বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ মাতৃভাষা রক্ষার দাবিতে প্রাণ দেয়া শহীদদের স্মরণে প্রথম শহীদ মিনার নির্মাণ করেছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্ররা। ১৯৫২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে এর নির্মাণকাজ শুরু হয়, শেষ হয় ২৪ তারিখ ভোরে।
কাগজের ওপর ‘শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ’ লিখে এতে গেঁথে দেয়া হয়। শহীদ শফিউরের পিতা আনুষ্ঠানিকভাবে শহীদ মিনারের উদ্বোধন করেন। ২৬ ফেব্রুয়ারি পুলিশ ও পাকিস্তান সেনাবাহিনী মেডিকেলের ছাত্রদের আবাসিক হোস্টেল ঘিরে ফেলে এবং প্রথম শহীদ মিনার ভেঙে ফেলে। ১৯৫৭ সালে বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি দেয়ার পর সরকারিভাবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের কাজ শুরু হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহামুদ হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত কমিটির তত্ত্বাবধানে ১৯৬৩ সালে শহীদ মিনারের নির্মাণকাজ শেষ হয়।
২১ ফেব্রুয়ারি এখন আর বাংলা ভাষা বা বাংলাদেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। ২১ ফেব্রুয়ারি এখন জাতিসংঘ ঘোষিত ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’, যা বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে। সম্প্রতি আমরা লক্ষ করেছি, এ দিবস পালন করতে গিয়ে দেশে-বিদেশে শহীদ মিনার নির্মাণে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের প্রতিকৃতি বা কাঠামোকে অনুসরণ করা হচ্ছে না।
যে যার মতো করে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছে। অথচ আমাদের জাতীয় শহীদ মিনার একটি নির্দিষ্ট ভাবনা থেকে নির্মিত হয়েছে এবং বাংলাদেশের প্রথিতযশা শিল্পীরা ভাষা আন্দোলনের তাৎপর্যকে ধারণ করে এ শহীদ মিনার নির্মাণ করেছেন। মায়ের সঙ্গে ভাষার সম্পর্ক। মা ও ভাষাকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে শহীদ মিনারের স্থাপনার মাধ্যমে।
গোল আকৃতির লাল সূর্য সংযোজন করে ভাষার অধিকারের বিষয়টিকে আরও প্রাঞ্জল ও শক্তিশালী করা হয়েছে। তৎকালীন সরকার শহীদ মিনারের এ কাঠামো অনুমোদন করে এবং কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মিত হয়, যেখানে যুগ যুগ ধরে রাষ্ট্রীয় ও জাতীয়ভাবে সম্মান জানানো হচ্ছে। যেহেতু ২১ ফেব্রুয়ারি এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, সেহেতু দিবসটি পালন করতে গিয়ে সারা বিশ্বে শহীদ মিনার নির্মিত হচ্ছে এবং হবে।
কিন্তু বিভিন্ন আকৃতির শহীদ মিনার নির্মিত হওয়ায় একসময় ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনের বিষয়টিকে নানা ব্যাখ্যা দিয়ে বোঝাতে হবে। এর ফলে আগামী প্রজন্মের সামনে আমাদের সঠিক ইতিহাস বিকৃত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যাবে।
তাই বর্তমান কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের মতো সরল ও তাৎপর্যপূর্ণ স্তম্ভ নির্মাণে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আবেদন জানাচ্ছি, যাতে আগামী প্রজন্ম এবং সারা বিশ্ব এ স্মৃতিস্তম্ভ দিয়েই বাংলাদেশ এবং তার ইতিহাসকে সহজেই জানতে পারে। আমরা জানি, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণের পরিকল্পনার পেছনে শিল্পী হামিদুর রহমান, ভাস্কর নভেরা ও একজন বিদেশি স্থপতির সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।
বিশ্বে এ পর্যন্ত যে ভাস্কর্যটি সবচেয়ে বেশি নির্মিত হয়েছে তা হল আমাদের শহীদ মিনার। এ পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের কাছে দাবি- যখন যেখানেই (দেশে-বিদেশে) শহীদ মিনার নির্মাণ করা হবে তার জন্য একটা নির্দিষ্ট নির্মাণ কাঠামো নীতিমালা করার, যাতে সবাই এ কাঠামো অনুসরণ করেই শহীদ মিনার নির্মাণ করে।
জাতিসংঘ যেমন ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ঘোষণা করেছে, তেমনি মাতৃভাষা রক্ষায় আমাদের জাতীয় শহীদ মিনারের আদলে স্মৃতিস্তম্ভ সারা বিশ্বে নির্মাণের ঘোষণা দিয়ে ভাষাসংগ্রাম এবং ভাষাশহীদদের স্মৃতিকে আরও শক্তিশালী করে তুলতে পারে, যার মাধ্যমে সারা বিশ্বে একই দিনে একই রকমের শহীদ মিনারের সামনে দাঁড়িয়ে সবাই মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারবেন। এতে সমগ্র বিশ্বে আমাদের ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিস্তম্ভটি শুধুই বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবে এবং বিশ্বে আগামী প্রজন্মের কাছে তা ভাষা, স্বাধীনতা, বাঙালির সংগ্রামকে তুলে ধরতে সহায়ক হবে।