ঢাকা , বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চেক নিয়ে প্রতারণা, ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতে সুশাসন জরুরি

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ একটি বাণিজ্যিক ব্যাংক ও তিনটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক বাংলাদেশ ব্যাংকের চেক নিয়ে অভিনব প্রতারণার ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে খোদ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শন প্রতিবেদনে।

এতে জানা যায়, বেসরকারি খাতের ফারমার্স ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (আইএলএফএস), পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (পিএলএফএস) এবং বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানির (বিআইএফসি) কিছু অসাধু পরিচালক প্রভাব খাটিয়ে বেআইনিভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের চেক দিয়ে ঋণ বা লিজের অর্থ ছাড় করতে বাধ্য করেছেন কর্মকর্তাদের।

চেকের অর্থ কয়েক হাত ঘুরে ওই পরিচালকদের পকেটে গেছে ঋণের টাকা হিসেবে, যা পরে তারা আত্মসাৎ করেছেন। এভাবে তুলে নেয়া অর্থ এখন খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। এর বিপরীতে প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে কোনো জামানতও নেই। ফলে ঋণের অর্থ আদায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। বিষয়টি উদ্বেগজনক।

প্রতারকরা যে কত অভিনব পন্থায় ব্যাংকের অর্থ হাতিয়ে নিতে পারে, এ ঘটনা তার একটি প্রমাণ। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ব্যাংকের চেক ব্যবহারে কড়াকড়ি রয়েছে। বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ছাড়া দেশের অন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংকের চেক ব্যবহার করতে পারে না।

অনিয়ম ঠেকাতেই এ কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। তারপরও বসে থাকেনি প্রতারকরা।

ইতঃপূর্বে দেশের ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতে নানা ধরনের জালিয়াতি ও প্রতারণার ঘটনা উদ্ঘাটিত হয়েছে। দেখা গেছে, এসব ঘটনার সঙ্গে বাণিজ্যিক ব্যাংকের কতিপয় পরিচালকসহ দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা জড়িত। এ কারণে এ খাতে সরকারের বিশেষভাবে নজর দেয়া প্রয়োজন।

দুর্ভাগ্যজনক, ব্যাংকিং খাতে সুশাসন ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার বিষয়টি আজও নিশ্চিত করা যায়নি। ফলে মিথ্যা তথ্য ও জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণ নেয়ার প্রবণতা অব্যাহত আছে। অধিকাংশ বেসরকারি ব্যাংকের মালিক ও পরিচালক রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকেন। ফলে তাদের ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ ও কর্তৃত্ব অনেকটাই শিথিল।

এ সুযোগে নিয়মনীতি উপেক্ষা করে তারা নানা ধরনের আর্থিক কেলেঙ্কারির জন্ম দিচ্ছেন। তাই আমরা মনে করি, ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি দুর্নীতিবাজদের রাষ্ট্রীয় ও সামাজিকভাবে বর্জনের পদক্ষেপ নেয়া দরকার।

সুশাসন ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা না গেলে বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর মানুষ আস্থা হারাবে, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির ওপর।

বাংলাদেশ ব্যাংকের চেক নিয়ে প্রতারণার ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে, এটাই কাম্য। ঘটনাটির তদন্তে দুদকও এগিয়ে আসতে পারে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

চেক নিয়ে প্রতারণা, ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতে সুশাসন জরুরি

আপডেট টাইম : ০৪:০৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ নভেম্বর ২০২০

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ একটি বাণিজ্যিক ব্যাংক ও তিনটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক বাংলাদেশ ব্যাংকের চেক নিয়ে অভিনব প্রতারণার ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে খোদ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শন প্রতিবেদনে।

এতে জানা যায়, বেসরকারি খাতের ফারমার্স ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (আইএলএফএস), পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (পিএলএফএস) এবং বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানির (বিআইএফসি) কিছু অসাধু পরিচালক প্রভাব খাটিয়ে বেআইনিভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের চেক দিয়ে ঋণ বা লিজের অর্থ ছাড় করতে বাধ্য করেছেন কর্মকর্তাদের।

চেকের অর্থ কয়েক হাত ঘুরে ওই পরিচালকদের পকেটে গেছে ঋণের টাকা হিসেবে, যা পরে তারা আত্মসাৎ করেছেন। এভাবে তুলে নেয়া অর্থ এখন খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। এর বিপরীতে প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে কোনো জামানতও নেই। ফলে ঋণের অর্থ আদায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। বিষয়টি উদ্বেগজনক।

প্রতারকরা যে কত অভিনব পন্থায় ব্যাংকের অর্থ হাতিয়ে নিতে পারে, এ ঘটনা তার একটি প্রমাণ। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ব্যাংকের চেক ব্যবহারে কড়াকড়ি রয়েছে। বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ছাড়া দেশের অন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংকের চেক ব্যবহার করতে পারে না।

অনিয়ম ঠেকাতেই এ কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। তারপরও বসে থাকেনি প্রতারকরা।

ইতঃপূর্বে দেশের ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতে নানা ধরনের জালিয়াতি ও প্রতারণার ঘটনা উদ্ঘাটিত হয়েছে। দেখা গেছে, এসব ঘটনার সঙ্গে বাণিজ্যিক ব্যাংকের কতিপয় পরিচালকসহ দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা জড়িত। এ কারণে এ খাতে সরকারের বিশেষভাবে নজর দেয়া প্রয়োজন।

দুর্ভাগ্যজনক, ব্যাংকিং খাতে সুশাসন ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার বিষয়টি আজও নিশ্চিত করা যায়নি। ফলে মিথ্যা তথ্য ও জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণ নেয়ার প্রবণতা অব্যাহত আছে। অধিকাংশ বেসরকারি ব্যাংকের মালিক ও পরিচালক রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকেন। ফলে তাদের ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ ও কর্তৃত্ব অনেকটাই শিথিল।

এ সুযোগে নিয়মনীতি উপেক্ষা করে তারা নানা ধরনের আর্থিক কেলেঙ্কারির জন্ম দিচ্ছেন। তাই আমরা মনে করি, ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি দুর্নীতিবাজদের রাষ্ট্রীয় ও সামাজিকভাবে বর্জনের পদক্ষেপ নেয়া দরকার।

সুশাসন ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা না গেলে বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর মানুষ আস্থা হারাবে, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির ওপর।

বাংলাদেশ ব্যাংকের চেক নিয়ে প্রতারণার ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে, এটাই কাম্য। ঘটনাটির তদন্তে দুদকও এগিয়ে আসতে পারে।