ঢাকা , শুক্রবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সরকারি জমিতে শ্রমিক নেতার ঝুঁকিপূর্ণ ভবন নির্মাণ

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ জেলার হাটহাজারীর বাজারের মধ্যে সরকারি জমিতে বহুতল ভবন নির্মাণ করে বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে এক শ্রমিক নেতার বিরুদ্ধে। ক্ষমতাসীন দলের প্রভাব খাটিয়ে ২ কড়া জমির ওপর ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটি নির্মাণ করছেন হাটহাজারী-নাজিরহাট-খাগড়াছড়ি বাস শ্রমিক ইউনিয়নের সেক্রেটারি মো. হারুন।

আর নির্মাণাধীন ভবনে দোকান বরাদ্দ দেয়ার কথা বলে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রায় আড়াই কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে এই বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানালেন হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক আকতার উননেসা শিউলী।

তিনি বলেন, সরকারি জমি দখলের সুযোগ কাউকে দেয়া হবে না। আমি খবর নিয়ে দেখছি।

এদিকে সরকারি জমি দখল করে অবৈধভাবে বহুতল ভবন নির্মাণ বন্ধ ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি)-হাটহাজারী, পৌর প্রশাসক-হাটহাজারী পৌরসভা ও বাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি/সাধারণ সম্পাদককে পৃথকভাবে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন স্থানীয়রা।

গত ২৮ আগস্ট দায়ের করা ওই অভিযোগে দুই কড়া জমির উপর অর্থাৎ ১৫ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৩ প্রস্থ আকারে নির্মাণাধীন ভবনটি রিখটার স্কেলে ৩ থেকে ৪ মাত্রার ভূমিকম্প হলে ধসেপড়ার আশঙ্কার কথা জানানো হয়েছে। স্থানীয় ৫০জন ব্যক্তি নিজেদের নাম স্বাক্ষর ও মোবাইল নাম্বার দিয়ে অভিযোগটি করেন।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, হাটহাজারীর বাজারের মধ্যে বাসস্টেশনে সড়কের পাশে সরকারি জায়গা দখল করে বহুতলা ভবন নির্মাণ করছে শ্রমিক নেতা মো. হারুন। বি.এস দাগ নং ১৩৬৮৮, ১৩৬৮৯, ১৩৬৯০ নং বি.এস দাগের জায়গা দখল করে গত ৬ সেপ্টেম্বর ভবনটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। বহুতল ভবন নির্মাণের আগে পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র ও ফায়ার সার্ভিসের ফায়ার সেফটি সনদ নেয়া বাধ্যতামূলক হলেও তা নেয়া হয়নি এই ভবনটি নির্মাণে।

পরিবেশ অধিদফতরের ইমারত নির্মাণ বিধিতে রয়েছে, বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-১৯৯৫ (সংশোধিত-২০১০) অনুযায়ী বহুতল আবাসিক অথবা বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণে পরিবেশ ছাড়পত্র গ্রহণ বাধ্যতামূলক। আবার ইমারত বিধিমালায় সর্বোচ্চ পাঁচ ভবন নির্মাণের সময় ফায়ার সার্ভিস, পরিবেশ অধিদফতর, গ্যাস, ওয়াসা ও বিদ্যুৎ বিভাগের ছাড়পত্র নেয়া বাধ্যতামূলক রয়েছে।

পাশাপাশি হাইরাইজ ভবনে ফায়ার ডিটেক্টর, স্মোক ডিটেক্টর, উচ্চগতির পানি স্প্রে সিস্টেম ও কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমন সিস্টেম থাকাও বাধ্যতামূলক রয়েছে ফায়ার সার্ভিসের বিধিমালায়।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের হাটহাজারী স্টেশনের সিনিয়র স্টেশর অফিসার জাকির হোসেন বলেন, সড়কের পাশে ভবন নির্মাণের খবর আমরা শুনেছি। তবে কেউ ওই ভবন নির্মাণের জন্য আমাদের কাছ থেকে ফায়ার সেফটি লাইসেন্স নেয়নি।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে হাটহাজারী পৌরসভার প্রকৌশলী বেলাল আহম্মেদ খাঁন বলেন, অফিস, বাসা, বাড়ি বা অন্যকোনো স্থাপনা নির্মাণের পূর্বে পৌরসভা থেকে অনুমতি নেয়ার নিয়ম রয়েছে। তবে এই ভবনের বেলায় পৌর কর্তৃপক্ষের কোনো ধরনের অনুমতি দেয়া হয়নি।

ভবন নির্মাণ বন্ধে একটি আবেদন পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, অভিযোগটি তদন্ত করা হচ্ছে। এরপরই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তিনি বলেন, যে অবস্থায় দুই কড়া জমির উপর ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণভাবে নির্মাণ করা হচ্ছে, তা হেলে পড়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা বয়ে আনবে। কোনো ধরনের প্ল্যান ছাড়াই মনগড়া ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভবনটি নির্মাণের আগেই স্থানীয় ব্যবসায়ীদের দোকান বরাদ্দ দেয়ার কথা বলে প্রতি ব্যবসায়ীর কাছ থেকে  ৪৫ থেকে ৫০ লাখ টাকা করে অগ্রিম নেয়া হয়েছে। প্রায় পাঁচজন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে আড়াই কোটি টাকা নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে শাহ আলম নামের এক ব্যবসায়ী জানান, ভবনের নিচ তলার একটি দোকান বরাদ্দ পেতে তিনি চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. হারুনকে ৪২ লাখ টাকা দিয়েছেন।

একই কথা বলেন, অপর আরেক ব্যবসায়ী শহিদুল আলম। তিনি দোকান বরাদ্দ পেতে ৫০ লাখ টাকা দিয়েছেন।

সরকারি জমি দখল করে অবৈধভাবে ভবন নির্মাণ ও দোকান বরাদ্দ দিয়ে অর্থ আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. হারুন বলেন, সংগঠনের সিদ্ধান্ত মতে অফিস নির্মাণ করা হচ্ছে। এখনো বরাদ্দ পাইনি। পরে পাবো, জায়গাটি খালি পড়ে আছে, তাই সংগঠনের সদস্যদের সিদ্ধান্ত অনুসারে সংগঠনের জন্য একটি অফিস ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

সরকারি জমিতে শ্রমিক নেতার ঝুঁকিপূর্ণ ভবন নির্মাণ

আপডেট টাইম : ০৬:০০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ জেলার হাটহাজারীর বাজারের মধ্যে সরকারি জমিতে বহুতল ভবন নির্মাণ করে বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে এক শ্রমিক নেতার বিরুদ্ধে। ক্ষমতাসীন দলের প্রভাব খাটিয়ে ২ কড়া জমির ওপর ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটি নির্মাণ করছেন হাটহাজারী-নাজিরহাট-খাগড়াছড়ি বাস শ্রমিক ইউনিয়নের সেক্রেটারি মো. হারুন।

আর নির্মাণাধীন ভবনে দোকান বরাদ্দ দেয়ার কথা বলে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রায় আড়াই কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে এই বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানালেন হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক আকতার উননেসা শিউলী।

তিনি বলেন, সরকারি জমি দখলের সুযোগ কাউকে দেয়া হবে না। আমি খবর নিয়ে দেখছি।

এদিকে সরকারি জমি দখল করে অবৈধভাবে বহুতল ভবন নির্মাণ বন্ধ ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি)-হাটহাজারী, পৌর প্রশাসক-হাটহাজারী পৌরসভা ও বাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি/সাধারণ সম্পাদককে পৃথকভাবে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন স্থানীয়রা।

গত ২৮ আগস্ট দায়ের করা ওই অভিযোগে দুই কড়া জমির উপর অর্থাৎ ১৫ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৩ প্রস্থ আকারে নির্মাণাধীন ভবনটি রিখটার স্কেলে ৩ থেকে ৪ মাত্রার ভূমিকম্প হলে ধসেপড়ার আশঙ্কার কথা জানানো হয়েছে। স্থানীয় ৫০জন ব্যক্তি নিজেদের নাম স্বাক্ষর ও মোবাইল নাম্বার দিয়ে অভিযোগটি করেন।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, হাটহাজারীর বাজারের মধ্যে বাসস্টেশনে সড়কের পাশে সরকারি জায়গা দখল করে বহুতলা ভবন নির্মাণ করছে শ্রমিক নেতা মো. হারুন। বি.এস দাগ নং ১৩৬৮৮, ১৩৬৮৯, ১৩৬৯০ নং বি.এস দাগের জায়গা দখল করে গত ৬ সেপ্টেম্বর ভবনটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। বহুতল ভবন নির্মাণের আগে পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র ও ফায়ার সার্ভিসের ফায়ার সেফটি সনদ নেয়া বাধ্যতামূলক হলেও তা নেয়া হয়নি এই ভবনটি নির্মাণে।

পরিবেশ অধিদফতরের ইমারত নির্মাণ বিধিতে রয়েছে, বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-১৯৯৫ (সংশোধিত-২০১০) অনুযায়ী বহুতল আবাসিক অথবা বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণে পরিবেশ ছাড়পত্র গ্রহণ বাধ্যতামূলক। আবার ইমারত বিধিমালায় সর্বোচ্চ পাঁচ ভবন নির্মাণের সময় ফায়ার সার্ভিস, পরিবেশ অধিদফতর, গ্যাস, ওয়াসা ও বিদ্যুৎ বিভাগের ছাড়পত্র নেয়া বাধ্যতামূলক রয়েছে।

পাশাপাশি হাইরাইজ ভবনে ফায়ার ডিটেক্টর, স্মোক ডিটেক্টর, উচ্চগতির পানি স্প্রে সিস্টেম ও কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমন সিস্টেম থাকাও বাধ্যতামূলক রয়েছে ফায়ার সার্ভিসের বিধিমালায়।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের হাটহাজারী স্টেশনের সিনিয়র স্টেশর অফিসার জাকির হোসেন বলেন, সড়কের পাশে ভবন নির্মাণের খবর আমরা শুনেছি। তবে কেউ ওই ভবন নির্মাণের জন্য আমাদের কাছ থেকে ফায়ার সেফটি লাইসেন্স নেয়নি।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে হাটহাজারী পৌরসভার প্রকৌশলী বেলাল আহম্মেদ খাঁন বলেন, অফিস, বাসা, বাড়ি বা অন্যকোনো স্থাপনা নির্মাণের পূর্বে পৌরসভা থেকে অনুমতি নেয়ার নিয়ম রয়েছে। তবে এই ভবনের বেলায় পৌর কর্তৃপক্ষের কোনো ধরনের অনুমতি দেয়া হয়নি।

ভবন নির্মাণ বন্ধে একটি আবেদন পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, অভিযোগটি তদন্ত করা হচ্ছে। এরপরই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তিনি বলেন, যে অবস্থায় দুই কড়া জমির উপর ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণভাবে নির্মাণ করা হচ্ছে, তা হেলে পড়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা বয়ে আনবে। কোনো ধরনের প্ল্যান ছাড়াই মনগড়া ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভবনটি নির্মাণের আগেই স্থানীয় ব্যবসায়ীদের দোকান বরাদ্দ দেয়ার কথা বলে প্রতি ব্যবসায়ীর কাছ থেকে  ৪৫ থেকে ৫০ লাখ টাকা করে অগ্রিম নেয়া হয়েছে। প্রায় পাঁচজন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে আড়াই কোটি টাকা নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে শাহ আলম নামের এক ব্যবসায়ী জানান, ভবনের নিচ তলার একটি দোকান বরাদ্দ পেতে তিনি চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. হারুনকে ৪২ লাখ টাকা দিয়েছেন।

একই কথা বলেন, অপর আরেক ব্যবসায়ী শহিদুল আলম। তিনি দোকান বরাদ্দ পেতে ৫০ লাখ টাকা দিয়েছেন।

সরকারি জমি দখল করে অবৈধভাবে ভবন নির্মাণ ও দোকান বরাদ্দ দিয়ে অর্থ আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. হারুন বলেন, সংগঠনের সিদ্ধান্ত মতে অফিস নির্মাণ করা হচ্ছে। এখনো বরাদ্দ পাইনি। পরে পাবো, জায়গাটি খালি পড়ে আছে, তাই সংগঠনের সদস্যদের সিদ্ধান্ত অনুসারে সংগঠনের জন্য একটি অফিস ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে।