বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ বহুল আলোচিত সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮-এ কার্যত জনদাবির প্রতিফলন ঘটেনি। প্রত্যাশা ছিল, বিদ্যমান আইনের চেয়ে প্রস্তাবিত আইনটি অনেক বেশি কঠোর হবে। কিন্তু দৃশ্যত তা খুব বেশি কঠোর হয়নি। আইনের খসড়ায় সড়ক। দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সর্বোচ্চ সাজা পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড এবং সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।
উল্লেখ্য, এ আইনে আগে দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত বা প্রাণহানির জন্য সর্বোচ্চ সাজা ছিল তিন বছরের কারাদণ্ড। এ ক্ষেত্রে দীর্ঘদিনের জনদাবি ছিল সর্বোচ্চ সাজা ১০ বা এর বেশি বছর করার। এমনকি হাইকোর্টেরও নির্দেশনা ছিল সাত বছর করার। খসড়া আইনে সর্বোচ্চ সাজা পাঁচ বছরের কারাদণ্ড করায় যাত্রীদের স্বার্থ রক্ষা হয়নি, বরং বাস মালিক ও শ্রমিকদের স্বার্থই প্রাধান্য পেয়েছে বলে মনে করছেন পরিবহন বিশেষজ্ঞরা।
তবে তদন্তে কারও নিহত হওয়ার ঘটনা উদ্দেশ্যমূলক হত্যা বলে প্রমাণিত হলে সেক্ষেত্রে ফৌজদারি আইনে মৃত্যুদণ্ডের বিধান প্রয়োগ হবে বলে আইনে উল্লেখ করা হয়েছে। বস্তুত এটিও নির্ভর করবে তদন্তের ওপর। তদন্ত যদি সুষ্ঠু হয় এবং এর রিপোর্ট ও চার্জশিট যথাযথ হয়, তবেই অপরাধীর উপযুক্ত সাজা হতে পারে। এজন্য তদন্তকারী পুলিশকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেয়া দরকার বলে আমরা মনে করি।
আইনটির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল, এতে দুর্ঘটনায় কেবল চালকের সাজার কথা বলা হয়েছে। এটা ঠিক, আমাদের দেশে অধিকাংশ ক্ষেত্রে চালকের অদক্ষতা, বেপরোয়া গাড়ি চালনা, অসুস্থ প্রতিযোগিতা ইত্যাদির কারণেই দুর্ঘটনা ঘটে বেশি। তবে দুর্ঘটনার জন্য চালক ছাড়াও আনফিট গাড়ি, ত্রুটিপূর্ণ সড়ক বা অন্য কোনো অবকাঠামো, এমনকি দুর্ঘটনাকবলিত ব্যক্তিও দায়ী হতে পারেন। এসব ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের সাজার প্রশ্ন এসে যায়।
খসড়া আইনে বলা হয়েছে, গাড়ি চালানোর অপেশাদার লাইসেন্স পেতে হলে চালকের শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণী পাস এবং বয়স ১৮ বছর হতে হবে। আর পেশাদার লাইসেন্সের জন্য বয়স হতে হবে ২১ বছর। এ ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা আরও কিছুটা বেশি হওয়া উচিত বলে আমরা মনে করি। ফিটনেসবিহীন গাড়ি চালানোর জন্য জরিমানা আগে ছিল দুই হাজার টাকা এবং তিন মাসের জেল।
এ ক্ষেত্রে নতুন খসড়া আইনে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা এবং ছয় মাসের জেল বা উভয় দণ্ডের প্রস্তাব করা হয়েছে। লাইসেন্সবিহীন গাড়ি চালানোর জন্য বিদ্যমান আইনে সর্বোচ্চ চার মাসের জেল বা ৫০০ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। এ ক্ষেত্রে নতুন আইনে ছয় মাসের জেল বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের প্রস্তাব করা হয়েছে।
এগুলো আইনটির ইতিবাচক দিক সন্দেহ নেই। তবে এসব বিধানের ফলেই সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়ে যাবে এমনটি ভাবার কারণ নেই। মনে রাখতে হবে, আইন প্রণয়নের চেয়ে আইনের যথাযথ প্রয়োগের বিষয়টি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে এদিকটিতে জোরালো দৃষ্টি দিতে হবে। তাছাড়া আইনটি চূড়ান্ত করার আগে এর ত্র“টি-বিচ্যুতি বা ফাঁক-ফোকরগুলো দূর করা প্রয়োজন। এজন্য সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ ও অংশীজনদের মতামত ধারণ করে প্রয়োজনীয় সংশোধনী এনে তবেই যেন আইনটি চূড়ান্ত করা হয়।