ঢাকা , বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঐশীকে আদালতে হাজিরের নির্দেশ

পুলিশ দম্পতি হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তাদের মেয়ে ঐশী রহমানের মানসিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করার জন্য আদালতে হাজিরের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

রোববার ডেথ রেফারেন্স শুনানিকালে বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের বেঞ্চ ঐশীকে আগামী ১০ এপ্রিল আদালতে হাজিরের নির্দেশ দেন। সোমবার মামলাটির শুনানিকালে ঐশীর আইনজীবী সুধীর চ্যাটার্জি বলেন, যেসময় হত্যাকাণ্ডটি ঘটে সেসময় ঐশী মানসিক ভারসাম্যহীন ছিল। এসময় আদালতে একটি টেলিভিশন প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ঐশীর বাবার পরিবারে জীনগত মানসিকভাবে ভারসাম্যহীনতার সমস্যা রয়েছে। শুনানিকালে এই যুক্তি উপস্থাপনের পর আদালত আগামী ১০ এপ্রিল সকাল ১০টায় তাকে হাজিরের নির্দেশ দেন।

আদালতে হাজিরের বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জহিরুল হক বলেন, এ মুহূর্তে ঐশীকে হাজির করলে মামলার কার্যক্রম ব্যাহত হতে পারে। এছাড়া তার মানসিক অবস্থা পরীক্ষা করেই বিচারিক আদালত রায় দিয়েছে। এরপর আদালত দুই আইনজীবীকে ঐশীকে হাজির করার আদেশ


দেন।

প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ১৬ আগস্ট রাজধানীর মালিবাগের চামেলীবাগে নিজেদের বাসা থেকে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (পলিটিক্যাল শাখা) ইন্সপেক্টর মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমানের ক্ষত-বিক্ষত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এর পরদিন তাদের মেয়ে ঐশী রহমান গৃহকর্মী সুমীকে নিয়ে রমনা থানায় আত্মসমর্পণ করেন। ২০১৪ সালের ৯ মার্চ ঐশীসহ চারজনকে অভিযুক্ত করে পৃথক দু’টি চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ।

গত বছরের ৬ মে ঐশীসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত। দু’টি খুনের জন্য পৃথক দু’টি অভিযোগ গঠন করা হয়।

পরে ২০১৫ সালের ১২ নভেম্বর এ মামলার বিচার শেষে নিহতদের একমাত্র মেয়ে ঐশী রহমানকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন ঢাকার ৩ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল। দু’টি অপরাধের জন্য আলাদা আলাদা করে ঐশীকে দুইবার ফাঁসি ও দু’বারে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

মামলার অন্য আসামি ঐশীর বন্ধু মিজানুর রহমান রনিকে খুনের ঘটনার পর ঐশীকে আশ্রয় দেয়ার অপরাধে দু’বছরের কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানা অনাদায়ে তাকে আরও একমাস কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে।

অপর আসামি ঐশীর বন্ধু আসাদুজ্জামান জনি খালাস পান। এছাড়া গৃহকর্মী খাদিজা আক্তার সুমি অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় তার মামলাটির বিচার চলছে শিশু আদালতে। ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৭৪ ধারা অনুযায়ী বিচারিক আদালত ঘোষিত ফাঁসির রায় কার্যকর করতে হলে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের অনুমতি নিতে হয়।

এ ধারায় বলা হয়েছে, ‘দায়রা আদালত যখন মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন, তখন হাইকোর্ট বিভাগে কার্যক্রম পেশ করবেন এবং হাইকোর্ট বিভাগ উহা অনুমোদন না করলে দণ্ড কার্যকর করা যাবে না।’

রায়ের তিনদিন পর এ মামলার যাবতীয় নথি ‘ডেথরেফারেন্স’ হিসেবে হাইকোর্টে পাঠানো হয়। এছাড়া ফৌজদারি কার্যবিধির ৪১৮ ধারা অনুযায়ী বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করতে পারেন আসামিপক্ষ।

ঐশী রহমান নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলও দায়ের করেন। ১২ মার্চ তার আপিল ও ডেথরেফারেন্সের ওপর একসঙ্গে শুনানি শুরু হয়েছে। আজ শুনানি চলাকালে আদালত এ আদেশ দেন।

 

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

ঐশীকে আদালতে হাজিরের নির্দেশ

আপডেট টাইম : ০৮:৪৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩ এপ্রিল ২০১৭

পুলিশ দম্পতি হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তাদের মেয়ে ঐশী রহমানের মানসিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করার জন্য আদালতে হাজিরের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

রোববার ডেথ রেফারেন্স শুনানিকালে বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের বেঞ্চ ঐশীকে আগামী ১০ এপ্রিল আদালতে হাজিরের নির্দেশ দেন। সোমবার মামলাটির শুনানিকালে ঐশীর আইনজীবী সুধীর চ্যাটার্জি বলেন, যেসময় হত্যাকাণ্ডটি ঘটে সেসময় ঐশী মানসিক ভারসাম্যহীন ছিল। এসময় আদালতে একটি টেলিভিশন প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ঐশীর বাবার পরিবারে জীনগত মানসিকভাবে ভারসাম্যহীনতার সমস্যা রয়েছে। শুনানিকালে এই যুক্তি উপস্থাপনের পর আদালত আগামী ১০ এপ্রিল সকাল ১০টায় তাকে হাজিরের নির্দেশ দেন।

আদালতে হাজিরের বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জহিরুল হক বলেন, এ মুহূর্তে ঐশীকে হাজির করলে মামলার কার্যক্রম ব্যাহত হতে পারে। এছাড়া তার মানসিক অবস্থা পরীক্ষা করেই বিচারিক আদালত রায় দিয়েছে। এরপর আদালত দুই আইনজীবীকে ঐশীকে হাজির করার আদেশ


দেন।

প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ১৬ আগস্ট রাজধানীর মালিবাগের চামেলীবাগে নিজেদের বাসা থেকে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (পলিটিক্যাল শাখা) ইন্সপেক্টর মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমানের ক্ষত-বিক্ষত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এর পরদিন তাদের মেয়ে ঐশী রহমান গৃহকর্মী সুমীকে নিয়ে রমনা থানায় আত্মসমর্পণ করেন। ২০১৪ সালের ৯ মার্চ ঐশীসহ চারজনকে অভিযুক্ত করে পৃথক দু’টি চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ।

গত বছরের ৬ মে ঐশীসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত। দু’টি খুনের জন্য পৃথক দু’টি অভিযোগ গঠন করা হয়।

পরে ২০১৫ সালের ১২ নভেম্বর এ মামলার বিচার শেষে নিহতদের একমাত্র মেয়ে ঐশী রহমানকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন ঢাকার ৩ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল। দু’টি অপরাধের জন্য আলাদা আলাদা করে ঐশীকে দুইবার ফাঁসি ও দু’বারে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

মামলার অন্য আসামি ঐশীর বন্ধু মিজানুর রহমান রনিকে খুনের ঘটনার পর ঐশীকে আশ্রয় দেয়ার অপরাধে দু’বছরের কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানা অনাদায়ে তাকে আরও একমাস কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে।

অপর আসামি ঐশীর বন্ধু আসাদুজ্জামান জনি খালাস পান। এছাড়া গৃহকর্মী খাদিজা আক্তার সুমি অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় তার মামলাটির বিচার চলছে শিশু আদালতে। ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৭৪ ধারা অনুযায়ী বিচারিক আদালত ঘোষিত ফাঁসির রায় কার্যকর করতে হলে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের অনুমতি নিতে হয়।

এ ধারায় বলা হয়েছে, ‘দায়রা আদালত যখন মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন, তখন হাইকোর্ট বিভাগে কার্যক্রম পেশ করবেন এবং হাইকোর্ট বিভাগ উহা অনুমোদন না করলে দণ্ড কার্যকর করা যাবে না।’

রায়ের তিনদিন পর এ মামলার যাবতীয় নথি ‘ডেথরেফারেন্স’ হিসেবে হাইকোর্টে পাঠানো হয়। এছাড়া ফৌজদারি কার্যবিধির ৪১৮ ধারা অনুযায়ী বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করতে পারেন আসামিপক্ষ।

ঐশী রহমান নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলও দায়ের করেন। ১২ মার্চ তার আপিল ও ডেথরেফারেন্সের ওপর একসঙ্গে শুনানি শুরু হয়েছে। আজ শুনানি চলাকালে আদালত এ আদেশ দেন।