ঢাকা , শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হাত বদলেই দামের বদল

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ সবজির পাইকারি মোকাম বগুড়ার মহাস্থান হাটে গতকাল সোমবার প্রতি কেজি কাঁচা পেঁপে বিক্রি করে কৃষক পেয়েছেন সর্বোচ্চ ৬ টাকা। এক হাত বদল হয়ে ১০০ গজ দূরের মহাস্থান হাটেই সবজির খুচরা বাজারে এই পেঁপে বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ২০ টাকায়। আর ফড়িয়া-ব্যাপারীদের আরেক হাত ঘুরে ১২ কিলোমিটার দূরে বগুড়া শহরের ফতেহ আলী বাজারে এসে সেই পেঁপের দাম হয়ে গেছে ২৪ টাকা কেজি। হাত বদলে হু হু করে বাড়ছে দাম, আর দামের সেই উত্তাপে পুড়ছে ক্রেতা।

দেশজুড়ে সবজির বড় সরবরাহ আসে বগুড়া থেকে। সেই বগুড়াতেই কৃষকের হাত থেকে মধ্যস্বত্বভোগীদের কয়েক হাত ঘুরে ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছাতে প্রতি কেজি পেঁপের দাম ১২ কিলোমিটারের ব্যবধানে দাম চার গুণ পর্যন্ত বেড়েছে। একইভাবে কৃষকের বিক্রি করা সাড়ে ৭ টাকা কেজির কচুর মুখি এক হাত বদলের মাধ্যমে মহাস্থান খুচরা বাজারে ক্রেতাদের কিনতে হয়েছে ২৪ টাকায়। আর বগুড়া শহরের ফতেহ আলী বাজারে আসতেই সেই দাম আরও বেড়ে দাঁড়ায় ৩০ টাকায়।

এক হাত বদল হয়ে ১০০ গজ দূরের মহাস্থান হাটেই সবজির খুচরা বাজারে এই পেঁপে বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ২০ টাকায়। আর ফড়িয়া-ব্যাপারীদের আরেক হাত ঘুরে ১২ কিলোমিটার দূরে বগুড়া শহরের ফতেহ আলী বাজারে এসে সেই পেঁপের দাম হয়ে গেছে ২৪ টাকা কেজি।

এভাবে সবজির দাম বাড়ার সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারেনি বগুড়া জেলা বাজার কর্মকর্তার কার্যালয়ও। জেলা বাজার কর্মকর্তা মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম মূল্য বৃদ্ধির জন্য দুষলেন বৃষ্টিকে। তিনি বলেন, বৃষ্টির কারণে বাজারে সবজির সরবরাহ কমেছে। এ কারণে দামও বেড়েছে।

কয়েক কিলোমিটারের ব্যবধানে সবজির চার গুণ পর্যন্ত মূল্য বৃদ্ধির বিষয়ে তারিকুল ইসলাম বলেন, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে দামের এত বেশি ফারাকের বিষয়টি জেলা সমন্বয় কমিটির সভায় তোলা হবে।

গতকাল মহাস্থান হাট ঘুরে জানা গেছে, সবজির উৎপাদন এলাকাখ্যাত এ মোকামে বিগত বছরগুলোয় এই সময়ে আগাম শীতকালীন সবজিতে ভরা থাকলেও এখন সেখানে সবজির তেমন আমদানি নেই। সবজির সরবরাহ ঘাটতির কারণে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, ফেনী, কুমিল্লাসহ কোনো মোকামেই ঠিকমতো চালান পাঠাতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা।

হাতবদলে দামে যত ফারাক

সোমবার মহাস্থান হাটে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছে ১০০ থেকে ১১০ টাকায়। অথচ পার্শ্ববর্তী খুচরা বাজারে এই কাঁচা মরিচ ক্রেতাদের কিনতে হয়েছে প্রতি কেজি ১৪০ টাকায়। আর বগুড়া শহরের ফতেহ আলী বাজারে এসে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচের দাম হয়ে যায় ১৮০ টাকা। মহাস্থান পাইকারি বাজারের ৮০ টাকা কেজির ছোট আকারের ফুলকপি ও বাঁধাকপি একই হাটের খুচরা বাজারে ক্রেতাদের কিনতে হয়েছে ১২০ টাকায়। আর বগুড়ার ফতেহ আলী বাজারে এই দুই পদের সবজি বিক্রি হয়েছে ১৪০ টাকায়। এ ছাড়া পাইকারি মোকামে ১২০ টাকায় বিক্রি হওয়া শিম পার্শ্ববর্তী খুচরা বাজারে বিক্রি হয় ১৬০ টাকায়। বগুড়া শহরে এসে ভোক্তা পর্যায়ে সেই শিমের দাম ওঠে ২০০ টাকা। মোকামে ৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া হাইব্রিড করলা ও লম্বা বেগুনের দাম ১০০ গজের ব্যবধানে হয়ে যায় ৬০ টাকা। আর ১২ কিলোমিটারের ব্যবধানে তা আরও ২০ টাকা বেড়ে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়।

মহাস্থান কাঁচা ও পাকামাল আড়ত ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম বলেন, অন্য বছরের এ সময় এখান থেকে বিভিন্ন জেলায় দিনে গড়ে ১০০ ট্রাক (প্রতি ট্রাকে ১৫ টন) সবজি পাঠানো হতো। এখন সেখানে পাঠানো হচ্ছে দিনে সাত-আট ট্রাক সবজি।

বগুড়ার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক প্রতুল চন্দ্র সরকার বলেন, ‘এবার জেলায় ১২ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি চাষ হয়েছে। কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদি বৃষ্টি হওয়ার কারণে শীতকালীন সবজি চাষ বিলম্বিত হয়েছে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

হাত বদলেই দামের বদল

আপডেট টাইম : ১১:০২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ অক্টোবর ২০১৭

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ সবজির পাইকারি মোকাম বগুড়ার মহাস্থান হাটে গতকাল সোমবার প্রতি কেজি কাঁচা পেঁপে বিক্রি করে কৃষক পেয়েছেন সর্বোচ্চ ৬ টাকা। এক হাত বদল হয়ে ১০০ গজ দূরের মহাস্থান হাটেই সবজির খুচরা বাজারে এই পেঁপে বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ২০ টাকায়। আর ফড়িয়া-ব্যাপারীদের আরেক হাত ঘুরে ১২ কিলোমিটার দূরে বগুড়া শহরের ফতেহ আলী বাজারে এসে সেই পেঁপের দাম হয়ে গেছে ২৪ টাকা কেজি। হাত বদলে হু হু করে বাড়ছে দাম, আর দামের সেই উত্তাপে পুড়ছে ক্রেতা।

দেশজুড়ে সবজির বড় সরবরাহ আসে বগুড়া থেকে। সেই বগুড়াতেই কৃষকের হাত থেকে মধ্যস্বত্বভোগীদের কয়েক হাত ঘুরে ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছাতে প্রতি কেজি পেঁপের দাম ১২ কিলোমিটারের ব্যবধানে দাম চার গুণ পর্যন্ত বেড়েছে। একইভাবে কৃষকের বিক্রি করা সাড়ে ৭ টাকা কেজির কচুর মুখি এক হাত বদলের মাধ্যমে মহাস্থান খুচরা বাজারে ক্রেতাদের কিনতে হয়েছে ২৪ টাকায়। আর বগুড়া শহরের ফতেহ আলী বাজারে আসতেই সেই দাম আরও বেড়ে দাঁড়ায় ৩০ টাকায়।

এক হাত বদল হয়ে ১০০ গজ দূরের মহাস্থান হাটেই সবজির খুচরা বাজারে এই পেঁপে বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ২০ টাকায়। আর ফড়িয়া-ব্যাপারীদের আরেক হাত ঘুরে ১২ কিলোমিটার দূরে বগুড়া শহরের ফতেহ আলী বাজারে এসে সেই পেঁপের দাম হয়ে গেছে ২৪ টাকা কেজি।

এভাবে সবজির দাম বাড়ার সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারেনি বগুড়া জেলা বাজার কর্মকর্তার কার্যালয়ও। জেলা বাজার কর্মকর্তা মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম মূল্য বৃদ্ধির জন্য দুষলেন বৃষ্টিকে। তিনি বলেন, বৃষ্টির কারণে বাজারে সবজির সরবরাহ কমেছে। এ কারণে দামও বেড়েছে।

কয়েক কিলোমিটারের ব্যবধানে সবজির চার গুণ পর্যন্ত মূল্য বৃদ্ধির বিষয়ে তারিকুল ইসলাম বলেন, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে দামের এত বেশি ফারাকের বিষয়টি জেলা সমন্বয় কমিটির সভায় তোলা হবে।

গতকাল মহাস্থান হাট ঘুরে জানা গেছে, সবজির উৎপাদন এলাকাখ্যাত এ মোকামে বিগত বছরগুলোয় এই সময়ে আগাম শীতকালীন সবজিতে ভরা থাকলেও এখন সেখানে সবজির তেমন আমদানি নেই। সবজির সরবরাহ ঘাটতির কারণে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, ফেনী, কুমিল্লাসহ কোনো মোকামেই ঠিকমতো চালান পাঠাতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা।

হাতবদলে দামে যত ফারাক

সোমবার মহাস্থান হাটে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছে ১০০ থেকে ১১০ টাকায়। অথচ পার্শ্ববর্তী খুচরা বাজারে এই কাঁচা মরিচ ক্রেতাদের কিনতে হয়েছে প্রতি কেজি ১৪০ টাকায়। আর বগুড়া শহরের ফতেহ আলী বাজারে এসে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচের দাম হয়ে যায় ১৮০ টাকা। মহাস্থান পাইকারি বাজারের ৮০ টাকা কেজির ছোট আকারের ফুলকপি ও বাঁধাকপি একই হাটের খুচরা বাজারে ক্রেতাদের কিনতে হয়েছে ১২০ টাকায়। আর বগুড়ার ফতেহ আলী বাজারে এই দুই পদের সবজি বিক্রি হয়েছে ১৪০ টাকায়। এ ছাড়া পাইকারি মোকামে ১২০ টাকায় বিক্রি হওয়া শিম পার্শ্ববর্তী খুচরা বাজারে বিক্রি হয় ১৬০ টাকায়। বগুড়া শহরে এসে ভোক্তা পর্যায়ে সেই শিমের দাম ওঠে ২০০ টাকা। মোকামে ৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া হাইব্রিড করলা ও লম্বা বেগুনের দাম ১০০ গজের ব্যবধানে হয়ে যায় ৬০ টাকা। আর ১২ কিলোমিটারের ব্যবধানে তা আরও ২০ টাকা বেড়ে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়।

মহাস্থান কাঁচা ও পাকামাল আড়ত ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম বলেন, অন্য বছরের এ সময় এখান থেকে বিভিন্ন জেলায় দিনে গড়ে ১০০ ট্রাক (প্রতি ট্রাকে ১৫ টন) সবজি পাঠানো হতো। এখন সেখানে পাঠানো হচ্ছে দিনে সাত-আট ট্রাক সবজি।

বগুড়ার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক প্রতুল চন্দ্র সরকার বলেন, ‘এবার জেলায় ১২ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি চাষ হয়েছে। কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদি বৃষ্টি হওয়ার কারণে শীতকালীন সবজি চাষ বিলম্বিত হয়েছে।