ঢাকা , শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নিত্যপণ্যের বাজার অসহায় মানুষ

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ছে রাজধানীর কাঁচাবাজার। কয়েক মাস ধরে চাল, পিয়াজ, কাঁচামরিচ ও সবজিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। সঠিকভাবে বাজার মনিটরিংয়ের অভাবে এসব দ্রব্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণহীন বলে অভিযোগ করেছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। ফলে নিত্যপণ্যের দামের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় জীবনযাপনে হিমশিম খাচ্ছেন সীমিত ও মধ্য আয়ের মানুষগুলো। এদিকে অস্থিতিশীল বাজারে সহসাই কোনো সুখবর দিতে পারছেন না বিক্রেতারা। তবে ক্রেতারা মনে করেন চালের বাজারের মতো কাঁচাবাজারে তদারকি সংস্থার নজরদারি থাকলে সহনীয় পর্যায়ে থাকবে নিত্যপণ্যের দাম।

বিক্রেতারা বলেন, আমদানি বেশি হলে একটু কমে, আমদানি কম হলেই দাম বাড়ে।
চালের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকারের নানামুখী ব্যবস্থা গ্রহণ ও অভিযান পরিচালনার চাপে চালের দাম এক ধাপ কমিয়ে থেমে গেছেন ব্যবসায়ীরা। এখন নতুন করে পিয়াজের দাম সীমা ছেড়ে গেছে। এক মাস আগেও রাজধানীতে যে পিয়াজ বিক্রি হয়েছিল ৩০ টাকা দরে, এখন বাজারে সেই পিয়াজ প্রায় ৩ গুণ দাম বেড়ে কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা দরে। এছাড়া গত কয়েক মাস থেকে রাজধানীর বাজারগুলোতে প্রায় সব সবজির দাম বাড়তিই রয়েছে। বেশিরভাগ সবজির কেজি ৬০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না।
শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক মানববন্ধনে গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, সঠিকভাবে বাজার মনিটর না করায় এবং অসৎ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ায় চাল, ডাল, পিয়াজ, মরিচ ও সবজির দাম নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। যা জনসাধারণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। তিনি বলেন, সরকারের অদূরদর্শী নীতির ফলে চালের বর্তমান মূল্য ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে। দ্রব্যমূল্য মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আনার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, বাজার সঠিকভাবে মনিটর করতে হবে। মূল্য বৃদ্ধিকারী অসৎ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।
বাজারে দু-তিন সপ্তাহ আগেও প্রতি কেজি দেশি পিয়াজ ৫০ থেকে ৫৫ টাকা দরে বিক্রি হতো। কিন্তু এখন প্রতি কেজি পিয়াজ ৮০ টাকার উপরে বিক্রি হচ্ছে। আর আমদানি করা পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫৮ থেকে ৬২ টাকায়, যা দু-তিন সপ্তাহ আগেও ছিল ৪৫ থেকে ৫২ টাকার মধ্যে।
পাইকারি বাজারে এক পাল্লা (৫ কেজি) দেশি পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকায়। আর আমদানি করা এক পাল্লা পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায়। টিসিবি’র হিসাবে, এক মাসের ব্যবধানে দেশি পিয়াজের দাম কেজিতে ২০ থেকে ২৫ টাকা করে বেড়েছে।
কাঁচাবাজারে ক্রেতাদের জন্য একমাত্র স্বস্তির খবর মরিচের দাম কমেছে। ১৬০ টাকা থেকে কমে এখন প্রতি কেজি মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকায়। তবে সুখবর নেই অন্য সবজির ক্ষেত্রে। বেগুন, ঝিঙা, টমেটো, পটোল, শিম, লাউসহ অধিকাংশ সবজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত।
চালের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মোটা স্বর্ণা চাল প্রতি কেজি ৪৫ টাকা, পারিজা চাল ৪৪ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া মিনিকেট (ভালো মানের) ৬০ টাকা, মিনিকেট (সাধারণ) ৫৮ টাকা, আমদানি করা ভারতীয় বিআর-২৮ ৪৮ টাকা, দেশি বিআর-২৮ ৫২, নাজিরশাইল (কাটারি) ৬৩ টাকা, নাজিরশাইল (নরমাল) ৬৫ টাকা, পাইজাম চাল ৪৮ টাকা, বাসমতি ৫৩ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক হুমায়ূন কবির ভূঁইয়া বলেন, ব্যবসায়ীদের কারসাজির কারণে পিয়াজের দাম বাড়ছে। পিয়াজ মজুত রেখে বাজারে সরবরাহ করা হচ্ছে না। খুচরা বিক্রেতারা যে পরিমাণ পিয়াজ চাইছেন, তারা তা পাচ্ছেন না। কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হচ্ছে। মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের এটা অপকৌশল। এ বিষয়ে সরকারের কঠোর তদারকির দাবি জানান তিনি।
শান্তিনগর বাজার ঘুরে দেখা যায়, খুচরা বিক্রেতারা প্রতি কেজি দেশি পিয়াজ বিক্রি করছেন ৮৫ থেকে ৯০ টাকা। আর ৬৫ থেকে ৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে ভারতীয় পিয়াজ। অসম্ভব হারে পিয়াজের দাম বৃদ্ধিতে নিম্ন আয়ের ক্রেতাদের মধ্যে দেখা গেছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। রিকশাচালক রাজারবাগের নুরুদ্দীন। তিনি বলেন, আমার দৈনিক আয় দিয়ে ব্যয় মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। যে হারে খাবারের জিনিস বাড়ছে এ অবস্থা চলতে থাকলে খুব কষ্ট হবে। এদিকে শান্তিনগরের খুচরা ব্যবসায়ী রুস্তম আলী বলেন, এখন পিয়াজের মৌসুম না। এ জন্য মনে হয় দাম বাড়ছে। তাছাড়া বেশি দামে কিনে কম দামে তো আমরা বিক্রি করতে পারি না। এদিকে দফায় দফায় বেড়ে যাওয়া কাঁচামরিচ এখন বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি মানভেদে ১২০ থেকে ১৫০ টাকা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে কিছুটা দাম কমলেও এ পণ্যের দাম কমা ও বাড়ার কোনো নিশ্চয়তা নেই বলে জানিয়েছেন শান্তিনগরের বিক্রেতারা। একইভাবে ধাপে ধাপে বাড়তি চালের দাম কিছুটা কমতির দিকে।
ভোজ্য তেলের দাম আগের বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে। বাজারে ব্র্যান্ডভেদে ৫ লিটারের বোতল ৫৩০-৫৪০ টাকা, প্রতি লিটারে এক-দুই টাকা বেড়ে ১০৭ টাকা থেকে ১০৯ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
শান্তিনগরের বাজারে ভালো মানের মিনিকেট চাল প্রতি কেজিতে বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা। এদিকে স্বর্ণা মোটা চাল কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৪২ থেকে ৪৫ টাকা। এছাড়া আটাশ কেজি প্রতি ৫২ থেকে ৫৪ টাকা ও নাজিরশাইল ৭০ টাকা বিক্রি হলেও আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে অন্যান্য সব ধরনের চালের দাম। চালের দর জানতে চাইলে শান্তিনগরের বাচ্চু রাইচ এজেন্সির স্বত্বাধিকারী বাচ্চু মিয়া বলেন, চালের দাম এখন আগের মতো বাড়ছে না। বরং কিছুটা হলেও কমছে। সরকারের উদ্যোগের ফলেই চালের দাম কিছুটা কমছে।
এছাড়া শান্তিনগরের কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, গত সপ্তাহের চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের সবজির দাম। প্রতি কেজি করলা, ঢেঁড়স, ধুন্দুল ও ঝিঙ্গা বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা। শসা, বেগুন ও পটোল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা। এদিকে শিম ও টমেটো বিক্রি হচ্ছে যথাক্রমে ১৫০ ও ১২০ টাকা। এছাড়া প্রতি পিস লাউ ৬০ টাকা দরে ও মিষ্টি কুমড়া প্রতি পিস ৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে পুঁইশাকের আঁটি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। আর পালং ও লাল শাকের আঁটি বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকা দরে। নিত্যপ্রয়োজনীয় এসব ভোগ্যপণ্যের দাম প্রতিদিন ক্রমাগত হারে বেড়েই চলছে। এতে সবচেয়ে বিপাকে পড়ছে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের ক্রেতারা। তারা নির্ধারিত আয়ের টাকা দিয়ে সামাল দিতে পারছে না ক্রমান্বয়ে বেড়ে যাওয়া ব্যয়কে। শান্তিনগরের নিম্ন আয়ের ক্রেতা রিকশাচালক নুর মোহাম্মদ। তিনি জানান, আগে রিকশা চালাইয়া কিছু টাকা জমাতে পারতাম। এখন তা দিয়া খাইতেই টান টান। পোলাপানরে পড়াইমু কি দিয়া। নুর মোহাম্মদের বন্ধু শান্তিনগরের আরেক রিকশাচালক শামসুল হক। তিনি বলেন, ‘বাজারে জিনিসপাতির দাম বাড়তেছে। এইজন্য বেশি টাকা আয়ের জন্য বেশি কষ্ট করতে হচ্ছে। গরিব মানুষ। কী করমু বলুন বাঁচতে তো হইবো।’
রাজধানীর মিরপুর এক নম্বর বাজার ঘুরে দেখা যায়, ৬০ টাকা কেজির নিচে কোন সবজি পাওয়া যায় না। এ বাজারে প্রতি কেজি বেগুণ বিক্রি হয়েছে ৬০-৭০ টাকা, টমেটো ১২০ টাকা, ঝিঙা ৭০-৮০ টাকা, পেঁপে ৪০-৪৫ টাকা, কাঁচামরিচ ১৬০ টাকা, ঢেড়শ ৬০-৭০ টাকা, কচুর ছড়া ৩৫-৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৪০ টাকা। সবজির দামের মত শাকের বাজারও বেশ কড়া। দুইটি ডগার এক হাটি লাউশাক বিক্রি হচ্ছে ৩৫-৪০ টাকা। গতাকাল মিরপুরের এ বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৮০-৮৫ টাকা। অন্যদিকে ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭৫ টাকা পর্যন্ত। বিক্রেতা আব্দুল আলীম বাচ্চু বলেন, দাম বাড়লে আমাদের খুচরা বিক্রেতাদের লস হয়। ক্রেতারা সবকিছু কম কম কিনেন। আমাদের লাভ হয় সীমিত আকারে। দিনশেষে আমার মত গরীব মানুষকেও কিনে কেতে হয়।
গার্মেন্ট কর্মী মাসুমা বেগম বলেন, বাজারে সবকিছুর দাম চড়া। তাই গত কয়েকদিন ধরে সবজির বাজারে আসিনি। আজ দুইটা সবজি কিনলাম। এ টাকা দিয়ে আগে অনায়াসে ৪/৫ প্রকার সবজি কেনা যেত। আমাদের গরীব মানুষের দুঃখ কষ্ট করেই দিনযাপন করতে হয়।
প্রাইভেট গাড়ীর রেন্টেকার ব্যবসায়ী আলমগীর বলেন, সবকিছুর দাম বেশি। আগেরমত সবকিছু আর বেশি কেনা যায় না। সবজির দাম যে চালের দামের সমান হয়ে গেছে। সরকারের এ দিকে মনিটরিং বাড়ানো না হলে এর লাগাম টানা কঠিন হয়ে পড়বে। আমাদের অসাধু ব্যবসায়ীরাও এজন্য অনেকটা দায়ী। দাম না বাড়লেও তারা অনেক সময় দাম বাড়িয়ে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করেন।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

নিত্যপণ্যের বাজার অসহায় মানুষ

আপডেট টাইম : ১০:৩০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৯ অক্টোবর ২০১৭

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ছে রাজধানীর কাঁচাবাজার। কয়েক মাস ধরে চাল, পিয়াজ, কাঁচামরিচ ও সবজিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। সঠিকভাবে বাজার মনিটরিংয়ের অভাবে এসব দ্রব্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণহীন বলে অভিযোগ করেছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। ফলে নিত্যপণ্যের দামের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় জীবনযাপনে হিমশিম খাচ্ছেন সীমিত ও মধ্য আয়ের মানুষগুলো। এদিকে অস্থিতিশীল বাজারে সহসাই কোনো সুখবর দিতে পারছেন না বিক্রেতারা। তবে ক্রেতারা মনে করেন চালের বাজারের মতো কাঁচাবাজারে তদারকি সংস্থার নজরদারি থাকলে সহনীয় পর্যায়ে থাকবে নিত্যপণ্যের দাম।

বিক্রেতারা বলেন, আমদানি বেশি হলে একটু কমে, আমদানি কম হলেই দাম বাড়ে।
চালের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকারের নানামুখী ব্যবস্থা গ্রহণ ও অভিযান পরিচালনার চাপে চালের দাম এক ধাপ কমিয়ে থেমে গেছেন ব্যবসায়ীরা। এখন নতুন করে পিয়াজের দাম সীমা ছেড়ে গেছে। এক মাস আগেও রাজধানীতে যে পিয়াজ বিক্রি হয়েছিল ৩০ টাকা দরে, এখন বাজারে সেই পিয়াজ প্রায় ৩ গুণ দাম বেড়ে কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা দরে। এছাড়া গত কয়েক মাস থেকে রাজধানীর বাজারগুলোতে প্রায় সব সবজির দাম বাড়তিই রয়েছে। বেশিরভাগ সবজির কেজি ৬০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না।
শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক মানববন্ধনে গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, সঠিকভাবে বাজার মনিটর না করায় এবং অসৎ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ায় চাল, ডাল, পিয়াজ, মরিচ ও সবজির দাম নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। যা জনসাধারণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। তিনি বলেন, সরকারের অদূরদর্শী নীতির ফলে চালের বর্তমান মূল্য ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে। দ্রব্যমূল্য মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আনার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, বাজার সঠিকভাবে মনিটর করতে হবে। মূল্য বৃদ্ধিকারী অসৎ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।
বাজারে দু-তিন সপ্তাহ আগেও প্রতি কেজি দেশি পিয়াজ ৫০ থেকে ৫৫ টাকা দরে বিক্রি হতো। কিন্তু এখন প্রতি কেজি পিয়াজ ৮০ টাকার উপরে বিক্রি হচ্ছে। আর আমদানি করা পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫৮ থেকে ৬২ টাকায়, যা দু-তিন সপ্তাহ আগেও ছিল ৪৫ থেকে ৫২ টাকার মধ্যে।
পাইকারি বাজারে এক পাল্লা (৫ কেজি) দেশি পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকায়। আর আমদানি করা এক পাল্লা পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায়। টিসিবি’র হিসাবে, এক মাসের ব্যবধানে দেশি পিয়াজের দাম কেজিতে ২০ থেকে ২৫ টাকা করে বেড়েছে।
কাঁচাবাজারে ক্রেতাদের জন্য একমাত্র স্বস্তির খবর মরিচের দাম কমেছে। ১৬০ টাকা থেকে কমে এখন প্রতি কেজি মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকায়। তবে সুখবর নেই অন্য সবজির ক্ষেত্রে। বেগুন, ঝিঙা, টমেটো, পটোল, শিম, লাউসহ অধিকাংশ সবজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত।
চালের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মোটা স্বর্ণা চাল প্রতি কেজি ৪৫ টাকা, পারিজা চাল ৪৪ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া মিনিকেট (ভালো মানের) ৬০ টাকা, মিনিকেট (সাধারণ) ৫৮ টাকা, আমদানি করা ভারতীয় বিআর-২৮ ৪৮ টাকা, দেশি বিআর-২৮ ৫২, নাজিরশাইল (কাটারি) ৬৩ টাকা, নাজিরশাইল (নরমাল) ৬৫ টাকা, পাইজাম চাল ৪৮ টাকা, বাসমতি ৫৩ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক হুমায়ূন কবির ভূঁইয়া বলেন, ব্যবসায়ীদের কারসাজির কারণে পিয়াজের দাম বাড়ছে। পিয়াজ মজুত রেখে বাজারে সরবরাহ করা হচ্ছে না। খুচরা বিক্রেতারা যে পরিমাণ পিয়াজ চাইছেন, তারা তা পাচ্ছেন না। কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হচ্ছে। মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের এটা অপকৌশল। এ বিষয়ে সরকারের কঠোর তদারকির দাবি জানান তিনি।
শান্তিনগর বাজার ঘুরে দেখা যায়, খুচরা বিক্রেতারা প্রতি কেজি দেশি পিয়াজ বিক্রি করছেন ৮৫ থেকে ৯০ টাকা। আর ৬৫ থেকে ৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে ভারতীয় পিয়াজ। অসম্ভব হারে পিয়াজের দাম বৃদ্ধিতে নিম্ন আয়ের ক্রেতাদের মধ্যে দেখা গেছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। রিকশাচালক রাজারবাগের নুরুদ্দীন। তিনি বলেন, আমার দৈনিক আয় দিয়ে ব্যয় মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। যে হারে খাবারের জিনিস বাড়ছে এ অবস্থা চলতে থাকলে খুব কষ্ট হবে। এদিকে শান্তিনগরের খুচরা ব্যবসায়ী রুস্তম আলী বলেন, এখন পিয়াজের মৌসুম না। এ জন্য মনে হয় দাম বাড়ছে। তাছাড়া বেশি দামে কিনে কম দামে তো আমরা বিক্রি করতে পারি না। এদিকে দফায় দফায় বেড়ে যাওয়া কাঁচামরিচ এখন বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি মানভেদে ১২০ থেকে ১৫০ টাকা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে কিছুটা দাম কমলেও এ পণ্যের দাম কমা ও বাড়ার কোনো নিশ্চয়তা নেই বলে জানিয়েছেন শান্তিনগরের বিক্রেতারা। একইভাবে ধাপে ধাপে বাড়তি চালের দাম কিছুটা কমতির দিকে।
ভোজ্য তেলের দাম আগের বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে। বাজারে ব্র্যান্ডভেদে ৫ লিটারের বোতল ৫৩০-৫৪০ টাকা, প্রতি লিটারে এক-দুই টাকা বেড়ে ১০৭ টাকা থেকে ১০৯ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
শান্তিনগরের বাজারে ভালো মানের মিনিকেট চাল প্রতি কেজিতে বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা। এদিকে স্বর্ণা মোটা চাল কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৪২ থেকে ৪৫ টাকা। এছাড়া আটাশ কেজি প্রতি ৫২ থেকে ৫৪ টাকা ও নাজিরশাইল ৭০ টাকা বিক্রি হলেও আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে অন্যান্য সব ধরনের চালের দাম। চালের দর জানতে চাইলে শান্তিনগরের বাচ্চু রাইচ এজেন্সির স্বত্বাধিকারী বাচ্চু মিয়া বলেন, চালের দাম এখন আগের মতো বাড়ছে না। বরং কিছুটা হলেও কমছে। সরকারের উদ্যোগের ফলেই চালের দাম কিছুটা কমছে।
এছাড়া শান্তিনগরের কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, গত সপ্তাহের চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের সবজির দাম। প্রতি কেজি করলা, ঢেঁড়স, ধুন্দুল ও ঝিঙ্গা বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা। শসা, বেগুন ও পটোল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা। এদিকে শিম ও টমেটো বিক্রি হচ্ছে যথাক্রমে ১৫০ ও ১২০ টাকা। এছাড়া প্রতি পিস লাউ ৬০ টাকা দরে ও মিষ্টি কুমড়া প্রতি পিস ৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে পুঁইশাকের আঁটি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। আর পালং ও লাল শাকের আঁটি বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকা দরে। নিত্যপ্রয়োজনীয় এসব ভোগ্যপণ্যের দাম প্রতিদিন ক্রমাগত হারে বেড়েই চলছে। এতে সবচেয়ে বিপাকে পড়ছে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের ক্রেতারা। তারা নির্ধারিত আয়ের টাকা দিয়ে সামাল দিতে পারছে না ক্রমান্বয়ে বেড়ে যাওয়া ব্যয়কে। শান্তিনগরের নিম্ন আয়ের ক্রেতা রিকশাচালক নুর মোহাম্মদ। তিনি জানান, আগে রিকশা চালাইয়া কিছু টাকা জমাতে পারতাম। এখন তা দিয়া খাইতেই টান টান। পোলাপানরে পড়াইমু কি দিয়া। নুর মোহাম্মদের বন্ধু শান্তিনগরের আরেক রিকশাচালক শামসুল হক। তিনি বলেন, ‘বাজারে জিনিসপাতির দাম বাড়তেছে। এইজন্য বেশি টাকা আয়ের জন্য বেশি কষ্ট করতে হচ্ছে। গরিব মানুষ। কী করমু বলুন বাঁচতে তো হইবো।’
রাজধানীর মিরপুর এক নম্বর বাজার ঘুরে দেখা যায়, ৬০ টাকা কেজির নিচে কোন সবজি পাওয়া যায় না। এ বাজারে প্রতি কেজি বেগুণ বিক্রি হয়েছে ৬০-৭০ টাকা, টমেটো ১২০ টাকা, ঝিঙা ৭০-৮০ টাকা, পেঁপে ৪০-৪৫ টাকা, কাঁচামরিচ ১৬০ টাকা, ঢেড়শ ৬০-৭০ টাকা, কচুর ছড়া ৩৫-৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৪০ টাকা। সবজির দামের মত শাকের বাজারও বেশ কড়া। দুইটি ডগার এক হাটি লাউশাক বিক্রি হচ্ছে ৩৫-৪০ টাকা। গতাকাল মিরপুরের এ বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৮০-৮৫ টাকা। অন্যদিকে ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭৫ টাকা পর্যন্ত। বিক্রেতা আব্দুল আলীম বাচ্চু বলেন, দাম বাড়লে আমাদের খুচরা বিক্রেতাদের লস হয়। ক্রেতারা সবকিছু কম কম কিনেন। আমাদের লাভ হয় সীমিত আকারে। দিনশেষে আমার মত গরীব মানুষকেও কিনে কেতে হয়।
গার্মেন্ট কর্মী মাসুমা বেগম বলেন, বাজারে সবকিছুর দাম চড়া। তাই গত কয়েকদিন ধরে সবজির বাজারে আসিনি। আজ দুইটা সবজি কিনলাম। এ টাকা দিয়ে আগে অনায়াসে ৪/৫ প্রকার সবজি কেনা যেত। আমাদের গরীব মানুষের দুঃখ কষ্ট করেই দিনযাপন করতে হয়।
প্রাইভেট গাড়ীর রেন্টেকার ব্যবসায়ী আলমগীর বলেন, সবকিছুর দাম বেশি। আগেরমত সবকিছু আর বেশি কেনা যায় না। সবজির দাম যে চালের দামের সমান হয়ে গেছে। সরকারের এ দিকে মনিটরিং বাড়ানো না হলে এর লাগাম টানা কঠিন হয়ে পড়বে। আমাদের অসাধু ব্যবসায়ীরাও এজন্য অনেকটা দায়ী। দাম না বাড়লেও তারা অনেক সময় দাম বাড়িয়ে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করেন।