ঢাকা , শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দক্ষতা বৃদ্ধি ছাড়া টিকে থাকা কঠিন

বাঙালী কন্ঠ ডেস্কঃ বিশ্বায়নের এই যুগে প্রতিটি ক্ষেত্রেই চলছে প্রচন্ড প্রতিযোগিতা। এতে যে জয়ী হতে পারছে, সে কামিয়াব হচ্ছে। যে হেরে যাচ্ছে সে তলিয়ে যাচ্ছে অতল গহ্বরে! বিশ্বে শেষের ভাগই বেশি। তবুও বিশ্বায়ন চলছে অপ্রতিদ্ব›দ্বীভাবে। এই অবস্থা চলতেই থাকবে,যতদিন বিকল্প সার্বিক কল্যাণকর ব্যবস্থা কার্যকর না হয়।  বিশ্বায়ন মোকাবেলা করতে পারছিনা না আমরা । তাই ২-৩ দশকের মধ্যেই দেশের বেশিরভাগ কল-কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। যৎসামান্য চালু আছে। তাও লোকসানের ভারে ন্যুজ্ব! ফলে দেশের বেশিরভাগ পণ্যের বাজার দখল করেছে বিদেশি। বিশেষ করে ভারত ও চীন। একই অবস্থা হতে চলেছে দেশের রফতানির প্রাণ ভোমরা গার্মেন্টে। কারখানার পরিবেশ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা যাচাইয়ের কারণে ইতোমধ্যেই অর্ধেকের বেশি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। চালুগুলোও প্রতিদ্ব›দ্বী দেশগুলোর চ্যালেঞ্জে পড়েছে। তাই যে কোনো মুহূর্তে বিশ্বে রফতানির দ্বিতীয় স্থান খোয়া যেতে পারে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ‘ওয়ার্ল্ড ট্রেড স্ট্যাটিসটিকস রিভিউ ২০১৯’ মতে, ২০১৮ সালে পোশাক রপ্তানির বৈশ্বিক বাজারের হিস্যা- চীনের ৩১.৩%, বাংলাদেশের ৬.৪% ও ভিয়েতনামের ৬.২%। অথচ ২০১৭ সালে বাংলাদেশের হিস্যা ছিল ৬.৫% আর ভিয়েতনামের ৫.৯%। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে বাংলাদেশের কমেছে আর ভিয়েতনামের বেড়েছে। এ ব্যাপারে সিপিডি’র গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বাংলাদেশে কারখানার কর্ম পরিবেশ উন্নয়নে অনেক কাজ হলেও বহুমুখী পণ্য উৎপাদনের ক্ষমতায় ও প্রযুক্তিতে উন্নয়ন হয়নি। এই জায়গায় দ্রুত উন্নতি করতে হবে। না হলে অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে অনেক পেছনে ফেলে এগিয়ে যাবে ভিয়েতনাম। ইতোমধ্যেই তা হয়েছেও। চলতি বছরে গার্মেন্টে ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ার প্রবৃদ্ধি আমাদের চেয়ে বেশি হয়েছে। এই হচ্ছে সাধারণ পোশাক রফতানির অবস্থা। হাই কোয়ালিটির তথা স্যুট, বেøজার, অন্তর্বাস, সাঁতারের পোশাক ইত্যাদি রফতানিতে বাংলাদেশের অবস্থা সামান্য। অথচ বিশ্বব্যাপী এর চাহিদা ও লাভ বেশি। অন্যদিকে, বর্তমানে দেশে যেসব মোবাইল কোম্পানি আছে,তার সবটির মালিকানা ছিল এ দেশের। কিন্তু তা বিদেশীদের কাছে যেতে যেতে এখন শুধুমাত্র টিকে আছে টেলিটক। তারও অবস্থা খুবই নড়বড়ে। সরকার সহায়তার হাত গুটিয়ে নিলে ধপ করে প্রাণ প্রদীপ নিভে যাবে (ল্যান্ড ফোনের অবস্থাও তথৈবচ)। অথচ এই মোবাইল কোম্পানিগুলোই সফলভাবে পরিচালনা করে ব্যাপক লাভ করছে। সরকারকে কর দিয়েও হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে যাচ্ছে দেশে। পত্রিকার খবর মতে,গ্রামীণ ফোন গত জানুয়ারি হতে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সরকারকে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা কর দিয়েও প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা লাভ করেছে। কম-বেশি অন্য মোবাইল কোম্পানিগুলোও তাই। তাহলে এই কোম্পানিগুলো দেশীয় মালিকরা চালাতে পারলো কেন? না পারার কারণ, প্রতিষ্ঠান চালানোর অদক্ষতা। আর দক্ষতা হবেই বা কিভাবে? পানের দোকানদার যদি ইলেকট্রিকের দোকান খোলে, তাহলে কি সে সফল হবে? মোটেও না। পরিবহন খাতের অবস্থাও কাহিল। জল, স্থল ও আকাশ পথের যানবাহনের বেশিরভাগই আনফিট। চালকের অবস্থাও তাই। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী গত ২৮ অক্টোবর বলেন, যেসব গাড়ি সড়কে চলাচল করে তার বেশির ভাগেরই ফিটনেস নেই। অভিযান শুরু করলে এর এক-তৃতীয়াংশই চলাচল করতে পারবে না। এর আগে দু’টি গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন মতে, দেশের বেশিরভাগ চালকের লাইসেন্স নেই। যাদের লাইসেন্স আছে, তাদেরও অর্ধেকের বেশি চালকের চোখে বিভিন্ন সমস্যা আছে। এসব নানা কারণে দেশে দুর্ঘটনার হার বিশ্বের মধ্যে সর্বাধিক। সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতে দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে বাংলাদেশ,গড়ে তিনগুণ বেশি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৮ সালের সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ক বৈশ্বিক প্রতিবেদন মতে, বাংলাদেশে বছরে ২৪ হাজারের বেশি মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে।কম-বেশি একই অবস্থা জল,আকাশ ও রেলের ক্ষেত্রেও। এই অবস্থায় দেশে পরিবহন ব্যবসা শুরু করেছে বিদেশীরা। আধুনিক যানবাহন, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও শিক্ষিত চালক, ভাড়াও কম। সর্বোপরি কল করার কয়েক মিনিটের মধ্যেই হাজির হয়ে যায় এসি গাড়ী। ম্যাপ দেখে পৌঁছে দেয় নির্দিষ্ট স্থানে। দুর্ঘটনাও খুব কম। সুদূর আমেরিকার মালিক ভারত থেকে নিয়ন্ত্রণ করছে যানবাহনগুলো। চালক সামান্য অপরাধ করলে কমপ্লেন দেওয়ার সাথে সাথেই শাস্তি নির্ঘাত। তাই চালকরা সহজে কোনো অপরাধ করে না। ব্যবহারও খুব ভাল। তাই ক্রমশ: জনপ্রিয় হয়ে উঠছে উবার, অ্যাপস ভিত্তিক বাইসাইকেল জো-বাইক ইত্যাদি। অনেকের মতে, কয়েক বছরের মধ্যেই পরিবহন খাতের গোটা বাজার বিদেশিদের নিয়ন্ত্রণে চলে যেতে পারে। বর্তমান সরকারের সময়ে প্রকাশিত মিডিয়ার সংখ্যা সর্বকালের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। কিন্তু এসব যত দ্রæত স¤প্রসারিত হয়েছে, তার চেয়ে বেশি গতিতে বন্ধ হয়েছে। যেগুলো চালু আছে,সেগুলোও চরম আর্থিক সংকটে পড়ে সাংবাদিক ছাটাই চলছে। তাই এগুলোরও আয়ুষ্কাল বেশি নয়। এর প্রধান কারণ মানহীন, পরিচালনার অদক্ষতা ও লেজুড়বৃত্তি এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও অনলাইনের ব্যাপক প্রভাব। এছাড়া,উন্নতমানের আন্তর্জাতিক মিডিয়া তো রয়েছেই। একই কারণে দেশের নাটক-সিনেমাও প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। ভালো গল্পের অভাবে নতুন নাটক ও সিনেমা তেমন তৈরি হচ্ছে না। পুরাতন নাটক-সিনেমাই চালানো হচ্ছে। মানুষ বিদেশমুখী হয়ে পড়েছে খবর ও বিনোদনের জন্য।

দেশের শিক্ষার অবস্থাও করুণ। বিদেশ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি গ্রহণ করা ভারতীয় নাগরিকদের দেশে প্র্যাকটিসের লাইসেন্স পেতে ফরেন মেডিকেল গ্র্যাজুয়েট এক্সামিনেশনে পাস করার শর্ত রয়েছে। যার পরীক্ষা হয় জাতীয় পরীক্ষা বোর্ডের অধীনে। বোর্ডের সর্বশেষ প্রতিবেদন মতে, এফএমজিই টেস্টে অংশ নেয়া পরীক্ষার্থীদের উল্লেখযোগ্য একটি অংশই বাংলাদেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ থেকে পাস করা এবং এদের ৭২% এ পরীক্ষায় ফেল করেছে। একই অবস্থা হতে পারে ইঞ্জিনিয়ারিং, টেক্সটাইল, কৃষিসহ সব শিক্ষার্থীরই! তাও ভারতে। কিন্তু ইউরোপ-আমেরিকায় পরীক্ষা হলে রেজাল্ট ভারতের চেয়েও খারাপ হবে! আর হবেই না কেন? দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোই তো আন্তর্জাতিক মানের নয়। যুক্তরাজ্যের এডুকেশন হায়ারের রিপোর্ট-২০১৯ মতে, বিশ্বের সেরা এক হাজার বিশ্ব বিদ্যালয়ের মধ্যে বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় স্থান পায়নি। এই হচ্ছে সেকেলে শিক্ষা ব্যবস্থার চিত্র। কর্মমুখী শিক্ষার অবস্থা আরও করুণ। সারা বিশ্বে কারিগরি শিক্ষার হার ৬০-৭০%,আর বাংলাদেশে তা ৮%। তারও মান নিম্ন। আর আইটি, রোবট, অটোমেশন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ইত্যাদি সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার দেশে নেই বললেই চলে। এভাবে যাচাই করলে দেখা যাবে, দেশের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রের দক্ষতা আন্তর্জাতিক মানদন্ডে অতি নিম্ন। কয়েকটি উদাহরণ দিলেই বিষয়টি প্রমাণিত হবে।

গত ৩০ অক্টোবর প্রকাশিত ইউনিসেফ ও গ্লোবাল বিজনেস কোয়ালিশন ফর অ্যাডুকেশনের প্রতিবেদন মতে, বর্তমানে তরুণদের দক্ষতার হার বাংলাদেশে ২৬%, ভুটানে ৪৭%, শ্রীলংকায় ৬১%, ভারতে ১৯%, পাকিস্তানে ১৮%, নেপালে ১৩%, মালদ্বীপে ১৬%। ২০৩০ সালের মধ্যে যোগ্য ও দক্ষ হবে বাংলাদেশে ৫৫%, ভুটানে ৮১%, শ্রীলংকায় ৬৮%, ভারতে ৪৭%, পাকিস্তানে ৪০%, নেপালে ৪৬%, মালদ্বীপে ৪৬%। একবিংশ শতাব্দির কাজের জন্য পরবর্তী প্রজন্মের তরুণদের যেসব বিষয়ে দক্ষতার প্রয়োজন হবে, সেসব বিষয়ে দক্ষ করে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অন্য কয়েকটি অঞ্চলের তুলনায় দক্ষিণ এশিয়া পেছনে রয়েছে। এই অবস্থায় দেশে বেকারত্ব বাড়ছে। কারো কারো মতে, দেশে বেকার যুবকের সংখ্যা ৫ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। প্রতি বছরই এ সংখ্যা বাড়ছে প্রায় ১৭ লাখ। কিন্তু কাজের ক্ষেত্র বাড়ছে না। অন্যদিকে, বিভিন্ন খাতে দক্ষ শ্রমিকের ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। শুধুমাত্র পরিবহন খাতেই ৭-৮ লাখ দক্ষ চালকের ঘাটতি রয়েছে। গত ২০ অক্টোবর অনুষ্ঠিত ‘ফরমুলেটিং দ্য ন্যাশনাল অ্যাকশন প্ল্যান ফর স্কিলস ডেভেলপমেন্ট’ শীর্ষক কর্মশালায় বিশেষজ্ঞগণ চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দক্ষতা উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই বলে জানিয়েছেন, ২০২০ সালে দেশে দক্ষ শ্রমিকের চাহিদা হবে ৭.২৪ কোটি। এর মধ্যে কৃষিতে ২৯ লাখ, নির্মাণ খাতে ৪৪.২০ লাখ ও তৈরি পোশাক খাতে ৫৯.৮০ লাখ। দেশের উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনে দক্ষতার ঘাটতি কমাতে হবে। সা¤প্রতিক সময়ে দেশের আর্থিক অবস্থা খুব খারাপের দিকে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে। এর প্রধান কারণ ব্যাংকের নাজুক অবস্থা। ব্যাংকের ইকুইটির বিপরীতে আয় (আরওই) ১০ শতাংশের বেশি হলে তাকে আদর্শ হিসেবে ধরা হয়। চলতি বছরের জুন শেষে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর গড় আরওই ৩%। আর সম্পদের বিপরীতে ০.২%। ব্যাংকিং খাতের মোট মূলধনের চেয়ে বেশি হয়েছে খেলাপি ঋণ। বিপুল এ খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রয়োজনীয় প্রভিশনও সংরক্ষণ করতে পারছে না ব্যাংকগুলো। অথচ ২০১০ সালে দেশের ব্যাংকগুলোর গড় আরওই ১৯.৯% ছিল বলে জানা গেছে। দেশের শেয়ার বাজার মরণযাত্রায় নিপতিত বহুদিন যাবত।

অবশ্য স্বাধীনতার পর দেশের প্রধান খাদ্যশস্যের উৎপাদন বেড়েছে তিন থেকে পাঁচ গুণ। ১২টি কৃষিপণ্য উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দেশের মধ্যে রয়েছে। কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, বাংলাদেশের মানুষ এখন গড়ে ২,৫১৪ কিলো ক্যালরি খাদ্য শক্তি গ্রহণ করছে। আর বিশ্বে খাদ্য শক্তি গ্রহণের গড় ২,৯৪০ কিলো ক্যালরি। শ্রীলঙ্কা, নেপাল, মালদ্বীপ ও ভুটানও বাংলাদেশের চেয়ে খাদ্যশক্তি গ্রহণে এগিয়ে আছে। এফএও’র ২০১৯ সালের পরিসংখ্যান মতে, শিল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের মানুষ প্রতিদিন যে খাবার খায়, তার মধ্যে মাছ, মাংস, ডিম ও দুধের মতো পুষ্টিকর খাবার থাকে অর্ধেক। কিন্তু এই ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে আছে। এখনো দেশের অর্ধেক গর্ভবতী নারী রক্তশূন্যতায় ভোগে। শিশুদের দুধ ও মাংস খাওয়ার পরিমাণের দিক দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বের প্রথম ১০০টি দেশের মধ্যে নেই। ফিনল্যান্ডের মানুষ প্রতিদিন ৩৬১ মিলিলিটার ও সুইডেনে ৩৫৫ মিলিলিটার দুধ খায়। সেখানে বাংলাদেশের মানুষ খায় দিনে মাত্র ৩৩.৭ মিলিলিটার। মাংস খাওয়ার দিক দিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ১৭৩টি দেশের মধ্যে ১৭২ তম। হংকংয়ের মানুষ যেখানে প্রতিদিন ৪১৯.৬ গ্রাম ও অস্ট্রেলিয়ায় ৩১৮.৫ গ্রাম করে মাংস খায়। সেখানে বাংলাদেশের মানুষ খায় ১১.২৬ গ্রাম। ‘বৈশ্বিক পাসপোর্ট সূচক-২০১৯’ মতে, বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ৯৭তম। বাংলাদেশের সাথে ৯৭তম স্থানে আছে লেবানন, লিবিয়া ও দক্ষিণ সুদান। ‘গণতান্ত্রিক বৈশ্বিক সূচক-২০১৯’ মতে, বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ৮৮তম (আগে ছিল ৯২তম), ভারত ৪১তম, শ্রীলংকা ৭১তম ও পাকিস্তান ১১২তম। যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক দ্য ওয়ার্ল্ড জাস্টিস প্রজেক্ট প্রণীত ‘আইনের শাসন সূচক-২০১৯’ মতে, বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ১১২তম (আগে ছিল ১০২তম), বাংলাদেশের উপরে নেপাল, শ্রীলংকা ও ভারত আর নীচে পাকিস্তান ও আফগানিস্তান। বাংলাদেশের অবস্থান সবচেয়ে খারাপ মৌলিক অধিকার সূচকে। রিপোটার্স উইদাউট বর্ডারস প্রণীত ‘সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা সূচক-২০১৮-১৯’ মতে, বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ১৫০তম (আগে ছিল ১৪৬তম), ভারত ১৪০, পাকিস্তান ১৪২। বাংলাদেশের উপরে শুধুমাত্র রাশিয়া আর নীচে সিঙ্গাপুর। অষ্ট্রেলিয়া ভিত্তিক ইন্সটিটিউট ফর ইকোনোমিক্স অ্যান্ড পিস প্রণীত ‘বিশ্ব শান্তি সূচক-২০১৯’ মতে, বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ১০১তম (আগে ছিল ৯৩তম),ভারত ১৪১ ও পাকিস্তান ১৫৩তম। ‘বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সূচক-২০১৯’ মতে, বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ১২১তম (আগে ছিল ১২৮তম), ভুটান ৭৪, শ্রীলংকা ১১৫ এবং বাংলাদেশের পেছনে ভারত ও পাকিস্তান। জার্মানভিত্তিক কুরিয়ার কোম্পানি ডিএইচএল প্রণীত ‘বৈশ্বিক সংযোগ সূচক-২০১৮’ মতে, বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪০তম। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম প্রণীত ‘বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা সূচক-২০১৯’ মতে, বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ১০৫ তম (আগে ছিল ১০৩তম)। মোট ১২টি সূচকের মধ্যে ১০টিতেই বাংলাদেশ পিছিয়েছে। বিশ্ব ব্যাংক প্রণীত ‘সহজে ব্যবসা করার সূচক-২০১৯’ মতে, বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ১৬৮তম (আগে ছিল ১৭৬তম)। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ শুধুমাত্র আফগানিস্তানের উপরে আছে। তবে, সবচেয়ে বেশি উন্নতি করেছে এমন ২০টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশ আছে। অনলাইন লার্নিং প্ল্যাটফর্ম কোরসেরা প্রণীত ‘বৈশ্বিক দক্ষতা সূচক-২০১৯’ মতে, বিশ্বে ৬০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ব্যবসা খাতে ৫৯তম, প্রযুক্তিতে ৫৬তম ও ডেটা সায়েন্সে ৫৭তম। ‘বৈশ্বিক ক্ষুধা ও অপুষ্টি সূচক-২০১৯’ মতে, বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ৮৮তম (আগে ছিল ১১৩তম), ভারত ১০২, পাকিস্তান ৯৪তম। ‘বৈশ্বিক শিশু অধিকার সূচক-২০১৯’ মতে, বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ১০৮তম (আগে ছিল ১১৩তম)। যুক্তরাষ্ট্রের জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট ফর উইমেন, পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি এবং নরওয়ের দ্য পিস রিসার্চ ইন্সটিটিউট অসলো যৌথভাবে প্রণীত ‘নারীর শান্তি ও নিরাপত্তা সূচক-২০১৯-২০’ মতে, বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪২তম (আগে ছিল ১২৭তম)। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত, নেপাল, শ্রীলংকা, মালদ্বীপ ও ভুটান বাংলাদেশে চেয়ে এগিয়ে। সবচেয়ে খারাপের তালিকায় বাংলাদেশসহ ৩২টি দেশ আছে। ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট প্রণীত ‘নিরাপদ শহর সূচক-২০১৯’ মতে, বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ৫৬তম। ইকোনমিষ্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট প্রণীত ‘গ্লোবাল লিভিবিলিটি ইনডেক্স-২০১৯’ মতে, বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৮তম । ঢাকার চেয়ে খারাপ অবস্থা কেবল যুদ্ধ বিধ্বস্ত সিরিয়ার দামেস্ক ও নাইজেরিয়ার লাগোসে। ফ্রিডম হাউজের ‘ফ্রিডম অন দ্য নেট’ শীর্ষক প্রতিবেদন মতে, ৬৫টি দেশের ইন্টারনেট ও ডিজিটাল মিডিয়া ব্যবহারের স্বাধীনতা মূল্যায়নে বাংলাদেশের স্কোর ৪৪ পয়েন্ট ও ‘আংশিক স্বাধীন’ ক্যাটাগরিতে স্থান পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এইচইআই ও আইএইচএমই প্রণীত ‘বৈশ্বিক বায়ু পরিস্থিতি-২০১৯’ শীর্ষক প্রতিবেদন মতে, বায়ু দূষণের কারণে বাংলাদেশে বছরে অন্তত ১.২৩ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে ২০১৭ সালে। এ ছাড়া গড় আয়ু প্রায় ১.৩ বছর কমে যাচ্ছে। স্টেট অব গ্লোবাল এয়ারের মতে, বাংলাদেশে ৯০% লোক কোনো না কোনোভাবে বায়ুদূষণের মধ্যে বসবাস করে। এয়ার ভিজ্যুয়ালের তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে বছরে প্রায় ২শ দিন ঢাকার বায়ু মারাত্মক অস্বাস্থ্যকর পর্যায়ে থাকে। বাংলাদেশের বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রে প্রতি বছর ভ্রমণ করছে প্রায় ৯০-৯৫ লাখ পর্যটক। এর মধ্যে বিদেশি পর্যটক মাত্র ২%। মূলত খাতটির অবকাঠামোগত দুর্বলতার কারণেই বিদেশি পর্যটক আকর্ষণে বিশ্বের সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা দেশগুলোর তালিকায় পড়ে গেছে বাংলাদেশ। ইউএসএআইডি স¤প্রতি ক¤িপ্রহেনসিভ প্রাইভেট সেক্টর শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এ কথা জানিয়েছে। আইএমএফ’র তথ্য অনুযায়ী, কর জিডিপির অনুপাত বাংলাদেশে ১০.২%, নেপালে ২৩.৩%, ভারতে ২০.৩%, পাকিস্তানে ১৫.২%, শ্রীলংকার ১৩.৩%, মিয়ানমারে ২২.৫% এবং গড়ে উন্নত দেশগুলোতে ৩৬.২%, উন্নয়নশীল এশিয়ার দেশগুলোতে ২৬.৭%, আশিয়ান দেশগুলোতে ১৮.৫% ও আফ্রিকার দেশগুলোতে ১৭.৮%। এ৪এআই নিম্ন ও মধ্যম আয়ের ১৩৬টি দেশের মানুষের ইন্টারনেট ক্রয় পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে এডিআই-২০১৯ প্রকাশ করেছে। উক্ত র‌্যাংকিং মতে, বাংলাদেশ ৪১তম (পয়েন্ট ৪৮.৩০)। নদী দূষণেও বাংলাদেশ বিশ্বে শীর্ষে রয়েছে। এরূপ আরও অনেক উদাহরণ আছে। কিন্তু ক্ষুদ্র পরিসরে তা উল্লেখ করা সম্ভব নয়।

দেশের সার্বিক বিষয় বিশ্লেষণ করে এটা নিশ্চিত যে, বিশ্বায়ন মোকাবেলা করার জন্য প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমাদের দক্ষতা অর্জন করতে হবে এবং তা বৈশ্বিক র‌্যাংকিংয়ের কাউন্টেবল মোট দেশের অন্তত অর্ধেকের মধ্যে অবস্থান অর্জন করতে হবে। নতুবা মধ্যম আয়ের দেশে এবং উন্নত দেশের স্বপ্ন পূরণ হওয়া তো দূরে থাক, সার্বিকভাবে টিকে থাকাই অসম্ভব হয়ে পড়বে। দেশে সার্বিক ও টেকসই উন্নতি ও ভিশনসমূহ বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে সব ধরনের দূষণ দূর, অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয় বন্ধ, গার্মেন্ট শিল্পে হাই কোয়ালিটির পোশাক তৈরি, কৃষিভিত্তিক শিল্প স্থাপন, প্রয়োজন মতো পাটের পলিব্যাগ তৈরি এবং আইটি খাতের উন্নতি, শিক্ষার মানোন্নয়ন, কারিগরি শিক্ষার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ, সুশাসন প্রতিষ্ঠা, ব্যবসা সহজীকরণ, পর্যটন, স্বাস্থ্যসেবার উন্নতি, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উন্নতি, ওষুধ শিল্পের কাঁচামাল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পন্নতা অর্জন, দুর্নীতি-অনিয়ম ও যানজট দূর ইত্যাদি ক্ষেত্রে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া আবশ্যক। এছাড়া, নতুন নতুন আবিষ্কার ও উদ্ভাবনগুলোর দিকে নজর রাখতে হবে এবং তা ব্যবহার করতে হবে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

দক্ষতা বৃদ্ধি ছাড়া টিকে থাকা কঠিন

আপডেট টাইম : ০২:৫০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০১৯

বাঙালী কন্ঠ ডেস্কঃ বিশ্বায়নের এই যুগে প্রতিটি ক্ষেত্রেই চলছে প্রচন্ড প্রতিযোগিতা। এতে যে জয়ী হতে পারছে, সে কামিয়াব হচ্ছে। যে হেরে যাচ্ছে সে তলিয়ে যাচ্ছে অতল গহ্বরে! বিশ্বে শেষের ভাগই বেশি। তবুও বিশ্বায়ন চলছে অপ্রতিদ্ব›দ্বীভাবে। এই অবস্থা চলতেই থাকবে,যতদিন বিকল্প সার্বিক কল্যাণকর ব্যবস্থা কার্যকর না হয়।  বিশ্বায়ন মোকাবেলা করতে পারছিনা না আমরা । তাই ২-৩ দশকের মধ্যেই দেশের বেশিরভাগ কল-কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। যৎসামান্য চালু আছে। তাও লোকসানের ভারে ন্যুজ্ব! ফলে দেশের বেশিরভাগ পণ্যের বাজার দখল করেছে বিদেশি। বিশেষ করে ভারত ও চীন। একই অবস্থা হতে চলেছে দেশের রফতানির প্রাণ ভোমরা গার্মেন্টে। কারখানার পরিবেশ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা যাচাইয়ের কারণে ইতোমধ্যেই অর্ধেকের বেশি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। চালুগুলোও প্রতিদ্ব›দ্বী দেশগুলোর চ্যালেঞ্জে পড়েছে। তাই যে কোনো মুহূর্তে বিশ্বে রফতানির দ্বিতীয় স্থান খোয়া যেতে পারে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ‘ওয়ার্ল্ড ট্রেড স্ট্যাটিসটিকস রিভিউ ২০১৯’ মতে, ২০১৮ সালে পোশাক রপ্তানির বৈশ্বিক বাজারের হিস্যা- চীনের ৩১.৩%, বাংলাদেশের ৬.৪% ও ভিয়েতনামের ৬.২%। অথচ ২০১৭ সালে বাংলাদেশের হিস্যা ছিল ৬.৫% আর ভিয়েতনামের ৫.৯%। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে বাংলাদেশের কমেছে আর ভিয়েতনামের বেড়েছে। এ ব্যাপারে সিপিডি’র গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বাংলাদেশে কারখানার কর্ম পরিবেশ উন্নয়নে অনেক কাজ হলেও বহুমুখী পণ্য উৎপাদনের ক্ষমতায় ও প্রযুক্তিতে উন্নয়ন হয়নি। এই জায়গায় দ্রুত উন্নতি করতে হবে। না হলে অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে অনেক পেছনে ফেলে এগিয়ে যাবে ভিয়েতনাম। ইতোমধ্যেই তা হয়েছেও। চলতি বছরে গার্মেন্টে ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ার প্রবৃদ্ধি আমাদের চেয়ে বেশি হয়েছে। এই হচ্ছে সাধারণ পোশাক রফতানির অবস্থা। হাই কোয়ালিটির তথা স্যুট, বেøজার, অন্তর্বাস, সাঁতারের পোশাক ইত্যাদি রফতানিতে বাংলাদেশের অবস্থা সামান্য। অথচ বিশ্বব্যাপী এর চাহিদা ও লাভ বেশি। অন্যদিকে, বর্তমানে দেশে যেসব মোবাইল কোম্পানি আছে,তার সবটির মালিকানা ছিল এ দেশের। কিন্তু তা বিদেশীদের কাছে যেতে যেতে এখন শুধুমাত্র টিকে আছে টেলিটক। তারও অবস্থা খুবই নড়বড়ে। সরকার সহায়তার হাত গুটিয়ে নিলে ধপ করে প্রাণ প্রদীপ নিভে যাবে (ল্যান্ড ফোনের অবস্থাও তথৈবচ)। অথচ এই মোবাইল কোম্পানিগুলোই সফলভাবে পরিচালনা করে ব্যাপক লাভ করছে। সরকারকে কর দিয়েও হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে যাচ্ছে দেশে। পত্রিকার খবর মতে,গ্রামীণ ফোন গত জানুয়ারি হতে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সরকারকে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা কর দিয়েও প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা লাভ করেছে। কম-বেশি অন্য মোবাইল কোম্পানিগুলোও তাই। তাহলে এই কোম্পানিগুলো দেশীয় মালিকরা চালাতে পারলো কেন? না পারার কারণ, প্রতিষ্ঠান চালানোর অদক্ষতা। আর দক্ষতা হবেই বা কিভাবে? পানের দোকানদার যদি ইলেকট্রিকের দোকান খোলে, তাহলে কি সে সফল হবে? মোটেও না। পরিবহন খাতের অবস্থাও কাহিল। জল, স্থল ও আকাশ পথের যানবাহনের বেশিরভাগই আনফিট। চালকের অবস্থাও তাই। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী গত ২৮ অক্টোবর বলেন, যেসব গাড়ি সড়কে চলাচল করে তার বেশির ভাগেরই ফিটনেস নেই। অভিযান শুরু করলে এর এক-তৃতীয়াংশই চলাচল করতে পারবে না। এর আগে দু’টি গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন মতে, দেশের বেশিরভাগ চালকের লাইসেন্স নেই। যাদের লাইসেন্স আছে, তাদেরও অর্ধেকের বেশি চালকের চোখে বিভিন্ন সমস্যা আছে। এসব নানা কারণে দেশে দুর্ঘটনার হার বিশ্বের মধ্যে সর্বাধিক। সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতে দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে বাংলাদেশ,গড়ে তিনগুণ বেশি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৮ সালের সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ক বৈশ্বিক প্রতিবেদন মতে, বাংলাদেশে বছরে ২৪ হাজারের বেশি মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে।কম-বেশি একই অবস্থা জল,আকাশ ও রেলের ক্ষেত্রেও। এই অবস্থায় দেশে পরিবহন ব্যবসা শুরু করেছে বিদেশীরা। আধুনিক যানবাহন, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও শিক্ষিত চালক, ভাড়াও কম। সর্বোপরি কল করার কয়েক মিনিটের মধ্যেই হাজির হয়ে যায় এসি গাড়ী। ম্যাপ দেখে পৌঁছে দেয় নির্দিষ্ট স্থানে। দুর্ঘটনাও খুব কম। সুদূর আমেরিকার মালিক ভারত থেকে নিয়ন্ত্রণ করছে যানবাহনগুলো। চালক সামান্য অপরাধ করলে কমপ্লেন দেওয়ার সাথে সাথেই শাস্তি নির্ঘাত। তাই চালকরা সহজে কোনো অপরাধ করে না। ব্যবহারও খুব ভাল। তাই ক্রমশ: জনপ্রিয় হয়ে উঠছে উবার, অ্যাপস ভিত্তিক বাইসাইকেল জো-বাইক ইত্যাদি। অনেকের মতে, কয়েক বছরের মধ্যেই পরিবহন খাতের গোটা বাজার বিদেশিদের নিয়ন্ত্রণে চলে যেতে পারে। বর্তমান সরকারের সময়ে প্রকাশিত মিডিয়ার সংখ্যা সর্বকালের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। কিন্তু এসব যত দ্রæত স¤প্রসারিত হয়েছে, তার চেয়ে বেশি গতিতে বন্ধ হয়েছে। যেগুলো চালু আছে,সেগুলোও চরম আর্থিক সংকটে পড়ে সাংবাদিক ছাটাই চলছে। তাই এগুলোরও আয়ুষ্কাল বেশি নয়। এর প্রধান কারণ মানহীন, পরিচালনার অদক্ষতা ও লেজুড়বৃত্তি এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও অনলাইনের ব্যাপক প্রভাব। এছাড়া,উন্নতমানের আন্তর্জাতিক মিডিয়া তো রয়েছেই। একই কারণে দেশের নাটক-সিনেমাও প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। ভালো গল্পের অভাবে নতুন নাটক ও সিনেমা তেমন তৈরি হচ্ছে না। পুরাতন নাটক-সিনেমাই চালানো হচ্ছে। মানুষ বিদেশমুখী হয়ে পড়েছে খবর ও বিনোদনের জন্য।

দেশের শিক্ষার অবস্থাও করুণ। বিদেশ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি গ্রহণ করা ভারতীয় নাগরিকদের দেশে প্র্যাকটিসের লাইসেন্স পেতে ফরেন মেডিকেল গ্র্যাজুয়েট এক্সামিনেশনে পাস করার শর্ত রয়েছে। যার পরীক্ষা হয় জাতীয় পরীক্ষা বোর্ডের অধীনে। বোর্ডের সর্বশেষ প্রতিবেদন মতে, এফএমজিই টেস্টে অংশ নেয়া পরীক্ষার্থীদের উল্লেখযোগ্য একটি অংশই বাংলাদেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ থেকে পাস করা এবং এদের ৭২% এ পরীক্ষায় ফেল করেছে। একই অবস্থা হতে পারে ইঞ্জিনিয়ারিং, টেক্সটাইল, কৃষিসহ সব শিক্ষার্থীরই! তাও ভারতে। কিন্তু ইউরোপ-আমেরিকায় পরীক্ষা হলে রেজাল্ট ভারতের চেয়েও খারাপ হবে! আর হবেই না কেন? দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোই তো আন্তর্জাতিক মানের নয়। যুক্তরাজ্যের এডুকেশন হায়ারের রিপোর্ট-২০১৯ মতে, বিশ্বের সেরা এক হাজার বিশ্ব বিদ্যালয়ের মধ্যে বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় স্থান পায়নি। এই হচ্ছে সেকেলে শিক্ষা ব্যবস্থার চিত্র। কর্মমুখী শিক্ষার অবস্থা আরও করুণ। সারা বিশ্বে কারিগরি শিক্ষার হার ৬০-৭০%,আর বাংলাদেশে তা ৮%। তারও মান নিম্ন। আর আইটি, রোবট, অটোমেশন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ইত্যাদি সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার দেশে নেই বললেই চলে। এভাবে যাচাই করলে দেখা যাবে, দেশের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রের দক্ষতা আন্তর্জাতিক মানদন্ডে অতি নিম্ন। কয়েকটি উদাহরণ দিলেই বিষয়টি প্রমাণিত হবে।

গত ৩০ অক্টোবর প্রকাশিত ইউনিসেফ ও গ্লোবাল বিজনেস কোয়ালিশন ফর অ্যাডুকেশনের প্রতিবেদন মতে, বর্তমানে তরুণদের দক্ষতার হার বাংলাদেশে ২৬%, ভুটানে ৪৭%, শ্রীলংকায় ৬১%, ভারতে ১৯%, পাকিস্তানে ১৮%, নেপালে ১৩%, মালদ্বীপে ১৬%। ২০৩০ সালের মধ্যে যোগ্য ও দক্ষ হবে বাংলাদেশে ৫৫%, ভুটানে ৮১%, শ্রীলংকায় ৬৮%, ভারতে ৪৭%, পাকিস্তানে ৪০%, নেপালে ৪৬%, মালদ্বীপে ৪৬%। একবিংশ শতাব্দির কাজের জন্য পরবর্তী প্রজন্মের তরুণদের যেসব বিষয়ে দক্ষতার প্রয়োজন হবে, সেসব বিষয়ে দক্ষ করে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অন্য কয়েকটি অঞ্চলের তুলনায় দক্ষিণ এশিয়া পেছনে রয়েছে। এই অবস্থায় দেশে বেকারত্ব বাড়ছে। কারো কারো মতে, দেশে বেকার যুবকের সংখ্যা ৫ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। প্রতি বছরই এ সংখ্যা বাড়ছে প্রায় ১৭ লাখ। কিন্তু কাজের ক্ষেত্র বাড়ছে না। অন্যদিকে, বিভিন্ন খাতে দক্ষ শ্রমিকের ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। শুধুমাত্র পরিবহন খাতেই ৭-৮ লাখ দক্ষ চালকের ঘাটতি রয়েছে। গত ২০ অক্টোবর অনুষ্ঠিত ‘ফরমুলেটিং দ্য ন্যাশনাল অ্যাকশন প্ল্যান ফর স্কিলস ডেভেলপমেন্ট’ শীর্ষক কর্মশালায় বিশেষজ্ঞগণ চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দক্ষতা উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই বলে জানিয়েছেন, ২০২০ সালে দেশে দক্ষ শ্রমিকের চাহিদা হবে ৭.২৪ কোটি। এর মধ্যে কৃষিতে ২৯ লাখ, নির্মাণ খাতে ৪৪.২০ লাখ ও তৈরি পোশাক খাতে ৫৯.৮০ লাখ। দেশের উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনে দক্ষতার ঘাটতি কমাতে হবে। সা¤প্রতিক সময়ে দেশের আর্থিক অবস্থা খুব খারাপের দিকে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে। এর প্রধান কারণ ব্যাংকের নাজুক অবস্থা। ব্যাংকের ইকুইটির বিপরীতে আয় (আরওই) ১০ শতাংশের বেশি হলে তাকে আদর্শ হিসেবে ধরা হয়। চলতি বছরের জুন শেষে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর গড় আরওই ৩%। আর সম্পদের বিপরীতে ০.২%। ব্যাংকিং খাতের মোট মূলধনের চেয়ে বেশি হয়েছে খেলাপি ঋণ। বিপুল এ খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রয়োজনীয় প্রভিশনও সংরক্ষণ করতে পারছে না ব্যাংকগুলো। অথচ ২০১০ সালে দেশের ব্যাংকগুলোর গড় আরওই ১৯.৯% ছিল বলে জানা গেছে। দেশের শেয়ার বাজার মরণযাত্রায় নিপতিত বহুদিন যাবত।

অবশ্য স্বাধীনতার পর দেশের প্রধান খাদ্যশস্যের উৎপাদন বেড়েছে তিন থেকে পাঁচ গুণ। ১২টি কৃষিপণ্য উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দেশের মধ্যে রয়েছে। কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, বাংলাদেশের মানুষ এখন গড়ে ২,৫১৪ কিলো ক্যালরি খাদ্য শক্তি গ্রহণ করছে। আর বিশ্বে খাদ্য শক্তি গ্রহণের গড় ২,৯৪০ কিলো ক্যালরি। শ্রীলঙ্কা, নেপাল, মালদ্বীপ ও ভুটানও বাংলাদেশের চেয়ে খাদ্যশক্তি গ্রহণে এগিয়ে আছে। এফএও’র ২০১৯ সালের পরিসংখ্যান মতে, শিল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের মানুষ প্রতিদিন যে খাবার খায়, তার মধ্যে মাছ, মাংস, ডিম ও দুধের মতো পুষ্টিকর খাবার থাকে অর্ধেক। কিন্তু এই ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে আছে। এখনো দেশের অর্ধেক গর্ভবতী নারী রক্তশূন্যতায় ভোগে। শিশুদের দুধ ও মাংস খাওয়ার পরিমাণের দিক দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বের প্রথম ১০০টি দেশের মধ্যে নেই। ফিনল্যান্ডের মানুষ প্রতিদিন ৩৬১ মিলিলিটার ও সুইডেনে ৩৫৫ মিলিলিটার দুধ খায়। সেখানে বাংলাদেশের মানুষ খায় দিনে মাত্র ৩৩.৭ মিলিলিটার। মাংস খাওয়ার দিক দিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ১৭৩টি দেশের মধ্যে ১৭২ তম। হংকংয়ের মানুষ যেখানে প্রতিদিন ৪১৯.৬ গ্রাম ও অস্ট্রেলিয়ায় ৩১৮.৫ গ্রাম করে মাংস খায়। সেখানে বাংলাদেশের মানুষ খায় ১১.২৬ গ্রাম। ‘বৈশ্বিক পাসপোর্ট সূচক-২০১৯’ মতে, বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ৯৭তম। বাংলাদেশের সাথে ৯৭তম স্থানে আছে লেবানন, লিবিয়া ও দক্ষিণ সুদান। ‘গণতান্ত্রিক বৈশ্বিক সূচক-২০১৯’ মতে, বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ৮৮তম (আগে ছিল ৯২তম), ভারত ৪১তম, শ্রীলংকা ৭১তম ও পাকিস্তান ১১২তম। যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক দ্য ওয়ার্ল্ড জাস্টিস প্রজেক্ট প্রণীত ‘আইনের শাসন সূচক-২০১৯’ মতে, বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ১১২তম (আগে ছিল ১০২তম), বাংলাদেশের উপরে নেপাল, শ্রীলংকা ও ভারত আর নীচে পাকিস্তান ও আফগানিস্তান। বাংলাদেশের অবস্থান সবচেয়ে খারাপ মৌলিক অধিকার সূচকে। রিপোটার্স উইদাউট বর্ডারস প্রণীত ‘সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা সূচক-২০১৮-১৯’ মতে, বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ১৫০তম (আগে ছিল ১৪৬তম), ভারত ১৪০, পাকিস্তান ১৪২। বাংলাদেশের উপরে শুধুমাত্র রাশিয়া আর নীচে সিঙ্গাপুর। অষ্ট্রেলিয়া ভিত্তিক ইন্সটিটিউট ফর ইকোনোমিক্স অ্যান্ড পিস প্রণীত ‘বিশ্ব শান্তি সূচক-২০১৯’ মতে, বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ১০১তম (আগে ছিল ৯৩তম),ভারত ১৪১ ও পাকিস্তান ১৫৩তম। ‘বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সূচক-২০১৯’ মতে, বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ১২১তম (আগে ছিল ১২৮তম), ভুটান ৭৪, শ্রীলংকা ১১৫ এবং বাংলাদেশের পেছনে ভারত ও পাকিস্তান। জার্মানভিত্তিক কুরিয়ার কোম্পানি ডিএইচএল প্রণীত ‘বৈশ্বিক সংযোগ সূচক-২০১৮’ মতে, বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪০তম। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম প্রণীত ‘বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা সূচক-২০১৯’ মতে, বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ১০৫ তম (আগে ছিল ১০৩তম)। মোট ১২টি সূচকের মধ্যে ১০টিতেই বাংলাদেশ পিছিয়েছে। বিশ্ব ব্যাংক প্রণীত ‘সহজে ব্যবসা করার সূচক-২০১৯’ মতে, বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ১৬৮তম (আগে ছিল ১৭৬তম)। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ শুধুমাত্র আফগানিস্তানের উপরে আছে। তবে, সবচেয়ে বেশি উন্নতি করেছে এমন ২০টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশ আছে। অনলাইন লার্নিং প্ল্যাটফর্ম কোরসেরা প্রণীত ‘বৈশ্বিক দক্ষতা সূচক-২০১৯’ মতে, বিশ্বে ৬০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ব্যবসা খাতে ৫৯তম, প্রযুক্তিতে ৫৬তম ও ডেটা সায়েন্সে ৫৭তম। ‘বৈশ্বিক ক্ষুধা ও অপুষ্টি সূচক-২০১৯’ মতে, বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ৮৮তম (আগে ছিল ১১৩তম), ভারত ১০২, পাকিস্তান ৯৪তম। ‘বৈশ্বিক শিশু অধিকার সূচক-২০১৯’ মতে, বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ১০৮তম (আগে ছিল ১১৩তম)। যুক্তরাষ্ট্রের জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট ফর উইমেন, পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি এবং নরওয়ের দ্য পিস রিসার্চ ইন্সটিটিউট অসলো যৌথভাবে প্রণীত ‘নারীর শান্তি ও নিরাপত্তা সূচক-২০১৯-২০’ মতে, বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪২তম (আগে ছিল ১২৭তম)। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত, নেপাল, শ্রীলংকা, মালদ্বীপ ও ভুটান বাংলাদেশে চেয়ে এগিয়ে। সবচেয়ে খারাপের তালিকায় বাংলাদেশসহ ৩২টি দেশ আছে। ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট প্রণীত ‘নিরাপদ শহর সূচক-২০১৯’ মতে, বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ৫৬তম। ইকোনমিষ্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট প্রণীত ‘গ্লোবাল লিভিবিলিটি ইনডেক্স-২০১৯’ মতে, বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৮তম । ঢাকার চেয়ে খারাপ অবস্থা কেবল যুদ্ধ বিধ্বস্ত সিরিয়ার দামেস্ক ও নাইজেরিয়ার লাগোসে। ফ্রিডম হাউজের ‘ফ্রিডম অন দ্য নেট’ শীর্ষক প্রতিবেদন মতে, ৬৫টি দেশের ইন্টারনেট ও ডিজিটাল মিডিয়া ব্যবহারের স্বাধীনতা মূল্যায়নে বাংলাদেশের স্কোর ৪৪ পয়েন্ট ও ‘আংশিক স্বাধীন’ ক্যাটাগরিতে স্থান পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এইচইআই ও আইএইচএমই প্রণীত ‘বৈশ্বিক বায়ু পরিস্থিতি-২০১৯’ শীর্ষক প্রতিবেদন মতে, বায়ু দূষণের কারণে বাংলাদেশে বছরে অন্তত ১.২৩ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে ২০১৭ সালে। এ ছাড়া গড় আয়ু প্রায় ১.৩ বছর কমে যাচ্ছে। স্টেট অব গ্লোবাল এয়ারের মতে, বাংলাদেশে ৯০% লোক কোনো না কোনোভাবে বায়ুদূষণের মধ্যে বসবাস করে। এয়ার ভিজ্যুয়ালের তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে বছরে প্রায় ২শ দিন ঢাকার বায়ু মারাত্মক অস্বাস্থ্যকর পর্যায়ে থাকে। বাংলাদেশের বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রে প্রতি বছর ভ্রমণ করছে প্রায় ৯০-৯৫ লাখ পর্যটক। এর মধ্যে বিদেশি পর্যটক মাত্র ২%। মূলত খাতটির অবকাঠামোগত দুর্বলতার কারণেই বিদেশি পর্যটক আকর্ষণে বিশ্বের সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা দেশগুলোর তালিকায় পড়ে গেছে বাংলাদেশ। ইউএসএআইডি স¤প্রতি ক¤িপ্রহেনসিভ প্রাইভেট সেক্টর শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এ কথা জানিয়েছে। আইএমএফ’র তথ্য অনুযায়ী, কর জিডিপির অনুপাত বাংলাদেশে ১০.২%, নেপালে ২৩.৩%, ভারতে ২০.৩%, পাকিস্তানে ১৫.২%, শ্রীলংকার ১৩.৩%, মিয়ানমারে ২২.৫% এবং গড়ে উন্নত দেশগুলোতে ৩৬.২%, উন্নয়নশীল এশিয়ার দেশগুলোতে ২৬.৭%, আশিয়ান দেশগুলোতে ১৮.৫% ও আফ্রিকার দেশগুলোতে ১৭.৮%। এ৪এআই নিম্ন ও মধ্যম আয়ের ১৩৬টি দেশের মানুষের ইন্টারনেট ক্রয় পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে এডিআই-২০১৯ প্রকাশ করেছে। উক্ত র‌্যাংকিং মতে, বাংলাদেশ ৪১তম (পয়েন্ট ৪৮.৩০)। নদী দূষণেও বাংলাদেশ বিশ্বে শীর্ষে রয়েছে। এরূপ আরও অনেক উদাহরণ আছে। কিন্তু ক্ষুদ্র পরিসরে তা উল্লেখ করা সম্ভব নয়।

দেশের সার্বিক বিষয় বিশ্লেষণ করে এটা নিশ্চিত যে, বিশ্বায়ন মোকাবেলা করার জন্য প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমাদের দক্ষতা অর্জন করতে হবে এবং তা বৈশ্বিক র‌্যাংকিংয়ের কাউন্টেবল মোট দেশের অন্তত অর্ধেকের মধ্যে অবস্থান অর্জন করতে হবে। নতুবা মধ্যম আয়ের দেশে এবং উন্নত দেশের স্বপ্ন পূরণ হওয়া তো দূরে থাক, সার্বিকভাবে টিকে থাকাই অসম্ভব হয়ে পড়বে। দেশে সার্বিক ও টেকসই উন্নতি ও ভিশনসমূহ বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে সব ধরনের দূষণ দূর, অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয় বন্ধ, গার্মেন্ট শিল্পে হাই কোয়ালিটির পোশাক তৈরি, কৃষিভিত্তিক শিল্প স্থাপন, প্রয়োজন মতো পাটের পলিব্যাগ তৈরি এবং আইটি খাতের উন্নতি, শিক্ষার মানোন্নয়ন, কারিগরি শিক্ষার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ, সুশাসন প্রতিষ্ঠা, ব্যবসা সহজীকরণ, পর্যটন, স্বাস্থ্যসেবার উন্নতি, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উন্নতি, ওষুধ শিল্পের কাঁচামাল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পন্নতা অর্জন, দুর্নীতি-অনিয়ম ও যানজট দূর ইত্যাদি ক্ষেত্রে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া আবশ্যক। এছাড়া, নতুন নতুন আবিষ্কার ও উদ্ভাবনগুলোর দিকে নজর রাখতে হবে এবং তা ব্যবহার করতে হবে।