কিশোরগঞ্জের কাদিয়াদী উপজেলার মুমুরদিয়া ইউনিয়নের কুড়িখাই গ্রামে শুরু হয়েছে কয়েক শ বছরের ঐতিহ্যবাহী কুড়িখাই মেলা। মেলা ঘিরে উৎসবে মেতে উঠেছেন আশপাশের এলাকার মানুষ। গত সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) শুরু হওয়া এই মেলা চলবে আগামী রোববার (১৮ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত।
প্রতিবছর মাঘ মাসের শেষ সোমবার থেকে কুড়িখাই গ্রামে শুরু হয় মেলা। এই মেলাটি জেলার সবচেয়ে বড় গ্রামীণ মেলা হিসেবে পরিচিত। ইসলাম ধর্ম প্রচারক শাহ শামসুদ্দিন বুখারির (রহ.) মাজারের ওরসকে ঘিরে বসে এই আয়োজন। মেলার সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো মাছ। বড় বড় বিভিন্ন জাতের মাছ ওঠে মেলায়। রীতি অনুযায়ী গ্রামের জামাইরা বাজারের সেরা সেরা মাছ কিনে শুশ্বড় বাড়িতে বেড়াতে আসেন। সেই সুবাদে বাবার বাড়িতে নাইওরে আসেন গ্রামের মেয়েরাও। সবকিছু মিলিয়ে কুড়িখাই গ্রামে আনন্দ বিরাজ করে। মেলার শেষদিন থাকে বৌ-মেলা। সেদিন, এলাকার বৌ দের দখলে চলে মেলার জমাজমাট আয়োজন।
কিশোরগঞ্জ ছাড়াও নেত্রকোনা ও সুনামগঞ্জের হাওর ও নদী থেকে এক সপ্তাহ আগে থেকেই মেলার জন্য সেরা সেরা মাছ সংগ্রহ করা হয়। বিশাল এলাকাজুড়ে মাছের হাটে বোয়াল, চিতল, আইড়, রুই, কাতল, সিলভার কার্প, পাঙ্গাস, মাগুর, বাঘাইরসহ নানা ধরণের মাছ নিয়ে অন্তত চার শতাধিক দোকান বসে। কুড়িখাই গ্রামের জামাইরা এসব মাছের মূলক্রেতা। আবার নিজ বাড়িতে ফেরার সময়ও শ্বশুড়বাড়ির লোকজন হাজার হাজার টাকার মাছ কিনে দেন জামাইকে।
এছাড়া, মেলায় বসেছে বিভিন্ন পণ্যের দোকান। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পণ্য নিয়ে এসে বিক্রি করছেন দোকানিরা। কাঠের আসবাবপত্র, শিশুদের খেলনা, মেয়েদের সাজগোছের জিনিস থেকে শুরু করে মুড়ি, মিষ্টি, বিন্নির খৈ বিক্রি করতে দেখা গেছে দোকানিদের। মেলায় শিশুদের জন্য রাখা হয়েছে পুতুলনাচ, সার্কাস, মোটরসাইকেল রেস ও নাগরদোলার আয়োজন।
মেলায় আসা মাছ বিক্রেতারা জানান, মেলা শুরুর কয়েকদিন আগে থেকেই বিভিন্ন পাইকারি আরত থেকে বড় বড় মাছ সংগ্রহ করতে শুরু করেন তারা। তারপর মেলায় বিক্রির জন্য নিয়ে আসেন। এখন পর্যন্ত মেলায় ভালোই বিক্রি হচ্ছে। তাছাড়া মেলায় লোকজনের ভিড়ও অনেক। গতবারের চেয়ে এ বছর ভালো বিক্রির আশা করছেন তারা।
বিক্রেতারা আরও জানান, মেলায় সবচেয়ে বেশি চাহিদা থাকে বোয়াল মাছের। এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় বোয়াল মাছটির দাম ধরা হয়েছে ৭০ হাজার টাকা।
কুড়িখাই গ্রামের জামাই সিদ্দিক মিয়া রাইজিংবিডিকে বলেন, পাঁচ বছর হলো আমি এই এলাকার মেয়েকে বিয়ে করেছি। প্রতিবছরই আমাকে শ্বশুর বাড়িতে দাওয়াত দেওয়া হয়। আমার মনে হয় বাংলাদেশের কোথাও এমন জামাই আদরের মেলা হয় না। এটি এ গ্রামের রীতি রেওয়াজ। এলাকার মুরুব্বিদের আন্তরিকতায় প্রতিবারই নিজের তাগিদায় চলে আসি। খুব ভাল লাগে মেলার কয়েকটা দিন।
মেলা উদযাপন কমিটির সদস্য মাইনুজ্জামান অপু বলেন, বহু বছরের ঐতিহ্যবাহী মেলায় লাখ লাখ মানুষের সমাগম ঘটে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে মেলা। মাজার প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় ধর্মীয় অনুষ্ঠান। মেলায় আগত দর্শনার্থীরা যেন দুর্ভোগের শিকার না হন সে ব্যাপারেও আমরা লক্ষ্য রাখছি।