ঢাকা , শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
টাকার পাহাড় গড়েছেন তারা ভারতে বসে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে শেখ হাসিনা: সেলিমা রহমান ভারতে থাকার বৈধ মেয়াদ শেষ, কী ঘটবে শেখ হাসিনার ভাগ্যে ভারতে ‘এক দেশ এক ভোট’ কি সত্যিই হবে পুলিশের কাজ পুলিশকে দিয়েই করাতে হবে, আইন হাতে তুলে নেওয়া যাবে না জাতিসংঘ অধিবেশন নিউইয়র্কে যাদের সঙ্গে বৈঠক হতে পারে ড. ইউনূসের বৈশ্বিক-আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য পাকিস্তান-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক জরুরি: বাইডেন ইলিশের দাম কমছে না কেন বায়তুল মোকাররমে মুসল্লিদের মধ্যে হাতাহাতি, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনা মোতায়েন বায়তুল মোকাররমে মুসল্লিদের মধ্যে হাতাহাতি, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনা মোতায়েন

কিংবদন্তীর ‘দিল্লির আখড়া’

কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার কাটখাল ইউনিয়নে হিজল বনে ঘেরা এক মনোরম স্থান ‘দিল্লির আখড়া’। বর্ষায় দর্শনার্থীদের এক প্রিয় গন্তব্য এই ‘দিল্লির আখড়া’। হাওরের পানিতে জেগে থাকা শত শত হিজল গাছ এখানকার অন্যতম আকর্ষণ।

চারশো বছরের পুরনো এই আখড়া সম্পর্কে সুন্দর একটি গল্প আছে। এক সাধক নাকি এখানে এসেছিলেন ধ্যান করতে। তার ধ্যান ভাঙার জন্য কিছু দৈত্য তাকে নানাভাবে বিরক্ত করতো। একদিন এই সাধক মহাবিরক্ত হয়ে তার দিক্ষাগুরুর মন্ত্রবলে এই দৈত্যগুলোকে হিজল গাছ বানিয়ে রাখেন।

সাধুর বানিয়ে রাখা সেই হিজল গাছগুলো এখনও দাঁড়িয়ে আছে। হিজল গাছের সারি তিনশো একরের পুরো আখড়া এলাকা জুড়েই! শত শত হিজলগাছ! দেখলে ধারণা হতেই পারে, একসময় এগুলো সত্যি সত্যিই দৈত্য ছিলো! সারা বর্ষায় এগুলো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকে।

জায়গাটির নাম দিল্লির আখড়া কিভাবে হলো? সে আরেক গল্প। দিল্লির সম্রাট জাহাঙ্গীরের লোকজন নাকি একদিন ওই ধ্যানমগ্ন সাধকের পাশ দিয়ে নৌকার বহর নিয়ে নদীপথে যাচ্ছিলেন।

এ সময় সোনার মোহর ভর্তি একটি নৌকা পানিতে ডুবে যায়। নৌকার যাত্রীরা মোহর তোলার জন্য নদীপাড়ে আসে। ডুব দিয়ে তারা দু-একটি মোহর তুলেও আনে।

কিন্তু সেই মোহরগুলোও চোখের ইশারায় পানিতে ফেলে দেন ওই সাধক। পরে নৌকার যাত্রীদের অনুরোধে তিনি সোনার মোহরগুলো মাছের ঝাঁকের মতো পানির উপর ভাসাতে থাকেন। মোহরগুলো তুলে নেন যাত্রীরা।

এই ঘটনা শুনে সম্রাট জাহাঙ্গীর অভিভূত হন। পরে তিনশ’ একর জমি তাম্রলিপির মাধ্যমে সেই সাধুর আখড়ার নামে দান করে দেন। সেই থেকে এটি দিল্লির আখড়া।

হিজলের বন ভেদ করে একবার আখড়ায় পৌঁছতে পারলেই দেখা যাবে সেই সাধুর স্মৃতি। আখড়ার নির্জনতায় আপনারও মনে হবে, সত্যি এটি ধ্যান করার মতো চমৎকার একটি স্থান বটে।

আখড়ায় রয়েছে ধর্মশালা, নাটমন্দির, অতিথিশালা, পাকশালা ও বৈষ্ণবদেব থাকার ঘর। বর্তমানে আখড়ায় মোহন্ত নারায়ণ দাসসহ তিনজন বৈষ্ণব আছেন। এখানে আশ্রিত হয়ে আছে ৪০-৫০ জন শ্রমজীবী মানুষ। সবাই নিরামিষভোজি। থাকে একটি যৌথ পরিবারের মতো।

রাতে এখানে দর্শনার্থীদের থাকারও ব্যবস্থা আছে। আখড়ার পাশে রয়েছে ঘের দেয়া দুটি পুকুর।  ইচ্ছে করলে পুকুরের ঘাটলায় বসে কাটিয়ে দেয়া যাবে চমৎকার একটা বিকেল।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

টাকার পাহাড় গড়েছেন তারা

কিংবদন্তীর ‘দিল্লির আখড়া’

আপডেট টাইম : ০৭:৪৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩১ অগাস্ট ২০১৯

কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার কাটখাল ইউনিয়নে হিজল বনে ঘেরা এক মনোরম স্থান ‘দিল্লির আখড়া’। বর্ষায় দর্শনার্থীদের এক প্রিয় গন্তব্য এই ‘দিল্লির আখড়া’। হাওরের পানিতে জেগে থাকা শত শত হিজল গাছ এখানকার অন্যতম আকর্ষণ।

চারশো বছরের পুরনো এই আখড়া সম্পর্কে সুন্দর একটি গল্প আছে। এক সাধক নাকি এখানে এসেছিলেন ধ্যান করতে। তার ধ্যান ভাঙার জন্য কিছু দৈত্য তাকে নানাভাবে বিরক্ত করতো। একদিন এই সাধক মহাবিরক্ত হয়ে তার দিক্ষাগুরুর মন্ত্রবলে এই দৈত্যগুলোকে হিজল গাছ বানিয়ে রাখেন।

সাধুর বানিয়ে রাখা সেই হিজল গাছগুলো এখনও দাঁড়িয়ে আছে। হিজল গাছের সারি তিনশো একরের পুরো আখড়া এলাকা জুড়েই! শত শত হিজলগাছ! দেখলে ধারণা হতেই পারে, একসময় এগুলো সত্যি সত্যিই দৈত্য ছিলো! সারা বর্ষায় এগুলো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকে।

জায়গাটির নাম দিল্লির আখড়া কিভাবে হলো? সে আরেক গল্প। দিল্লির সম্রাট জাহাঙ্গীরের লোকজন নাকি একদিন ওই ধ্যানমগ্ন সাধকের পাশ দিয়ে নৌকার বহর নিয়ে নদীপথে যাচ্ছিলেন।

এ সময় সোনার মোহর ভর্তি একটি নৌকা পানিতে ডুবে যায়। নৌকার যাত্রীরা মোহর তোলার জন্য নদীপাড়ে আসে। ডুব দিয়ে তারা দু-একটি মোহর তুলেও আনে।

কিন্তু সেই মোহরগুলোও চোখের ইশারায় পানিতে ফেলে দেন ওই সাধক। পরে নৌকার যাত্রীদের অনুরোধে তিনি সোনার মোহরগুলো মাছের ঝাঁকের মতো পানির উপর ভাসাতে থাকেন। মোহরগুলো তুলে নেন যাত্রীরা।

এই ঘটনা শুনে সম্রাট জাহাঙ্গীর অভিভূত হন। পরে তিনশ’ একর জমি তাম্রলিপির মাধ্যমে সেই সাধুর আখড়ার নামে দান করে দেন। সেই থেকে এটি দিল্লির আখড়া।

হিজলের বন ভেদ করে একবার আখড়ায় পৌঁছতে পারলেই দেখা যাবে সেই সাধুর স্মৃতি। আখড়ার নির্জনতায় আপনারও মনে হবে, সত্যি এটি ধ্যান করার মতো চমৎকার একটি স্থান বটে।

আখড়ায় রয়েছে ধর্মশালা, নাটমন্দির, অতিথিশালা, পাকশালা ও বৈষ্ণবদেব থাকার ঘর। বর্তমানে আখড়ায় মোহন্ত নারায়ণ দাসসহ তিনজন বৈষ্ণব আছেন। এখানে আশ্রিত হয়ে আছে ৪০-৫০ জন শ্রমজীবী মানুষ। সবাই নিরামিষভোজি। থাকে একটি যৌথ পরিবারের মতো।

রাতে এখানে দর্শনার্থীদের থাকারও ব্যবস্থা আছে। আখড়ার পাশে রয়েছে ঘের দেয়া দুটি পুকুর।  ইচ্ছে করলে পুকুরের ঘাটলায় বসে কাটিয়ে দেয়া যাবে চমৎকার একটা বিকেল।