ঢাকা , শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ফেনীতে বন্যা: বেড়িবাঁধের ১১ স্থানে ভাঙন, ৫৯ গ্রাম প্লাবিত

ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে ফেনীর বন্যা পরিস্থিতি। টানা দুই দিনের ভারী বৃষ্টি এবং ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ফেনীর মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনীয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ১১টি স্থান ভেঙে গেছে। এতে অন্তত ৫৯টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বন্যার কারণে ফেনী-পরশুরাম আঞ্চলিক মহাসড়কে যান চলাচলও বন্ধ রয়েছে।

শুক্রবার (২ আগস্ট ) ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনীয়া নাদীর বন্যা নিয়ন্ত্রয়ণ বাঁধের ১১টি স্থানে ভাঙ্গন সৃষ্টি হয়। অল্প সময়ের মধ্যেই দুই উপজেলার ৫৯টি গ্রাম প্লাবিত হয়। এ ঘটনায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন প্রায় ২৩ হাজার পরিবার। চরম দুর্ভোগে পড়েছেন দুই উপজেলার কয়েক হাজার মানুষ।

পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার আফরোজা হাবিব শাপলা জানান, টানা বর্ষণে পরশুরাম উপজেলায় মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনীয়া নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত শুক্রবার সাড়ে ১১টার দিকে পরশুরামের শালধর এলাকায় মুহুরী নদীর বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকতে শুরু করে। একইদিন বিকেল ৪টার দিকে উপজেলার বক্সমাহমুদ ইউনিয়নে কহুয়া নদীর দুটি অংশে ভাঙন দেখা দেয়।

বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে মির্জানগর ইউনিয়নে সিলোনীয় ও মহুরী নদীর দুটি স্থানে ভাঙনের সৃষ্টি হয়। চিথলীয়া ইউনিয়নের মহুরী নদীর বাঁধের চারটি স্থানে ভাঙন দেখা দেয়। এতে উপজেলার বাউরপাথর, বাউরখুমা,  দুবলাচাদ, কোলাপাড়া, অনন্তপুর, উত্তর গুথুমা, বেড়াবারিয়া, মির্জানগর ইউনিয়নের উত্তর মনিপুর, দক্ষিণ মণিপুর, কালী কৃষ্ণনগর, গদানগর, কাউতলী, দাসপাড়া, চিথলিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ শালধর, মালীপাথর, পাগলীরকুল, বক্সমাহমুদ  ইউনিয়নের দক্ষিন টেটেশ্বর, সাতকুচিয়া,কহুয়া, চারিগ্রাম, বাঘমারা, জমিয়ারগাওসহ প্রায় ৩১টি গ্রামের প্রায় ২০ হাজার পরিবার পানিবন্দি রয়েছে। এসব পানিবন্দি মানুষের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে বলে জানান শাপলা।

ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানিয়া ভূঁঞা জানান, ফুলগাজী উপজেলায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের কোনো অংশে ভাঙন সৃষ্টি না হলেও পরশুরামের ভাঙনের পানি ফুলগাজী উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ঢুকে ২৮টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে তিন হাজার পরিবার পানিবন্দি রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনো খাবার ও আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া ফেনী পরশুরাম আঞ্চলিক মহাসড়কে পানি থাকায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।

মির্জানগর এলাকার বাসিন্দা মো. নোমান বলেন, ‘এত প্রবল স্রোতে পানি প্রবেশ করতে এর আগে কখনো দেখিনি। দ্রুত সময়ের মধ্যে বাড়িতে পানি উঠে গেছে। খুব কষ্টে রাত-দিন পার করছি আমরা।’

ইব্রাহিম নামে আরেকজন বলেন, ‘কিছু এলাকা উঁচু হওয়ায় সাধারণত বন্যার পানি প্রবেশ করে না। কিন্তু এবার ভারী বর্ষণে রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, ফসলি জমি ও মাছের ঘের পানিত তলিয়ে গেছে। খুব খারাপ অবস্থা যাচ্ছে আমাদের।’

ফুলগাজী উপজেলার ফজলুল হক মনছুর বলেন, ‘১৯৯৮, ২০০৪ ও ২০১৮ সালের বন্যা নিজ চোখে দেখেছি। কখনো বাড়িতে পানি ওঠেনি। এবারই প্রথম আমার বাড়িতে পানি উঠল। পুরো এলাকার পরিস্থিতি ভয়াবহ। নদীর পানি না কমলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।’

কৃষক আবুল হাসেম বলেন, ‘গতমাসে বন্যায় বোরো ধানের বীজতলা পানিতে তলিয়ে যায়। নতুন করে আবার বীজতলা তৈরি করে কয়েক দিন আগেই রোপণ করেছি। ফের নদীর বাঁধ ভেঙে এখন জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। এ ক্ষতিতে আমরা না খেয়েই থাকতে হবে।’

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ- বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আবুল কাশেম বলেন, ‘টানা দুই দিনের ভারি বর্ষণ ও উজানের ঢলে মুহুরী, কহুয়া সিলোনিয়া নদীর পানি এখনো বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এসব নদীর বেড়িবাঁধে ১১টি স্থানে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। ভাঙন এলাকা থেকে পানি নামলে বাঁধগুলো সংস্কার করা হবে।’

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

ফেনীতে বন্যা: বেড়িবাঁধের ১১ স্থানে ভাঙন, ৫৯ গ্রাম প্লাবিত

আপডেট টাইম : ০১:২৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩ অগাস্ট ২০২৪

ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে ফেনীর বন্যা পরিস্থিতি। টানা দুই দিনের ভারী বৃষ্টি এবং ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ফেনীর মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনীয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ১১টি স্থান ভেঙে গেছে। এতে অন্তত ৫৯টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বন্যার কারণে ফেনী-পরশুরাম আঞ্চলিক মহাসড়কে যান চলাচলও বন্ধ রয়েছে।

শুক্রবার (২ আগস্ট ) ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনীয়া নাদীর বন্যা নিয়ন্ত্রয়ণ বাঁধের ১১টি স্থানে ভাঙ্গন সৃষ্টি হয়। অল্প সময়ের মধ্যেই দুই উপজেলার ৫৯টি গ্রাম প্লাবিত হয়। এ ঘটনায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন প্রায় ২৩ হাজার পরিবার। চরম দুর্ভোগে পড়েছেন দুই উপজেলার কয়েক হাজার মানুষ।

পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার আফরোজা হাবিব শাপলা জানান, টানা বর্ষণে পরশুরাম উপজেলায় মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনীয়া নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত শুক্রবার সাড়ে ১১টার দিকে পরশুরামের শালধর এলাকায় মুহুরী নদীর বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকতে শুরু করে। একইদিন বিকেল ৪টার দিকে উপজেলার বক্সমাহমুদ ইউনিয়নে কহুয়া নদীর দুটি অংশে ভাঙন দেখা দেয়।

বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে মির্জানগর ইউনিয়নে সিলোনীয় ও মহুরী নদীর দুটি স্থানে ভাঙনের সৃষ্টি হয়। চিথলীয়া ইউনিয়নের মহুরী নদীর বাঁধের চারটি স্থানে ভাঙন দেখা দেয়। এতে উপজেলার বাউরপাথর, বাউরখুমা,  দুবলাচাদ, কোলাপাড়া, অনন্তপুর, উত্তর গুথুমা, বেড়াবারিয়া, মির্জানগর ইউনিয়নের উত্তর মনিপুর, দক্ষিণ মণিপুর, কালী কৃষ্ণনগর, গদানগর, কাউতলী, দাসপাড়া, চিথলিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ শালধর, মালীপাথর, পাগলীরকুল, বক্সমাহমুদ  ইউনিয়নের দক্ষিন টেটেশ্বর, সাতকুচিয়া,কহুয়া, চারিগ্রাম, বাঘমারা, জমিয়ারগাওসহ প্রায় ৩১টি গ্রামের প্রায় ২০ হাজার পরিবার পানিবন্দি রয়েছে। এসব পানিবন্দি মানুষের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে বলে জানান শাপলা।

ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানিয়া ভূঁঞা জানান, ফুলগাজী উপজেলায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের কোনো অংশে ভাঙন সৃষ্টি না হলেও পরশুরামের ভাঙনের পানি ফুলগাজী উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ঢুকে ২৮টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে তিন হাজার পরিবার পানিবন্দি রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনো খাবার ও আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া ফেনী পরশুরাম আঞ্চলিক মহাসড়কে পানি থাকায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।

মির্জানগর এলাকার বাসিন্দা মো. নোমান বলেন, ‘এত প্রবল স্রোতে পানি প্রবেশ করতে এর আগে কখনো দেখিনি। দ্রুত সময়ের মধ্যে বাড়িতে পানি উঠে গেছে। খুব কষ্টে রাত-দিন পার করছি আমরা।’

ইব্রাহিম নামে আরেকজন বলেন, ‘কিছু এলাকা উঁচু হওয়ায় সাধারণত বন্যার পানি প্রবেশ করে না। কিন্তু এবার ভারী বর্ষণে রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, ফসলি জমি ও মাছের ঘের পানিত তলিয়ে গেছে। খুব খারাপ অবস্থা যাচ্ছে আমাদের।’

ফুলগাজী উপজেলার ফজলুল হক মনছুর বলেন, ‘১৯৯৮, ২০০৪ ও ২০১৮ সালের বন্যা নিজ চোখে দেখেছি। কখনো বাড়িতে পানি ওঠেনি। এবারই প্রথম আমার বাড়িতে পানি উঠল। পুরো এলাকার পরিস্থিতি ভয়াবহ। নদীর পানি না কমলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।’

কৃষক আবুল হাসেম বলেন, ‘গতমাসে বন্যায় বোরো ধানের বীজতলা পানিতে তলিয়ে যায়। নতুন করে আবার বীজতলা তৈরি করে কয়েক দিন আগেই রোপণ করেছি। ফের নদীর বাঁধ ভেঙে এখন জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। এ ক্ষতিতে আমরা না খেয়েই থাকতে হবে।’

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ- বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আবুল কাশেম বলেন, ‘টানা দুই দিনের ভারি বর্ষণ ও উজানের ঢলে মুহুরী, কহুয়া সিলোনিয়া নদীর পানি এখনো বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এসব নদীর বেড়িবাঁধে ১১টি স্থানে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। ভাঙন এলাকা থেকে পানি নামলে বাঁধগুলো সংস্কার করা হবে।’