বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ সবার জীবনে ছোট-বড়, পাওয়া না-পাওয়ার গল্প থাকে। কোন গল্প সুখের আবার কোন গল্প কষ্টের! সবার জীবনে ছোট -বড় অনেক ধরনের ক্ষুধা থাকে।
তবে এই ক্ষুধাটা কিন্তু কখনো সুখের ক্ষুধা হয় না। এই ক্ষুধাটা হয় দীর্ঘশ্বাসের, নির্মমতার, চাপা কষ্টের আরো অনেক কিছুর। ক্ষুধা অনেক রকমের হয় যেমন মনের ক্ষুধা, চোখের ক্ষুধা, শরীরের ক্ষুধা, পেটের ক্ষুধা ইত্যাদি।
আমার একটা চাপা কষ্টের চোখের ক্ষুধা আছে। আমার চোখ শুধু পাহাড়, সাগর, নদীর তীর আর সবুজ গ্রাম দেখতে চায়। চোখের এই গভীর ক্ষুধা মিটানোর মতো সাধ্য আমার নাই। তাই মাঝেই মাঝেই মনের ভেতর থেকে দীর্ঘশ্বাস বের হয় ! এই ক্ষুধাতে ঘন ঘন দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া আমার আর তেমন কোনো ক্ষতি হবে না। সব ধরনের ক্ষুধাতেই চাপা কষ্ট থাকে, নিজেকে দুর্বল লাগে, হতাশ লাগে কিন্তু পেটের ক্ষুধাতে নিজেকে রাক্ষস লাগে।
গত বৃহস্পতিবার সকালে শেরপুরে ভাতের অভাবে কণিকা (১২) নামের এক কিশোরী গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।
যখন আমি এই খবরটা পড়লাম তখন থেকেই আমার মাথায় অনেকগুলো পোকা বিড়বিড় করছে। নিজের ভেতরটা কেমন জানি বোবা কান্নায় ভরপুর হয়ে আছে। মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে আমি! আল্লাহর রহমতে ভাতের অভাব হয় নাই, তবে জীবনে অনেক কিছুর অভাব রয়েছে। নিজের বাবার সামর্থ্য বুঝে চাহিদা খুব বেশি ছিল না, যতটুকু ছিল সেটাই পাইনি।
মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্যের সঙ্গে অভাবের পরিচয় আছে। তারা জানে অভাব কি জিনিস ! “কথায় আছে অভাবে স্বভাব নষ্ট “- তবে মধ্যবিত্তদের একটা নীতি থাকে। এই নীতির নাম আত্মমর্যাদা। তাদের জীবন দিয়ে দিবে তবুও নিজের আত্মমর্যাদা বিলীন করবে না।
খবর অনুযায়ী কণিকার মধ্যবিত্তের মধ্যে পড়ে না। তারা দরিদ্র, একেবারেই দরিদ্র। ‘দিন এনে দিন খাওয়ার মানুষ’- পেশায় কণিকার বাবা জেলে। যেদিন মাছ ধরতে পারবে সেদিনই তাদের আহার জুটে। মাছ না পেলে পুরো পরিবার অভুক্ত থাকে। ১২ বছরের মেয়ে কণিকার পেটে ক্ষুধা ছিল তবে মধ্যবিত্তদের মতো আত্মমর্যাদায় ভরপুর ছিল। পেটের ক্ষুধায় নিজের জীবন দিয়ে গেছে কিন্তু নিজের ঘরের কথা বাহির করে নাই। পেটের জ্বালার সঙ্গে মনে কতটা অভিমান ছিল মেয়েটার কে জানে !
বাংলাদেশ আমার দেশ, আমাদের দেশ। এই দেশকে নিয়ে গর্ব করার মতো হাজারটা কারণ রয়েছে। বর্তমানের একটা কথাই শুধু বলি – রোহিঙ্গাদের আশ্রয়। আমাদের সরকার তাদের আশ্রয় দিয়েছে আবার তাদের বাসস্থান, খাবার -দাবার, চিকিৎসা ইত্যাদি সব কিছুর ব্যবস্থা করেছেন। ক’দিন আগে জাতিসংঘ অধিবেশনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলে এসেছেন- ‘বাংলাদেশ খুব বেশি উন্নত দেশ নয়। তবে ১৮ কোটি মানুষকে খাওয়াতে পারলে আমরা ১০ লাখ মানুষকেও খাওয়াতে পারব। ‘ গর্ব হয় এই মানুষটাকে নিয়ে। কি ধৈর্য! কি সাহস ! কি মনোবল!
কণিকা কোনো রোহিঙ্গা ছিল না। কণিকা সেই ১৮ কোটি মানুষের একজন ছিল। তাহলে কণিকার ঘরে ভাত ছিল না কেন ? আমি বলছি না সরকার খুঁজে খুঁজে কণিকাদের ঘরে ভাত দিয়ে আসবে ! আমি বলছি আমাদের খাদ্যদ্রব্যের ঊর্ধ্বগতির লাগামটাকে সরকার যেন শক্ত করে ধরে। একজন জেলে প্রতিদিন মাছ পাবে এমন কোনো কথা নেই , প্রতিদিন মাছ পেলেই কি পরিমাণ মাছ পায় তারও কোনো নির্দিষ্ট পরিমাণ নেই। মাছ পাবেই বা কোথা থেকে ? মাছের সংখ্যাটাও তো মাথায় রাখতে হবে !
আগে ঘরে তরকারি না থাকলে মানুষ পান্তা ভাত, পেঁয়াজ আর কাঁচামরিচ দিয়ে খেয়ে ফেলেছে। এখন ভাত পান্তা তো হয়ই না , পেঁয়াজ আর কাঁচামরিচ সেতো ! এক কণিকার কথা জানি, আড়ালে আবডালে না জানি এমন আরো কত কণিকা আছে।
‘
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমাদের দিকে তাকান। আমাদের শরীরের মাটির চামড়া পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে, বাজারের আগুনে। আপনি যেকোনো উপায়ে এই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনুন। ভরসার জায়গা আপনি তাই তাকিয়ে আছি আপনার দিকে।
লেখক : প্রযুক্তি প্রকৌশলী