব্যয় ১৮ শতাংশ। অন্যদিকে সাধারণ মানুষের চিকিৎসায় সরকারের অংশ না বেড়ে বরং কমেছে। আগে ছিল ৩৭ শতাংশ, এখন তা কমে হয়েছে ২৩ শতাংশ। জনস্বাস্থ্য রক্ষায় এমন উল্টোযাত্রা কেন?

স্বাস্থ্যই সম্পদ—উক্তিটির সত্যতা শুধু ব্যক্তির ক্ষেত্রে নয়, রাষ্ট্রের ক্ষেত্রেও সমানভাবে প্রযোজ্য। দুর্বল ও অসুস্থ জাতিকে নিয়ে রাষ্ট্র এগোতে পারে না। তার পরও রাষ্ট্র জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নে এত উদাসীন কেন—এ প্রশ্ন আজ অনেকেরই। বাঙালী কণ্ঠ প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দেশে চিকিৎসাসেবা এখন সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসাগুলোর একটি।

শুধু তাই নয়, যে চিকিৎসাসেবার সঙ্গে নৈতিকতা, মানবিকতা, সততা, নিষ্ঠা বা এ ধরনের শব্দগুলো ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল, সেই চিকিৎসাসেবা ক্রমেই এসব বিশেষণের উল্টো দিকে যাচ্ছে। অনৈতিক ও অমানবিক হয়ে উঠছে। রাষ্ট্রের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই বললেই চলে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১৯৯৭ সালে দেশে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সংখ্যা ছিল ৬১৩। ২০১০ সালে এ সংখ্যা বেড়ে হয় দুই হাজার ৫০১টি। বর্তমানে এই সংখ্যা ১৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এগুলোতে চিকিৎসার মান ও ব্যয় নিয়ন্ত্রণের প্রায় কোনো উদ্যোগ নেই। ফলে মানুষ একদিকে প্রতারিত হচ্ছে, প্রচুর অর্থ যাচ্ছে, অন্যদিকে সুচিকিৎসা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে। অভিযোগ আছে, বহু বেসরকারি ক্লিনিকে উপযুক্ত চিকিৎসক থাকেন না, সেবার মূল্য অতিরিক্ত এবং অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমেও অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হয়। সেই ব্যয় মেটানো অনেকেরই সাধ্যের বাইরে। আবার সরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের অব্যবস্থাপনা চরমে। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম নেই বা অকেজো হয়ে থাকে। এমন অবস্থায় মানুষের মধ্যে এক ধরনের চিকিৎসাভীতি তৈরি হয়েছে। তারা না যেতে পারে সরকারি হাসপাতালে, না যেতে পারে বেসরকারি ক্লিনিকে। এই পরিস্থিতি আমাদের কোথায় নিয়ে দাঁড় করাবে? রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকরা এর পরিণাম নিয়ে ভাবছেন কি? অনেকেই তা মনে করেন না। সে কারণেই ওষুধের দামের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। করারোপের ক্ষেত্রেও তার কোনো ছাপ নেই। যেখানে পোশাকশিল্পের যন্ত্র আমদানিতে কর দিতে হয় ১ শতাংশ, সেখানে চিকিৎসা সরঞ্জাম আনতে ১০ থেকে ৫৮ শতাংশ পর্যন্ত কর দিতে হয়। বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসক তৈরি প্রক্রিয়া নিয়েও রয়েছে অনেক প্রশ্ন।

সরকারকে দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের কথা ভাবতে হবে। আর সে ক্ষেত্রে জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশ যদি কম মূল্যে মানসম্মত চিকিৎসা দিতে পারে, বাংলাদেশ কেন পারবে না? আমরা মনে করি, সরকারের সদিচ্ছা থাকলে অবশ্যই তা সম্ভব হবে।