ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

লেবুর সুবাসে ভাসছে গ্রামবাসি

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ লেবুচাষের বিস্তৃতি আর সাফল্যে এখন লেবুর গ্রাম নামে পরিচিত পুটিয়াজানি। টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার ফাজিলহাটি ইউনিয়নের একটি গ্রাম এই পুটিয়াজানি। প্রায় ১০ থেকে ১২ বছর যাবৎ এ গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে লেবু চাষ করে আসছেন কৃষকরা।

এ গ্রামের ভেতর প্রবেশ করলেই চোখে পড়বে বাড়ির আঙিনায় ছোটখাটো অসংখ্য লেবু বাগান। এ কারণে অচেনা যে কারো মনে হতে পারে এটি কোনো গ্রাম নয় বরং বিস্তীর্ণ এক লেবু বাগান। এছাড়াও গ্রামটির প্রতিটি আবাদী জমি জুড়েও রয়েছে এ লেবু বাগান। লাভজনক আর সাফল্যের ধারাবাহিকতায় গ্রামটির কৃষকরা অন্য সকল আবাদ বাদ দিয়ে লেবু চাষে ঝুঁকেছেন। উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে উপজেলায় প্রায় ৮০০ হেক্টর জমিতে লেবু চাষ করা হচ্ছে।

উপজেলার পুটিয়াজানি গ্রামে সবচেয়ে বেশি লেবু বাগান থাকায় ওই গ্রামে প্রতিদিন লেবু হাট বসে। এ অঞ্চলে এলাচি জাতের লেবু বেশি চাষ হচ্ছে। সারা দেশেই এ লেবুর জনপ্রিয়তা রয়েছে। কম বিচি, সুগন্ধ আঁশযুক্ত ও লেবুতে প্রচুর পরিমাণে রস থাকায় এ এলাকার লেবুর চাহিদা দেশজুড়ে।

সরেজমিনে জানা যায়, গত বছরের বন্যায় দেলদুয়ারের লেবু চাষিরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিলেন। প্রায় ১৭০ হেক্টর লেবু বাগান পানির নিচে তলিয়ে যায়। অনেকে এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে না পেরে লেবুচাষ থেকে সরে দাঁড়ান। তবে যারা সুদিনের অপেক্ষায় ছিলেন তারা সেই ক্ষতিটাকে এখন কাটিয়ে উঠে লেবু বিক্রি করে বেশ লাভবান হচ্ছেন। উপজেলার লেবুর বাজারে চড়া মূল্য থাকায় চাষিদের মুখে হাসি ফুটেছে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত লেবুর হাট বসে এ পুটিয়াজানি বাজারে। ওই হাটে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা আসেন লেবু কিনতে। চলতি মৌসুমে লেবুর বাজারে চাহিদা বেশি হওয়ায় হাটে ক্রেতাদের সমাগম বেশি বলেও জানান তারা।

ঢাকার কারওয়ান বাজার থেকে আসা লেবুর পাইকার ফরিদ মিয়া জানান, এ বছর লেবুর দাম অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি। লেবুর দাম বেশি হলেও তাদের কেনা ছাড়া কিছু করার নেই। ঢাকায় এ অঞ্চলের লেবুর বেশ চাহিদা রয়েছে। সপ্তাহে প্রায় তিনবার তাকে এই হাটে লেবু কিনতে আসতে হয়। চলতি হাটে ১শ লেবু ২৫০-৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি বস্তা লেবু বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৮শ টাকা থেকে ৪ হাজার ২শ টাকা পর্যন্ত। প্রতিটি বস্তায় ১৬শ থেকে ১৮শ লেবু থাকে। আর লেবুর ধরন অনুযায়ী প্রতিটি লেবু ৫ টাকা থেকে সাড়ে ৮ টাকা হারে বিক্রি হচ্ছে।

লেবুচাষি আব্দুর রহমান জানান, লেবু চারা একবার রোপন করলে ৩ বছর পর থেকে পূর্ণ ফল দেয়া শুরু করে। একটি লেবু গাছ প্রায় ১৭ বছর পর্যন্ত ফল দেয়। তিনি ১ হাজার শতাংশ জমিতে লেবু চাষ করছেন। এ লেবু বিক্রি করে বছরে তার প্রায় ৩ লাখ টাকা আয় হয় বলে জানান তিনি।

দেলদুয়ার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কানিজ সুরাইয়া সুলতানা জানান, উপজেলায় প্রায় ৮০০ হেক্টর জমিতে লেবু চাষ হয়েছে। এ উপজেলার পুটিয়াজানি গ্রামে রয়েছে সবচেয়ে বেশি লেবু বাগান। সুগন্ধযুক্ত রসালো আঁশ ও স্বল্প বিচি এ অঞ্চলের লেবুর অন্যতম বৈশিষ্ট। এ কারণে এ অঞ্চলের লেবুর চাহিদা রয়েছে দেশজুড়ে। বর্তমানে এ অঞ্চলের লেবু দেশ ও বিদেশে বিক্রি হচ্ছে। লাভজনক হওয়ায় দিন দিন এ অঞ্চলে লেবুচাষের ব্যাপক প্রসার পেয়েছে বলেও জানান তিনি।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

লেবুর সুবাসে ভাসছে গ্রামবাসি

আপডেট টাইম : ০৯:১৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১১ মে ২০১৮

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ লেবুচাষের বিস্তৃতি আর সাফল্যে এখন লেবুর গ্রাম নামে পরিচিত পুটিয়াজানি। টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার ফাজিলহাটি ইউনিয়নের একটি গ্রাম এই পুটিয়াজানি। প্রায় ১০ থেকে ১২ বছর যাবৎ এ গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে লেবু চাষ করে আসছেন কৃষকরা।

এ গ্রামের ভেতর প্রবেশ করলেই চোখে পড়বে বাড়ির আঙিনায় ছোটখাটো অসংখ্য লেবু বাগান। এ কারণে অচেনা যে কারো মনে হতে পারে এটি কোনো গ্রাম নয় বরং বিস্তীর্ণ এক লেবু বাগান। এছাড়াও গ্রামটির প্রতিটি আবাদী জমি জুড়েও রয়েছে এ লেবু বাগান। লাভজনক আর সাফল্যের ধারাবাহিকতায় গ্রামটির কৃষকরা অন্য সকল আবাদ বাদ দিয়ে লেবু চাষে ঝুঁকেছেন। উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে উপজেলায় প্রায় ৮০০ হেক্টর জমিতে লেবু চাষ করা হচ্ছে।

উপজেলার পুটিয়াজানি গ্রামে সবচেয়ে বেশি লেবু বাগান থাকায় ওই গ্রামে প্রতিদিন লেবু হাট বসে। এ অঞ্চলে এলাচি জাতের লেবু বেশি চাষ হচ্ছে। সারা দেশেই এ লেবুর জনপ্রিয়তা রয়েছে। কম বিচি, সুগন্ধ আঁশযুক্ত ও লেবুতে প্রচুর পরিমাণে রস থাকায় এ এলাকার লেবুর চাহিদা দেশজুড়ে।

সরেজমিনে জানা যায়, গত বছরের বন্যায় দেলদুয়ারের লেবু চাষিরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিলেন। প্রায় ১৭০ হেক্টর লেবু বাগান পানির নিচে তলিয়ে যায়। অনেকে এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে না পেরে লেবুচাষ থেকে সরে দাঁড়ান। তবে যারা সুদিনের অপেক্ষায় ছিলেন তারা সেই ক্ষতিটাকে এখন কাটিয়ে উঠে লেবু বিক্রি করে বেশ লাভবান হচ্ছেন। উপজেলার লেবুর বাজারে চড়া মূল্য থাকায় চাষিদের মুখে হাসি ফুটেছে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত লেবুর হাট বসে এ পুটিয়াজানি বাজারে। ওই হাটে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা আসেন লেবু কিনতে। চলতি মৌসুমে লেবুর বাজারে চাহিদা বেশি হওয়ায় হাটে ক্রেতাদের সমাগম বেশি বলেও জানান তারা।

ঢাকার কারওয়ান বাজার থেকে আসা লেবুর পাইকার ফরিদ মিয়া জানান, এ বছর লেবুর দাম অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি। লেবুর দাম বেশি হলেও তাদের কেনা ছাড়া কিছু করার নেই। ঢাকায় এ অঞ্চলের লেবুর বেশ চাহিদা রয়েছে। সপ্তাহে প্রায় তিনবার তাকে এই হাটে লেবু কিনতে আসতে হয়। চলতি হাটে ১শ লেবু ২৫০-৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি বস্তা লেবু বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৮শ টাকা থেকে ৪ হাজার ২শ টাকা পর্যন্ত। প্রতিটি বস্তায় ১৬শ থেকে ১৮শ লেবু থাকে। আর লেবুর ধরন অনুযায়ী প্রতিটি লেবু ৫ টাকা থেকে সাড়ে ৮ টাকা হারে বিক্রি হচ্ছে।

লেবুচাষি আব্দুর রহমান জানান, লেবু চারা একবার রোপন করলে ৩ বছর পর থেকে পূর্ণ ফল দেয়া শুরু করে। একটি লেবু গাছ প্রায় ১৭ বছর পর্যন্ত ফল দেয়। তিনি ১ হাজার শতাংশ জমিতে লেবু চাষ করছেন। এ লেবু বিক্রি করে বছরে তার প্রায় ৩ লাখ টাকা আয় হয় বলে জানান তিনি।

দেলদুয়ার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কানিজ সুরাইয়া সুলতানা জানান, উপজেলায় প্রায় ৮০০ হেক্টর জমিতে লেবু চাষ হয়েছে। এ উপজেলার পুটিয়াজানি গ্রামে রয়েছে সবচেয়ে বেশি লেবু বাগান। সুগন্ধযুক্ত রসালো আঁশ ও স্বল্প বিচি এ অঞ্চলের লেবুর অন্যতম বৈশিষ্ট। এ কারণে এ অঞ্চলের লেবুর চাহিদা রয়েছে দেশজুড়ে। বর্তমানে এ অঞ্চলের লেবু দেশ ও বিদেশে বিক্রি হচ্ছে। লাভজনক হওয়ায় দিন দিন এ অঞ্চলে লেবুচাষের ব্যাপক প্রসার পেয়েছে বলেও জানান তিনি।