ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

উত্তপ্ত নিত্যপণ্যের বাজার

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার চেষ্টা করছে বটে, কিন্তু কিছুতেই তা নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। পেঁয়াজের ঝাঁজে যখন অস্থির ভোক্তারা, ঠিক তখই বেড়ে গেছে চাল, আলু, সবজি, ডাল, তেল, কাঁচামরিচ, আদাসহ বিভিন্ন পণ্যের মূল্য।

খুচরা বাজারে কোনো ধরনের সবজিই প্রতি কেজি ৮০-৯০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না। আর চাল? সরকারের পক্ষ থেকে মিল পর্যায়ে চালের দাম নির্ধারণ করে দেয়া হলেও তা বস্তাপ্রতি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে মোটা চালের দাম কেজিতে সর্বোচ্চ ৫২ টাকা পর্যন্ত গিয়ে ঠেকেছে। আলুর ক্ষেত্রেও একই কথা।

গত বছর এ সময় আলু কেজি প্রতি ২০ থেকে ২৫ টাকায় বিক্রি হতো, সেই আলু এখন বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়।

নিত্যপণ্যের এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির পেছনে কি যৌক্তিক কোনো কারণ রয়েছে? মোটেও না। সেই পুরনো সিন্ডিকেটের কারসাজিই মূল কারণ। বস্তুত, নিত্যপণ্যের সিন্ডিকেটগুলো শুধু বাজার নয়, জিম্মি করে ফেলেছে সরকারকেও। বাজার তদারকি সংস্থা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক বলেছেন, বাজারে পণ্যমূল্য কমাতে প্রতিদিন একাধিক টিম কাজ করছে।

অসাধু ও অনৈতিক যে কোনো কাজের ক্ষেত্রে এই অধিদফতর জিরো টলারেন্স প্রদর্শন করছে। আমাদের কথা হল, যদি তা-ই হয়, তাহলে নিত্যপণ্যের মূল্য বাড়ছে কেন? তবে কি ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর নামকাওয়াস্তে তদারকি করছে? টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান ঠিকই বলেছেন- অসাধু ব্যবসায়ী তথা সিন্ডিকেটগুলো অত্যন্ত প্রভাবশালী। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার মতো সৎসাহস আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অথবা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নেই।

আবার কর্তৃপক্ষ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার কেউ কেউ নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির ঘটনার সঙ্গে জড়িত। আসলে পুরো বিষয়টি একটি দুষ্টচক্রের মধ্যে পড়ে গেছে। এই চক্র ভাঙার জন্য যে সুশাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা দরকার, তা অনুপস্থিত। গা-ছাড়া তদারকিতে তাই কিছুই হচ্ছে না।

নিত্যপণ্যের বাজারকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে অবশ্যই। প্রকৃতপক্ষে স্বল্প ও সীমিত আয়ের নাগরিকদের নাভিশ্বাস উঠে গেছে। মুক্তবাজার অর্থনীতি মানে এই নয় যে, তাতে কোনো শৃঙ্খলা থাকবে না। মুক্তবাজার অর্থনীতিতেও সরকারের একটা নিয়ন্ত্রণ থাকতে হয়। সবকিছুই যদি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তাহলে সরকারের অস্তিত্ব থাকে কোথায়? এটা কোনো কথা হতে পারে না যে, সরকার চালের দাম নির্ধারণ করে দেবে, অথচ সেই নির্ধারিত মূল্যে চাল বিক্রি হবে না!

এটা স্পষ্ট হয়েছে, দেশের অসাধু ব্যবসায়ীদের ন্যূনতম দেশাত্মবোধ ও মানবিকতা বলতে কিছু নেই। অর্থলোভই এদের একমাত্র চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। মুখের কথা বা উপদেশে তাদের এই চরিত্র বদল হওয়ার নয়। তাই সরকারকে নিতে হবে কঠোর অবস্থান। মুক্তি দিতে হবে স্বল্প ও সীমিত আয়ের মানুষদের।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

উত্তপ্ত নিত্যপণ্যের বাজার

আপডেট টাইম : ১১:৩৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১২ অক্টোবর ২০২০

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার চেষ্টা করছে বটে, কিন্তু কিছুতেই তা নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। পেঁয়াজের ঝাঁজে যখন অস্থির ভোক্তারা, ঠিক তখই বেড়ে গেছে চাল, আলু, সবজি, ডাল, তেল, কাঁচামরিচ, আদাসহ বিভিন্ন পণ্যের মূল্য।

খুচরা বাজারে কোনো ধরনের সবজিই প্রতি কেজি ৮০-৯০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না। আর চাল? সরকারের পক্ষ থেকে মিল পর্যায়ে চালের দাম নির্ধারণ করে দেয়া হলেও তা বস্তাপ্রতি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে মোটা চালের দাম কেজিতে সর্বোচ্চ ৫২ টাকা পর্যন্ত গিয়ে ঠেকেছে। আলুর ক্ষেত্রেও একই কথা।

গত বছর এ সময় আলু কেজি প্রতি ২০ থেকে ২৫ টাকায় বিক্রি হতো, সেই আলু এখন বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়।

নিত্যপণ্যের এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির পেছনে কি যৌক্তিক কোনো কারণ রয়েছে? মোটেও না। সেই পুরনো সিন্ডিকেটের কারসাজিই মূল কারণ। বস্তুত, নিত্যপণ্যের সিন্ডিকেটগুলো শুধু বাজার নয়, জিম্মি করে ফেলেছে সরকারকেও। বাজার তদারকি সংস্থা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক বলেছেন, বাজারে পণ্যমূল্য কমাতে প্রতিদিন একাধিক টিম কাজ করছে।

অসাধু ও অনৈতিক যে কোনো কাজের ক্ষেত্রে এই অধিদফতর জিরো টলারেন্স প্রদর্শন করছে। আমাদের কথা হল, যদি তা-ই হয়, তাহলে নিত্যপণ্যের মূল্য বাড়ছে কেন? তবে কি ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর নামকাওয়াস্তে তদারকি করছে? টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান ঠিকই বলেছেন- অসাধু ব্যবসায়ী তথা সিন্ডিকেটগুলো অত্যন্ত প্রভাবশালী। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার মতো সৎসাহস আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অথবা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নেই।

আবার কর্তৃপক্ষ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার কেউ কেউ নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির ঘটনার সঙ্গে জড়িত। আসলে পুরো বিষয়টি একটি দুষ্টচক্রের মধ্যে পড়ে গেছে। এই চক্র ভাঙার জন্য যে সুশাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা দরকার, তা অনুপস্থিত। গা-ছাড়া তদারকিতে তাই কিছুই হচ্ছে না।

নিত্যপণ্যের বাজারকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে অবশ্যই। প্রকৃতপক্ষে স্বল্প ও সীমিত আয়ের নাগরিকদের নাভিশ্বাস উঠে গেছে। মুক্তবাজার অর্থনীতি মানে এই নয় যে, তাতে কোনো শৃঙ্খলা থাকবে না। মুক্তবাজার অর্থনীতিতেও সরকারের একটা নিয়ন্ত্রণ থাকতে হয়। সবকিছুই যদি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তাহলে সরকারের অস্তিত্ব থাকে কোথায়? এটা কোনো কথা হতে পারে না যে, সরকার চালের দাম নির্ধারণ করে দেবে, অথচ সেই নির্ধারিত মূল্যে চাল বিক্রি হবে না!

এটা স্পষ্ট হয়েছে, দেশের অসাধু ব্যবসায়ীদের ন্যূনতম দেশাত্মবোধ ও মানবিকতা বলতে কিছু নেই। অর্থলোভই এদের একমাত্র চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। মুখের কথা বা উপদেশে তাদের এই চরিত্র বদল হওয়ার নয়। তাই সরকারকে নিতে হবে কঠোর অবস্থান। মুক্তি দিতে হবে স্বল্প ও সীমিত আয়ের মানুষদের।