ঢাকা , বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দেশের জন্য কাজ করে যেতে চাই, তাবিথ আউয়াল

গতবছর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপির মনোনয়ন পেয়ে চমক সৃষ্টি করেন তাবিথ আউয়াল। সদ্যই বিএনপির নতুন কেন্দ্রীয় কমিটিতে পেয়েছেন কার্যনির্বাহী সদস্যপদ। রাজনীতিতে অনেকটা নতুন মুখ হলেও ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে তিনি চেনা মুখ। ঘরোয়া ফুটবলের আলোচিত দল ফেনী সকার ক্লাবের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান। বাফুফের দুইবারের নির্বাচিত সহসভাপতি। সবমিলিয়ে দেশের ফুটবল অঙ্গনের গ্রহণযোগ্য এক ব্যক্তিত্ব তাবিথ আউয়াল। রাজনীতিতেও একই রকম অবস্থানে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। দেশের ফুটবলের পাশাপাশি রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সামাজিক উন্নয়ন-অগ্রগতিতেও সমান অবদান রাখতে চান এফবিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুর সন্তান তাবিথ।

আপনার রাজনীতিতে আসার ঘটনা ছিল অন্য রকম, সরাসরি মেয়র পদপ্রার্থী হওয়ার মধ্য দিয়ে। এটা নিশ্চয় আপনার জন্য বিরাট ব্যাপার।

অবশ্যই, এটা আমার জন্য বিরাট ব্যাপার। বড় সুযোগ। এজন্য আমি আমার দলের কাছে কৃতজ্ঞ। তবে আমি সেটা মনে করি না যে, আমি হঠাৎ করে রাজনীতিতে এসেছি। সবারই তো একটা সময় বা সুযোগ আসে। আমারও সুযোগ এসেছিল। সে সময় একটা রাজনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছিল। মিন্টু সাহেবের প্রতিনিধি হিসেবে হোক, আর নতুন প্রজন্মের মুখ হিসেবে হোক, আমি আসলে যোগ দিয়েছিলাম মানুষের কল্যাণে। কারণ মানুষের কল্যাণে কাজ করার প্রচ- ইচ্ছা আমার বাবার মধ্যে দেখেছি। উত্তরাধিকার সূত্রে সেটা আমিও পেয়েছি। রাজনীতিতে আসার আগেও মানুষের জন্য কাজ করেছি। এখনো করছি। আমি মনে করি, সবাই যে যার জায়গা থেকে মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পারে। তবে রাজনীতিবিদদের জন্য এই সুযোগটা বেশি। এখান থেকে অনেক ভালো কাজ করার সুযোগ আছে।

 

কম বয়সেই বিএনপরি মতো বড় একটি দলের মনোনয়ন পাবেন, নিশ্চয়ই আশা করেননি।
উত্তর দেওয়াটা মুশকিল। তবে কনফিডেন্স ছিল। দেশের কল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব অবশ্যই পালন করতে চাই। সফল হওয়ার ব্যাপারে নিজের ওপর আস্থা ছিল এবং আছে। এখন অনেকে বলে, তাবিথের বয়স কম। কিন্তু পৃথিবী বা এমনকি বাংলাদেশের দিকে তাকালেও দেখা যাবে আমার বয়সি অনেকই এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছে। বাংলাদেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করার যে অভিজ্ঞতা আমার আছে, সেই অভিজ্ঞতার আলোকে আমি মনে করি যথাযথ সময়ে আমি সুযোগ পেয়েছিলাম।

নির্বাচনে আপনি তো বরাবরই আশাবাদী ছিলেন। ভোট গ্রহণের মাঝপথে আপনার দল নির্বাচন বর্জন করে বসল। সিদ্ধান্ত কতটা ঠিক ছিল? ওই নির্বাচন নিয়ে আপনি কতটা আশাহত?
আমি মোটেও ব্যথিত কিংবা আশাহত নই। কারণ আমি নেত্রীর যে সাপোর্ট পেয়েছি বা যে ভোট পেয়েছি তা পুরোপুরি দলের অবদান বলে আমি মনে করি। মানুষ কিন্তু জাতীয়তাবাদকে ভোট দিয়েছিল। আমি ছিলাম সিম্বল। মানুষের ভালোবাসায় আমি বিমোহিত হয়েছি। আমাকে যারা ভোট দিয়েছেন, তাদের ধন্যবাদ। আমি এবং আমার দল গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। আমাদের এখনো সম্ভাবনা আছে। ক্ষমতায় যারা আছেন তারা যদি একটু উদার হন তাহলে গণতন্ত্রের মাধ্যমে দেশ নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। আর সেটা অবশ্যই ভালো ফলাফল হবে। সিটি নির্বাচনে ক্যাম্পেইনে যে আমরা বিপ্লব ঘটাতে পেরেছি, তা ছিল অসাধারণ। সত্যি কথা হলো, ও রকম বিপ্লবী প্রচার তো আমরা কখনো দেখিনি। যেমন টিভিতে ডিবেট করা, গণমাধ্যমের কল্যাণে জবাবদিহিতা আনা, এত গণসংযোগ করা। নির্বাচনের দিনটা বাদ দিলে অন্য সব কিছু দারুণ ছিল।

আপনি কি মনে করেন বিএনপি যদি ভোট বর্জন না করত জয়ী হতে পারতেন? এ নিয়ে কোনো আফসোস আছে?
আমি নিশ্চিত যে, আমরা বিজয়ী হয়েছি। ভোট যদি পুনর্গণনা করা হয় আমরাই এগিয়ে থাকব। আপনার কাছ থেকে একটা জিনিস যদি কেড়ে নেওয়া হয় তাহলে আফসোস, দুঃখবোধ তো থাকবেই।

ভোটে নয়ছয় হয়েছে বলতে চাচ্ছেন?
আমি বলতে চাচ্ছি, যত ভোট কাস্ট হয়েছে আর যেটা ডিক্লেয়ার হয়েছে, তার মধ্যে বড় একটা বৈষম্য আছে। এটা গণতন্ত্রের জন্য হতাশার। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তো আমরা আসছি। আমি মনে করি যে, ইলেকশন কমিশন থেকে আসলেই একটা অন্যায় করা হয়েছে।

বিএনপিতে আপনার বাবা ভাইস চেয়ারম্যান। আপনি এবার কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য হলেন। দলের জন্য কী কী করছেন?
আমরা আগে যা করেছি এখনো তাই করছি। দল, জনগণ ও দেশের জন্য যে দায়িত্বগুলো পালন করা দরকার আমরা সেগুলোই করে যাচ্ছি। নতুন নতুন মাত্রা যোগ করার চেষ্টাও করছি। দলের লক্ষ্য হলো, সাধারণ জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া, আইনের শাসনটা আবার বহাল করা। এই দুটি ইস্যু নিয়েই আমরা এখন কাজ করছি।

গণতন্ত্র চর্চার পরিবেশ কতটা কঠিন বলে মনে করেন?
পার্টির ভেতরের কথা যদি বলা হয়, সেখানে সংলাপ হচ্ছে, আগামীর কর্মসূচি নিয়ে কথা হচ্ছে। আপনারা জানেন সরকারি দল নিরন্তর চাপ সৃষ্টি করে যাচ্ছে আমাদের ওপর। সেটার বিপরীতে আমাদের দাঁড়াতে হচ্ছে। একটা কঠিন পরিবেশের মধ্য দিয়ে আমাদের এগোতে হচ্ছে। তবে আমরা গণতন্ত্রের জন্য কাজ করে যেতে চাই। দেশের জন্য কাজ করে যেতে চাই।

কাজ করতে গিয়ে কী ধরনের ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে আপনাকে?
আমি কোনোটাকে কোনো ঝামেলা হিসেবে দেখছি না। একটা উদ্দেশ্য, একটা আদর্শ থাকলে এগুলোকে বাস্তবায়ন করার জন্য কিছু না কিছু বিরোধিতা তো থাকবেই। ত্যাগ তো স্বীকার করতে হবেই। আমরা সেটাই করছি। জীবনটা আসলে খুব সহজ নয়। তাই আমি এগুলোকে ঝামেলা মনে করি না। আর সহজ হলে যে কেউ অনেক কিছু করে ফেলতে পারত বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে। আর কিছু বিষয় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে, তবে এগুলোকে আমরা ইনশা আল্লাহ ওভারকাম করতে পারব।

বিএনপি এখন কোন টার্গেট নিয়ে এগোচ্ছে?
কোনো নির্দিষ্ট টার্গেটের কথা বললে ভুল হবে। কারণ বিএনপি একটা বড় দল। জনগণের দল। বিএনপি জাতীয়তাবাদী আদর্শের দল। যেটা দেশের জন্য খুবই জরুরি। বাংলাদেশের সম্মান, মানুষের অধিকার, ভোটের অধিকার যেন ক্ষুণœ না হয়, সে জন্য দল কাজ করে যাচ্ছে। এগুলো রক্ষার্থে প্রয়োজনে আমাদের কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে।

দেশে জঙ্গিবাদ নিয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কী? আপনার দলের অবস্থান কী?
ব্যক্তিগতভাবে জঙ্গিবাদকে আমি ঘৃণা করি। বিএনপি একটি স্মার্ট ও আধুনিক দল। আমার দলও এটাকে ঘৃণা করে। জঙ্গিবাদ কারো কাম্য নয়। এটা দেশের জন্য ভয়ংকর। আমার ব্যক্তিগত মত হলো, জঙ্গিবাদের উত্থান হওয়ার কারণ রাজনৈতিক আদর্শ থেকে বিচ্যুত হওয়া। আমরা যদি একটা রাজনৈতিক সংলাপে আসতে পারি তাহলে অটোমেটিক জঙ্গিবাদের উত্থান কমে যাবে। আর আপনারা জানেন জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে একটা জাতীয় ঐক্য করতে আমাদের দল থেকে আগেই আহ্বান করা হয়েছে।

নির্বাচনের সময় ঢাকা উত্তরের প্রার্থীদের অনেকবারই একসঙ্গে দেখা গেছে। নির্বাচনের পরে কী অবস্থা? মেয়রের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ আছে? কোনো ব্যাপারে কি আপনার মতামত চাওয়া হয়েছে?
আমরা নির্বাচনের আগে যেমন ছিলাম এখনো তেমনই আছি। হয়ত টিভিতে কম দেখা যাচ্ছে। এর কারণ, আমরা তো আর এখন ক্যাম্পেইন করছি না।

মেয়র হিসেবে আনিসুল হককে কত নম্বর দেবেন? তিনি কতটা সফল?
আনিসুল হক সাহেব কতটা সফল, এটা জনগণ বিচার করবে। আমি বলব না। এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে চাই না। কারো সমালোচনা আমি পছন্দ করি না।

আধুনিক ঢাকার নাগরিকসেবা নিয়ে আপনার পরামর্শ।
ঢাকার নাগরিকরা কী চায় সেটা আগে বুঝতে হবে। আর সেটা বুঝে ওই সেবাটা আগে দিতে হবে। আমরা অনেককে বলতে শুনি এটা করা উচিত, ওটা করা উচিত। আমি মনে করি সাধারণ নাগরিকদের থেকেই শোনা উচিত তারা আসলে কী চাচ্ছে। আমরা অবকাঠামো, পয়ঃনিষ্কাশন, পরিবেশ নিয়ে কথা বলতে পারি। এসব ব্যাপারে নাগরিকদের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ পিতাকে কতটা অনুসরণ করেন আপনি?
প্রায়ই অনুসরণ করি। তাঁর ব্যবসায়িক একটা স্বপ্ন ছিল। সেই স্বপ্নটা এগিয়ে নিতে কাজ করছি। ঢাকার সিটি নিয়েও তার স্বপ্ন ছিল। কাজ করার সুযোগ পাইনি। ভবিষ্যতে দায়িত্ব পেলে ঢাকা সিটি নিয়ে বাবার স্বপ্নগুলো বাস্তবায়ন করব। আমি চেষ্টা করছি বাবার আদর্শ জিইয়ে রেখে তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার।

পিতার কোন গুণটা আপনাকে সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ করে?
সাধারণ মানুষের সঙ্গে মেলামেশা। বাবার এ গুণটা আমাকে খুব মুগ্ধ করে। আমিও চেষ্টা করি সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে যাওয়ার। তাদের সুখ-দুঃখের ভাগিদার হওয়ার।

আপনার বাবার বর্ণাঢ্য জীবন। আপনার জীবনে তার কতটা প্রভাব আছে?
এর উত্তরটা এককথায় দেওয়া যাবে না। তাঁর জীবন তো সাধারণের জীবন থেকে অনেক সাকসেসফুল হওয়ার গল্প। দেশের প্রত্যন্ত একটা গ্রামে জন্ম নিয়ে আমেরিকায় পড়াশোনা করে আবার বাংলাদেশে ফিরে আসেন ব্যবসায়ী হিসেবে। তার সঙ্গে অন্যদের তুলনা করলে তাকে ছোট করা হবে। বাবা খুবই বড় মানুষ। বড় মনের মানুষ।

আপনার বাবা একজন ভালো লেখকও। তাঁর একটা বই ‘সন্তানের জন্য পিতার কথামালা’। আপনার জীবনে ওই বইয়ের প্রভাব কতটা?
বইটা আমাকে কেন্দ্র করেই লেখা। আমি যখন যুক্তরাষ্ট্রে লেখাপড়া করতাম তখন আমার আর বাবার মধ্যে যে চিঠি চালাচালি হতো বইটা এসব নিয়েই। মানে আমাদের জীবনের চার বছরের রিয়েল লাইফ এখানে তুলে ধরা হয়েছে। বইয়ের পুরোটা প্রভাবই পড়েছে আমার ওপর।

রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী হিসেবে আপনি এখন পরিচিত মুখ। কিন্তু ফুটবল অঙ্গনের মানুষজন আপনাকে আরো আগে থেকেই চেনেন। ফুটবলে কিভাবে যুক্ত হলেন?
ছোটবেলা থেকেই ফুটবলের প্রতি খুব ভালোবাসা ছিল। অমি ভালো ফুটবলও খেলতাম। বলতে পারেন ফুটবল প্রতিভা আমার বেশ ভালো ছিল। বিভিন্ন ক্লাব থেকে আমার ডাক পড়ত। খেলতাম। নামও কুড়িয়েছিলাম। বড় ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন ছিল। নানা কারণে সেটা হয়ে ওঠেনি। বিদেশে লেখাপড়া, ব্যবসা দেখাশোনায় ব্যস্ত হয়ে পড়ি। তবে ফুটবলের প্রতি আমার ভালোবাসা কমেনি। সেই ভালোবাসা থেকেই ফুটবলের সঙ্গে রয়ে যাওয়া বলতে পারেন।

আপনি টানা দুইবারের বাফুফের নির্বাচিত সহসভাপতি। এবারের নির্বাচন আপনার জন্য কতটা কঠিন বা চ্যালেঞ্জিং ছিল?
জীবনে যত ইলেকশনই করেছি আমি মনে করি, প্রতিটিই কঠিন ছিল। সবাই বলছে বাফুফের এবারের নির্বাচন অনেক টাফ হয়েছে। হ্যাঁ, কথাটি কিছুটা সত্যি। এবার অনেক হিসাব-নিকাশের ব্যাপার ছিল।

প্রথম দিকে তো আপনি সালাউদ্দিনের প্যানেলে ছিলেন। কিন্তু পরে আপনাকে নির্বাচন করতে হয়েছে প্যানেল ছাড়া।
এর আগের টার্ম আর এ টার্মই বলেন, আমি কখনোই কারো প্যানেলে ছিলাম না। আমি কোনো প্যানেলে যোগদানও করিনি, আমাকে কোনো প্যানেল থেকে বাদও দেওয়া হয়নি। নিজেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি স্বতন্ত্র ইলেকশন করব। কারণ এসব প্যানেল ট্যানেলে আমি বিশ্বাস করি না। তাই এ ব্যাপারটা নিয়ে আমার কোনো ইমোশন কাজ করে না। আমার কথা হলো, যার ইচ্ছা সে ইলেকশন করবে। আর যারা ভোটার তারা বিবেচনা করবে কে যোগ্য আর কে অযোগ্য। ভোটাররাই নির্ধারণ করবে, তারা কাকে ভোট দেবে আর কাকে দেবে না।

প্যানেলের বাইরে থেকে ইলেকশন করা আসলে কতটা কঠিন বলে আপনি মনে করেন?
সেটা তো আমি বললামই। আমি প্যানেল ট্যানেল বুঝি না। প্যানেলে ইলেকশন করলে সহজ, আর প্যানেল ছাড়া করলে তা কঠিন, ব্যাপারটা বোধ করি ঠিক নয়। আমি মনে করি, যোগ্য প্রার্র্থী হলে তার কোনো সমস্যা হয়। সে যদি ভোটারদের বোঝাতে পারে তাহলে সব কিছু সহজ হয়ে যায়। হ্যাঁ, ভোটারদের সচেতন হওয়া জরুরি। আমি তো মনে করি, প্যানেলে ইলেকশন করার চেয়ে নিজে নিজে করাই ভালো। এটা পলিটিক্যাল ইলেকশন না যে, কোনো একটা সিম্বল ব্যবহার হবে।

দুটি ইলেকশনের মধ্যে কোনটাকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় আপনার কাছে?
দ্বিতীয় ইলেকশনে জয়লাভ করাটাই আমার জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমি প্রথম চার বছর যে কাজ করেছি সেটার ফলাফলেই ভোটাররা আমাকে দ্বিতীয়বার চান্স দিয়েছে। এতে বোঝা যায়, প্রথম চার বছর সফল ছিলাম।

সালাউদিন না হয়ে পোটন (কামরুল আশরাফ খান এমপি) নির্বাচিত হলে ফুটবলের জন্য কতটা স্বস্তির হতো বলে মনে করেন?
আমরা যেটা না হয় সেটা নিয়েই অনেক জল্পনা করতে পারি। এটা নিয়ে কথা না বলে যেটা হয়েছে সেটা নিয়েই বাস্তবের কথা বলি। এটাই মঙ্গল। অযথা বিতর্ক তুলে লাভ নেই। সালাউদ্দিন সাহেব হয়েছে। ভালো। উনি বড় মাপের মানুষ। গ্রেট ফুটবলার ছিলেন। এটা ফুটবলের জন্য অবশ্যই ভালো।

সংগঠক হিসেবে সালাউদ্দিনকে কত মার্ক দেবেন?
একশতে একশ মার্ক দিতে চাই। কাজী সালাউদ্দিনকে যেমন মাঠে দরকার ছিল, তেমনি তাকে মাঠের বাইরেও দরকার। উনি খুবই উপযুক্ত ব্যক্তি। ফুটবলের জন্য তিনি অনেক কিছু করছেন।

সালাউদ্দিন সাহেব আপনাকে কতটা মূল্যায়ন করেন?
সেটা আমি কী করে বলব? এটা তো উনিই ভালো বলতে পারবেন। উনি জানেন, আমি মূল্যায়নের যোগ্য কি না।

মানে সহসভাপতি হিসেবে আপনাকে যতটা মূল্যায়ন করা উচিত সেটা কি তিনি করছেন বলে মনে করেন?
আসলে আমার মানসিকতা ভিন্ন। আমি এ নিয়ে চিন্তা করি না। সত্যি কথা বলতে কি, আমি সহসভাপতি কি না সেটা নিয়েই মাথা ঘামাই না। আমি মনে করি, ফুটবলে অবদান রাখার অনেক যোগ্যতা আমার আছে। তবে আমার থেকে ফুটবল ফেডারেশন তা পুরোপুরি নিতে পারছে না। আশা করি আগামী চার বছরে আমার থেকে অনেক কিছু নিতে পারবে ফুটবল।

ফুটবল ঘিরে আপনার পরিকল্পনা কী? কী ধরনের অবদান রাখতে চান?
২০২২ সালে কাতার বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে খেলার ভিশনটাই আমাদের সামনে আছে। আমরা সেটা নিয়ে কাজ করেছি। এখনো করছি। এই ভিশনে আমি এখনো একমত আছি। আমার মূল অবদান হবে যেকোনো প্ল্যান বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করা। সেটা আর্থিক হোক, সাংগঠনিক হোক। আমি সব ধরনের সহযোগিতা করার জন্যই প্রস্তুত।

কোন পরিচয়টা আপনার ভালো লাগে ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ নাকি ফুটবল সংগঠক?
সবচেয়ে বড় খুশির ব্যাপার হলো, আমি বাংলাদেশি নাগরিক। এর ওপরে আর ভালো লাগা নেই।

ফুটবল শুধু নিচের দিকে যাচ্ছে। ফুটবলের সার্বিক অবস্থা আপনি কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?
সত্যি কথা হলো, আমাদের খেলার মান অনেকটাই নেমে গেছে। ভালো মানের খেলোয়াড়ও পাওয়া যাচ্ছে না। কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে আমাদের। এই অবস্থা থেকে যেমন করেই হোক ফুটবলকে উন্নত করতে হবে। আন্তর্জাতিক মহলের সঙ্গে সামঞ্জস্যতা আনতে হবে। দেশের গণমাধ্যম ফুটবলকে নিয়ে অনেক চিন্তা করে, সাধারণ মানুষও ফুটবলকে ভালোবাসে। এটাকে আমি খুব ইতিবাচক দেখি। পুরো দেশ চাচ্ছে এই খেলাটির সঙ্গে থাকতে। এটা সত্যি যে, রেজাল্ট হচ্ছে না। আর রেজাল্ট না হলে তো সমস্যাই। সাকসেস দেখলে মানুষ উৎসাহ পায়। আর ব্যর্থ হলে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নেয়। তবে ফুটবল থেকে এখনো মানুষ মুখ ফিরিয়ে নেয়নি। এখনো মাঠে প্রচুর দর্শক আসছে। কথা হলো, আমাদের ভালো মানের খেলা উপহার দিতে হবে। আর এটার জন্যই কাজ করে যাচ্ছি।

সালাউদ্দিন সাহেব ফুটবলের অধঃপতনের জন্য ক্লাবকে দায়ী করেছেন। একজন ক্লাব কর্ণধার হিসেবে কি এ কথার সঙ্গে আপনি একমত?
ক্লাবের আগে আমি ফুটবল ফেডারেশনের একজন সহসভাপতি। আর সালাউদ্দিন সাহেব সভাপতি। উনি যদি কোনো মন্তব্য করেন আমি তার সঙ্গে সংগত কারণেই একমত।

 

ফুটবলে পুরুষরা পেছালেও এগিয়ে যাচ্ছে নারীরা। দুই উন্নতির সমন্বয় হচ্ছে না কেন?
আসলে ভিন্নতা না করলেই ভালো। আমাদের কথা হলো, ফুটবল এগিয়ে নেওয়া। সেটা নারী অথবা পুরুষের মাধ্যমেই হোক। আমাদেরও দোষ আছে যে, আমরা অনেক তথ্য ফ্লাশ করতে পারি না। গত বছর আমাদের অনূর্ধ্ব-১৬ দলটা সাফ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। এবারও অনূর্ধ্ব-১৬ দলটা এশিয়া কাপ বাছাইয়ের গ্রুপ পর্বে কোয়ালিফাই করছে। একটা বিষয় হলো, পুরুষ ফুটবলটা ২০৯ দেশ খেলে। এখানে খুবই প্রতিযোগিতা। সব দেশই চায় প্রতিযোগিতা করে একটা পর্যায়ে যেতে। মহিলা ফুটবল কিন্তু সব দেশ খেলে না। তাই এখানে কম্পিটিশনটা একটু কম। পুরুষ ফুটবলে ডমিনেট করে সাউথ আমেরিকা বা ইউরোপ। আর মহিলা ফুটবলে ডমিনেট করে এশিয়া অথবা উত্তর আমেরিকা। আমরা এশিয়া হওয়াতে নারী ফুটবলটা একটু স্ট্রং।

বিগত সময়ে জাতীয় দলের কোচ সিলেকশনে আপনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। কিন্তু কোনো কোচই দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছেন না কেন?
যতক্ষণ না কোনো কোচ আমাদের রেজাল্ট এনে দিতে পারছেন না, ততক্ষণ পর্যন্ত কারো স্থায়ী ঠিকানা হতে পারে না। এটা হলো মূল কথা। অযথা কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা খরচ করে তো লাভ নেই।

কিন্তু ভালো ফলের জন্য তো তাদের সময় দেওয়া দরকার। সেই সময় কি কোচদের দেওয়া হচ্ছে?
এসব কথা আমরা চুক্তির আগে কখনো শুনি না। শুনি পরে অথবা সাফল্য অর্জন না করতে পারলে। বিদেশি প্রশিক্ষকদের একটা সুবিধা হলো ওনাদের চুক্তি শেষ হয়ে গেলেই সব শেষ। তারা তখন অন্য জায়গায় চলে যেতে পারে। কিন্তু আমরা যারা দায়িত্বশীল জায়গায় আছি, তাদের কিন্তু জনগণের সামনে জবাবদিহি করতে হয়। আমাদের আশা থাকে দল ও কোচদের নিয়ে। কোচরা প্রথমে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দায়িত্ব নেয়। কিন্তু পরে ভালো না করতে পারলে আমাদের বিকল্প চিন্তা না করে উপায় থাকে না।

ফুটবলে আদৌ কি উন্নতি হবে অথবা সম্ভব? কী মনে হয় আপনার?
উন্নতি তো হচ্ছে। মেয়েরা আজ কোথায় গেছে চিন্তা করুন। ছেলেরাও ভালো করছে। হ্যাঁ, জাতীয় দল ভালো করছে না। তার জন্য সময় দরকার।

ফিফা র‌্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ১৮৫। ১৭ কোটি মানুষের দেশের জন্য এটা কি লজ্জার নয়?
ফিফা র‌্যাংকিং সব সময় প্রকৃত মান নির্দেশ নাও করতে পারে। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে র‌্যাংকিং ছিল ১৪৮। তখন কিন্তু কেউ বলেনি যে, বাহ, র‌্যাংকিং অনেক তো ওপরে। গত বছর এ সময় এশিয়াতে আমাদের র‌্যাংকিং ছিল ২২। র‌্যাংকিং ওঠে-নামে আপনি কয়টা ম্যাচ খেলছেন, হেরেছেন, জিতেছেন এসবের ওপর ভিত্তি করে। অতি নিম্নমানের দলের সঙ্গে প্রীতি ম্যাচ খেলে জিতলে র‌্যাংকিং আপনাআপনি বেড়ে যাবে। র‌্যাংকিং দিয়ে প্রকৃত পরিস্থিতি বিবেচনা করা যাবে না। তাছাড়া আমাদের যেটা হয়েছে তা হলো, সালাউদ্দিন সাহেবের মতো স্ট্রাইকার নেই। কায়সার হামিদের মতো স্টপার খুঁজে পাচ্ছি না। কাননদের মতো গোলকিপার নেই। সমস্যা হলো, এ মুহূর্তে টেকনিক্যালি সাউন্ড একঝাঁক প্লেয়ার নেই। এই অবস্থায় র‌্যাংকিং যদি অনেক বেড়েও যায়, তাতে কিন্তু আমি খুশি হব না। তাই গণ্যমাধ্যমের ভাইবোনদের আহ্বান জানাচ্ছি, তারা যেন র‌্যাংকিংয়ের সঙ্গে তুলনা করে দেশের বর্তমান অবস্থাকে ঘোলাটে না করে ফেলেন।

ফুটবল নিয়ে আপনার লক্ষ্য কী?
ফুটবল নিয়ে আমার লক্ষ্য হলো, ফুটবল বাংলাদেশে একটা ইন্ডাস্ট্রি হিসেবে দাঁড় করানো। এখানে যেন একটা পজিটিভলি বাণিজ্যিক ধারা চলে আসে। বর্তমানে পৃথিবীর অষ্টম অর্থনীতি হলো ফুটবল। সেই অর্থনীতির সঙ্গে বাংলাদেশ এখনো যোগদান করতে পারছে না। পাকিস্তানের মতো দেশ, তাদের কিন্তু খেলোয়াড় অত ভালো নেই। কিন্তু ফিফার ফুটবল কিন্তু তাদের দেশে বানানো হয়। বাংলাদেশে এত বড় গার্মেন্টশিল্প তারপরও ফুটবলের গেঞ্জির অর্ডার আমরা খুব কমই পেয়েছি। আমরা স্বপ্ন দেখি একদিন ফুটবলের অর্থনীতিতে বাংলাদেশ যোগদান করবে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

দেশের জন্য কাজ করে যেতে চাই, তাবিথ আউয়াল

আপডেট টাইম : ১১:২৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১ অক্টোবর ২০১৬

গতবছর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপির মনোনয়ন পেয়ে চমক সৃষ্টি করেন তাবিথ আউয়াল। সদ্যই বিএনপির নতুন কেন্দ্রীয় কমিটিতে পেয়েছেন কার্যনির্বাহী সদস্যপদ। রাজনীতিতে অনেকটা নতুন মুখ হলেও ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে তিনি চেনা মুখ। ঘরোয়া ফুটবলের আলোচিত দল ফেনী সকার ক্লাবের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান। বাফুফের দুইবারের নির্বাচিত সহসভাপতি। সবমিলিয়ে দেশের ফুটবল অঙ্গনের গ্রহণযোগ্য এক ব্যক্তিত্ব তাবিথ আউয়াল। রাজনীতিতেও একই রকম অবস্থানে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। দেশের ফুটবলের পাশাপাশি রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সামাজিক উন্নয়ন-অগ্রগতিতেও সমান অবদান রাখতে চান এফবিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুর সন্তান তাবিথ।

আপনার রাজনীতিতে আসার ঘটনা ছিল অন্য রকম, সরাসরি মেয়র পদপ্রার্থী হওয়ার মধ্য দিয়ে। এটা নিশ্চয় আপনার জন্য বিরাট ব্যাপার।

অবশ্যই, এটা আমার জন্য বিরাট ব্যাপার। বড় সুযোগ। এজন্য আমি আমার দলের কাছে কৃতজ্ঞ। তবে আমি সেটা মনে করি না যে, আমি হঠাৎ করে রাজনীতিতে এসেছি। সবারই তো একটা সময় বা সুযোগ আসে। আমারও সুযোগ এসেছিল। সে সময় একটা রাজনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছিল। মিন্টু সাহেবের প্রতিনিধি হিসেবে হোক, আর নতুন প্রজন্মের মুখ হিসেবে হোক, আমি আসলে যোগ দিয়েছিলাম মানুষের কল্যাণে। কারণ মানুষের কল্যাণে কাজ করার প্রচ- ইচ্ছা আমার বাবার মধ্যে দেখেছি। উত্তরাধিকার সূত্রে সেটা আমিও পেয়েছি। রাজনীতিতে আসার আগেও মানুষের জন্য কাজ করেছি। এখনো করছি। আমি মনে করি, সবাই যে যার জায়গা থেকে মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পারে। তবে রাজনীতিবিদদের জন্য এই সুযোগটা বেশি। এখান থেকে অনেক ভালো কাজ করার সুযোগ আছে।

 

কম বয়সেই বিএনপরি মতো বড় একটি দলের মনোনয়ন পাবেন, নিশ্চয়ই আশা করেননি।
উত্তর দেওয়াটা মুশকিল। তবে কনফিডেন্স ছিল। দেশের কল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব অবশ্যই পালন করতে চাই। সফল হওয়ার ব্যাপারে নিজের ওপর আস্থা ছিল এবং আছে। এখন অনেকে বলে, তাবিথের বয়স কম। কিন্তু পৃথিবী বা এমনকি বাংলাদেশের দিকে তাকালেও দেখা যাবে আমার বয়সি অনেকই এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছে। বাংলাদেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করার যে অভিজ্ঞতা আমার আছে, সেই অভিজ্ঞতার আলোকে আমি মনে করি যথাযথ সময়ে আমি সুযোগ পেয়েছিলাম।

নির্বাচনে আপনি তো বরাবরই আশাবাদী ছিলেন। ভোট গ্রহণের মাঝপথে আপনার দল নির্বাচন বর্জন করে বসল। সিদ্ধান্ত কতটা ঠিক ছিল? ওই নির্বাচন নিয়ে আপনি কতটা আশাহত?
আমি মোটেও ব্যথিত কিংবা আশাহত নই। কারণ আমি নেত্রীর যে সাপোর্ট পেয়েছি বা যে ভোট পেয়েছি তা পুরোপুরি দলের অবদান বলে আমি মনে করি। মানুষ কিন্তু জাতীয়তাবাদকে ভোট দিয়েছিল। আমি ছিলাম সিম্বল। মানুষের ভালোবাসায় আমি বিমোহিত হয়েছি। আমাকে যারা ভোট দিয়েছেন, তাদের ধন্যবাদ। আমি এবং আমার দল গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। আমাদের এখনো সম্ভাবনা আছে। ক্ষমতায় যারা আছেন তারা যদি একটু উদার হন তাহলে গণতন্ত্রের মাধ্যমে দেশ নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। আর সেটা অবশ্যই ভালো ফলাফল হবে। সিটি নির্বাচনে ক্যাম্পেইনে যে আমরা বিপ্লব ঘটাতে পেরেছি, তা ছিল অসাধারণ। সত্যি কথা হলো, ও রকম বিপ্লবী প্রচার তো আমরা কখনো দেখিনি। যেমন টিভিতে ডিবেট করা, গণমাধ্যমের কল্যাণে জবাবদিহিতা আনা, এত গণসংযোগ করা। নির্বাচনের দিনটা বাদ দিলে অন্য সব কিছু দারুণ ছিল।

আপনি কি মনে করেন বিএনপি যদি ভোট বর্জন না করত জয়ী হতে পারতেন? এ নিয়ে কোনো আফসোস আছে?
আমি নিশ্চিত যে, আমরা বিজয়ী হয়েছি। ভোট যদি পুনর্গণনা করা হয় আমরাই এগিয়ে থাকব। আপনার কাছ থেকে একটা জিনিস যদি কেড়ে নেওয়া হয় তাহলে আফসোস, দুঃখবোধ তো থাকবেই।

ভোটে নয়ছয় হয়েছে বলতে চাচ্ছেন?
আমি বলতে চাচ্ছি, যত ভোট কাস্ট হয়েছে আর যেটা ডিক্লেয়ার হয়েছে, তার মধ্যে বড় একটা বৈষম্য আছে। এটা গণতন্ত্রের জন্য হতাশার। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তো আমরা আসছি। আমি মনে করি যে, ইলেকশন কমিশন থেকে আসলেই একটা অন্যায় করা হয়েছে।

বিএনপিতে আপনার বাবা ভাইস চেয়ারম্যান। আপনি এবার কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য হলেন। দলের জন্য কী কী করছেন?
আমরা আগে যা করেছি এখনো তাই করছি। দল, জনগণ ও দেশের জন্য যে দায়িত্বগুলো পালন করা দরকার আমরা সেগুলোই করে যাচ্ছি। নতুন নতুন মাত্রা যোগ করার চেষ্টাও করছি। দলের লক্ষ্য হলো, সাধারণ জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া, আইনের শাসনটা আবার বহাল করা। এই দুটি ইস্যু নিয়েই আমরা এখন কাজ করছি।

গণতন্ত্র চর্চার পরিবেশ কতটা কঠিন বলে মনে করেন?
পার্টির ভেতরের কথা যদি বলা হয়, সেখানে সংলাপ হচ্ছে, আগামীর কর্মসূচি নিয়ে কথা হচ্ছে। আপনারা জানেন সরকারি দল নিরন্তর চাপ সৃষ্টি করে যাচ্ছে আমাদের ওপর। সেটার বিপরীতে আমাদের দাঁড়াতে হচ্ছে। একটা কঠিন পরিবেশের মধ্য দিয়ে আমাদের এগোতে হচ্ছে। তবে আমরা গণতন্ত্রের জন্য কাজ করে যেতে চাই। দেশের জন্য কাজ করে যেতে চাই।

কাজ করতে গিয়ে কী ধরনের ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে আপনাকে?
আমি কোনোটাকে কোনো ঝামেলা হিসেবে দেখছি না। একটা উদ্দেশ্য, একটা আদর্শ থাকলে এগুলোকে বাস্তবায়ন করার জন্য কিছু না কিছু বিরোধিতা তো থাকবেই। ত্যাগ তো স্বীকার করতে হবেই। আমরা সেটাই করছি। জীবনটা আসলে খুব সহজ নয়। তাই আমি এগুলোকে ঝামেলা মনে করি না। আর সহজ হলে যে কেউ অনেক কিছু করে ফেলতে পারত বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে। আর কিছু বিষয় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে, তবে এগুলোকে আমরা ইনশা আল্লাহ ওভারকাম করতে পারব।

বিএনপি এখন কোন টার্গেট নিয়ে এগোচ্ছে?
কোনো নির্দিষ্ট টার্গেটের কথা বললে ভুল হবে। কারণ বিএনপি একটা বড় দল। জনগণের দল। বিএনপি জাতীয়তাবাদী আদর্শের দল। যেটা দেশের জন্য খুবই জরুরি। বাংলাদেশের সম্মান, মানুষের অধিকার, ভোটের অধিকার যেন ক্ষুণœ না হয়, সে জন্য দল কাজ করে যাচ্ছে। এগুলো রক্ষার্থে প্রয়োজনে আমাদের কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে।

দেশে জঙ্গিবাদ নিয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কী? আপনার দলের অবস্থান কী?
ব্যক্তিগতভাবে জঙ্গিবাদকে আমি ঘৃণা করি। বিএনপি একটি স্মার্ট ও আধুনিক দল। আমার দলও এটাকে ঘৃণা করে। জঙ্গিবাদ কারো কাম্য নয়। এটা দেশের জন্য ভয়ংকর। আমার ব্যক্তিগত মত হলো, জঙ্গিবাদের উত্থান হওয়ার কারণ রাজনৈতিক আদর্শ থেকে বিচ্যুত হওয়া। আমরা যদি একটা রাজনৈতিক সংলাপে আসতে পারি তাহলে অটোমেটিক জঙ্গিবাদের উত্থান কমে যাবে। আর আপনারা জানেন জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে একটা জাতীয় ঐক্য করতে আমাদের দল থেকে আগেই আহ্বান করা হয়েছে।

নির্বাচনের সময় ঢাকা উত্তরের প্রার্থীদের অনেকবারই একসঙ্গে দেখা গেছে। নির্বাচনের পরে কী অবস্থা? মেয়রের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ আছে? কোনো ব্যাপারে কি আপনার মতামত চাওয়া হয়েছে?
আমরা নির্বাচনের আগে যেমন ছিলাম এখনো তেমনই আছি। হয়ত টিভিতে কম দেখা যাচ্ছে। এর কারণ, আমরা তো আর এখন ক্যাম্পেইন করছি না।

মেয়র হিসেবে আনিসুল হককে কত নম্বর দেবেন? তিনি কতটা সফল?
আনিসুল হক সাহেব কতটা সফল, এটা জনগণ বিচার করবে। আমি বলব না। এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে চাই না। কারো সমালোচনা আমি পছন্দ করি না।

আধুনিক ঢাকার নাগরিকসেবা নিয়ে আপনার পরামর্শ।
ঢাকার নাগরিকরা কী চায় সেটা আগে বুঝতে হবে। আর সেটা বুঝে ওই সেবাটা আগে দিতে হবে। আমরা অনেককে বলতে শুনি এটা করা উচিত, ওটা করা উচিত। আমি মনে করি সাধারণ নাগরিকদের থেকেই শোনা উচিত তারা আসলে কী চাচ্ছে। আমরা অবকাঠামো, পয়ঃনিষ্কাশন, পরিবেশ নিয়ে কথা বলতে পারি। এসব ব্যাপারে নাগরিকদের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ পিতাকে কতটা অনুসরণ করেন আপনি?
প্রায়ই অনুসরণ করি। তাঁর ব্যবসায়িক একটা স্বপ্ন ছিল। সেই স্বপ্নটা এগিয়ে নিতে কাজ করছি। ঢাকার সিটি নিয়েও তার স্বপ্ন ছিল। কাজ করার সুযোগ পাইনি। ভবিষ্যতে দায়িত্ব পেলে ঢাকা সিটি নিয়ে বাবার স্বপ্নগুলো বাস্তবায়ন করব। আমি চেষ্টা করছি বাবার আদর্শ জিইয়ে রেখে তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার।

পিতার কোন গুণটা আপনাকে সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ করে?
সাধারণ মানুষের সঙ্গে মেলামেশা। বাবার এ গুণটা আমাকে খুব মুগ্ধ করে। আমিও চেষ্টা করি সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে যাওয়ার। তাদের সুখ-দুঃখের ভাগিদার হওয়ার।

আপনার বাবার বর্ণাঢ্য জীবন। আপনার জীবনে তার কতটা প্রভাব আছে?
এর উত্তরটা এককথায় দেওয়া যাবে না। তাঁর জীবন তো সাধারণের জীবন থেকে অনেক সাকসেসফুল হওয়ার গল্প। দেশের প্রত্যন্ত একটা গ্রামে জন্ম নিয়ে আমেরিকায় পড়াশোনা করে আবার বাংলাদেশে ফিরে আসেন ব্যবসায়ী হিসেবে। তার সঙ্গে অন্যদের তুলনা করলে তাকে ছোট করা হবে। বাবা খুবই বড় মানুষ। বড় মনের মানুষ।

আপনার বাবা একজন ভালো লেখকও। তাঁর একটা বই ‘সন্তানের জন্য পিতার কথামালা’। আপনার জীবনে ওই বইয়ের প্রভাব কতটা?
বইটা আমাকে কেন্দ্র করেই লেখা। আমি যখন যুক্তরাষ্ট্রে লেখাপড়া করতাম তখন আমার আর বাবার মধ্যে যে চিঠি চালাচালি হতো বইটা এসব নিয়েই। মানে আমাদের জীবনের চার বছরের রিয়েল লাইফ এখানে তুলে ধরা হয়েছে। বইয়ের পুরোটা প্রভাবই পড়েছে আমার ওপর।

রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী হিসেবে আপনি এখন পরিচিত মুখ। কিন্তু ফুটবল অঙ্গনের মানুষজন আপনাকে আরো আগে থেকেই চেনেন। ফুটবলে কিভাবে যুক্ত হলেন?
ছোটবেলা থেকেই ফুটবলের প্রতি খুব ভালোবাসা ছিল। অমি ভালো ফুটবলও খেলতাম। বলতে পারেন ফুটবল প্রতিভা আমার বেশ ভালো ছিল। বিভিন্ন ক্লাব থেকে আমার ডাক পড়ত। খেলতাম। নামও কুড়িয়েছিলাম। বড় ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন ছিল। নানা কারণে সেটা হয়ে ওঠেনি। বিদেশে লেখাপড়া, ব্যবসা দেখাশোনায় ব্যস্ত হয়ে পড়ি। তবে ফুটবলের প্রতি আমার ভালোবাসা কমেনি। সেই ভালোবাসা থেকেই ফুটবলের সঙ্গে রয়ে যাওয়া বলতে পারেন।

আপনি টানা দুইবারের বাফুফের নির্বাচিত সহসভাপতি। এবারের নির্বাচন আপনার জন্য কতটা কঠিন বা চ্যালেঞ্জিং ছিল?
জীবনে যত ইলেকশনই করেছি আমি মনে করি, প্রতিটিই কঠিন ছিল। সবাই বলছে বাফুফের এবারের নির্বাচন অনেক টাফ হয়েছে। হ্যাঁ, কথাটি কিছুটা সত্যি। এবার অনেক হিসাব-নিকাশের ব্যাপার ছিল।

প্রথম দিকে তো আপনি সালাউদ্দিনের প্যানেলে ছিলেন। কিন্তু পরে আপনাকে নির্বাচন করতে হয়েছে প্যানেল ছাড়া।
এর আগের টার্ম আর এ টার্মই বলেন, আমি কখনোই কারো প্যানেলে ছিলাম না। আমি কোনো প্যানেলে যোগদানও করিনি, আমাকে কোনো প্যানেল থেকে বাদও দেওয়া হয়নি। নিজেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি স্বতন্ত্র ইলেকশন করব। কারণ এসব প্যানেল ট্যানেলে আমি বিশ্বাস করি না। তাই এ ব্যাপারটা নিয়ে আমার কোনো ইমোশন কাজ করে না। আমার কথা হলো, যার ইচ্ছা সে ইলেকশন করবে। আর যারা ভোটার তারা বিবেচনা করবে কে যোগ্য আর কে অযোগ্য। ভোটাররাই নির্ধারণ করবে, তারা কাকে ভোট দেবে আর কাকে দেবে না।

প্যানেলের বাইরে থেকে ইলেকশন করা আসলে কতটা কঠিন বলে আপনি মনে করেন?
সেটা তো আমি বললামই। আমি প্যানেল ট্যানেল বুঝি না। প্যানেলে ইলেকশন করলে সহজ, আর প্যানেল ছাড়া করলে তা কঠিন, ব্যাপারটা বোধ করি ঠিক নয়। আমি মনে করি, যোগ্য প্রার্র্থী হলে তার কোনো সমস্যা হয়। সে যদি ভোটারদের বোঝাতে পারে তাহলে সব কিছু সহজ হয়ে যায়। হ্যাঁ, ভোটারদের সচেতন হওয়া জরুরি। আমি তো মনে করি, প্যানেলে ইলেকশন করার চেয়ে নিজে নিজে করাই ভালো। এটা পলিটিক্যাল ইলেকশন না যে, কোনো একটা সিম্বল ব্যবহার হবে।

দুটি ইলেকশনের মধ্যে কোনটাকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় আপনার কাছে?
দ্বিতীয় ইলেকশনে জয়লাভ করাটাই আমার জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমি প্রথম চার বছর যে কাজ করেছি সেটার ফলাফলেই ভোটাররা আমাকে দ্বিতীয়বার চান্স দিয়েছে। এতে বোঝা যায়, প্রথম চার বছর সফল ছিলাম।

সালাউদিন না হয়ে পোটন (কামরুল আশরাফ খান এমপি) নির্বাচিত হলে ফুটবলের জন্য কতটা স্বস্তির হতো বলে মনে করেন?
আমরা যেটা না হয় সেটা নিয়েই অনেক জল্পনা করতে পারি। এটা নিয়ে কথা না বলে যেটা হয়েছে সেটা নিয়েই বাস্তবের কথা বলি। এটাই মঙ্গল। অযথা বিতর্ক তুলে লাভ নেই। সালাউদ্দিন সাহেব হয়েছে। ভালো। উনি বড় মাপের মানুষ। গ্রেট ফুটবলার ছিলেন। এটা ফুটবলের জন্য অবশ্যই ভালো।

সংগঠক হিসেবে সালাউদ্দিনকে কত মার্ক দেবেন?
একশতে একশ মার্ক দিতে চাই। কাজী সালাউদ্দিনকে যেমন মাঠে দরকার ছিল, তেমনি তাকে মাঠের বাইরেও দরকার। উনি খুবই উপযুক্ত ব্যক্তি। ফুটবলের জন্য তিনি অনেক কিছু করছেন।

সালাউদ্দিন সাহেব আপনাকে কতটা মূল্যায়ন করেন?
সেটা আমি কী করে বলব? এটা তো উনিই ভালো বলতে পারবেন। উনি জানেন, আমি মূল্যায়নের যোগ্য কি না।

মানে সহসভাপতি হিসেবে আপনাকে যতটা মূল্যায়ন করা উচিত সেটা কি তিনি করছেন বলে মনে করেন?
আসলে আমার মানসিকতা ভিন্ন। আমি এ নিয়ে চিন্তা করি না। সত্যি কথা বলতে কি, আমি সহসভাপতি কি না সেটা নিয়েই মাথা ঘামাই না। আমি মনে করি, ফুটবলে অবদান রাখার অনেক যোগ্যতা আমার আছে। তবে আমার থেকে ফুটবল ফেডারেশন তা পুরোপুরি নিতে পারছে না। আশা করি আগামী চার বছরে আমার থেকে অনেক কিছু নিতে পারবে ফুটবল।

ফুটবল ঘিরে আপনার পরিকল্পনা কী? কী ধরনের অবদান রাখতে চান?
২০২২ সালে কাতার বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে খেলার ভিশনটাই আমাদের সামনে আছে। আমরা সেটা নিয়ে কাজ করেছি। এখনো করছি। এই ভিশনে আমি এখনো একমত আছি। আমার মূল অবদান হবে যেকোনো প্ল্যান বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করা। সেটা আর্থিক হোক, সাংগঠনিক হোক। আমি সব ধরনের সহযোগিতা করার জন্যই প্রস্তুত।

কোন পরিচয়টা আপনার ভালো লাগে ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ নাকি ফুটবল সংগঠক?
সবচেয়ে বড় খুশির ব্যাপার হলো, আমি বাংলাদেশি নাগরিক। এর ওপরে আর ভালো লাগা নেই।

ফুটবল শুধু নিচের দিকে যাচ্ছে। ফুটবলের সার্বিক অবস্থা আপনি কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?
সত্যি কথা হলো, আমাদের খেলার মান অনেকটাই নেমে গেছে। ভালো মানের খেলোয়াড়ও পাওয়া যাচ্ছে না। কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে আমাদের। এই অবস্থা থেকে যেমন করেই হোক ফুটবলকে উন্নত করতে হবে। আন্তর্জাতিক মহলের সঙ্গে সামঞ্জস্যতা আনতে হবে। দেশের গণমাধ্যম ফুটবলকে নিয়ে অনেক চিন্তা করে, সাধারণ মানুষও ফুটবলকে ভালোবাসে। এটাকে আমি খুব ইতিবাচক দেখি। পুরো দেশ চাচ্ছে এই খেলাটির সঙ্গে থাকতে। এটা সত্যি যে, রেজাল্ট হচ্ছে না। আর রেজাল্ট না হলে তো সমস্যাই। সাকসেস দেখলে মানুষ উৎসাহ পায়। আর ব্যর্থ হলে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নেয়। তবে ফুটবল থেকে এখনো মানুষ মুখ ফিরিয়ে নেয়নি। এখনো মাঠে প্রচুর দর্শক আসছে। কথা হলো, আমাদের ভালো মানের খেলা উপহার দিতে হবে। আর এটার জন্যই কাজ করে যাচ্ছি।

সালাউদ্দিন সাহেব ফুটবলের অধঃপতনের জন্য ক্লাবকে দায়ী করেছেন। একজন ক্লাব কর্ণধার হিসেবে কি এ কথার সঙ্গে আপনি একমত?
ক্লাবের আগে আমি ফুটবল ফেডারেশনের একজন সহসভাপতি। আর সালাউদ্দিন সাহেব সভাপতি। উনি যদি কোনো মন্তব্য করেন আমি তার সঙ্গে সংগত কারণেই একমত।

 

ফুটবলে পুরুষরা পেছালেও এগিয়ে যাচ্ছে নারীরা। দুই উন্নতির সমন্বয় হচ্ছে না কেন?
আসলে ভিন্নতা না করলেই ভালো। আমাদের কথা হলো, ফুটবল এগিয়ে নেওয়া। সেটা নারী অথবা পুরুষের মাধ্যমেই হোক। আমাদেরও দোষ আছে যে, আমরা অনেক তথ্য ফ্লাশ করতে পারি না। গত বছর আমাদের অনূর্ধ্ব-১৬ দলটা সাফ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। এবারও অনূর্ধ্ব-১৬ দলটা এশিয়া কাপ বাছাইয়ের গ্রুপ পর্বে কোয়ালিফাই করছে। একটা বিষয় হলো, পুরুষ ফুটবলটা ২০৯ দেশ খেলে। এখানে খুবই প্রতিযোগিতা। সব দেশই চায় প্রতিযোগিতা করে একটা পর্যায়ে যেতে। মহিলা ফুটবল কিন্তু সব দেশ খেলে না। তাই এখানে কম্পিটিশনটা একটু কম। পুরুষ ফুটবলে ডমিনেট করে সাউথ আমেরিকা বা ইউরোপ। আর মহিলা ফুটবলে ডমিনেট করে এশিয়া অথবা উত্তর আমেরিকা। আমরা এশিয়া হওয়াতে নারী ফুটবলটা একটু স্ট্রং।

বিগত সময়ে জাতীয় দলের কোচ সিলেকশনে আপনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। কিন্তু কোনো কোচই দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছেন না কেন?
যতক্ষণ না কোনো কোচ আমাদের রেজাল্ট এনে দিতে পারছেন না, ততক্ষণ পর্যন্ত কারো স্থায়ী ঠিকানা হতে পারে না। এটা হলো মূল কথা। অযথা কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা খরচ করে তো লাভ নেই।

কিন্তু ভালো ফলের জন্য তো তাদের সময় দেওয়া দরকার। সেই সময় কি কোচদের দেওয়া হচ্ছে?
এসব কথা আমরা চুক্তির আগে কখনো শুনি না। শুনি পরে অথবা সাফল্য অর্জন না করতে পারলে। বিদেশি প্রশিক্ষকদের একটা সুবিধা হলো ওনাদের চুক্তি শেষ হয়ে গেলেই সব শেষ। তারা তখন অন্য জায়গায় চলে যেতে পারে। কিন্তু আমরা যারা দায়িত্বশীল জায়গায় আছি, তাদের কিন্তু জনগণের সামনে জবাবদিহি করতে হয়। আমাদের আশা থাকে দল ও কোচদের নিয়ে। কোচরা প্রথমে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দায়িত্ব নেয়। কিন্তু পরে ভালো না করতে পারলে আমাদের বিকল্প চিন্তা না করে উপায় থাকে না।

ফুটবলে আদৌ কি উন্নতি হবে অথবা সম্ভব? কী মনে হয় আপনার?
উন্নতি তো হচ্ছে। মেয়েরা আজ কোথায় গেছে চিন্তা করুন। ছেলেরাও ভালো করছে। হ্যাঁ, জাতীয় দল ভালো করছে না। তার জন্য সময় দরকার।

ফিফা র‌্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ১৮৫। ১৭ কোটি মানুষের দেশের জন্য এটা কি লজ্জার নয়?
ফিফা র‌্যাংকিং সব সময় প্রকৃত মান নির্দেশ নাও করতে পারে। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে র‌্যাংকিং ছিল ১৪৮। তখন কিন্তু কেউ বলেনি যে, বাহ, র‌্যাংকিং অনেক তো ওপরে। গত বছর এ সময় এশিয়াতে আমাদের র‌্যাংকিং ছিল ২২। র‌্যাংকিং ওঠে-নামে আপনি কয়টা ম্যাচ খেলছেন, হেরেছেন, জিতেছেন এসবের ওপর ভিত্তি করে। অতি নিম্নমানের দলের সঙ্গে প্রীতি ম্যাচ খেলে জিতলে র‌্যাংকিং আপনাআপনি বেড়ে যাবে। র‌্যাংকিং দিয়ে প্রকৃত পরিস্থিতি বিবেচনা করা যাবে না। তাছাড়া আমাদের যেটা হয়েছে তা হলো, সালাউদ্দিন সাহেবের মতো স্ট্রাইকার নেই। কায়সার হামিদের মতো স্টপার খুঁজে পাচ্ছি না। কাননদের মতো গোলকিপার নেই। সমস্যা হলো, এ মুহূর্তে টেকনিক্যালি সাউন্ড একঝাঁক প্লেয়ার নেই। এই অবস্থায় র‌্যাংকিং যদি অনেক বেড়েও যায়, তাতে কিন্তু আমি খুশি হব না। তাই গণ্যমাধ্যমের ভাইবোনদের আহ্বান জানাচ্ছি, তারা যেন র‌্যাংকিংয়ের সঙ্গে তুলনা করে দেশের বর্তমান অবস্থাকে ঘোলাটে না করে ফেলেন।

ফুটবল নিয়ে আপনার লক্ষ্য কী?
ফুটবল নিয়ে আমার লক্ষ্য হলো, ফুটবল বাংলাদেশে একটা ইন্ডাস্ট্রি হিসেবে দাঁড় করানো। এখানে যেন একটা পজিটিভলি বাণিজ্যিক ধারা চলে আসে। বর্তমানে পৃথিবীর অষ্টম অর্থনীতি হলো ফুটবল। সেই অর্থনীতির সঙ্গে বাংলাদেশ এখনো যোগদান করতে পারছে না। পাকিস্তানের মতো দেশ, তাদের কিন্তু খেলোয়াড় অত ভালো নেই। কিন্তু ফিফার ফুটবল কিন্তু তাদের দেশে বানানো হয়। বাংলাদেশে এত বড় গার্মেন্টশিল্প তারপরও ফুটবলের গেঞ্জির অর্ডার আমরা খুব কমই পেয়েছি। আমরা স্বপ্ন দেখি একদিন ফুটবলের অর্থনীতিতে বাংলাদেশ যোগদান করবে।