ঢাকা , শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

লাভের আশায় আগাম আলু তুলছেন কৃষক

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ নীলফামারীতে এ বছর আলুর বাজার শুরু থেকেই চড়া। দাম বাড়তে বাড়তে এখন পুরোনো আলু খুচরা বাজারে ৪০-৪৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। নতুন আলু বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে। তাই লাভের আশায় আগাম জাতের আলু তুলতে শুরু করেছেন নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার আলুচাষিরা।

গত বৃহস্পতিবার কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ খেতজুড়ে আলু আর আলু। নারী-পুরুষনির্বিশেষে অনেকে খেত থেকে আলু তুলছেন।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, স্থানীয় ব্যবসায়ীরা খেত থেকে ৬৫–৭০ টাকা কেজি দরে আলু কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। অনেকে বেশি লাভের আশায় ট্রাকে করে আলু নিয়ে যাচ্ছেন ঢাকার কারওয়ান বাজারে

এ জেলায় আগাম জাতের আলু রোপণ করা হয়েছে ৭ হাজার ২৯০ হেক্টর জমিতে। প্রায় ১ সপ্তাহ আগে থেকে আলু ওঠা শুরু হয়েছে।

দুরাকুটি গ্রামের আলম হোসেন বলেন, ‘আমি এ বছর তিন বিঘা জমিতে আলু লাগিয়েছি। এর মধ্যে দেড় বিঘায় ছিল আগাম জাতের। ৩০ সেপ্টেম্বর আলু লাগানোর পর ৫৬ দিনের মাথায় আলু তুললাম। আলু হয়েছে ১৮ বস্তা। ফলন কিছুটা কম হলেও দাম ভালো পাওয়ার আশায় তুলেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘স্থানীয় ব্যবসায়ীরা খেত থেকে ৬৫ টাকা কেজি দরে কিনতে চান। আমি আরও বেশি দামের আশায় কারওয়ান বাজারে আলু পাঠিয়েছি। গতকাল শুক্রবার সকালে কারওয়ান বাজারে প্রতি কেজি আলু ৭১ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। খরচ বাদে আমার লাভ হয়েছে ৭০ হাজার টাকা।’

একই গ্রামের শামিম হোসেন বলেন, ‘আমি ১৮ বিঘা জমিতে আলু করেছি। এর মধ্যে আগাম জাতের আলু ৬ বিঘা। এই ৬ বিঘার মধ্যে ২ বিঘা তুলে ২৬ বস্তা আলু পেয়েছি। স্থানীয় বাজারে দাম কম হওয়ায় ট্রাকে করে আলু ঢাকায় নিয়ে যাই। গতকাল সেখানে ৮০ টাকা কেজি দরে ২৬ বস্তা আলু ১ লাখ ৩২ হাজার টাকায় বিক্রি করি।’ তিনি আরও বলেন, একই ট্রাকে নিয়ে যাওয়া প্রতিবেশী মেহেরুল
হকের ২০ বস্তা আলু ১ লাখ ২০ হাজার টাকা এবং আলম হোসেনের ১৮ বস্তা আলু ১ লাখ ১০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। ট্রাক ভাড়া দিতে হয়েছে ১২ হাজার টাকা।

আলু ব্যবসায়ী আবু সুফিয়ান বলেন, ‘আমরা প্রায় এক সপ্তাহ ধরে এলাকার কৃষকদের কাছে আলু কিনে ট্রাকে করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠাচ্ছি। আমাদের ট্রাক যাচ্ছে ঢাকার কারওয়ান বাজার, মাদারীপুর ও কুমিল্লার নিমসা বাজারে।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সূত্রমতে, নীলফামারীতে কার্ডিনাল, ডায়মন্ড, রোমান, বারী-১, বারী-১০, গ্রানোলা, সাগিটা-৭ এবং স্থানীয় সাইটা, লাল পাটনাই, লাল পাখরি, শিল বিলাতি, ঝাউ বিলাতিসহ বিভিন্ন জাতের আলু চাষ হয়। এখন সাগিটা-৭ জাতের আলু উঠতে শুরু করেছে। ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত আলু রোপণের কাজ চলবে।

জানতে চাইলে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক মো. ওবায়দুর রহমান মণ্ডল বলেন, চলতি বছর এ জেলায় প্রায় ২২ হাজার হেক্টর জমিতে আলু রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু করে ২৬ নভেম্বর পর্যন্ত ১৬ হাজার ৬৬৫ হেক্টর জমিতে আলু রোপণ হয়েছে। এর মধ্যে আগাম জাতের আলু রোপণ করা হয়েছে ৭ হাজার ২৯০ হেক্টর জমিতে। প্রায় এক সপ্তাহ আগে থেকে আগাম আলু ওঠা শুরু হয়েছে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

লাভের আশায় আগাম আলু তুলছেন কৃষক

আপডেট টাইম : ০৫:৪০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২০

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ নীলফামারীতে এ বছর আলুর বাজার শুরু থেকেই চড়া। দাম বাড়তে বাড়তে এখন পুরোনো আলু খুচরা বাজারে ৪০-৪৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। নতুন আলু বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে। তাই লাভের আশায় আগাম জাতের আলু তুলতে শুরু করেছেন নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার আলুচাষিরা।

গত বৃহস্পতিবার কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ খেতজুড়ে আলু আর আলু। নারী-পুরুষনির্বিশেষে অনেকে খেত থেকে আলু তুলছেন।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, স্থানীয় ব্যবসায়ীরা খেত থেকে ৬৫–৭০ টাকা কেজি দরে আলু কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। অনেকে বেশি লাভের আশায় ট্রাকে করে আলু নিয়ে যাচ্ছেন ঢাকার কারওয়ান বাজারে

এ জেলায় আগাম জাতের আলু রোপণ করা হয়েছে ৭ হাজার ২৯০ হেক্টর জমিতে। প্রায় ১ সপ্তাহ আগে থেকে আলু ওঠা শুরু হয়েছে।

দুরাকুটি গ্রামের আলম হোসেন বলেন, ‘আমি এ বছর তিন বিঘা জমিতে আলু লাগিয়েছি। এর মধ্যে দেড় বিঘায় ছিল আগাম জাতের। ৩০ সেপ্টেম্বর আলু লাগানোর পর ৫৬ দিনের মাথায় আলু তুললাম। আলু হয়েছে ১৮ বস্তা। ফলন কিছুটা কম হলেও দাম ভালো পাওয়ার আশায় তুলেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘স্থানীয় ব্যবসায়ীরা খেত থেকে ৬৫ টাকা কেজি দরে কিনতে চান। আমি আরও বেশি দামের আশায় কারওয়ান বাজারে আলু পাঠিয়েছি। গতকাল শুক্রবার সকালে কারওয়ান বাজারে প্রতি কেজি আলু ৭১ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। খরচ বাদে আমার লাভ হয়েছে ৭০ হাজার টাকা।’

একই গ্রামের শামিম হোসেন বলেন, ‘আমি ১৮ বিঘা জমিতে আলু করেছি। এর মধ্যে আগাম জাতের আলু ৬ বিঘা। এই ৬ বিঘার মধ্যে ২ বিঘা তুলে ২৬ বস্তা আলু পেয়েছি। স্থানীয় বাজারে দাম কম হওয়ায় ট্রাকে করে আলু ঢাকায় নিয়ে যাই। গতকাল সেখানে ৮০ টাকা কেজি দরে ২৬ বস্তা আলু ১ লাখ ৩২ হাজার টাকায় বিক্রি করি।’ তিনি আরও বলেন, একই ট্রাকে নিয়ে যাওয়া প্রতিবেশী মেহেরুল
হকের ২০ বস্তা আলু ১ লাখ ২০ হাজার টাকা এবং আলম হোসেনের ১৮ বস্তা আলু ১ লাখ ১০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। ট্রাক ভাড়া দিতে হয়েছে ১২ হাজার টাকা।

আলু ব্যবসায়ী আবু সুফিয়ান বলেন, ‘আমরা প্রায় এক সপ্তাহ ধরে এলাকার কৃষকদের কাছে আলু কিনে ট্রাকে করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠাচ্ছি। আমাদের ট্রাক যাচ্ছে ঢাকার কারওয়ান বাজার, মাদারীপুর ও কুমিল্লার নিমসা বাজারে।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সূত্রমতে, নীলফামারীতে কার্ডিনাল, ডায়মন্ড, রোমান, বারী-১, বারী-১০, গ্রানোলা, সাগিটা-৭ এবং স্থানীয় সাইটা, লাল পাটনাই, লাল পাখরি, শিল বিলাতি, ঝাউ বিলাতিসহ বিভিন্ন জাতের আলু চাষ হয়। এখন সাগিটা-৭ জাতের আলু উঠতে শুরু করেছে। ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত আলু রোপণের কাজ চলবে।

জানতে চাইলে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক মো. ওবায়দুর রহমান মণ্ডল বলেন, চলতি বছর এ জেলায় প্রায় ২২ হাজার হেক্টর জমিতে আলু রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু করে ২৬ নভেম্বর পর্যন্ত ১৬ হাজার ৬৬৫ হেক্টর জমিতে আলু রোপণ হয়েছে। এর মধ্যে আগাম জাতের আলু রোপণ করা হয়েছে ৭ হাজার ২৯০ হেক্টর জমিতে। প্রায় এক সপ্তাহ আগে থেকে আগাম আলু ওঠা শুরু হয়েছে।