বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ সারী নদী থেকে কেউ তুলছে ছোট ছোট পাথর, কেউবা কয়লা, বালুও তুলছে অনেকে। এভাবেই অধিকাংশই মুসকো জোয়ান। যে যার কাজে ব্যস্ত। লালাখাল কিন্তু এলাকার নাম, খালের নাম নয়। স্বচ্ছ সবুজাভ পানির যে নদীতে আমরা ঘুরি সেটি সারী নদী (ভারতাংশে এ নদীর নাম মাইন্ডু (Myntdu) নদী)।
পানির স্রোতে প্রতিবেশী রাষ্ট্র থেকে গড়িয়ে আসা ছোট ছোট পাথর, কয়লা ও বালু সংগ্রহ করা এখানকার অধিবাসীদের অন্যতম জীবিকার মাধ্যম। সারা বছর একটু রুক্ষ ভাব থাকলেও বর্ষায় লালাখাল তার আসল সৌন্দর্য মেলে ধরে। তাই লালাখাল যাওয়ার উপযুক্ত সময় হচ্ছে বর্ষা। সারী নদী ভাটির দিকে সারীঘাট পাড় হয়ে মিশেছে গোয়াইন নদীর সাথে।
সময় থাকলে ২ নদীর মিলন দেখতে গেলে ভালো লাগবে। সারীঘাট থেকে নৌকা ভাড়া না নিলে লালাখাল ঘাট থেকেও নৌকা ভাড়া নেওয়া যায়। খরচ কিছুটা বাঁচবে। লালাখাল ঘাটে নাজিমগড় রিসোর্টের একটি খেয়াঘাটও আছে।
নৌকায় যেতে হবে জিরোপয়েন্টে (বাঘ ছড়ি)। এখানে বাংলাদেশ আর ভারতের সীমানা প্রান্তকে সবাই জিরোপয়েন্ট বলে। সীমান্ত লালাখাল ঘাট থেকে নৌকায় মাত্র ১৫ মিনিটের দূরত্ব। নদী ও তার দুই পাশের সৌন্দর্য ছবির মতো। নিঃসন্দেহে ভ্রমণ পিয়াসীদের স্মৃতিপটে এ নৌকা ভ্রমণের অতুল ভালোলাগা দীর্ঘদিন আলোড়িত করে।
লালাখাল ঘাট থেকে খেয়াপাড় হয়ে বটতলা বাজারে যাওয়া যায়। কালের সাক্ষী বিশাল বটগাছটি গত সিডরে ভেঙ্গে গেছে। টিকে থাকা বৃক্ষশাখাগুলো দেখলে বিশালাকায় মূল বৃক্ষটির আকৃতি সম্পর্কে কিছুটা ধারণা করা যায়।
বাজার পেরুলেই লালাখাল চা বাগান শুরু। ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত ও স্বয়ংসম্পূর্ণ এ চা বাগানটি খুব একটা বড় নয়। মাত্র ১০০০ চা-শ্রমিক এ বাগানে কাজ করেন। মধ্য বয়স্ক ম্যানেজার মহোদয় বেশ অমায়িক। চা বাগানে একটি পালিত হাতিও রয়েছে।
লালাখালে ‘রিভার কুইন’ নামে নাজিমগড়ের একটি রেস্টুরেন্ট রয়েছে। রিভারকুইন রেস্টুরেন্টের পাশেই রয়েছে ৮টি টেন্ট নিয়ে নাজিমগড়ের ‘এডভেঞ্চার টেন্ট ক্যাম্প’।
লালাখাল বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব কোণে, মেঘালয় রাজ্যের জৈন্তা পাহাড়ের গোড়ায়, হিমালয়ের সর্বশেষ প্রান্তে অবস্থিত। এক সময় এটি প্রাচীন জৈন্তিয়া (খাশি) রাজ্যের অংশ ছিল। আর এখন জৈন্তিয়াপুর উপজেলা।
এখানে একই সাথে পাহাড়, নদী, ও বনাঞ্চলের প্যানোরামিক ভিউ দেখা যায়। বর্ষাকালে লালাখাল হয়ে ওঠে অপরূপা। তবে শীতের সৌন্দর্যও অনেকের কাছে অধিক প্রিয়।
যেভাবে যাবেন:
বেশ কয়েকভাবে লালাখাল যাওয়া যায়। সিলেট থেকে জাফলং এর বাসে করে সারিঘাট নামতে হবে। শিশুপার্কের সামনে থেকে হিউম্যান হলারে করেও সারিঘাট নামতে পারেন।
সারিঘাটে নেমে নৌকা ভাড়া নিয়ে অথবা রাজার ঘরের পাশ থেকে অটোতে করে লালাখাল যাওয়া যায়। যেভাবেই যান প্রায় সমান সময় লাগবে। লালাখাল সারিঘাট থেকে মাত্র ৭ কিলোমিটার। সিএনজি বা গাড়ি নিয়েও সরাসরি লালাখাল যেতে পারেন। লালাখাল, জাফলং ও পান্থমায় কাছাকাছি।