বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ করোনা মহামারিতে শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা দুনিয়ার ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দা দেখা দিয়েছে।
এ অবস্থায় দেশের বিকাশমান উৎপাদনশীল শিল্প খাতের সুরক্ষায় ৯ দফা দাবি উত্থাপন করেছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো এ সংক্রান্ত চিঠিতে তারা অগ্রিম আয়কর ও আগাম কর সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাহার এবং উৎসে আয়কর কমানোর আবেদন জানিয়েছেন। কাটার সেকশন ড্রেজার মূলধনি যন্ত্রপাতি হিসাবে ১ শতাংশ আমদানি শুল্ক এবং সব ধরনের রপ্তানি খাতে ১০ শতাংশ করপোরেট কর নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়েছে সংগঠনটি।
কৃষিভিত্তিক হিমাগার শিল্প খাতে আয়কর কমিয়ে ১০ শতাংশ করার পাশাপাশি তাদের প্রস্তাব ফ্ল্যাট ও প্লটের রেজিস্ট্রেশন ফি ও কর কমিয়ে ৭ শতাংশ নির্ধারণের।
বিনিয়োগের স্বার্থে ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আয়কর কমিয়ে ৩৫ শতাংশ নির্ধারণের দাবি জানানো হয়েছে চিঠিতে। দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন কার্যক্রমে গতিশীলতা আনতে একটি জনবান্ধব, উৎপাদনশীল ও শুল্কবান্ধব টেকসই রাজস্ব পরিকাঠামো নিশ্চিত করতে তারা সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
করোনার কারণে দেশের অর্থনীতি গভীর সংকটে। লাখ লাখ মানুষ বেকার। কর্মসংস্থানের খাতগুলো সংকুচিত হয়ে পড়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি আনতে সরকার ইতোমধ্যে ব্যবসায়ীদের প্রণোদনা দিয়েছে। এর সুফল অনুভূত হয়েছে অর্থনীতিতে। ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে করের বোঝা ও জটিলতা কমালে তা অর্থনীতির ক্ষত উপশমে অবদান রাখবে বলে ব্যাপকভাবে আশা করা হয়। আমাদের বিশ্বাস, বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থেই ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের প্রস্তাবগুলো সুবিবেচনা করা হবে।
করোনার প্রভাবে একদিকে চাকরিতে ঢোকার যোগ্যতাসম্পন্ন তরুণদের জন্য নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে না, অন্যদিকে অনেকের লেখাপড়া শেষ হয়নি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। বিনিয়োগে ধীরগতি। কর্মসংস্থান হচ্ছে না।
আমরা জানি, বিনিয়োগ বাড়লে কর্মসংস্থান বাড়বে। সারা বিশ্বেই সরকারি বিনিয়োগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়তে থাকে। আবার সরকারি বিনিয়োগের সঙ্গে কর্মসংস্থানের যোগ রয়েছে। কারখানা বাড়লে মানুষের কাজের সুযোগ বাড়ে। কাজ পেলে আয় বাড়ে, সেই সঙ্গে বাড়ে জীবনযাত্রার মান। বিনিয়োগ, বাজার, কর্মসংস্থান-এসব একসূত্রে গাঁথা। কিন্তু বাংলাদেশের বাস্তবতা কী? এখানে সরকারি বিনিয়োগ যেভাবে বেড়েছে, সেই হারে কি বেসরকারি বিনিয়োগ বেড়েছে? বরং আমরা দেখতে পাই, করোনার ধাক্কায় অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়েছে। সেবা খাতেও পড়ছে প্রভাব। অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কর্মী কমিয়েছে।
অন্যদিকে গত এপ্রিল থেকে সরকারি প্রতিষ্ঠানের নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি খুবই কম। আটকে আছে একাধিক সরকারি নিয়োগ পরীক্ষাও। পরীক্ষা নিতে না পারায় বিসিএসেও জট লেগে আছে। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের একাধিক পরীক্ষা স্থগিত করেছে সরকারি কর্মকমিশন। অনেকের মৌখিক পরীক্ষাও আটকে আছে। এ ছাড়া নন-ক্যাডারের কিছু পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়েছে। তিতাস গ্যাস, সিলেট গ্যাসফিল্ড, সেতু বিভাগ, পল্লী বিদ্যুৎ, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, রেলপথ মন্ত্রণালয়সহ কয়েকটি সরকারি দপ্তর তাদের নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করেছে। এ ছাড়া মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের প্রায় চার হাজার জনবল নিয়োগের পরীক্ষাও আটকে আছে। বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানে সংকট থাকলেও সরকারি চাকরিতে এখনো প্রায় সাড়ে তিন লাখ পদ ফাঁকা রয়েছে বলে জানা যায়। অন্তত সরকারি চাকরির বিজ্ঞপ্তিগুলো করোনার মধ্যে চলমান থাকলেও প্রার্থীদের মনে আশার সঞ্চার হতো। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বন্ধ থাকায় স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের পরীক্ষা হয়নি। ক্যারিয়ার নিয়ে হতাশায় বেশকিছু শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। অনেকে বিষণ্নতায় ভুগছেন।
নতুন কর্মসংস্থান তৈরি এখন সরকারের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ। কর্মসংস্থান ক্ষতিগ্রস্ত হলে এর বহুমুখী প্রভাব পড়বে সমাজে। এর ফল শুভ হবে না।
আর কে চৌধুরী : সাবেক চেয়ারম্যান, রাজউক; মুক্তিযুদ্ধে ২ ও ৩ নং সেক্টরের রাজনৈতিক উপদেষ্টা